জন্মসূত্রে হিন্দুমান হওয়ায় আড্ডাছলে প্রকাশ করা কত মানুষের নীচতা যে সারা জীবন প্রত্যক্ষ করেছি তা হলপ করে বলতে পারি না। হিন্দুরা ভুলে যায় আমি অর্ধেক মুসলমান, মুসলমানরা ভুলে যায় আমি শুধুই অর্ধেক মুসলমান তাই দুপক্ষের কাদা ছোড়াছোড়িতে ক্লান্ত আমি। ইদানিং গায়ের চামড়া মোটা করে ফেলেছি তাই কিছুই আর তেমন গায়ে লাগে না। খুব সচেতনভাবে দীর্ঘশ্বাস চেপে ইগনোর করি হাজার অপমান - যা প্রতিনিয়ত তীব্রভাবে আঘাত করে যায় আমার হিন্দু অথবা মুসলমান স্বত্তাকে। প্যালেস্টাইনের বসতি ধ্বংস হবার খবরে আনন্দিত হন যে হিন্দু ভদ্রলোক এবং ভোলায় হিন্দু মা-মেয়ে একই সাথে ধর্ষিত হবার খবর শুনে যে মুসলমান ভদ্রলোক বলেন "বাহ্! গুজরাটের প্রতিবাদে এই তো হওয়া চাই! তাহলে যদি দেশ ছাড়ে মালাউনগুলি!", তাদের দুজনকেই আমি চিনি, নিজের ক্রমশঃ ক্ষয় হতে থাকা আত্মসমানবোধকে ছিন্নভিন্ন করে সাক্ষাতে তাদের দুজনকেই আমি নমস্কার কিংবা সালাম জানাই। কেন জানেন? শান্তিরক্ষার নামে, সামাজিকতার নামে। তারপর প্রচন্ড ঘৃণায় নিজের দিকে তাকাতে পারি না ক'দিন। প্যালেস্টাইনের সেই ধ্বংসযজ্ঞে আরেকবার সর্বস্বান্ত হই আমি, আরেকবার ধর্ষিত হই আমি ভোলায়!
আমি জেনে গেছি যে, যে অসাম্প্রদায়িকতার স্বপ্ন আমার মা-বাবা আজও দেখে যায় তা মিথ্যা, তা অসম্ভব, তা অবাস্তব। নিজেকে যে যত উদারই দাবী করুক না কেন, ভেতরে ভেতরে সব এক, বিশ্রী। আমি এও জেনে গেছি যে আমি মেরুদন্ডহীন, আমি ভীরু। আমার মা-বাবা তাদের ভালোবাসা, তাদের আদর্শের প্রতিফলন তাদের কাজে ঘটিয়েছে অসীম শক্তিতে। আমি তা পারি না। আমি শুধু পারি পালাতে। আমি দেশী ভিড় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেই। ঈদে অথবা পূজায় যখন বাড়ীর কথা মনে পড়ে মনটা আকুল হয় বিদেশবিভূইয়ে একটুখানি দেশীসংগের জন্য, তখনও সাহস করে দেশী পাড়ায় পা দেই না। কারণ ভয়ে আমার বুক কাঁপে! কার সাথে দেখা হবে সেখানে? সামাজিকতা-শান্তিরক্ষার নামে কী অপমান সহ্য করতে হবে মুখ বুজে? তার চেয়ে বরং একা থাকি। তার চেয়ে বরং কেঁদে ভাসুক আমার বুক ইউটিউবে পূজার ঢাক শুনে বা আকাশে ঈদের চাঁদ দেখে।
তাই বেশ কিছুদিন আগে জনৈক সচলের একটি কমেন্ট পড়ে খুব একটা আশ্চর্য হইনি, দুঃখও পাইনি তেমন, আজকাল দুঃখ পেতে ভুলে গেছি। তারপর গতকালকের পোস্টটের প্রতিবাদ দেখে হঠাৎ মনে ভীষন বল পেলাম! আরে, এই তো একদল মানুষ আছে যাদের গায়ের চামড়া আমার মত মোটা হয়ে যায় নি! যারা এখনো প্রতিবাদ করতে জানে, যারা সামাজিকতা বা শান্তিরক্ষার চেয়ে বড় করে দেখে মানবতাবোধকে। সচলগণ, আপনাদের সাথে আমার পরিচয় খুব বেশী দিনের না, সচলও হতে পারি নি এখনও, আপনাদের কাউকে ব্যাক্তিগতভাবে চিনি না, দেখা হয়নি কখনও কারো সাথে, মিলি নি কখনও কোনো সচলাড্ডায়। তবু আজকে আপনারা আমার বড় আপন হয়ে গেলেন!
প্রতিবাদের ভাষা আপনাদের ভিন্ন হতে পারে। অরুপের মত চাঁছাচোলা হতে পারে। হতে পারে নাজমুল আলবাব, হাসান মোর্শেদ অথবা স্নিগ্ধার মত মৃদু অথচ দৃঢ়। অথবা মূলত পাঠকের মত বিশ্লেষনধর্মী হতে পারে সে প্রকাশ। তবু সারমর্ম কিন্তু এক! ভাষা নিয়ে আপনারা নিজেদের মধ্যে যতই মাতুন তর্কে, আপনাদের বক্তব্য কিন্তু এক! সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই সচলায়তনে, তা সে যত অনিচ্ছাকৃতই হোক!কী বলে ধন্যবাদ দেই আপনাদের? কীভাবে জানাই আমার কৃতজ্ঞতা?
মন্তব্য
লেখার শেষে আপনার নামটা দিয়ে দিলে ভালো হতো।
কিছু কিছু মানুষ আছে যারা মানবিকতা নয়, ধর্মকেই বিশাল করে দেখতে চায়। এক ধর্মের লোক অন্য আরেক ধর্মের লোককে মারলো বা কোন অত্যাচার করলো, এতে ধর্মের কতটুকু ক্ষতি হলো জানিনা কিন্তু মানবিকতা একটা পিশাচের কাছে পরাস্ত হলো - এটাই আমার উপলব্ধি। একটা কথা মনে রাখি সবসময় - মানব ধর্মই বড় ধর্ম।
--------------------------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
সহমত। ধন্যবাদ অনুপম।
উত্তরাধিকার সূত্রে ধর্ম একটা পেয়েছি এটা সত্যি। তবুও যে ধর্মই হোক না কেন, জ্ঞান আমার খুব অল্প। কখনও ইচ্ছাও হয়নি জানার। আর এই বিষয় নিয়ে গ্যাঞ্জাম দেখলে পালিয়ে বেড়াই। অবশ্যই তা আমার দুর্বলতা।
আজ বলি, ক্ষমা চাই; আমার তরফ থেকে। যদিও এই ছোট্ট 'ক্ষমা' কখনই ঐ কথাটি কে ফিরিয়ে নিতে পারবে না। তবুও ভুলগুলো পাশ কাটিয়ে যেতে হবে যে অনেকদূর, একে অন্যের হাতটা ধরে।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। ক্ষমা কেন চাইছেন ভাই? পাশে আছেন জানিয়ে গেলেন এই তো যথেষ্ট! আমার আশে-পাশে এতগুলি হাত পেয়েছি বলেই তো আবার চলতে সাহস করা!
