বাক্সবন্দী জীবন-৩

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৩/১০/২০০৯ - ১১:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মুঠোফোন নিয়েই লিখতে ইচ্ছে হোল আজ… মুঠোফোনের সাথে পরিচয় সেই ২০০২ এর শেষের দিকে। H.S.C ভাল ফলাফলের জন্য মায়ের কাছে অনেক আব্দারের পর শুরু হয় আমার মুঠোফোন সহযাত্রা “এক ধাপ এগিয়ের” সাথে। তখন একটেলেই একমাত্র ৩০ সেকেন্ডের পালস। সেই শুরু… এরপর ভার্সিটি লাইফের মোটামুটি ৪ বছরে একেক সময় ডিজ্যুস, কখনও টেলেটক, কখনও জয়। ২৪ ঘন্টার সাথী ছিল শুরুর দিকে মটরোলা, তারপর দীর্ঘ্য ৭ বছর নকিয়ার বিশ্বস্ত সাথী।

শুরু দিকের যারা মুঠোফোনের যাত্রী তাদের অন্যতম অভিজ্ঞতা হোল মিসকল। ৭ টাকা পার মিনিট, মিসকল ছাড়া উপায় নাই। প্রেমিকার সাথে কথা, ২ টা পর পর মিসকল মানে হলের ফোন ফ্রী তাড়াতাড়ি ফোন দাও। কোথাও ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার কথা আছে পৌছানো মাত্র মিসকল। তারপরতো আছেই মিসকল মিসকল খেলা। এক ফ্রেন্ড কোন মেয়ের কাছে ছেকা খেয়েছে তো শুরু হল তাকে গনহারে মিসকল। মিসকল ধরতে পারার অনুভুতি গুলো ছিল অসাধারন। একরাতে রাত ৩ টায় মিসকল দিলাম ৩ জন মিলে এক বন্ধুকে। ঘুম ভেঙ্গে উঠে তার ইচ্ছা হোল আমাদেরও দিবে মিসকল। ফলাফল ৩*৭=২১ টাকা নিট লস। তো মিসকল ধরার আনন্দ দেখে আমাদের রুমের আরেক বন্ধু তৌফিকের ইচ্ছা হোল সেও মিসকল দিবে। আচ্ছা দে…।

কিছুক্ষন পরে, “কিরে মিসকল দিছিস?’

“দোস্ত মিসকল তো দিসি, কিন্তু কাটতে ভুইলা গেসিলাম। :D”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষে মোবাইল নিয়ে মাতামাতিটা বোধহয় সব থেকে বেশি ছিল। এক রমজানের ছুটিতে আসল ডিজুস ফ্রী টকটাইম। সুশীল সমাজের বোধহয় ডিজ্যুস নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই, কিন্তু আমার বলতে দ্বিধা নেইযে, সেই সময়টুকু আমি খুবি উপভোগ করেছি। রাত জেগে কথা কথা বলতে বলতে ভোরে সেহরী খেয়ে তারপর ঘুম, কারন তখন আমাদের দীর্ঘ্য ৩ মাসের ছুটি চলছিল।

এরপর আস্তে আস্তে চলে আসে sms এর চল। আমার এক ফ্রেন্ডতো sms এর বেপারে এতই মিতব্যায়ী ছিলযে, কোথাও গেলে ওর দেরী হলে sms আসতো “ ৯ মিনিট পরে আস্তেছি”
মাঝে জিজ্ঞেস করলাম “৯ কেন্? ১০ লিখিস না কেন?” বন্ধুর তরিত উত্তর “ ১০ লিখতে একটা অক্ষর বেশি লিখতে হবে যে…”

