“আশীর্বাদ”

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২১/০৯/২০০৯ - ৪:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কয়েকদিন ধরেই মেয়েটা বলছিল পাহাড়ের চূড়ায় বেড়াতে যাবে আমাকে ও নিয়ে যাবে কিন্তু আমি যে হাটঁতে পারিনা কিন্তু তাতে কি মেয়ের গাড়ি আছে। হেটেঁই উপরে উঠতে হবে এমনতো কোন কথা নেই আধুনিক যুগে এখন অনেক কিছুই সহজ, গাড়ি না থাকলে কেবল কার আছে । কিন্তু যাব শুধু আমি আর আমার মেয়ে, মেয়ের স্বামীর নাকি অফিসে কাজ আর আমার একমাত্র নাতির নাকি স্কুলে না গেলেই নয় তার উপর পাহাড়ের উপর নাকি এখন ঠান্ডা ও বেশ। কিন্তু আমি একটা কথা বুঝলাম না সোমবার যাবার দরকার কি ছিল! এ সময়তো পাহাড়ে কেউ যায় না। ছুটির দিন হলে অনেক মানুষ থাকত, অনেক মজা হত হয়তো নাতিটাও যেতে পারত। এখন গেলে শুধু আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু মেয়েটার নাকি বাসায় ভাল লাগছে না , কয়েকদিন আগে স্বামীর সাথে কথা কাটাকাটি শুনলাম , সংসারে এমনটি হয় এ নিয়ে এত মন খারাপ করলে চলবে কেন। ঠান্ডার জন্য আমার পুরানো কাপড় গুলো ও বের করা হয়েছে। খাবার রান্না হচ্ছে, আজকাল আবার আমি সব কিছু খাইতে পারিনা, শরীরটা বড্ড বেশি কাহিল। ৭৯ বছর বয়স তো কম নয়, তার উপর জমানো সব টাকায় শেষ, চিকিৎসা করার জন্য মেয়েটাকে ঋন করতে বললাম বাড়িটা বন্ধক রেখে, আমার কত কষ্ট করে করা বাড়ি , কিন্তু মেয়েটার দিকে ও তো তাকাতে হবে, বাড়িটা আমার হলেও স্বামীর সংসারে সে রেখেছে আমাকে প্রায় দুই বছর। তাদের ও সুবিধা , অকালের এই সময়ে এত দামের বাড়িতে থাকার খরচা তাদের বেচেঁ যাচ্ছে। প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি খাবার, এখাবারে তার একা হয়তো দুই দিন যাবে, কি জানি অনেক সময় পাহাড়ের উপরে অনেক মানুষের সাথে দেখা হয় , এক সাথে বসে আড্ডা হয় খাবার বিনিময় হয় আরও কত কি। যৌবনের সেই সব দিন গুলোর কথা মনে হলে আজ ও মনটা অনেক ভাল লাগে। এই রকম একটা ভ্রমনেই আমি দেখা পেয়েছিলাম আমার ভালবাসার মানুষকে , তারপর আমরা কত বার গেছি এই রকম ভ্রমনে। এই বার যাচ্ছি মেয়ের সাথে, এ বার-ই প্রথম নয়, সেই শেষবার গিয়েছিলাম মেয়ের বিয়ের আগে , সে কম করে হলেও হবে ১০ বছর। এর ভেতর অনেক কিছু বদলেছে। আমার স্বামী মারা গেলো, স্ট্রোক করে আমার শরীরের নিচের দিকটা অনুভূতি হারিয়ে ফেললো।

