ভালবাসার শেষ কোথায়?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ৩০/০৯/২০০৯ - ৩:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সূর্য পুব আকাশে উদয় হয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে পশ্চিম আকাশে অস্ত যায়, রাতের ফুটফুটে চাঁদের জোছনা দিনের আলোয় হারিয়ে যায়। বড় বড় কালো মেঘের মিছিলের ভয়ে রোদ লুকিয়ে থাকে, আবার রোদের প্রচন্ড প্রতাপে মেঘের দল পালিয়ে বেড়ায়, ছুটোছুটি করে নীল আকাশ জুরে। সময়ের পালাক্রমে মরা নদীতে যৌবন আসে, দুই পাড় ছেপে ভাসিয়ে দেয় বিস্তৃর্ণ সমতল ভুমি। ঋতু বদলের পালে প্রকৃতি কখনো ফুলে ফুলে সাজে আবার কখনো উলঙ্গ কিশোরের মত দাঁড়িয়ে থাকে একা পথের বাঁকে। পাহাড়ের কান্না ঝর্না গড়িয়ে গড়িয়ে নদী হয়ে মিলনের সুখে ছুটে চলে মোহনার দিকে। সবি প্রকৃতির নিয়ম, প্রকৃতির খেলা। কিন্তু ভালবাসা, এই পথের শেষ কোথায়?

কিছু খন্ড ঘটনা চিত্র দিয়ে আমার এই লেখা সাজানো। ভালবাসার শেষ কোথায় জানতে লেখার মাধ্যমে সচল বন্ধুদের কাছে জিজ্ঞাসা। ঘটনা গুলি আমার চারপাশের মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া চরম সত্য, শুধুমাত্র নামের জায়গায় কিছু পরিবর্তন করতে বাধ্য হলাম গোপনীয়তা রক্ষার ভদ্রতায়।

ঘটনা-১:
নিশান আর শিউলী আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের খুব ভালো বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন থেকেই ওদের মাঝে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। ওদের সম্পর্কটা আস্তে আস্তে প্রেমে রূপ নিতে থাকে। বন্ধুদের চোখে ব্যপারটা ধরা পড়লেও প্রথম দিকে তাঁরা মানতে নারাজ ছিল। সত্য কখনো চাপা থাকেনা বলে একটা কথা আছে, মানে এই রকম "ধর্মের কল বাতাসে নড়ে"। আস্তে আস্তে বন্ধু মহলে ওদের প্রেমের কাহিনী ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ওদের ন্যাকামি, খুনসুটি, মান -অভিমান দেখে আমাদের এক বন্ধু একদিন আড্ডায় বলেছিল -"ওই তোদের দাম্পত্য কলহ বন্ধ করবি।" সেই দিন এই কথায় শিউলী কষ্ট পেয়ে আড্ডা থেকে চলে গিয়েছিল। নিশান আমাদের সাথে ঝগড়া করেছিল শিউলীর পক্ষ নিয়ে। সময় গড়াতে থাকে ওদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে, শেষে নিজেরাই মানতে রাজী হয় তাদের প্রেমের সম্পর্কের কথা। আমরাও ওদের সুখী জীবন কামনা করেছিলাম কোনো রকম সন্দেহ ছাড়া। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হলে পারিবারিক ভাবে ওদের বিয়ে হয়, বন্ধুদের মাঝে মামুলি ঘটনা নিয়ে ঝগড়া হবার কারণে আপরা কেউ সেই বিয়েতে উপস্থিত থাকতে না পারলেও প্রাণ ভরে দোয়া করেছিলাম ওদের সুখী ভবিষ্যত সুন্দর জীবনের জন্য। বিয়ের ২বছরের মাথায় ওদের ভালবাসার ফসল হিসেবে আসে ওদের ছেলে "প্রতিক"। নিশান একটা গার্মেন্টসের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে আর শিউলী কাজ করে একটা প্রাইভেট ব্যাংকে। ভালোই চলতে ছিলো ওদের জীবন। বলতে পারেন সুখের জীবন। শিউলীর বাবা-মা ছোট মেয়ে বলে একটা এ্যাপার্টম্যান্ট কিনে দেয়। সেখানে তাঁরা তাদের সুখের সংসার সাজিয়ে ছিল ভবিষ্যত জীবনটা নিরাপদ, সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য।