ভালো থাকবেন।
এর থেকে বড় সত্যি কথা মনে হই আমি এখনও পর্যন্ত শুনি নাই।
মোটামুটিভাবে আমার জীবনের কথাগুলাই বলে গেলেন। ছোটোবেলা থেকেই নানারকম কথাবার্তা শুনে এসেছি- কলকাতায় কয়টা বাড়ি আছে, এইসব হাবিজাবি, ছেলেপেলেদের কথা অতটা আমলে নিতাম না, কিন্তু টিচারদের গুলা একদম গায়ে বিধত... তাও চুপ করে শুনে যেতাম, কিন্তু ক্র্যাক করলাম মেডিকেল কলেজে এসে। একদিন এক 'শিক্ষক' কে মুখের উপর কিছু কথা বলে বসলাম, যার জের আমাকে অনেকদিন ধরে টানতে হয়েছিলো। এমন একটা প্রফেশনে আছি যে অনেক মানুশজনের সাথে মিশতে হয়- হয়ত গায়েগতরে বড় হয়েছি দেখে লোকজন সামনাসামনি হয়ত কিছু বলে না, কিনতু চোখের ভাষা এখন ভালই পড়তে পারি। তবে একটু চোখ জ্বালা করে উঠেছিল যখন ইমারজেন্সি তে আসা শক এর পেশেন্টকে রক্ত দেবার সময় তার বাবা প্রশ্ন করে , 'ডাক্তারসাহেব, আপনি মুসলিম তো, নাম দেইখা ত কিছু বুজবার পারতাসি না'...
When you're strange
Faces come out of the rain
-তন্ময়
তন্ময় আমার সহানুভুতি গ্রহণ করুন।
আমার ভাগ্য আপনার থেকে কিছু টা ভালো তাই "কলকাতায় ক'টা বাড়ি আছে" জাতীয় কোনো কথা কখনও শুনতে হয়নি। কিন্তু তথাকথিত কিছু শিক্ষকের কাছ থেকে ভীষন বিচ্ছিরি কিছু কথাবার্তা শুনেছি এবং সত্যি, সেগুলো এখনও বুকে বাজে!
ভালো থাকবেন।
আপনার লেখাটা হৃদয় ছুঁয়ে গেল। অতিথি লেখকের আড়ালে আপনি যেই হোন, সত্য কথাগুলো প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ। সচলে আসিনি বেশ কিছু দিন, তবে বিচ্ছিন্নভাবে শুনেছি কি ঘটেছে। প্রতিবাদে তখন সামিল না হতে পারার জন্য খারাপই লাগছে। আমরা অনেকেই নিজেদের 'প্রগতিশীল' বলে দাবি করি, বিভিন্ন প্রগতিশীল ফোরামে/ব্লগে লেখালিখিও করি, কিন্তু মনের গহীনে পুষে রাখি সে ছোটবেলায় শেখা সাম্প্রদায়িকতার সুপ্ত বীজ। এ থেকে বেরুতে পারিনা আমরা অনেকেই। আমি যখন প্রথম স্কুলে গেছি - যখন ধর্মের এতকিছু বুঝতামও না - তখনই দেখেছি ছোট ছোট ছেলেরা রবীন্দ্রনাথ বড় না নজরুল বড় - এ নিয়ে অযথা তর্ক করতে। তর্কের ভিত্তি সাহিত্য হলেও না হয় কথা ছিল। তর্কের ভিত্তি ছিলো ধর্ম। অথচ তখন এ কথা জানার পর্যন্ত বয়স হয়নি যে, যে রবীন্দ্রনাথকে 'হিন্দু' বলে গালি দেয়া হচ্ছে - তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম। আর নজরুল তো লিখেই গেছেন - 'মুর্খরা সব শোন, মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন'। অথচ এগুলো না জেনেই হীন সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোন থেকে তর্ক দেখিছি সেই ছোট বয়সেই। বাংলাদেশের কোন হিন্দু ছেলে বাংলাদেশে থেকেছেন অথচ পেছনে 'মালাউন' গালি শোনেনি, তা বোধ হয় সম্ভব নয়। আমার সামনেই আমার বন্ধুদের হিন্দু স্যার সম্বন্ধে বলতে শুনেছি - 'সত্যব্রত স্যার - ওই যে মালাউন স্যারটা...'। অথচ সত্য স্যার ছিলেন স্কুলের একমাত্র পিএইচডি করা শিক্ষক। তার মত পড়াতেও পারতেন খুব কম শিক্ষকই। অথচ সব কিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছিল তার 'মালাউন' পরিচয়। বড় হয়ে আমার মত কট্টর নাস্তিককেও শুনতে হয়েছে - 'ভারতে তোদের কোথায় জমি আছে রে?' অথচ ভারতে জমি কেন আমাদের জন্য অপশনই ছিলো না কখনো। আমার বাবাকে নিয়ে একটি লেখায় আমি সেটার উল্লেখও করেছিলাম। হার সখ্যালঘু পরিচয়ধারি হিন্দুদের উপর অত্যাচারের কাহিনী না হয় নাই বললাম এখন। এগুলো সবই দেখেছি।
আবার উল্টোটাও যে দেখিনি তা হয়। এরশাদের সময় যখন বাবড়ি মসজিদ ইস্যু নিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি করা হয়েছিলো, হাজার হাজার হিন্দুদের ঘর দোর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো, এমনকি ঢাকাতেও আক্তান্ত হয়েছিলো মরণ চাঁদের দোকান - তখন আমাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন বহু মুসলমান বন্ধুই। যদিও ঢাকা শহরের যে এলাকে আমরা থাকতাম- সেখানে আক্রমনের সম্ভাবনা কখনোই ছিলো না, তবুও আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের উদ্বেগাকুল মুখ গুলোর কথা আমি ভুলি কি করে?
