অন্যদের কথা জানিনা, তবে একজন বাদে (গভ: ল্যাব এর শ্রদ্ধে্য় নজরুল ইসলাম স্যার) সারা জীবন ইস্কুলে যত হুজুর শিক্ষক (আরবী বা ইসলামিয়াতের শিক্ষক) পেয়েছি তারা পাঠের চেয়েও কেন জানি পিঠের দিকেই বেশী মনোযোগী ছিলেন। মরার উপরে খাড়ার ঘা হিসেবে ইস্কুলে ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণী থেকে আরবী শিক্ষা বাধ্যতামুলক হল। আমি একদম আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলাম। আরবী ছড়া মুখস্ত করে তা আবার লেখা, কোন মতেই কিছু পারছিলাম না।তখন শেষ মুহূর্তে পরীক্ষার আগ দিয়ে আর সবার দেখাদেখি আমিও স্যারের বাড়ি রওনা দিলাম এবং নতুন অভিজ্ঞতা লাভ হল।
এই ছড়া সম্পর্কে বলবো এটি আমার জীবনের একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা। শিক্ষকের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন বা এ জাতীয় কোন উদ্দেশ্য ছিলনা, যদিও এই শিক্ষকের প্রতি আমার সম্মানের ঘাটতি আছে। ২০০৭ সালের কোন এক বিকেলে ইস্কুল জীবনের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে আসার পর এই ছোট্ট ছড়াখান লিখি। এখানে যদি গভ: ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা থেকে থাকেন, তবে ছড়ার মূল ব্যক্তিকে চিন্তে পারার কথা। আমার জানামতে, নব্বইয়ের দশকের পুরোটাই এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম কয় বছর তিনি দাপটের সাথে ছাত্রদের উপর বেত চালিয়ে গেছেন। বর্তমানে কোথায় আছেন বা কি করছেন, আমার জানা নেই। বেশী না বকে ছড়াখান দিয়ে দেই -
মুজিবনামা
একদা মোদের স্কুলে ছিলো, মুজিব নামের স্যার,
মুখ ভরা তার দাড়ি ছিলো, গলায় সোনার হার।
উস্কো খুস্কো চুল যে তাহার, চোখ যে ইটের ভাঁটা,
ওনার কাছে না পড়লে, খেতাম লাথি ঝাটা।
কথার সাথে থুতুর ছিটা, সঙ্গে পানের পিক,
তারপরেও ছাত্র পেত, কারণ প্রশ্ন Leak.
কেলাস সেভেন শেষের আগে, মা পাঠালো ব্যাচে,
তখন কি আর জানা ছিল, পড়বো এমন প্যাচে?
যতদিন তাঁর বাসায় যেতাম, ছিলাম চোখের মণি,
মিষ্টি করে ডাকতো আমায়, স্বর যে মধুর খনি।
এইটে উঠে আল্লাহর নামে, দিলাম তারে ছেকা,
আমার পিঠেই হতে থাকলো, বেতগুলো সব বাঁকা।
ক্লাসে এসেই গম্ভীরাতে ডাকতো যখন 'চাপি',
বেঞ্চে বসে তখন আমি, থরথরিয়ে কাঁপি।
ভুল করার আগ পর্যন্ত প্রশ্ন করে যেত,
এক সময়ে না এক সময়ে হারতো মানতে হতো।
এভাবেই কাটছিলো দিন, upto S.S.C.,
Exam দেবার সাথে সাথে, হয়ে গেলাম Free.
সাফি
rajputro এট জিমেইল
মন্তব্য
কঠিন অবস্থা !
