ব্ল্যাক মেটাল এর নাম শুনেছেন? হেভী মেটাল সঙ্গীত এর এক প্রজাতি আছে, এক্সট্রিম মেটাল, ব্ল্যাক মেটাল এরই অন্তর্গত। ব্ল্যাক মেটাল নিয়ে কথা শুরু করলে, মাস কাবার হয়ে যাবে। এইটুকু বলে রাখি, এই বস্তুর উদ্ভব ব্রিটেইন হলেও, আসলে এর উপস্থিতি নর্ডিক দেশ গুলোতেই।অত্যন্ত হিংস্র এই সঙ্গীত ও তার চর্চাকারীদের দর্শন, মূলতঃ প্রাক-ক্রিশ্চীয়ান ভাইকিং আগ্রাসনবাদ ও পেইগানিজম (paganism) এর সাথে আধুনিক রেইসিজম্ ও কট্টর জাতীয়তাবাদ এর মিশ্রণ বলা যেতে পারে একে।
বলা বাহুল্য, আমার খুব ই প্রিয় একটি সঙ্গীত ধারা (নাইলে আর এই প্যাচাল পারতে বসছি কেন্…)।তাদের দর্শন এর সাথে একমত না হলেও, গান গুলো অসাধারণ লাগে।
যাই হোক, ব্ল্যাক মেটাল নিয়ে আরেক দিন, আজকে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্ল্যাক মেটাল ব্যান্ড এর গল্প বলতে চাই আপনাদের।আগে ই বলে রাখি, হার্টের ব্যারাম থাকলে তফাত জান। সিরিয়াসলি।
জী, এই ব্যান্ডের নাম ই মেইহ্যাম (Mayhem)।শুরু করি তাইলে কাহিনী।
অনেকদিন আগে (১৯৮৪) নরওয়ে নামের এক দেশে অসলো শহরে এক ব্যান্ড গঠিত হয়, যার নাম রাখা হয় মেইহ্যাম। সদস্যসংখা ৩, উদ্দেশ্য ব্ল্যাক মেটাল এর জগতে তোলপাড় সৃষ্টি।তারা নিজেরাও সম্ভবত চিন্তা করে নাই, তোলপাড়টা কতখানি বিজাত হবে।
ভদ্রলোকদের নাম শুনেন আগেঃ
গীটার/ভোকালঃ নরকের পিশাচ ইউরোনীমাস (Euronymous, আসল নাম Øystein Aarseth)
বেইজ গীটারঃ লাশের কসাই (Necrobutcher, আসল নাম Jørn Stubberud)
ড্রামঃ মানহাইম (আসল নামই Kjetil Manheim)
এরা তিনজনে বাইর করলো প্রথম ডেমো, Pure Fucking Armageddon. এক্কেরে খাঁটি কেয়ামত যারে বলে, শুনলেই বুঝবেন।
এরপর ইউরোনীমাস নিজের গায়কী বিষয়ে সন্দিহান হয়ে উঠলেন এবং, এক সাথে নতুন দুইজন ভোকাল নিযুক্ত করলেন। তাদের নাম ও কম যায় না, একজন পাগলা (Maniac, আসল নাম Sven Erik Kristiansen), অন্যজন পয়গম্বর (Messiah আসল নাম Eirik Nordheim)
এই লাইন-আপ এ একটাই অ্যালবাম বের হয়, Deathcrush। এর পরপরই মানহাইম চাকরির খোঁজে (বেচারা মনে হয় কিছুটা ভদ্রলোক ছিলো, দেখেন না, নাম পালটায় নাই…) এবং পাগলা পাগল হয়ে (সত্যি! আল্লার কসম!) ব্যান্ড ছেড়ে দেন।
নতুন ভোকাল আর নরওয়েতে না পায়া, সুইডেন থেকে এক মরা ভোকাল জোগাড় হইলো। আসলে মরা না, নাম মরা (Dead, আসল নাম Per Yngve Ohlin) আর ড্রামার আসলো, নারকীয় হাতুড়ী (Hellhammer, আসল নাম Jan Axel Blomberg).