৩য় বর্ষে মোটামুটি সবার হাতে মোবাইল, কারন বাংলা লিঙ্ক চলে এসেছে। আস্তে আস্তে কল রেট কমতে শুরু করেছে। তখন বোধহয় ৩ টাকা ছিল প্রতি মিনিট। নতুন নতুন মাল্টি মিডিয়া সেট আসতে শুরু করলো। দামী সেট mp3, mms মোটামুটি গর্বের একটা বস্তু, সাথে একটা ক্যামেরা থাকলে ত কথাই নেই। যাহোক পুরানো নকিয়াতেই থাকতে হোল কারন পকেটের অবস্থা ভাল না থাকায়। ৪র্থ বর্ষে দেখা শুরু করলাম ভাইয়ারা ধুমধাম সবাই টেলিকমে জয়েন করতেসেন, সেই রকম আকর্ষনীয় প্যাকেজ। সবথেকে আকর্ষনীয় লাগত ল্যাপ্টপ আর মোটামুটি বিশাল অংকের মোবাইল বিল ফ্রী। সবার মাঝেই দেখা গেল এই চাক্রীগুলাতে চরম আগ্রহ। ৪র্থ বর্ষে তো মোটামুটি টেলিকম কর্মশালাই আয়োজন করে ফেললাম। ভাইয়ারা চোথা দিয়ে গেল রিটেন এক্সামের। আমাদের খুব ভাল প্রোগ্রামার ছেলেগুলোকেও দেখা গেল টেলিকমের দিকে ব্যাপক আগ্রহ।

২০০৭ এর শুরুর দিকে মোটামুটি ১৮ জুনের মত একসাথে জয়েন করলাম হুয়াইতে। আমার লাইফের সবথেকে খাইস্টা কোম্পানী। এর আগে, পরে একের পর এক ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছিলাম গ্রামীন ফোনে। আমি এই বিষয়ে লিজেন্ড। মোটামুটি ৬ বারের বার বৈতরনী পার হলাম। দেখা গেল আসে পাশে সব চেনা মুখ। একি ফ্লোরে আছে কিংকু চৌধুরী, গাজি, রায়হান আরো অনেকে। চাকরী জীবনের সবথেকে সুখের সময় শুরু হোল। কাজের ফাকে ফাকে মোটামুটি সারাদিন আড্ডা হৈচৈ। কিছু অসাধারন কলিগ পেলাম। সাথে যেটা পেলাম অনকল নামক এক বিরাট যন্রনা। সারাক্ষন সাথে ২ টা মোবাইল বয়ে বেড়ানোর উৎকট যন্রনা। আস্তে আস্তে বন্ধুরা সবাই পাড়ি জমাতে শুরু করল দেশের বাইরে, সাথে সাথে দেশে টেলিকমের মধুও শেষ হতে শুরু করল। পাড়ি জমালাম আফ্রিকা, কামলা দিতে।

আফ্রিকাতে মোবাইল কলরেট দেখে শুরুতে একটা ধাক্কার মত খাই। সদ্য গ্রামীন ফোনে ২৫ পইসার ট্যারিফ ডিফাইন করে আসছি। এখানে দেখি ২৫ টাকার মত পার মিনিট লোকাল কল। বুঝলাম আমাদের দেশের শুরুর অবস্থা চলছে। এরপরত শুরু হোল মন্দা। দেশে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উপলব্ধি কেউ এখন আর টেলিকমে জয়েন করতে চাচ্ছে নাহ। বুঝলাম দিন বদলায়ে গেছে। আবার পোলাপাইন উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ যেতে আগ্রহী।সবাই ধুমায়ে জি আর ই নয়ত IELTS দেয়। পড়লাম সিরাতের ব্রেইন ড্রেইন। মনে হল দেশে ভাল জব ফিল্ড থাকলে আসলে অনেকেই দেশের বাইরে যেতে আগ্রহী নয়। গ্রামীন ফোনের অনেক ভাইয়া/ আপুরা আসেন বুয়েটের প্রথম ১০ জনের মদ্ধ্যে। আমাদের ইউনিরও অনেক ভাল গবেষক/ছাত্রও আছে টেলিকম কোম্পানীতে। অনেককেই জিজ্ঞেস করি কিরে বাইরে আসবি নাহ? জীবন তো এক্টাই কেন যাবে এত কস্ট করতে… “ হুম, বুদ্ধিমানের দেশে থাকে, বোকাচ…রাই বিদেশে আসে।“


হঠাত করেই লক্ষ্য করলাম মূঠোফোনে কলের পরিমান আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। আগে যেখানে প্রতিদিন চার্জ না করলে হত না, আমার বুড়া ব্যাটারি এখন ৩ দিন চার্জ না করলেও ভালই চলছে। জীবনটা এখন বোধহয় ল্যাপী, স্কাইপ, আর সচলয়াতনেই বন্দী হয়ে যাচ্ছে…