প্রকৃতি সব সময় সব নিয়ম মেনে চলে না, নিয়মের ব্যতিক্রম হয়, স্বাভাবিকতা বিনষ্ট হয়, মানুষের জীবনে দুঃখ কষ্ট বাড়ে, সম্পর্কের টানপোড়েন শুরু হয়। চার বছর পর একদিন পল্টনে শিউলীর সাথে দেখা। সুমনের "বন্ধু কতদিন দেখা হয়নি" গানটা মনে পরে গেল। দুজনে পল্টনের পুলিস বক্সের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিরোমন্থন করলাম। কথার ছলে বা তালে জানতে চাইলাম নিশান কেমন আছে? শিউলীর অনেক দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুকে দেখা উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত মুখটা কালবৈশাখী ঝড়ের মত কালো হতে দেখলাম চোখের সামনে। অনেক কষ্টে মুখে একটা স্মিত হাসি এনে বলল-"আমরা আলাদা থাকি অনেক দিন, তুই জানিস না?" আমি আর কথা বাড়াতে পারি নাই, শুধু জানতে চেয়েছিলাম তোদের বাচ্চাটা? ও আমাকে বলেছিল- "আমার কাছেই আছে, মা দেখাশুনা করে।"
=======
লেখা বড় হয়ে যাবার ভয়ে নিচের ঘটনা গুলি সংক্ষেপে লেখার চেষ্টা করেছি মাত্র।
=======
ঘটনা-২
রাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গুলি বন্ধুর মধ্যে একটু আলাদা ছিল আমার কাছে। মানে আমাদের বোঝা-পড়াটা ভালো ছিল। আমার জীবনের সেরা বন্ধু। সব সময় হাসি খুশী, ফাজলামী-দুষ্টমী ছিল ওর বেঁচে থাকার প্রেরণা। কোনো কিছু না খেয়ে থাকতে পারে সারাদিন, কিন্তু দুষ্টমী ছাড়া একবিন্দু সময়ও থাকতে পারে না। রাহি ভালবাসত মামাতো বোন মৃদুলাকে। রাহি যখন দশম শ্রেনীতে পড়ে , মৃদুলা তখন পড়ে অষ্টম শ্রেনীতে। দীর্ঘ আট বছর প্রেম করে বাবা-মাকে রাজী করিয়ে মাস্টার্স শেষ করার পরেই তাঁরা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

মফস্বল শহরের মেয়ে মৃদুলা ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্বামীর সাথে সমন্বয় করতে হিমশিম খেতে শুরু করে। অল্প দিনের মধ্যে মৃদুলা রাহির কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পরে। রাহি ঘর ছেড়ে বাহিরে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতে থাকে। রাহির নিত্যদিনের আড্ডায় সোমা নামের একটি মেয়ে নিয়মিত ছিল। তাঁরা একটা প্রাইভেট ব্যাংকে একসাথে কাজ করত। আস্তে আস্তে রাহি সোমার প্রেমে পরে এবং দুজনের মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। ঘটনা কানাঘুষা হয়ে মৃদুলার কানে পৌছে যায়। মফস্বল শহরের সরল মেয়ে মৃদুলা কান্নাকাটি করে রাগে -অভিমানে বাপের বাড়ি চলে যায়। রাহি সোমার প্রেমে এতোটাই মগ্ন ছিল যে নিজের প্রেমিকা স্ত্রী মৃদুলাকে ফেরত আনার প্রয়োজনবোধ করেনি। আমরা বন্ধুরা ঘটনা জেনে ওর বাসায় যাই। ওর সাথে, ওর মার সাথে (যিনি মৃদুলার ফুপু ও শ্বাশুড়ি হোন এবং বর্তমানে পরলোকগত, আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন) কথা বলে মৃদুলাকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করি।