পাহাড়ের উপর থেকে দৃশ্য খুব ভালো লাগছে, আর কিছুক্ষন পর হয়তো সন্ধ্যা নেমে আসবে। আমি হাতে তুলে খেতে পারলে ও মেয়েটি আজকে আমাকে তুলে খাওয়ালো। হ্যাঁ হতেই হবে , এ মেয়ে যে আমার, আমি তাকে কতদিন তুলে খাইয়েছি সে কি মনে করতে পারবে, কিভাবেই বা পারবে, তার সেই তুলোর মত নরম হাতটাতো আমার হাত ধরেই শক্ত হয়েছে, তার শরীরে যে আমার-ই সব। ও যখন প্রথম আমার শরীরে তার অস্তিত্ব জানান দেয় তখন কতো যে ভয় পেয়েছিলাম, আবার সাথে অজানা এক বাধঁ ভাঙ্গা আনন্দ। সেই দিন আর আজকের দিন, কত পার্থক্য, সে আজ আমাকে ছাড়িয়ে গেছে , আমাকে আজ তার উপর নির্ভর করতে হয়। কিছুই করবার নেই আমার আর তার জন্য শুধু এই কটা দিন তারপর হয়তো আর দেখা হবেনা। সে একটু টয়লেটে যাবে বলে উঠে চলে গেল, এই সুবিধাটা আমাদের সময় ছিলোনা। তখন কি যে সমস্যা হতো বলে বোঝান যাবেনা। দেশের উন্নতির সাথে নাগরিক সুযোগ সুবিধা ও বেড়েছে অনেক। সন্ধ্যা নেমে আসছে, আমি বসে আছি পাহাড়ের উপর একটা গাছ তলাতে, সূর্যের অস্তমিত হবার দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে তোমার কথা, তোমার কি মনে আছে আমরা এমন দৃশ্য কতবার দেখেছি?

আজ সাতদিন নানুকে না দেখে ছেলেটা একটু বিচলিত হয়, এরকম মাঝে মাঝেই হয়, নানু খুব অসুস্থ হলে তাকে হাস্পাতালে থাকতে হয়। একটা কাচেঁর ঘরের ভেতর নানুকে দেখেছে নাকে নল দেওয়া অবস্থায় তারপর ও নানু আবার বাড়ি ফিরেছে, তার সাথে কথা বলেছে, সবাই সব কিছু নিয়ে ব্যাস্ত থাকে সে শুধু নানু এবং বাড়ির কুকুরটার সাথে থাকতে পছন্দ করে, নানু তাকে কত গল্প শুনিয়েছে! আজ কয়েক দিন হল আর গল্প শোনা হয়না। মা কে গিয়ে সে জিজ্ঞেস করে নানু কোথায় ? মা বলে নানু তার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় গেছে আর কোনদিন ফিরবে না এবং এখন থেকে সে সেখানেই থাকবে। কিন্তু নানু আমাকে বলে গেলনা কেন মা, মা আর কোন কথার উত্তর দেয় না। চুপচাপ টেলিভিশন দেখে, খবরে বলছে একজন মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে পাহাড়ের উপর থেকে, সম্ভবত ক্ষুধা এবং ঠান্ডা জনিত কারনে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু শকুনিতে তার শরীরের অনেক অংশ খেয়ে ফেলায় এবং সাথে কোন পরিচয় পত্র না থাকায় লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে, তার লাশের পাসে মাটিতে একটা নোটে লেখা ছিল বেচেঁ থাকো মা...।

গরীব
সাউথ কোরিয়া


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

মন খারাপ করে দিলেন ভাইডি...

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

একটু শক্ত লেখা হয়ে গেলো ভাই, ঈদের দিনের সাথে যাচ্ছে না...
মন খ্রাপ কর্বো না আজকে...।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

অতিথি লেখক এর ছবি

আফসোস বানান ঠিক করতে পারলাম না এখন ও ! আমারে সবাই মাফ করি দিয়েন!

গরীব
সাউথ কোরিয়া

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মন খারাপ করা লেখা।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মন খারাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

ঈদ এর দিন রাত দুটায় ঘুম ভাঙ্গে আমার। তখন-ই গল্পের প্লট টা মাথায় আসে। এর পর আমি আর ঘুমাতে পারলাম না। ২০ মিনিট এর রাস্তা মাড়িয়ে ল্যাবে চলে আসলাম (ল্যাপটপ রেখে গেছি)। এটা একটা গল্প কিন্তু এটার বেসটা অনেক বড় সত্যর উপর দাড়াঁনো। জাপানে এমন করা হত এক সময়, জাপানে মানুষের গড় আয়ু অনেক বেশি। কথাটা আমি প্রথম শুনি বুয়েটের আফসার স্যারের কাছে থেকে। তিনি জাপানে প্রায় ৮ বছরের মত ছিলেন এবং জাপানিজ বলতে পারেন , বর্তমানে তিনি সাউথ কোরিয়া তে গবেষনা করছেন। তিনিই বললেন। এখন আর এই অবস্থা নেই। কিন্তু গল্পটা হয়ে গেল। সবার মন খারাপ করার জন্য দুঃখিত। আঁরে আফনারা মাফ করি দিয়েন!

গরীব
সাউথ কোরিয়া

বইখাতা এর ছবি

ভয়ানক মন খারাপ করিয়ে দিলেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।