পাঠকের জন্য থাকলো মূঠোফোনের একটা গান… (সৌজন্যঃ কিংকু চৌধুরী)

http://www.esnips.com/doc/ded47c26-a69f-476b-9dbc-62224af2493b/Meghdol---shohorbondi---Muthophone---downloadable


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

নাম দিতে ভুলে গেছিলাম।। মন খারাপ
ছন্নছাড়া
tanvir@ইয়াহু.com

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

শিরোনাম দেখেই চিনতে পারসি। লেখা পড়ে তো বটেই... খাইছে

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মজা লাগল লেখাটা।

আমিও আমার প্রথম মোবাইল ফোন পাই ২০০২-এ। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গ্রামীণফোনের সাথেই আছি। যদিও এই বস্তু (মোবাইল ফোন) এখন বিশাল একটা পেইন মনে হয় আমার কাছে।

বাইরে যাইতে ইচ্ছাও করে, আবার ভেতর থেকে দেশ ছাড়ার টানটা পাই না। মনে হয়, দেশেই তো আরামে আছি। আসলে আমার চাহিদাও খুব একটা বেশি না। বাইরে ঘুরে বেড়াতে ভাল্লাগে, ইচ্ছাও করে। কিন্তু একেবারে দেশ ছাড়তে হবে, এটা মানতে পারি না কেন যেন। দেখা যাক, হয়তো একদিন আমিও...

লিখতে থাক.. বানান আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি...

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

একটা সময় এই মুঠোফোন নিয়া কি ভাব ছিলো, আর এখন রাইতের বেলা দিরং কইরা আসলে আমাগো দারোয়ানরে কল দিতে হয়।

------------------------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

রেশনুভা এর ছবি

কখনই সুস্থির ছিলাম না।
মুঠোফোনের সেট শুরু প্যানাসনিক দিয়ে। তারপর সিমেন্স এম ৫৫, এরিকসন, নকিয়া, মটোরোলা ...
এখন সনি এরিকসন। এইটাও শীঘ্রি চেঞ্জ হবে ... হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি মোবাইল কিনি ৯৮ সালে। বিশাল ভাব।

এখন মাঝে মধ্যে মঞ্চায় এই ঘোড়ার ডিমটারে পানিতে ফালায়া দেই। কিন্তু উপায় নাই গোলাম হোসেন... আমি ভুলেই গেছি মোবাইল বিহীন যুগে কীভাবে কাজ করতাম?
এখন তো কাউরো লগে বসুন্ধরা সিটিতে দেখা করতে গেলেও ছয়বার ফোন করতে হয়, ঐ কয় তলায়? ঐ কোন দোকানের সামনে? ঐ ডাইনে না বাঁয়ে?
কী দিনযে আইলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

২০০৪ সালে সিমেন্স দিয়া মুঠোফোনে বউনি আমার। প্রথম ফোন কিনে কত যে উৎফুল্ল ছিলাম। এখন মোবাইল ফোনকে বেশ যন্ত্রণা মনে হয়।
.............................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

প্রবাসিনী এর ছবি

পড়লাম হাসি
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

আমার প্রথম মোবাইলফোন ব্যবহার '৯৪ সালে। বাসার কর্ডলেস ও বোধহয় এরচেয়ে ছোট ছিল তখন খাইছে

মোবাইলে রাত্রেবেলা ফোন আসলে 'গান শুনতে চাই' টা এখন কমে গেছে দেখে বেশ আনন্দ পাই দেঁতো হাসি

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

মূলত পাঠক এর ছবি

শেষের লাইনটা বুঝলাম না। মাইয়ারা তোমারে রাত্রে ফোন করে গান শোনার আশায়? হাসি

সমুদ্র [অতিথি] এর ছবি

স্যামসাং দিয়ে শুরু, তারপর নকিয়া, এখন সনি এরিকসন। ভাবতেছি আবার নকিয়ায় ফেরত যাবো।
ওইদিকে গ্রামীণ দিয়ে শুরু, তারপর সেই যে ডিজুস নিছি ওইটাই আছে এখনো মেইন নাম্বার। মাঝে টেলিটক, একটেল, বাংলালিংক যখন যেইটা অফারে ছিলো। ইটালিতে উইন্ড আর গত পরশু জার্মানিতে কিনলাম ব্লাউ। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।