এর মধ্যে রাহির চরিত্রের আমূল পরিবর্তন হয়। একসময়ের দুষ্ট বলে খ্যাত রাহি নষ্ট হতে থাকে, সোমার সাথে সম্পর্ক ছাড়াও ওর বিরুদ্ধে আরো অনেক নারী জনিত কেলেংকারীর কথা বন্ধু মহলে বাতাসের মত ছড়াতে থাকে। বিভিন্ন অপরাধের কারণে (আসল কারণ আজো আমাদের অজানা) রাহি ব্যাংক থেকে বরখাস্ত হয়। তাঁর জীবনে নেমে আসে খারাপ সময়। মৃদুলার উপর চলে মানসিক নির্যাতন। রাহির বড় ভাই সব শুনে মৃদুলাকে নিজের বাসায় নিয়ে রাখে। কিন্তু রাহি কোন খবর নেয় না। বড় ভাবীর বদৌলতে রাহি আবার একটা টেলিকমিউনিকশন সেক্টরে কাস্টমার কেয়ারে চাকুরি হয়,কিন্তু বখে যাওয়া রাহি সেখান থেকেও চাকরিচ্যূত হয় অল্পদিনের মাঝে। আমার সেই চির চেনা ভালো বন্ধুটা কী কারণে বখে যায়, তা আমি ব্যস্ততার কারণে জানতে পারিনি। গত এক বছর ধরে ওর কোনো খোঁজ আমার কাছে নেই, কারণ ওর দুইটা সেল নাম্বারি বন্ধ। বাসা পরিবর্তন করাতে ঠিকানা আর নেয়া হয়নি। রাহির বড় ভাই ও ভাবীর নাম্বার আছে কিন্তু লজ্জায় আর ফোন দেয়া হয় না। শেষ পর্যন্ত যতটুকু জানি রাহির বউ এখনো বড় ভাইয়ের বাসায় আছে, একা নিভৃত জীবন যাপন করছে। রাহির অবস্থা আমার জানা নেই। শুনেছি সোমার পিছ এখনো ছাড়তে পারেনি। তবে আশ্চর্যজনক কথা হলো সোমা মেয়েটা বিবাহিত এবং প্রেম করেই বিয়ে করেছে। সোমার স্বামীও নাকি রাহির বন্ধু। এবং বন্ধুদের বদৌলতে জানতে পেরেছি, রাহি নাকি সোমার স্বামীকে প্রচুর অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে। সোমার জীবন যাচ্ছে কীভাবে জানি না। তবে মৃদুলা সুখে নেই, ভালো নেই, স্বপ্নের চোখে আশা নেই, আছে শুধু নীরবতা আর অপেক্ষা।
=======
ঘটনা-৩
পারভেজ পারিবারিক ভাবে দেখে শুনে ভালো বংশের মেয়ে বকুলকে বিয়ে করে। তাদের বিবাহিত জীবন সুখে চলতে থাকে। বকুলের যখন বিয়ে তখন সে ছাত্রী, মাত্র ১৮ ছুঁই ছুঁই। পারভেজ তাঁর পড়ার ব্যবস্থা করে। বকুল লেখাপড়া শেষ করে, ব্যাংকার বাবার বদৌলতে একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকুরি হয়ে যায়। পারভেজ জীবনে স্বচ্ছলতা আনার জন্য পাড়ি জমায় সৌদি