আমি আসলেই ভাবি, একদিন হয়ত আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব। ধর্মীয় পরিচয়ে নয়, মানুষ পরিচয়ে। নজরুলের মত বলতে পারব - 'যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্লিম-ক্রীশ্চান।'
ধন্যবাদ
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
সত্য স্যারের প্রতি বা সবিতা টীচারের প্রতি ওই বিদ্রূপের নতমস্তক সাক্ষী আমিও, তিনি আমার বাবার খুব ছোটবেলার বন্ধু, একদম পাশাপাশি বাড়ি ছিলো গ্রামে,তিনি স্কুল ছেড়ে দেয়ার পরবর্তী সময়ে তাঁর মুসলিম বিদ্বেষের অথবা আরো ভালো করে বললে ধর্মানিভূতির সংখ্যাধিক্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্ গার (একেবারে বিষোদ্ গারই বলছি কারণ ভাষায়,সংবেদনশীলতায় তাই দেখেছি) দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু বাস্তবতা তাঁর জন্য অনেক কঠিন জন্যেই হয়তো আমার বাবা-মা স হানুভূতিশীল ছিলেন এই উদ্ গারের ব্যাপারে। কতটা পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থাকলে একজন শিক্ষক বলতে পারেন তাঁর ইচ্ছে হয় সব মুসলমান নাম দেখে লিস্ট ধরে দশ নাম্বার কমিয়ে দিতে, সেটা কিন্তু ম/ বাবা বুঝতেন। কারণ ঠিক এই একই প্র্যাকটিস গুটিকয় মুসলিম শিক্ষক হিন্দু ছাত্রদের ক্ষেত্রে একেবারে নিয়ম করে করতেন। আমার বাবামায়ের সান্ত্বনা,স হনশীলতা, চর্চা, বুদ্ধি, বিবেক সবকিছুই হয়তো তাঁকে সাহায্য করতো ক্ষোভ বা দুঃখকে প্রশমিত করতে।
আমার মা একটা কথা সবসময় বলতেন এসব জিনিস দেখে যে, অন্যের দু্র্ব্যবহার থেকে ভালোটা শেখাটা খু-উ-ব জরুরী। নইলে মনুষ্যত্ব কথাটার অর্থ থাকেনা। রবি ঠাকুর যেহেতু বলে গ্যাছেন ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয় - তাই আমাদের নিজেদের মধ্যের আধি ব্যাধিগুলোকে দেখে জীবনাচারণে পরিবর্তন আনাটাই খুব কাজের কথা।
এই লেখাটির লেখককে বলিঃ ভরসা হারাবেন না, কিছু মানুষ আছি, কিছু মানুষ থাকেই সবসময়। আনন্দে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখাটাও একটা চর্চা, সেটা আমরা যেন ভুলে না যাই। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা।
সত্যব্রত, সবিতা ! আপনারা উদয়নের নাকি ?
ধন্যবাদ S-S, আপনাদের সাথে পরিচয় হয়ে কী পরিমাণ ভরসা পাই বলতে পারি না। ভরসা তো রাখতেই চাই কিন্তু জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত লাগে প্রায়ই, তাইতো পালিয়ে বেড়াই।
ভালো থাকবেন।
"ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়"-এটা প্রমথ চৌধুরীর লেখায় পড়েছি বলে মনে হচ্ছে।
"আনন্দে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখাটাও একটা চর্চা, সেটা আমরা যেন ভুলে না যাই।"
আপনার মন্তব্যের সাথে একমত।
প্রথমেই বলি অভিজিৎ, লিংক ধরে আপনার লেখাটা পড়লাম। আপনার বাবার জন্য রইল আমার শ্রদ্ধা। আমার বাবারও থিক একই ব্যাপার, দুই জেঠু দেশ ভাগের পরপরই কলকাতা চলে গেলেও দাদু বা বাবা কখনও যাওয়ার কথা ভাবেনি, পাকিস্তান আমলের নানা ঝামেলা এবং তারপর এরশাদ-বাবরি মসজিদ-মৌলবাদ সমস্ত উপেক্ষা করেই রয়ে গেছে মাটি কামড়ে। আর কলকাতায় বাড়ি করার তো প্রশ্নই আসেনা!
বাবড়ি মসজিদের ভয়াবহ দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দিলেন, তখন আমার নয় বছর বয়স, শীতকাল ছিলো, মা রাতের বেলা মোজা পড়িয়ে ঘুম পাড়াতো, যদি মাঝরাতে আক্রমণ করে তাহলে দৌড়াতে হবে, মোজা পড়ার সময় হবে না যে! তখন কিন্তু মনে হয় নি এ সাংঘাতিক বড় কোনো ব্যপার, বরং একটা এ্যাড্ভেনচার-এ্যাড্ভেনচার ভাব হতো, কিন্তু এখন ভাবলে বুকটা কেঁপে ওঠে ভয়ে, চুড়ান্ত অপমানে দম বন্ধ হয়ে আসে! কিন্তু তার চেয়েও বেশী যে ব্যাপারটা নাড়া দিয়ে যায় তা হলো আমাদের পরিবারের যতটুকু কষ্ট সইতে হয়েছে তা কিন্তু বাংলাদেশ এবং ভারতের সেসময়কার পটভূমীতে অনেক অনেক পরিবাবের অত্যাচারের কাহিনীর তুলনায় নস্যি! কিছুই না! হিন্দু-মুসলমান দুপক্ষের যে চরম বর্বতার রূপ আমরা তখন দেখেছি এবং এখনও দেখে যাই তার এক বিন্দু কিন্তু আমার গায়ে লাগেনি! কিন্তু ততটুকুই আমার মনে যে গভীর ক্ষত রেখে গেছে তারই উপশম আমি এখনও খুঁজে বেড়াই। তাহলে লক্ষ লক্ষ রাম-রহিম, সীতা আর সায়েরা কে কী বলে স্বান্তনা দেই আমি?
সহানুভূতি জানালাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
অনেক ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই।
ভালো থাকবেন।
প্রিয় অতিথি লেখক, আপনার কষ্ট-টা আমাদের-ও।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
ভাই সিমন অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার কষ্টের ভাগী হওয়ার জন্য। আপনাদের জন্যই সচলে আসলে মনে হয় একা তো নই আমি!