১। দীর্ঘদিন পর মনে পড়লো মুজিব স্যারকে। তিনি তো আমাদের ক্লাসে এসে প্রথম ২০-২৫ মিনিট গল্প করে তারপর বলতেন, ইসলাম বলে দায়িত্ব পালন করতে। তাইতো আমি প্রতিটি ক্লাস নেই! তারপর শুরু হয়ে যেত অন্যান্য শিক্ষকেরা ক্লাস নেয় কিনা তার বয়ান!! তবে ওনার সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তি: "তুমি কি ওবায়দুল কাদের?" (কোন ছাত্র মিথ্যা বলছে মনে হলে এটা বলতেন তিনি। ওবায়দুল কাদের আওয়ামি নেতা।)
২। নজরুল ইসলাম স্যার আসলেই ভালো। আমি আমার জীবনে এই একজনই ভালো, গোঁড়ামিমুক্ত ধর্ম শিক্ষক দেখেছি।
৩। আপনাদের সময় কি আনসারি স্যার ছিলো? "হুজুর- এ- আনসারি" যাকে বলা হত। চরম তালেবান ও পাকিস্তানভক্ত। আনসারির কাহিনি এখানে:
" ক্লাস ৯/১০ এ এক ধর্ম ক্লাসে আনসারি "বন্ধু নির্বাচন" (বইয়ের একটি চ্যাপ্টার) পড়াচ্ছিলেন আর বয়ান ঝাড়ছিলেন: "সৎ এবং ভালো বন্ধুকে বিপদ থেকে রক্ষা করলে আল্লাহ্ তার জান্নাতের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। যেমন মোল্লা ওমর লাদেনের বন্ধু। নিজের ক্ষতি সত্বেও তিনি লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছেন। আমেরিকা টাকার লোভ দেখালেও লাদেনকে শত্রুদের হাতে তুলে দেননি। এই জন্য আল্লাহ্ তাঁকে বেহেস্ত দিতে পারেন।"
তবে এই ক্লাসেই আনসারির সবচেয়ে বড় উক্তি ৭১ সম্পর্কে : "৭১ সালে অনেক ধ্বংসলীলা হচ্ছিলো। পাকিস্তান আর্মি অনেক শক্তিশালি। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সাথে পারত না। যখন পাকিস্তান দেখল একটা মুসলিম দেশের (বাংলাদেশের) অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তখন বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরুপ তারা এই দেশ ছেড়ে দিলো।"
আনসারি প্রায়ই ক্লাসের অনেককে বাসায় যেতে বলতেন। আর গভ: ল্যাবের সেই বিখ্যাত শহিদ মিনার তৈরির সময় তাঁর বিরোধিতা সবচেয়ে বেশি ছিলো।
অনেক ধর্ম শিক্ষক আসলেই ভয়াবহ যন্ত্রণা!
আমি ৯৯এ পাশ করেছি, আনসারি স্যার কে তাই বোধ হয় পাবার সৌভাগ্য হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে তার বাণী দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম !!! মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
নাম লিখতে ভুলে গেছিলাম
সাফি
আমি আছি। ভুক্তভোগী। (গভঃ ল্যাব ৯৭)
হারামজাদা ঘুরায়ে প্যাঁচায়ে পাকিস্তান = মুসলমান থিয়োরি ক্লাসে নিয়ে আসছে বহুবার। যতোদুর মনে পড়তেছে শালা একবার, শুকর আলহামদুলিল্লাহ, মাইরও খাইছিলো।
মার খাবার কথা জানা ছিলনা। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, এখন কোথায় আছেন?
সাফি
জানি না আপনার মুজিব স্যার কেনো এমন ছিল, কিন্তু আপনার- "সারা জীবন ইস্কুলে যত হুজুর শিক্ষক (আরবী বা ইসলামিয়াতের শিক্ষক) পেয়েছি তারা পাঠের চেয়েও কেন জানি পিঠের দিকেই বেশী মনোযোগী ছিলেন।" এই মন্ত্যবের সাথে একমত হতে পারলাম না। আমিও স্কুল জীবনে হুজুর শিক্ষক পেয়েছি কিন্তু আমাদের হুজুর স্যার পড়ার জন্য মেরেছেন বলে মনে পরে না। হুজুরদের প্রতি এইভাবে মনে হয় জেনারালাইজ করা ঠিক হবে না। আমরা কেনো জানি দাড়ি-টুপি ওয়ালাদের দেখতে পারি না!!!!