আরব। নিজের উপার্জিত অর্থ তুলে দেয় স্ত্রীর হাতে। জায়গা-জমি, শেয়ার সব বউয়ের নামে কিনতে থাকে। তাদের ১২ বছরের সংসার জীবনে আসে এক মেয়ে ও এক ছেলে। পারভেজ বিদেশ জীবনের পাঠ চুকিয়ে শান্তির আশায় বাংলাদেশ চলে আসে। ছেলে-মেয়ে, বউ নিয়ে একসাথে থাকবে এটা ছিলো তাঁর স্বপ্ন। ছেলে মেয়ের কথা ভেবে বউয়ের কথা মত শ্বশুড়ের বাড়িতে ভাড়া থাকা শুরু করে। উপার্জনক্ষম বউ দিনে দিনে বেপড়োয়া হয়ে উঠে। স্বামীর কথায় কোনো প্রকার কর্ণপাত করে না। নিজের মত চলে । জরিয়ে পরে জুনিয়র কলিগের সাথে পরোকীয়া প্রেমে, ধরা পরে হাতে নাতে পারভেজের কাছে। পারভেজ বকুলকে ক্ষমা করে দেয়, চাকুরি ছেড়ে ঘর সংসারে মন দিতে বলে। কিন্তু বকুল তাঁর সাথে আর ঘর সংসার না করার সিদ্ধান্ত নেয়। পারিবারিক ভাবে অনেক বোঝাপড়ার চেষ্টা করে মরুব্বীরা বিফল হয়। অবশেষে তাদের ডিভোর্স হয়। যেহেতু সম্পত্তি সব কিছুই স্ত্রীর নামে ছিলো, সেহেতু পারভেজ প্রাই নিঃস্ব হয়ে যায়। শুধু মাত্র নিজের ছোট একটা দোকান ছাড়া আর কিছু থাকে না। তবে তাদের ১০ বছরের ছেলে আর ৭বছরের মেয়ের বাবার সাথেই থেকে যায়।
=========
ঘটনা-৪:
রফিকের যখন ৩৫ বয়স তখন পারিবারিক ভাবে বিয়ে করে ১৫ বছরের সুন্দরী পপিকে। পপি এতোই সুন্দরী ছিল যে পাড়ার বখাটে ছেলেদের যন্ত্রনায় বাধ্য হয়েই বয়স্ক অর্থবান রফিকের হাতে মেয়েকে তুলে দেয় অসহায় পিতা-মাতা। তাদের সংসার জীবনও চলতে থাকে সবার মত। বিয়ের এক বছরের মাথায় আসে তাদের প্রথম সন্তান মেয়ে ফারজানা। তার দুই বছর পর আসে দ্বিতীয় মেয়ে ফারহানা। বংশ ধরে রাখার জন্য ছেলে চাই , তাই চলে সন্তান নেয়ার বিরামহীন চেষ্টা। তাদের তৃতীয় সন্তান আসে আরো একটা মেয়ে। সবাই ভীষণভাবে নাখোশ হয়। সব দায় ভার যেন পপির। আল্লাহর কী খেলা সেই মেয়ে তিন মাসের বেশি পৃথিবীর মানুষরূপী পশু গুলোর বিকৃত মুখ দেখেতে পারে নি। তাদের সন্তান নেয়ার স্পৃহা তবু থামে না। ছেলের আশায় সিলেটে শাহজালালের মাজার জিয়ারত করে, মানত করে। আল্লাহর রহমতে তাদের ঘরে আসে এক পুত্র সন্তান। সবাই সে কী খুশি!