ভালো থাকবেন।
যে মন্তব্যের প্রতিবাদে লিখেছিলাম, তা পড়ে ততো মন খারাপ হয় নি যতোটা হলো আপনার এই লেখা আর ওডিন ও অভিজিতের কথা জেনে। বলার কিছু নেই বোধ হয়। যদি কোনো ভাবে এক মুহূর্তের জন্যও কোনো মন খারাপের উপশম হয়ে থাকি তো আমি আনন্দিত।
সংখ্যালঘু শুধু ধর্মে হয় না, আরো নানা ভাবে হয়। তার কোনোটা লঘু, কোনোটা আরো তীব্রও হতে পারে, বিশ্বাস করুন সম্ভব হলে। জানি এ কোনো সান্ত্বনা নয়, কেউ অনাহারে থাকলে আমার আধপেটা খাওয়ার কষ্ট কিছু কমে তা তো নয়। কিন্তু ব্যথাটা একই গোত্রের, সেই সম-বেদনায় আমরা এক নৌকার যাত্রী। সুস্থ পরিমণ্ডল গড়ে তোলার দায়িত্বও আমাদের সকলের। সাথে এও বলি, যাঁরা অনেক সময় বেফাঁস মন্তব্য করেন তাঁরা তাঁদের ভুল বুঝতে পারলে সেটাও একটা সুখকর ব্যাপার হয়, এবং সে আশাও ছাড়া উচিত নয়।
ভালো থাকুন, সম্ভব হলে আপনার নাম জানান। আরো লিখুন। বিষয় মাহাত্ম্য ছাড়াও, আপনার লেখার হাত খুবই ভালো মনে হলো, আপনার লেখা পড়তে পেলে খুশি হবো।
এই সমবেদনাই তো অমূল্য! এই কথাগুলির মধ্যেই তো পাই একাকিত্বের উপশম, এগিয়ে চলার শক্তি, ভরসা রাখার সাহস। তাই আবারও ধন্যবাদ জানাই।
অনেক ধন্যবাদ উৎসাহের জন্য। সচলে কিন্তু আমি একটূ-আধটু লেখালেখি করি তবে এত অকপটে ব্যাক্তিগত কথা লেখার সাহস হয়নি আগে। এত ব্যাক্তিগত কথা কেউ শুনতে চাইবে ভাবিনি কখনও। আপনারা আমার সাহস বাড়িয়ে দিলেন!
ভালো থাকবেন।
লেখাটা পড়ে চুপ করে রইলাম। আপনার বাবা ও মায়ের জন্য রইলো অপরিসীম শ্রদ্ধা। তাঁরা তো পেরেছেন।
একদিন, আজ থেকে হয়তো হাজার বছর পরের পৃথিবীতে যে সুন্দর একটা সমাজ আসবে, তা এইসব মানুষের জন্যই। কারণ তাঁরা পরত পরত প্রাচীরের আবরণ ভেদ করে মানুষের হৃদয় দেখতে পেয়েছিলেন।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তুলিরেখা, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আমার মা-বাবার মত অসাম্প্রদায়ীকতার ব্যাপারে এমন অপরিসীম আপোষহীনতা আমি জীবনে খুব কম দেখেছি। আমার মা-বাবা কিন্তু কেউই নাস্তিক না, তারা কেউ তাদের ধর্ম ত্যাগ করেনি, তাদের নিজেদের মত করে তারা দুজনেই তাদের ধর্মপালন করে। তাই আমার বেড়ে ওঠা দুটি ধর্মকে সংগে করেই এবং সকল ধর্মের প্রতি সমানভাবে স্রদ্ধাশীল হয়ে। এই শিক্ষাটুকুর জন্য আমি তাদের কাছে ভীষনভাবে ঋনী।
ভালো থাকবেন আপনিও।
আপনি কে আমি জানি না । কিন্তু আপনার লেখা, আপনার আবেগ সমস্ত কিছু নাড়িয়ে দিলো । ঠিক আপনার মতো নয় , কিন্তু, মুসলমান ঘরে জন্মেও কেবল নামের জন্য যতোটা নিগৃহীত হয়েছি __ সেই অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি হিন্দু ,মুসলিমের বেড়া ভাঙ্গা কতো দুরের কাজ । তবু আশাবাদী একদিন এই পৃথিবীটা আপনার বাবা-মা`র মতো মানুষে ভ`রে উঠবে ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
অনেক অনেক ধন্যবাদ সুমনদা। আপনাদের সবার লেখা পড়ে আমিও আজকাল বাড়াবাড়ি রকম আশাবাদী হয়ে পড়ছি। যদি আশাভংগ হই তাহলে আপনাদের সবার সাথে তো সে দুঃখ ভাগ করে নিতে পারব, এই আমার ভরসা।
ভালো থাকবেন।
সম্প্রদায় যতদিন আছে অসাম্প্রদায়িকতা আসবে না হয়তো। দুয়েকজন থাকবেই যারা একে ব্যবহার করবে মানুষকে আঘাত করতে। আমি আশাবাদী নই।
আপনার লেখাটা নাড়া দিয়ে গেল। অসাধারণ লেখার হাত আপনার ।
_________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
ভাই বিনীত ধন্যবাদ গ্রহণ করুন।
আপনার কথা হয়ত ঠিক, হয়ত সাম্প্রদায়িকতার জাল থেকে কখনও মুক্ত হবে না মানুষ। কিন্ত এই যে এতগুলি মানুষ আমরা পরস্পরের পাশে আছি, এই বা কম কী? আশাভংগের ভারও নাহয় সবাই মিলেই বইব।
ভালো থাকবেন ভাই।
হয়তো সে আলোর পরিমাণ খুব সামান্য, তবুও হৃদয়ে সেই আলোর শিখাটুকু নিয়ে আমরা জেগে আছি অন্ধকারকে মুছে দিতে।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
খুব ভালো লাগলো আপনার কথাটা।
ভালো থাকবেন।
কয়েকদিন সচলে অনিয়মিত ছিলাম, আপনার লেখাটা পড়ে পেছনে ফিরে গিয়ে সবকিছু দেখলাম। অসম্ভব ধন্যবাদ আপনার লেখাটার জন্য। নামটি জানিয়ে যাবেন আশা রাখি।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
অনেক অনেক ধন্যবাদ জাহিদ।
ভালো থাকবেন।
আপনি সর্বশেষ যে অনুভবে এসে পৌঁছেছেন, সেটা শুনে ভালো লাগছে।
নাম জানানোর দরকার নেই, কারণ কেন যেন মনে হচ্ছে আপনাকে বড্ড বেশি চিনি।
আমার নানান অভিজ্ঞতাও যে আপনার মতোই। তবে আমি বিশাল মাপের ত্যাড়া ছিলাম, আমার ত্যাড়ামির সামনে অবশ্য অনেকেই পরে মিউ মিউ করতে বাধ্য হয়েছে।
মুক্তবুদ্ধির মানুষ খুব বেশি আশা করি না। এই জাতের মানুষ অল্পই হয়। চারদিকে বর্বরতার চর্চাই বেশি। ঐ অল্প যে কিছু মানুষ আছে, এদের নিয়েই আমার বেশ দিন কেটে যায়। ভালো থাকুন।
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
ভাই, কিছু ত্যাড়ামি আমিও করেছি, একেবারে যে করি নাই তা না। তবে প্রশ্ন হচ্ছে কারো কোনো রকম ক্ষতিসাধন না করে, শুধু নিজের বিশ্বাসটুকু অবলম্বন করে বাঁচতে চাইলে প্রতি পদে কেন ত্যাড়ামি করতে হবে?