এই Hellhammer কে অনেকেই ব্ল্যাক মেটাল, তথা হেভী মেটালের শ্রেষ্ঠ ড্রামারদের একজন হিসেবে মানেন।
এইটাই ধরা হয় মেইহ্যাম এর সেরা লাইন-আপ, কারণ এই লাইন-আপই জন্ম দেয় De Mysteriis Dom Sathanas, ব্ল্যাক মেটাল ধারার ঐতিহাসিক এক অ্যালবামের।
এইবার শুরু হইলো কাহিনী।
মরা কিন্তু De Mysteriis Dom Sathanas এর চেহারা দেখে যেতে পারেন নাই।অ্যালবাম বের হওয়ার আগেই তিনি হাত কেটে ও শটগান দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন।সুইসাইড নোট এ সেরেফ লিখে যান যে ঘরের ভেতর গুলি বর্ষণ ও রক্তে মেঝে নোংরা করায় তিনি দুঃখিত।
এই অবস্থায় তাকে খুঁজে পেয়ে পুলিশ ডাকার আগেও ইউরোনীমাস প্রথম যে কাজটি করেন তা হইলো দৌড়ে গিয়ে পাশের দোকান থেকে একটা ডিসপোজেবল ক্যামেরা কিনে নিয়ে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে রাখা। এই ছবি পরে মেইহ্যামের Dawn of the Black Hearts অ্যালবামের কভার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
মরার উপর খাঁড়ার ঘা কিন্তু শুরু মাত্র। মরাকে কবর দেয়ার আগে, ইউরোনীমাস তার মাথাটা কেটে রাখেন, বন্ধুর প্রতি সম্মান রুপে। এই মাথার ঘিলু দিয়ে অতি উপাদেয় স্যুপ তৈরি করে তিনি ওই রাত্রে ডিনার করেন এবং খুলির অংশ দিয়ে নিজের জন্য একটি নেকলেস তৈরি করেন। আফসোস, আমার এমন বন্ধু নাই!
মরার আত্মহত্যায় মন ভেঙ্গে যাওয়ায় লাশের কসাই দলত্যাগ করেন।দলে যোগ হয় নতুন ভোকাল Attila Csihar ও বেইজিস্ট Varg Vikernes।
ভার্গের সাথে ইউরোনীমাস এর এমনই খাতির হয়, তারা দুইজনে মিলে চাইরখানা চার্চে আগুন লাগান এবং কয়েকদিনের মধ্যেই ইউরোনীমাসের কুখ্যাতিতে ঈর্ষাপরায়ণ ভার্গ, তাকে ২৭ বার স্ট্যাব করে হত্যা করেন!
এরপর আর কি, ভার্গ গেলেন জেলে। ব্যান্ড কিন্তু আজো আছে।Hellhammer, Attila এর সাথে নতুন গীটারিস্ট Blasphemer এবং পুরান সদস্য Necrobutcher মিলে আজো মেইহ্যাম জারি রেখেছেন।
কাহিনি একটু বাকি।
ওইযে জেলের ঘুঘু - ভার্গ, সে কিন্তু এর মধ্যে জেলের ভিতর থেকেই আরেক কিংবদন্তী সম ব্ল্যাক মেটাল ব্যান্ড বারযাম (Burzum) এর জন্ম দিয়ে ফেলছে। বারযাম এর আবার ও একাই সব, গীটারিস্ট, বেইজিস্ট,কী-বোর্ডিস্ট ভোকাল, ড্রামার! জ়েলে তো লাইভ পারফরম্যান্সের ব্যাপার নাই, তাই চিন্তাও নাই। মেইহ্যামের অ্যালবাম যেখানে ৬টা, বারযামের সেখানে ৭ টা!