স্বাভাবিক নিয়েমেই চলতে থাকে জীবন। ছেলে-মেয়েরা বড় হয়। বড় মেয়ে ভিকারুননেসা থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে ভর্তি হয়। ছোট মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়। একমাত্র ছেলে অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র। এমতাবস্থায় রফিকের জীবনে অর্থনৈতিক ধ্বস নামে। ব্যবসায় ক্ষতি হতে থাকে, উপার্জন কমে যায়। বউ, ছেলে-মেয়েদের চাহিদা মিটাতে অক্ষম হতে থাকে। স্ত্রী পপি সেলাইয়ের কাজ করে সংসারকে সাহায্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।

কিন্তু নিয়মের পতন ঘটে। অনেক বয়সের পার্থক্যের কারণে পপি স্বামীর পতি আকর্ষন হারিয়ে ফেলে। স্বামীও গতানুগতিক বাঙ্গালীর মত যৌন জীবন নিয়ে সচেতন ছিল না। পপি স্বামীকে ডাক্তারের কথা বললে, খারাপ ব্যবহার করত। রফিকের শারীরিক এই সমস্যাটা শুরু থেকেই ছিল, পপি অনেক বার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছে, কিন্তু রফিক যায় নি। যখন অর্থ ছিল, সমস্যাটা লুকায়িত ছিল। যখন অর্থের টানপোড়েন শুরু হল তখন সম্পর্কের টানপোড়েন শুরু হল। তাদের সুখের প্রাসাদে ড্যাম পরা শুরু হয়।

সংসারের আর্থিক সহায়তা দানের জন্য বড় মেয়ে টিউশনি শুরু করে,এটা রফিকের ভালো লাগে না, ছোট মেয়ে আড়ং এ খন্ডকালীন চাকুরি করে এটা তাঁর কাছে আরো অসহনীয় মনে হল। যে দিন শেষ শিফটে ফারহানা কাজ করত তখন গুলশান আড়ং থেকে ফিরতে রাত হয়ে যেতো। ফারহানা একটু ছেলে ঘেষা মেয়ে ছিল। ঐটুকু বয়সেই দুইটা প্রেম করে ধরা খেয়েছে। তাই বাবা রফিক ছোট মেয়ে ফারহানাকে দেখতে পারত না। তাই ফিরতে দেরি হলেই রফিক গায়ে হাত তুলতো। এইভাবে রফিক ছেলে-মেয়ে ও বউয়ের কাছে দিনে দিনে অসয্য হয়ে উঠতে থাকল। একদিন ফারহানার ফিরতে দেরি হলে রফিক ঘরের দরজা খুলেনি, সারা রাত মেয়েকে ঘরের বাইরে রেখেছে, এই নিয়ে পপির সাথে ঝগড়া । দিশেহারা রফিক পপির গায়ে আঘাত করে।

পরের দিন রফিক কাজের জন্য বের হলে পপি ছেলে-মেয়ে নিয়ে শুধু কাপড়-চোপর নিয়ে বাসা থেকে বেড় হয়ে যায়। অতঃপর চলে ধ্যান-দরবার, ফলাফল শুণ্য। ছেলে মেয়েরা মার পক্ষ অবলম্বন করে, শেষ হয় তাদের ২০বছরের জীবনের নানা ঘটনার বৈচিত্রময় সংসার নামের খেলা। রফিক মানসিক ভাবে ভেঙে পরে, অসুস্থ হয়ে যায়। ঢাকার জীবনের পাঠ শেষ করে ফিরে যায় গ্রামে মায়ের কাছে। তাঁর অসুস্থতা বাড়তে থাকে, ভারত নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু কিছুতেই রফিক আর সুস্থ হয় না। এই রোজায় রফিক এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় জাগতিক মায়া-মমতাকে বিদায় জানিয়ে।
======

সূর্যের যাত্রার শুরু আছে, শেষও আছে। আকাশে মেঘের পরে রোদ উঠে, প্রকৃতিতে ফুল ফুটে, ঝরে যায়,আবার নূতন করে শুরু হয় পালাবদল। দীর্ঘ পথেরও শেষ ষ্টেশন থাকে, কিন্তু ভালবাসার শেষ কোথায়? আমি জানি এই গুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, সবার জীবনে ঘটেনা, কিন্তু এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, আমি আমার চারপাশে যদি এই চার রকমের ঘটনা দেখে থাকি, আল্লাহ না করুক আপনারাও হয়তো এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী বা শ্রোতা।
======
পাদটীকাঃ চারটা ঘটনাই সত্য এবং আমার পরিচিত মানুষের। নাম গুলো কাল্পনিক। কারো সাথে মিলে গেলে ক্ষমা প্রার্থী।
======
দলছুট।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

মডু ভাইয়েরা আমার লেখার মাঝখানে এই গুলি কী ফন্ট। প্লিজ ঠিক করেদেন। লেখাটার সৌন্দর্যই নষ্ট হয়ে গেল।

ধন্যবাদ।

দলছুট।

অতিথি লেখক এর ছবি

সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। ফন্টের যে সমস্যা ছিলো সেটা এখন ঠিক আছে। ধন্যবাদ।

দলছুট।

parvez এর ছবি

Sir,
sob golpo te ( 04 no ta bade) bank er employee thake kano?
Porokia ki bank e besi hoy???