এই কথাটা খুব ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন আপনিও।
আপনার লেখাটা পড়ে ভাল লাগলো,আপনার নামটা দিলে পারতেন ।
আপনার মা বাবার প্রতিও শ্রদ্ধা রইলো।
--------------------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রজাপতি। মা-বাবা অসম্ভব বেয়াড়া রকমের আশাবাদী মানুষ। আমাদের প্রজন্মের এত মানুষ তাদের অসাম্প্রদায়ীকতাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে শুনে তারা অত্যন্ত আনন্দিত হবে!
দিনের শেষে আপনার মত সবাই যেন এই কথাটি মনে রাখেন, খুব ভালো লাগল আপনার লেখাটা। নাম টা জানালে খুশি হব। আর সচল হন নি, হয়ে যাবেন, লিখতে থাকেন।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আপনার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক ভাই।
ভালো থাকবেন, আপনাদের লেজেন্ডারী সচলাড্ডায় কোনোদিন দেখা হয়ে যাবে এই আশা রাখি।
আমার মনে হয় মণিরত্নমের " Bombay", ভিদু ভিনোদ চোপড়ার " Mission Kashmir" এবং স্টিভেন স্পিলবার্গের "Schindler's List" প্রত্যেকটা মানুষের দেখা উচিত। (সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠতে হলে)
রাজিব মোস্তাফিজ
ধন্যবাদ আপনাকে।
ব্লগে বোঝা যায় কিনা জানিনা, বাস্তবে আমি সাংঘাতিক রণং দেহী টাইপের, সারাক্ষণই খ্যাক খ্যাক করতে থাকি
আর সেজন্যই বলি - আমি হলে ঈদ এবং পূজো দুটোই করতাম, দরকার হলে মারপিট করেই। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দু'দুটো উৎসব ছেড়ে দেবো!
সচলায়তনে স্বাগতম। এতো মন খারাপ করবেন না
খানিকটা আমার মায়ের মত মনে হচ্ছে!
ঈদ কিংবা পূজা, কোনটাই মারপিট করে করতে হবে বলছি না স্নিগ্ধা আপা, কিন্তু শুধু শুধু মন খারাপ করে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনার হাত থেকে মাঝে মাঝে গুটিয়ে নেই নিজেকে।
একটা উদাহরণ দেই। এদেশে যখন প্রথম পড়তে আসি বয়স তখন সবে সতেরো। একটু-আধটু গান করার বদভ্যাস আছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাড়ায় ঈদের অনুষ্ঠান হচ্ছে,আমাকে বলা হলো একটা গান গাইতে। রবীন্দ্রনাথের একটা গান ধরতেই জোরে-সোরে চিৎকার শুরু হলো, "এসব বুঝিনা, ট্রান্সলেট করে দেন"। আমাকে থামিয়ে দেয়া হলো প্রথম অন্তরার আগেই। তারপর কিন্তু সে অনুষ্ঠানে একের পর এক হিন্দি গান চল্লো। হতবাক হয়েছিলাম সেদিন তুচ্ছ ব্যাপারে এমন প্রকট সাম্প্রদায়ীকতার প্রকাশ দেখে। সে পরিস্থিতিতে মারপিট করে খুব একটা লাভ হতো কি আমার?
আমার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, সাম্প্রদায়ীকতার যেকোনো রকম প্রকাশ দেখলেই তা আমাকে ভীষনভাবে আঘাত করে। তার কারণ বোধ হয় এই, যে আমার পুরো অস্তিত্বই অসাম্প্রদায়ীকতার ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রদায়ীক আচরণ মানেই সেই অস্তিত্বর ওপর আঘাত। আমি খেয়াল করে দেখেছি আমি যখন সেরকম কোনো পরিস্থিতির সম্মুখিন হই, আমার মারপিট করার শক্তি থাকে না, আমি শুধু গুটিয়ে নেই নিজেকে।
না, মন খারাপ আর করব কেন? এখন তো সন্ধান পেয়েছি আপনাদের মতো রনংদেহী টাইপ মানুষদের। আশায় বুক বাঁধলাম এবার।
অসম্ভব ! আপনার মন্তব্য, যুক্তি দেখে মনে হয় আপনি খুবিইইই ঠান্ডা মাথার যুক্তিবাদী মানুষ।
থাম্বস আপ। আরেকটু বিদ্রোহী হয়ে উঠুন এই কুপরামর্শটুকু দিতে চাই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আরে! এতো পুরো আমার মায়ের উপদেশের মত শোনাচ্ছে! তথাস্তু!
ভালো থাকবেন।
অনেকদিন সচলে আসিনি। তানবীরা আপুর লেখাটিও এক বন্ধুর দেওয়া লিংক ধরে পড়া; আমি যা বলতে চেয়েছি, তা অন্য সচল ও অতিথিরা সেখানে বলেছেন দেখে মন্তব্য করিনি।
আজ আপনার লেখাটি পড়ে শুধু মন্তব্য করার জন্যই লগইন করলাম। লেখাটির প্রতিটি কথা হৃদয়ে গেঁথে গেলো।আর আপনি সচলকে যে আস্থার জায়গায় স্থান দিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তাই যেনো হয়। ...
জয় হোক শুভ চিন্তার। জয় হোক মানবতার।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
অনেক অনেক ধন্যবাদ বিপ্লব।
আপনার শ্লোগানটা ভীষণ ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
আপনার সাথে আছি। ভালো থাকবেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন আপনিও।
এ ব্যাপারগুলি নিয়ে ব্লগের পাতায় আর কিছু বলার ইচ্ছা ছিলো না। শুধু আপনার লেখাটা পড়েই লগিন করলাম।
চমৎকার লেখা। দুঃখটা বুঝতে পারলাম যদিও জানি এর কোন প্রতিকার নেই, অন্তত আশু। এটাই বলতে চাই, ভালো থাকুন।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দুঃখটা বুঝতে পারলেন সে কথা জানাবার জন্য। আপনিও ভালো থাকবেন।
একটা ঘটনা বলি -
আমি স্কুলে থাকতে দেখতাম (সেই ৯০ এর দশকে) হিন্দু ছাত্রদের অপদস্থ করার জন্য তাদের মালোয়ান বা মালু বা মালাউন বলছে কোন কোন সাম্প্রদায়িক মনোভাবধারী ছাত্র। তো একদিন এক হিন্দু ছাত্র গিয়ে ক্লাশের শিক্ষককে বিচার দিয়ে বলল- স্যার রিয়াজ আমারে মালু বলছে। স্যার টিটকারী দিয়ে বলল, ঠিকই তো বলছে, তুই তো মালুই। তো সেই বেচারার বিমর্ষ অপমানিত মুখটা আজকে আপনার পোস্ট দেখে মনে পড়ে গেল, আর মনটাও খারাপ হয়ে গেল।
আজ এতদিন পরে ব্লগে এসেও আবার সেই ধরনের নোংরা মানসিকতাধারী মানুষজনের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। মাথার ভেতরের গুহার অন্ধকার দূরীকরন খুব সহজ নয় অনেকের জন্যই।
ভালো থাকবেন।
লজ্জা !! লজ্জা !!