শেষ কথা, এর মধ্যে ভার্গ একবার জেল ও পালাইসেন এবং ধরাও খাইসেন।এই বছর মে মাসে প্রবেশন এ রেহাই মিলছে তার।
জোস্ না ব্যান্ডটা!?
সংসপ্তক
মন্তব্য
অসুস্থ! কাহিনী শুইনা আর গান নাই বা শুনলাম!
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
তাইলেই তো ভূল.....ব্যান্ডটার এক মাত্র ভালো জিনিসটাই ত গানগুলা.....
সংসপ্তক
ব্যান্ডের অবস্থা দেইখা তো মনে হইলো গানের বিষয়বস্তুও নারকীয় ব্যাপার স্যাপার হইবো, তো ভাইদের গান নিয়া একটু বলেন, পারলে দুই একটা শুনান
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আশা করি বাক্যটি বিদ্রূপার্থে প্রয়োগ করেছেন!!
কিছুদিন মেটাল শুনার ট্রাই দিয়েছিলাম। মিউজিক শুনে এমনিতেই মাথার তারে টান পরেছিলো, লিরিকস দেখার পর তা ছেড়ার দশা। তবে আবারো মেটাল শুনব, মেইহ্যামও শুনবো নিশ্চয়।
***********************************************
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???
ঠিক কোন সেন্সে মজা লাগল ভাইজান, "স" (saw) দেখার মত অনুভুতি হইল। এইটা যদি আপনার মজার উদাহরন হয়, তাইলে আপনার পরের পোস্ট দেবার আগে খবর দিয়েন, ২ দিন সচলে আসুম না
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সহমত সাইফের সাথে, পড়লাম পুরোটাই, তবে কিনা সঠিক অর্থে মজা পেলাম না, একটা বিশ্রী বিবমিষা জাগলো বরং। এমন বিকৃত মস্তিষ্ক পারভার্টদের সৃষ্ট সঙ্গীত মহান হয় কিনা জানি না, তবে শোনার কোনো ইচ্ছা নেই।
ওই যে, ওয়ার্নিং দিয়ে রাখসি, "Not for the faint hearted".....
ঠিকাছে।
থ্র্যাশ পর্যন্ত উঠতে পারছি। তারপর বুঝছি আমারে দিয়া হইব না। তাই ছাইড়া বাঁচছি।
চলুক। পাঁচ দিলাম।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হায় হায়! বলেন কি! ছাইরেন না! ব্ল্যাকে না গেলেন, থ্র্যাশ তো অতি উত্তম জিনিশ।
মেটালের ভক্তের এম্নেই shortage!! Megadeth এর নতুন album টা শুইনেন...Endgame...মাথা নষ্ট জিনিস.....
আমি মেটাল সহ্যই কর্তে পারি না। কিন্তু ভালা লাগসে হইলো আপনার লেখার বিষয়বস্তুটা- আর এই ব্যান্ডের ইতিহাসতো দেখলাম সেইরাম বৈচিত্র্যময়...
আপনি কিসু আরো এইরকম পোস্ট দেন...