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই ব্যাপারটা বলতে পারেন কাকতালীয়। তবে আমার বন্ধুরা বেশী ভাগ ব্যাংকে কাজ করে।

ধন্যবাদ।
দলছুট।
=============বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

চারপাশের ঘটনা। মিলতেও পারে অনেকের সাথে।

বানান নিয়ে বহুবার বলার পরেও উন্নতি হচ্ছে না। আর সত্য ঘটনা, নিজের ঘটনা-ও বয়ানের গুণে পড়তে ভালো লাগে। সরি টু সে, সেটাও অনুপস্থিত।

আপনার আরো প্রচুর পড়া উচিৎ। গল্পের বিন্যাস কিভাবে ঘটবে, সমাপ্তি কি রূপে ঘটবে — এ সব নিয়ে খাটতে হবে আরো।

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

স্নিগ্ধা এর ছবি

প্রিয় দলছুট - গল্প যারা লিখতে পারে, তাদের আমি সবিশেষ ঈর্ষা করি, কারণ আমি নিজে সেটা একেবারেই পারি না। তাই, যদিও এখানে আপনার গল্প এবং গল্প লেখার প্রচেষ্টার সমালোচনা করতে যাচ্ছি, জানবেন আমি নিজেও আপনার চাইতে খুব বেশি আলাদা নই।

আপনি একাধিকবার বলেছেন - মন্তব্যে আপনি মাইন্ড করেন না, আমাদের সমালোচনা আপনার জন্য পথনির্দেশক, ইত্যাদি ইত্যাদি ...... তাই আমার কথাগুলোও নৈর্ব্যক্তিকভাবে নেয়ার চেষ্টা করলে কৃতজ্ঞ থাকবো। আমার মন্তব্য শুধু এ গল্পটিকে নিয়েই নয়, এ পর্যন্ত আমার পড়া আপনার সবগুলো লেখা নিয়ে একটা ওভারঅল ইম্প্রেশন বলতে পারেন।

গল্প অথবা ঘটনা বর্ণনা সে যাই-ই হোক না কেন, তাতে লেখার একটা 'টান' থাকা দরকার, যেটা পাঠকের পড়ার আগ্রহ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে। আপনার লেখায় আবেগের আতিশয্যে বাকি সবই ম্লান হয়ে যায়! যে চরিত্রের প্রতি আপনার কোন কারণে পক্ষপাত বা সমবেদনা আছে, তাকে এত্তো এক্সপ্লিসিটলি আপনি ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করেন যে সেটা পাঠককে বিরক্ত করে তোলে।

একইভাবে, আপনি ঈশ্বর-এ বিশ্বাসী ভালো কথা - কিন্তু তাই বলে সেটা গল্পের মধ্যেই ঈশপের বাণীর মতো করে জুড়ে দিতে হবে কেন? গল্প সবসময়ই গল্পকারের ভাবনা/মতামত/জীবনদর্শন/অবস্থান প্রতিফলিত করে, কিন্তু সেটা অনেক subtly থাকে।

ওর সাথে, ওর মার সাথে (যিনি মৃদুলার ফুপু ও শ্বাশুড়ি হোন এবং বর্তমানে পরলোকগত, আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন) কথা বলে মৃদুলাকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করি।
এখানে পরলোকগত বলারই তো কোন দরকার ছিলো না, তারপর আবার বেহেস্ত নসিবের প্রার্থনা!