... অতিথি লেখক, ভালো থাকুন। সম্ভব হলে নিয়মিত লিখুন।
---------------------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
সুহান এ লজ্জা মোটেই আপনার না! আপনি তো একজন মুক্তবুদ্ধির মানুষ হিসাবে সমানভাবে নিপিড়ীত। আপনি কেন লজ্জার ভাগ নেবেন?
ভালো থাকবেন ভাই।
কী আর বলব! এই সমস্ত স্মৃতি বড়ই কষ্টের। তবে এই সমস্ত স্মৃতিই বোধ হয় আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়ীকতাবিরোধী চেতনাকে জাগিয়ে তোলে, জাগিয়ে রাখে।
ভালো থাকবেন আপনিও।
চমৎকার লেখা! আমিও আশা ছেড়ে দিই...আবার জেগে উঠি। পারিবারিক সম্মতিক্রমে আমি এবং আমার অর্ধাঙ্গিনী দুজনে দুই ধর্মের। স্বপ্ন দেখি সব রকম বর্ণবাদ মুক্ত পৃথিবীর! খুব ভাল লাগলো ভাই...
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
ভাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমারও আপনারই মতো দশা, বিয়ে করেছি যাকে তিনি আবার তৃতীয় একটি ধর্মাবলম্বী। আমাদের বাড়িতে তাই সারাটা বছরই উৎসব লেগে থাকে!
ভালো থাকবেন।
হিংসা হইতেছে
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ঈদ-পূজা-ক্রিস্মাস শেষে হাত তো পুরা খালি।
অন্য সবার মত লেখাটি আমাকেও নাড়া দিয়েছে। ধন্যবাদ এমন একটি বিষয়ে মন খুলে (জানি না আসলে পুরোটা মন খুলতে পেরেছেন কি না) লেখার জন্য।
বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটি হিন্দুর সন্তানকে ভয়ংকর রকমের অপমান-নিপীড়নের শিকার হতে হয়। আমার নিজেরও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার অভাব নেই। লিখতে গেলে দিন-মাস ভরে লেখা যাবে। একটু বড় হয়ে নিজেকে যখন প্রকাশ করতে সক্ষম হতে থাকি, তখন প্রতিরোধ এক-আধটু করতে পেরেছি, দেয়াল তুলতে পেরেছি কিছু ক্ষেত্রে। স্বনির্বাচিত সম্পর্কের মধ্যে যখন জীবন যাপনের সুযোগ হয়েছে, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং তার পরে অনেক অসাম্প্রদায়ীক মানুষের বন্ধু-আপনজন হতে পেরেছি। এই সম্পর্কগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জন্মগত ধর্ম পরিচয়টা চেতন-অবচেতনে অনুপস্থিত থাকে। আমি এটাকে অনেক বড় ব্যাপার মনে করি।
বাংলাদেশে, এবং অন্যান্য দেশেও হয়ত, সংখ্যায় যারা কম, দুর্বল, অথবা নারী, তারা নানা বঞ্চনা-নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের অনেকেই নিশ্চিন্হ হয়ে যায়, যাচ্ছে। যেমন আমাদের দেশের পাহাড়-সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তারপরও মানুষ সমতার, সমমর্যাদার জীবনের স্বপ্ন দেখে। অনেক দুর্বল হলেও সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সক্রিয় থাকে কেউ কেউ। আমরাও তাদের সাথে যুক্ত হয়ে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি গ্লানিময় অন্ধকার থেকে। অনেক শুভকামনা আপনার জন্যে।
খুব ভালো লাগলো এই আশার বাণীটুকু। আমাদের দেশের পাহাড়-সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কথাটা বিশেষভাবে তুল্লেন বলে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনার জন্যও শুভ কামনা রইল। ভালো থাকবেন।
আমার আগের মন্তব্যটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল, তাই আবার লিখছি, পুনরাবৃত্তি হলে ক্ষমা চেয়ে রাখছি।
আপনার এই আশার বাণীটুকু খুব ভালো লাগলো। আমাদের দেশের পাহাড়-সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কথাটা তুল্লেন বলে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনার জন্যও রইল অনেক শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
নিয়মিত লিখুন।
ধন্যবাদ হিমুভাই। মোটামোটি নিয়মিত লিখতে চেষ্টা করি।
উঁহুহু। নিয়মিত লিখুন মানে একেবারে নিবন্ধন করে ঘ্যাজম্যাজ করে লিখে চলুন।
দাদা, নিবন্ধন করাই আছি ...
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
সে কী। তাহলে এই নিকটা ব্যবহার করে লিখছেন না কেন?
যেদিন এই পোস্টটা দেই সেদিন একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম, ভেবেছিলাম একজন anonymous মানবসন্তান ছাড়া আর কোনো পরিচয়ই তো নেই আমার। তাই সেই পরিচয়েই লেখা।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
সচলায়তনে -
সাম্প্রদায়িকতা/বর্ণবিদ্বেষেরকোনো স্থান নেই
ছাগু সাহিত্যের কোনো স্থান নেই
রাজাকার/ড়াজাকারির কোনো স্থান নেই
ব্যক্তিগত আক্রমন/গালাগালির কোনো স্থান নেই
কপিপেস্টের কোনো স্থান নেই
ফ্লাডিং এর কোনো স্থান নেই
অশ্লীলতার (চটিসাহিত্য,পর্ণ ছবি )কোনো স্থান নেই ।
সচলায়তন আছে এক ঝাক পায়রা যাদের পারস্পরিক ভালবাসা আর সৌহার্দ্যতায় গড়ে উঠেছে এক বিশাল সচল পরিবার -
আমাদের এই সচল পরিবারে আপনাকে স্বাগতম ।লিখুন নিয়মিত ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আমি তো ছবিতে কোন পায়রা দেখলাম না । পায়রা তো দুরের কথা একটা পেঁচা পাখিও নাই ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
পায়রা গুলি মনে হয় পালাইছে ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
সম্পুর্ণ সহমত মানিক ভাইয়ের সাথে। মানিক ভাইকে মানিক ভাইয়ের হস্ত। ঃ))
আমার মনে হয়, আপনার এই প্রশ্নের সব থেকে ভাল উত্তর দিয়েছেন মানিক ভাই, ৪৯ নং মন্তব্যটাতে । আমাদের এই সচল পরিবারে একবার যখন ঢুকেছেন, আরো কিছুদিন ঘুরে ফিরে দেখুন । অনেকেউ একবার উঁকি দিয়ে আর ফিরে যেতে পারেনি । আর আপনি তো একেবারে আস্ত একটা ব্লগ দিয়ে দিলেন ।
বিড়ি খান ? খাইলে চলেন দুইটা বিড়ি ধরাই ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
বিড়ি না খেলে অসুবিধা নাই , চলে আসুন মাশরুমাড্ডায় ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
বিদেশে থাকে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
তাতে কি ? মামুনও তো বিদেশে থাকি কিন্তু সেকি মাশরুমাড্ডায় যো্গ দেয়নি ? যখন দেশে আসবে তখন আমরা মিলিত হবো , বরাবরের মত । আগাম দাওয়াত দিয়ে রাখলাম আর কি ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
মানিক ভাই অসংখ্য ধন্যবাদ এমন সাদর নিমন্ত্রণের জন্য, অবশ্যই আসবো।
আপনাদের প্রবাদপ্রতিম সচলাড্ডার লোভ কি সামলানো যায়?
