-রেনেসাঁ
আমার পাঁচ বছরের ছেলে গত কয়েকদিন যাবত বায়না ধরেছে কমপ্ল্যান খাবে। টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে ওর বদ্ধমুল ধারণা হয়েছে কমপ্ল্যান খেলেই রাতারাতি বড় হয়ে যাবে। ওর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শেই আমরা কখনই কমপ্ল্যান বা হরলিক্সের মত খাবারগুলো দিতাম না। তাই প্রথমে দুই একদিন আবদারটা কানে না নিলেও একসময় একমাত্র পুত্রের আবদারের কাছে নতি স্বীকার করলাম। কমপ্ল্যান এর ডিব্বা হাতে পেয়েই খুললো ঢাকনা, রাতেই খেল কয়েকবার এবং সঙ্গে সঙ্গে নিজের উচ্চতা বেড়েছে কিনা তা যাচাই করতে লাগলো। রাতে আর সে ঘুমাবে না। ঘুরে ফিরে উচ্চতা মাপছে। তার মাকে বারবার বলছে-আমি কমপ্ল্যান খেয়েছি, এখনই বাবার সমান হয়ে যাব তারপর ঘুমাবো। রাত বেড়ে যাচ্ছে তাকে ঘুম লাগানো দরকার তাই মিথ্যা করে বললাম-এখন ঘুমাও, কমপ্ল্যান খেলে ঘুমের মধ্যে বড় হয় ! আমার কথা মেনে নিয়ে ঘুম দিল। হায়রে অবুঝ মন!
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আবার উচ্চতা মাপা শুরু করলো। উচ্চতা কত মিটার বাড়লো জানিনা তবে পেটটা একটু নরম হল। শুরু করতে হল কাঁচা কলা থেরাপি। কমপ্ল্যানের এই উদ্ভট বিজ্ঞাপনের একটা গল্প মনে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে প্রচন্ড ভিড়। বাসের হাতল ধরে ঝুলছে কয়েকজন । হঠাৎ একটা ছেলে বলল-ভাইয়া আমি ঝুলছি, প্লিজ একটু ভিতরে চাপুন, আমি ঝুলছি, প্লিজ একটু চাপুন..। বাসের ভিতর থেকে একজন রসিকতা করে বলে উঠলো-শুধু ঝুলে থাকলেই চলবে, মামনি কে বল কমপ্ল্যান খাওয়াতে!
আর একবার আমার ছেলের মাথা আওলাইছিলো ইভা রহমান। এই ভুত নামাতে সময় লেগেছিল দুই বছর । এই সময় সে যতক্ষন জেগে থাকতো ততক্ষনই ইভা রহমানের গান দেখতো। বাসায় এটিএন বাংলা ছাড়া অন্যকোন টিভি চ্যানেল দেখতে পারতাম না। বাজারে ইভা রহমানের সিডি আদৌ বিক্রি হয় জানিনা তবে ছেলের কারণে আমি কিনতে বাধ্য হয়েছিলাম।
এদেশে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুনিদিষ্ট কোন নীতিমালা নেই। বিশেষকরে বিজ্ঞাপনে নারী ও শিশুদের ব্যবহার, জেন্ডার সংবেদনশীল শব্দের ব্যবহার এবং সর্বোপরি এর সামাজিক প্রভাব নিয়ে কোন নীতিমালা নেই। গনমাধ্যমগুলোও এব্যাপারে উদাসিন, অন্নদাতা বলে কথা। ফলে কোম্পানীগুলো সস্তায় বাজার ধরবার জন্য বিভিন্ন রকম কৌশলের আশ্রয় নেয় । আর বহুজাতিক কোম্পানী হলে তো কথাই নেই। তাদের অবস্থা দেখলে মনে হয় এদেশে ব্যবসা করতে এসে তারা আমাদের ধন্য করেছেন। মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলো আরও এককাঠি সরস। এখন তাদের বিজ্ঞাপনের একটাই ভাষা, কিভাবে মানুষকে অকারণে বেশী কথা বলানো যায়।
গ্রামীণ ফোন মুখে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা বললেও বাস্তবে এর প্রমান মেলেনা। তাদের অনেক আপত্তিকর বিজ্ঞাপনের মাঝে একটি বিজ্ঞাপন যতবার দেখি ততবারই হতবাক হয়ে যাই। বিজ্ঞাপনের ভাষা বন্ধু, আড্ডা গান- এখানেই হারিয়ে যাও। ডিজুসের এই বিজ্ঞাপনের টার্গেট গ্রুপ কিশোর এবং যুব সম্প্রদায়। জাতির ভবিষ্যত নষ্ট করবার জন্য এর চেয়ে আর কি মহত উদ্যোগ হতে পারে!।
রেনেসাঁ
২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯
মন্তব্য
খুবই দরকারি পোস্ট।
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
নতুন মন্তব্য করুন