আরেকটি উদাহরণ হতে পারে আপনার ব্যবহ্নত 'ছেলেঘেঁষা'/'মেয়েঘঁষা' বা এধরনের শব্দগুলো। বোঝাই যায় আপনি একাধিক প্রেম করা বা বারবার প্রেম করাকে 'খারাপ' হিসেবে উপস্থাপিত করছেন।

এরপর আছে অসংলগ্নতা।

কিন্তু নিয়মের পতন ঘটে। অনেক বয়সের পার্থক্যের কারণে পপি স্বামীর পতি আকর্ষন হারিয়ে ফেলে।
এ কথার মানে কী?! একটু পরেই স্বামীর যৌন অক্ষমতা/সমস্যার কথা বলছেন, সেটার সাথে তো বয়সের কোনই সম্পর্ক নেই। আবার বলছেন
যখন অর্থ ছিল, সমস্যাটা লুকায়িত ছিল। যখন অর্থের টানপোড়েন শুরু হল তখন সম্পর্কের টানপোড়েন শুরু হল। তাদের সুখের প্রাসাদে ড্যাম পরা শুরু হয়।

এপ্রসঙ্গেই তাহলে বলি বাক্যগঠনে আপনার অমনোযোগের কথাটিও। 'সুখের প্রাসাদে ড্যাম পড়া (পরা নয়)' কথাটি নান্দনিক বা ব্যাকরণগত, কোনদিকেই ঠিক হালে পানি পায় না। যেমন পায় না - "আল্লাহর কী খেলা সেই মেয়ে তিন মাসের বেশি পৃথিবীর মানুষরূপী পশু গুলোর বিকৃত মুখ দেখেতে পারে নি। " অথবা "তাই বাবা রফিক ছোট মেয়ে ফারহানাকে দেখতে পারত না। তাই ফিরতে দেরি হলেই রফিক গায়ে হাত তুলতো।" এবং এমন আরো অনেক ......

বানান নিয়ে আপনাকে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে, আপনি সেগুলোকে ধর্তব্যের মধ্যে এনেছেন কি আনেননি আমি জানি না - কিন্তু, আজকের লেখাটিতেও প্রচুর ভুল রীতিমতো পীড়াদায়ক! এবং সেগুলো টাইপো নয়। দেন-দরবার টাইপো হয়ে ধ্যান-দরবার হতে কি পারে, আপনিই বলুন?

আমার ধারণা আপনার আরো প্রচুর পড়া উচিত। ঠিক এই কথাটিই কিন্তু এর আগে আরো কয়েকজন সচল আপনাকে বলেছেন (এই মুহূর্তে সুহান রেজওয়ান আর শাহেনশাহ সিমনের নাম মনে করতে পারছি)। বোঝাই যায় আপনি লিখতে ভালোবাসেন, সেটি তো খুবই ভালো কথা, কিন্তু আপনার এতো পছন্দের কাজটিই আরো একটু ভালো করে করাই কি ভালো নয়? লেখক, পাঠক সবার জন্যেই?

আমি জানি আমার সমালোচনা পড়ে আপনার খারাপ লাগবে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, তার সাথে এই কথাটিও একটু ভেবে দেখবেন, এতোখানি সময় নিয়ে আপনাকে এতো বিস্তারিত মন্তব্য আমি নিশ্চয়ই 'আমার' কোন ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে করি নি?

যদি না - সচলায়তনে মানসম্মত লেখা পড়তে চাই, এটাকে কোন আল্টেরিয়র মোটিভ হিসেবে ধরেন।

[অন্য প্রসঙ্গ তবে অপ্রাসঙ্গিক নয়ঃ মডুদের কাছে একটা প্রশ্ন - লেখা যখন মডারেটেড হয়, তখন সম্পাদিত হয় না জানি, কিন্তু লেখকের কাছে বানান/টাইপো ঠিক করার অনুরোধ জানিয়ে কি লেখাটা আবার জমা দিতে বলা হয়?]

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চলুক
দারুণ একটা আলোচনা। এর চেয়ে গুছিয়ে কিছুতেই আমার পক্ষে বলা সম্ভব হতো না। আমি বরং এখানে আমার পছন্দের হাতের কাছে থাকা কয়েকটা এই সচলায়তনেরই গল্প দিচ্ছি- পড়ে থাকতে পারেন, তবুও আবার পড়তে বলি। দেখুন না, কী চমৎকার সব গল্প !!