অনেক পুরোনো পোস্ট ঘেটেও আপনার বাম হাতের ব্যাপারটা বুঝলাম না। আমাকে একটু বোঝাবেন কি কষ্ট করে?
ভালো থাকবেন।
ভাই বিড়ি না খেলেও মনে করেন আপনার সাথে একটা ভারচুয়াল বিড়ি ধরালাম!
ভালো থাকবেন, আশা করি সচলাড্ডায় একদিন দেখা হয়ে যাবে শিগ্গিরি।
সহানুভূতি নিন। আমরা সবাই এক হলে নিশ্চয়ই একদিন এই মূর্খ দলাদলি আর ঘৃণার বিলোপ পাবে।
আপনার লেখার ধাঁচও চমৎকার লাগলো। আরো লেখা দেখার প্রত্যাশায় রইলাম।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
বিনীত ধন্যবাদ ভুতুম। ধন্যবাদ আপনার আশার কথাটুকুর জন্যেও।
আপনার নামটা দেখে ঠাকুরমার ঝুলির কথা মনে পড়ে গেল। ভালো থাকবেন ভাই।
লেখাটা ভীষণ ছুঁয়ে গেলো, নিয়মিত লিখুন ...
অসংখ্য ধন্যবাদ রায়হান। ভালো থাকবেন ভাই।
লেখাটা ভাল লাগল। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে সব সময়...
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ধন্যবাদ শিক্ষানবিস। আমি আপনার যুদ্ধাপরাধীবিরোধী কাজের কথা জানি, আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন।
"ভোর হয়নি,আজ হলো না,
কাল হবে কিনা তাও জানা নেই,
পরশু ভোর ঠিক আসবেই-
এই আশাবাদ তুমি ভুলো না।"
মাহমুদুজ্জামান বাবু এই কথাগুলো বোধ হয় আপনাকেই বলেছেন।আশা হারাবেন না।
ধন্যবাদ অনিন্দ্য, গানটা খুঁজে নেব। ভালো থাকবেন।
সাথে আছি সহানুভূতি নিয়ে। নিজেকে ধর্মবিমুক্ত দাবী করছি না, কিন্তু ধর্মের ছাতা মাথায় দিয়ে যারা মানব পরিচয়কে হেয় করে; তাদের জন্য ঘৃণা।ageing are
আপনার মন্তব্য বোধ হয় পুরোটা পেলাম না।
সহানুভূতির জন্য অনেক ধন্যবাদ। ধর্মবিমুখ কেন হবেন ভাই? আমি নিশ্চিত জানি যে নিজে অত্যন্ত ধার্মিক হয়েও অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া যায়, ভীষনভাবে অসাম্প্রদায়ীক হওয়া যায়। এর একটি বিরাট বড় উদাহরণ আমি দেখেছি এক অনন্যসাধারণ মহিলার মধ্যে, যিনি আমরণ লড়ে গেছেন সাম্প্রদায়ীকতার বিরূদ্ধে কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ব্যাতিক্রম ঘটেনি কখনও তাঁর জীবনে।
দু:খিত, ওপরের মন্তব্যে "ধর্মবিমুখ" নয়, আপনাকে কোট করে "ধর্মবিমুক্ত" বলতে চেয়েছিলাম।
মানবসন্তান,
ভাবছিলাম আর কিছু বলবো না। কিন্তু আপনার লেখা পড়ে মন পরিবর্তন করলাম। নীচের অংশ প্রায় সবটুকুই নিজের জীবনের - তাই কেউ কোনভাবে ভূল না বুঝলে বাঁচি।
আমার বাবা মা দুইজন দুই মেরুর। আমার বাবার জন্ম বিক্রমপুরে, সেখানেই বড় হয়েছেন। তিনি বলতেন যে দেশভাগের আগে বিক্রমপুরের ৫০% মানুষ হিন্দু ছিলেন, আর ছোটকালে তার স্কুলের বন্ধু, পাড়ার বন্ধু সব পাঁচমিশালী ছিল। তিনি যেই প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন, সেটা এলাকার এক হিন্দু ভদ্রলোক তৈরী করে দিয়েছিলেন, সেই নাম এখনও টিকে আছে। টিচাররাও হিন্দু-মুসলিম মিলিয়েই ছিলেন। দুটো সংস্কৃতি কতখানি মিশে ছিল মুন্সিগঞ্জ জেলায়, তা ছোট ছোট জিনিস থেকে বোঝা যায় - যেমন আমার সব ফুফুরা আজ অব্দি আমার বাবাকে 'দাদা' বলে সম্বোধন করে।
আমার মায়ের আবার এইসব অনেক কিছু পছন্দ না। তুলনামূলকভাবে তিনি অনেক গোঁড়া। বুঝ হবার পর থেকে তার সাথে এইসব নিয়ে প্রায়ই লেগে যায়। 'হিন্দুয়ানী' সংস্কৃতির কুপ্রভাব নিয়ে নানা কথা বলতেন। একদিন বললাম - আম্মা তাইলে এখন থেকে আর 'লক্ষ্মী' শব্দটা ব্যবহার করবেন না, ঠিক আছে? এই যে বলেন 'আমার বাবা না লক্ষ্মী, ভাতটা খেয়ে যা' বা 'লক্ষ্মী সোনা, দুধটা শেষ কর'। এত যদি সাফ থাকতে চান, 'লক্ষ্মী' বলেন কেন তাইলে? ওটা না এক দেবীর নাম?