---------------------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
ধন্যবাদ! অবশ্য ই চেষ্টা করবো।
জনাব,
আমি জানতাম- সম্ভবত ভুল জানতাম যে, পৃথিবীতে খাটি "কালা ধাতব" (ব্ল্যাক মেটাল) ব্যান্ড একটাই আছে আর হেইডা হইলো "ক্রেডেল অব ফিল্থ"; তয় এহন মনে হইতাছে ভুল জনতাম- এই ইবলিশগুলা তো দেখি যর্থাথই ইবলিশ হইতে পারছে। ধন্য ওদের ইবলিশ জন্ম। যাই হোক জনাব, খুব আগ্রহ হইতাচে ওগো গান হুনতে।
তো জানাব, আমি আসলে "ভারি ধাতব" (হেভী মেটাল) ব্যান্ডের ভক্ত। তো আপনে যেহেতু কালা গো পাংখা তাই যদি "ক্রেডেল অব ফিল্থ" এর ব্যাপারে যাদি ঝাইড়া কাশেন তইলে ভালোই হইতো। এবং এই কালা ইবলিশ গো আরো নতুন নতুন খবর দিয়েন। খালি একলা একলাই হুইন্নেন না। ধন্যবাদ।
তারিক মাহমুদ
বি. দ্র. একজনে "স" মুভিটার কথা কইছে, আমার পছন্দরে মুভিগুলার একটা এইটা; অবস্য প্রথম র্পাট। মুভিটা ঠান্ডা মাথায় দেখলে আর এর ভেতরের মালডা ধরতে পারলে আশা করি কারোই খারাপ লাগবো না।
এখন যা বলবো, আগে ভাগে বলে রাখি, কষ্ট পাবেন।ক্রেডেল অব ফিল্থ কোনো ব্ল্যাক মেটাল ব্যান্ড ই না। ওদের ডাস্ক অ্যান্ড হার এম্ব্রেস এর পর কোনো ব্ল্যাক মেটালের চিহ্ন ও নাই। যা আছে তা হল গথিক মেটালের এক্সট্রিম টাইপ একটা জিনিশ।
ক্রেডেল অব ফিল্থ পুরাই কমার্শিয়াল সস্তা একটা ব্যান্ড, ওদের ভোকাল, ড্যানি ফিল্থ প্রতি রবিবারে চার্চে যায়.......
ব্ল্যাক মেটালের খাঁটি জিনিস শুনতে চান তো Emperor, Darkthrone, Satyricon, Bathory.......এইগুলার নাম ইয়াদ রাইখেন। অসামান্য বস্তু।
সংসপ্তক
ক্রেডল অফ ফিলথ ব্লাক মেটাল না এ ব্যপারে একমত, মূলত তাদের জনরা এক্সট্রিম মেটাল, যার সাথে গথিক ব্লাক মেটালের মিশ্রণ আছে। কিন্তু আপনি বললেন "ক্রেডেল অব ফিল্থ পুরাই কমার্শিয়াল সস্তা একটা ব্যান্ড" এর সাথে কোনভাবেই একমত নই। জনপ্রিয়তা মানেই কী কমার্শিয়াল সস্তা? তাইলে মেটালিকা, মেইডেনরা দুনিয়ার সবচেয়ে সস্তা ব্যান্ড।
ড্যানি ফিলথের চার্চে যাওয়ার সাথে কমার্শিয়াল বা সস্তা হওয়ার কী সম্পর্ক?
ভাই, আমি এত সহজে কষ্ট বা দুখ পাই না। ক্রডেল আব ফিল্থ হুনতে আমার ভালো লাগে, তাই হুনি। যাই হোক কালা ধাতব হুনা একটু কঠিন, তয় হুইন্না হালামু। তয় আপনে কিন্তু থাইমেন না। চালাইয়া যাইয়েন। আমি আপনার কাছ থিকা এই টাইপের আরো কিছু পোষ্ট চাই। কিছু জ্ঞান যদি এমনে বারে ভালো। আর আপনে একটা লিস্ট দিয়েন, ৫ সেরা কালা ধাতব গো। তাইলেই ইবো। এলব্যামের নাম সহ দিয়েন। আর এক কাম করতে পারেন, ৫টা ব্যান্ড আর ৫টা এলবাম। ব্যাস। আর পায় কে, কালা গো হুইন্ন ভাইজ্জা হালামু। ধন্যবাদ।
তারিক মাহমুদ
আপনার গল্প বলার স্টাইলটি দারুন মজার, ইউনিক
ডেথ মেটাল/ ব্ল্যাক মেটালের ব্যাপারে আমি ক্রেইজি না, তবে মাঝে মধ্যে ঘাটাঘাটি করতে ভালো লাগে
লেখা চালিয়ে যান, প্লীজ। উড়াধুড়া, আউলাঝাউলা, অন্যরকম মানুষদের কাহিনী জানতে ভালই লাগে
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
নতুন মন্তব্য করুন