নীলুফার যখন মারা গেলো

পুরনো বাড়ি

নীড়ে ফেরা

---------------------------------------------------------------------------

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার দেয়া লিং গুলো বললাম। ধারুণ লেখা। অনেক ধন্যবাদ। আসলে আমি শুধু শুধু লিখি। আমার লেখা উচিত না।

হাবিজাবি লিখে আপনাদের সময় কিল করি। তাদের লেখা পড়লে নিজেকে মনে হয় ক্লাস ওয়ানের ছাত্র।

দলছুট।

=========বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনার দীর্ঘ পরামর্শমূল লেখার জন্য ধন্যবাদ দেয়া ঠিক হবে কিনা জানি না তবে আমি যে উপকৃত সেটা জানাতে ভুল করতে চাই না।

বানান নিয়ে একটা জিনিস বলবো অনেক সময় লেখা পোষ্ট হলে চোখে পরে যেটা আমরা অতিথি বলে সংশোধন করতে পারিনা। আবার নিজের ভুল নিজের কাছে অনেক সময় ধরা পরে না। কিছু আছে হয়তো জ্ঞানের স্বল্পতা।

আমি জানি না চরিত্র সাজাতে পক্ষপাত করি কিনা, তবে যখন সত্য ঘটনা অবল্বনে ললেখার চেষ্টা করি তখন আসল ঘটনাটাই লিখি, তাতে পক্ষপাত থাকলে আমার কিছু করার থাকে কী।

আমি সচলের সব লেখা পড়ি এবং সময় পাইলেই বইয়ে ডুব দেই। প্রতিটা মানুষের নিজস্ব কিছু স্টাইল থাকে, যা সবার ভালো লাগে না, তারপরও সে সেটা বদলাতে পারে না, আমি হয়তো সেই রকম একজন।

আপনাদের পরামর্শে কী লেখা কিছুটা পরিবর্তন হয়নি? আমি চেষ্টা করছি আপনাদের তথা যাবৎ পাঠকদের মন জয়কার লেখা লিখার।

আশা করি ভবিষ্যতেও আপনাকে পাশে পাবো পরামর্শদাতা হিসেবে, সমালোচনা করে ভুল গুলি দেখিয়ে দিতে। আপনারা আছেন বলেই লেখার চেষ্টা করি। মনের খোরাক আনন্দ যোগাই।

স্নিগ্ধা আপু আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে ভবিষ্যতে পাশে পাবার আশা রেখে বলছি-আমি চেষ্টা করছি আপনাদের মানের লেখা দিতে, আশা করি আপনারাই বলবেন "ধারুণ!!!!"

দলছুট।
=========বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনি তো নিয়ম করে "ধারুণ!!!" বলে চলেছেন, জানি না কোথায় এই শব্দটি পেলেন, এ বাংলা ও বাংলা কোনো সাহিত্যেই (বা আমার জানা মতে কথ্য ভাষাতেও) এমন শব্দ আছে। আমরা চেষ্টা করলে "দারুণ" বলতেও পারি হয়তো, "ধারুণ" তো ভাই বলতে পারবো না (যদি না ধার করতে উদ্বুদ্ধ করতে চাই, তাতে আবার দন্ত্য ন হয়, কী মুশকিল!)।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে ভুল করার পর তর্ক করার কোনো মানে নেই। তারপরও বলি, আমি ফোনেটিক আর অভ্রর একটা ঝমেলা পোহাচ্ছি প্রথম থেকে "র" হয়ে যায় "ড়", "ন" হয়ে যায় "ণ" আর "দ" হয়ে যায় "ধ"। আবার এর উল্টা টাও হয়। সুতরাং ক্ষমা প্রার্থী।

দলছুট।

মূলত পাঠক এর ছবি

আমি ফোনেটিকে লিখি, অভ্রর ব্যাপারটা জানা নেই। যাঁরা ব্যবহার করেন তাঁদের জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। পরের পোস্টে এই নিয়ে একটা প্রশ্ন জুড়ে দিলে অনেকেরই চোখে পড়বে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।