কলেজে উঠে আমার ঘনিষ্ঠতম বন্ধুদের একজন ছিল এক হিন্দু মেয়ে। পড়াশোনা আর আড্ডাবাজির জন্য ওর বাসায় দিনরাত পড়ে থাকতাম। আন্টি বেলার পর বেলা রেঁধে খাওয়াতেন, পূজোর সময় ওদের বাসার দাওয়াত মিস করা ছিল অচিন্ত্যনীয়। আমার মা আবার ভালো চোখে দেখতেন না। বলতেন, কি দরকার এত? আমি পাত্তা দেই না, নিজের ভালো নিজেই বুঝতে চাই।
তবে আমার জন্য পরম খুশীর বিষয় ছিল যে আমার মায়ের মনও অবশেষে ফিরেছিল। আমাদের পরিবারের এক বিরাট ক্রাইসিসের সময় - ছোটভাইয়ের স্বাস্থ্যজনিত - সেই বন্ধুই সবার আগে এগিয়ে এসেছিল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। আমার মা বোধহয় সেইদিন বুঝেছিলেন যে এই মেয়েটার পরিচয় শুধু হিন্দু নয়। তার আসল পরিচয় একজন মানুষ হিসাবে, তার ছেলের আর তার পরিবারের প্রকৃত বন্ধু হিসাবে।
বন্ধুর যখন বিয়ে ঠিক হলো, কার্ড দিতে বাসায় এসেছিলো। বলে গেলো, আন্টি অবশ্যই আসবেন। মাকে নিয়ে গেলাম। পুরো কমিউনিটি সেন্টারে বোরখা-পরিহিত মহিলা আর কেউ ছিলেন না। এর আগে কোনদিন এমন অনুষ্ঠানে আসেননি। দেখলাম কয়েকজনের সাথে আলাপ করছেন, পরিচিত হচ্ছেন। রাত শেষে তিনি আমাকে বললেন - 'বাহ ওরা বিয়েতে কত্ত মজা করে। গান-বাজনা, উলুধ্বণি, হৈচৈ। খুবই ভালো লাগলো।' দম্পতীকে আশীর্বাদ করে চলে এলেন। আমার জীবনের সবচেয়ে সুখী সন্ধ্যাগুলোর মধ্যে সেই রাতটি একটি।
বন্ধুর মুখে নিপীড়ন অত্যাচারের কথা শুনেছি কিছু কিছু, বিশেষ করে পাবনায়, ওদের গ্রামের দিকে। ও বেশী বলতে চাইতো না। তবে এতোটুকু জেনেছিলাম যে বিমানে আংকেলের ক্যারিয়ার আটকে গিয়েছিল তিনি হিন্দু বলে। পুরোপুরি সৎমানুষ ছিলেন, তাই মগবাজারে দুই রুমের একটা খুবই ছোট বাসায় পরিবারের চারজন মিলে থাকতো গাদাগাদি করে, কোন প্রকার আড়ম্বর ছাড়া। তবে তার মেয়েরা দেখিয়ে দিয়েছিল। আমার বন্ধু স্বয়ং এমআইটি'তে ইনজিনিয়ারিং-এ চান্স পেয়েছিলো, এখন ঢাকার টিভি প্রোগ্রামে দেখবেন মাঝে মাঝে। আর ছোটটাও বুয়েট-পাশ আর্কিটেক্ট। আজও দেশে গেলে ওর বাসায়, ওর জামাই আর পিচ্চি মেয়ের সাথে নির্মল আড্ডায় কাটে প্রচুর সময়। যতদিন বেঁচে আছি, এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে জানি।
এটা আহামরি কোন কাহিনী না, ঢাকার দুটো অতিসাধারণ পরিবারের কথা, কিভাবে বহুধার্মিক বহুসাংস্কৃতিক সমাজে আমরা একে অপরকে গ্রহণ করতে শিখি। এইরকম কাহিনী আরো লাখো কোটিবার পুনরাবৃত্তি হয় প্রতিদিন দেশের প্রতিটি পাড়ায়। জানবেন যে আমরা সবাই সবসময় একসাথেই আছি, এবং থাকবো। দুর্জনরা চেষ্টা করে যাবে আমাদের পরস্পরবিমুখ করে তুলতে, অপরকে কেন ঘৃণা করা জরুরী, সেটা শেখাতে। তবে আমি আশাবাদী যে ভালো মানুষ সবসময় খারাপ মানুষের থেকে সংখ্যায় অনেক বেশী। যদিওবা হারামজাদাদের চিৎকার প্রায়শঃ আমাদের কন্ঠের চেয়ে জোরালো শোনায়।
আরেকটা কথা বলেই শেষ করবো। যতদিন বাংলাদেশে Enemy Property Act-এর মত একটা জঘন্য কালাকানুন বলবত থাকবে, (http://en.wikipedia.org/wiki/Vested_Property_Act_(Bangladesh)) ততদিন আমরা অসভ্য জাতির কাতার থেকে নাম সরাতে পারবো না। দেশের প্রতিটা নাগরিকের এই কারনে লজ্জিত হওয়া উচিত। আমরা যারা লেখি আর পড়ি, তাদের জেনে রাখা দরকার, সোচ্চার হওয়া দরকার। উপরতলায় তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ সরকার শুধু আসে আর যায়। তবুও এই মধ্যযুগীয় আইনের কুফল আমরা ভোগ করে চলি প্রতিদিন।
আশা করি ভালো থাকবেন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আহামরি নয়-ই বা কেন? এরকম প্রতিটি ঘটনাই তো আরো একটুখানি আশা জাগাতে সাহায্য করে।
শত্রু সম্পত্তি আইন (কি নাম!)সম্পর্কে অবশ্যই সহমত। এ ব্যাপারটা আপনাকে কয়েকটা পোস্টেই তুলে ধরতে দেখেছি, সেজন্য অনেক ধন্যবাদ। এ বিষয়ে আমাদের সকলেরই সচেতন/সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।
আপনিও ভালো থাকবেন।
একমত । অথনীতিবিদ প্রফেসর আবুল বারাকত বলেন, "“Following independence, a predominantly Muslim but secular Bangladesh should have had abolished this law. But the state renamed it the Vested Property Act to acquire the properties of people from West Pakistan who had left after the war.”
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আপনার লেখাটা পড়েছিলাম বেশ আগেই। কমেন্ট করা হয়নি। মন বিক্ষিপ্ত ছিলো।
এই লেখাটা ছুঁয়ে গিয়েছিলো। ছুঁয়ে যাওয়ার মতো একটা লেখা।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
যে ক'জন মানুষের নাম বিশেষভাবে নিয়েছিলাম এ লেখায় আপনি তাদের একজন। লেখাটা পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো। আবারও কৃতজ্ঞতা জানাই।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
নতুন মন্তব্য করুন