আপনার হুজুর স্যার ছাড়া কি অন্য কোনো স্যার ক্লাসে বেত নিয়ে যেতেন না? কই তাদের নিয়ে কী লেখার প্রয়োজন বোধ করেছেন? আমিতো দেখেছি অনেক গণিতের স্যার, ইংরেজীর স্যার তাঁরাও সাজেশন বানিয়ে পড়াতেন, আর সেখান থেকেই পরীক্ষায় প্রশ্ন করতেন। তাদের কাছে যারা পড়ত তাঁরা বেশি নম্বর পেতেন। তাদের নিয়ে একটা পোষ্ট আশা করছি।
আমি কিন্তু ভাই আপনার স্কুলের কোনো ব্যাচেরি ছাত্র না।
ধন্যবাদ।
দলছুট।
ভাই দলছুট,
দয়া করে মন্তব্য করার আগে মনোযোগ দিয়ে পড়ে নেবেন। আমার লেখার প্রথম তিনটা শব্দ
"অন্যদের কথা জানিনা,"
আমি তাতেই বলে দি্য়েছি, অন্যের অভিজ্ঞতার ব্যপারে আমার জানা নেই!
"হুজুরদের প্রতি এইভাবে মনে হয় জেনারালাইজ করা ঠিক হবে না" --এনারা শুধু আমার জীবনে দেখা হুজুর সেটাও আমার লেখা্য় আমি বলেছি : "সারা জীবন ইস্কুলে যত হুজুর শিক্ষক " এবং এর ব্যতিক্রম যে দেখেছি সেটাও বলেছি (গভ: ল্যাব এর শ্রদ্ধে্য় নজরুল ইসলাম স্যার)
"আপনার হুজুর স্যার ছাড়া কি অন্য কোনো স্যার ক্লাসে বেত নিয়ে যেতেন না? কই তাদের নিয়ে কী লেখার প্রয়োজন বোধ করেছেন? আমিতো দেখেছি অনেক গণিতের স্যার, ইংরেজীর স্যার তাঁরাও সাজেশন বানিয়ে পড়াতেন, আর সেখান থেকেই পরীক্ষায় প্রশ্ন করতেন। তাদের কাছে যারা পড়ত তাঁরা বেশি নম্বর পেতেন। তাদের নিয়ে একটা পোষ্ট আশা করছি।" ---- আপনি লেখেন না ভাই, আমারে ধরেন কেন! আমার মনে যে দাগ কাটতে পেরেছে আমি তাঁকে নিয়ে লিখেছি, সবাইরে নিয়ে লিখুম কেন? আর তাছাড়া, এনার কাছে ছাড়া ইস্কুলের আর কোন শিক্ষকের কাছে আমি পড়িনি আমার পিতা মাতার ধারণা ছিল সাজেশন ভিত্তিক পড়া আমার জন্য ক্ষতিকারক হবে, তাই ইস্কুলে থাকতে কখনওই ১-২০ এর মধ্যে আসতে পারিনি, তবে পাবলিক পরীক্ষায় ঠিক ই বাবা মা্য়ের ধারণাকে সত্য প্রমাণ করতে পেরেছিলাম।
ছহী মুজিবনামা ভালো লাগলো।
রেনেসাঁ
আমার জীবনে দেখা আরবী আর ইসলামিয়াত স্যারগুলো কেন যেন ভয়াবহ বেতপ্রিয়! নিজে অন্য ধর্মের হওয়ার কারণে এদের হাতে মার খেতে হত অনেক! আমাকে অবশ্য বাসায় পড়ার জন্য ইঙ্গিত দিতেন একজন...না যাওয়ায় মাইর+পরীক্ষায় বীভৎস রকমের কম নাম্বার!
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
আমার যত দূর মনে পরে ইসলাম ধর্মে কঠোর হ্ওয়া সম্পর্কিত কোন বিধান আছে। যদিও আমি নিশ্চিত নই। মাদ্রাসাগুলোতেও তাই ধুমাধুম পিটানো হয়। তবে এর পিছে ধর্মান্ধতা আর অশিক্ষার সম্পর্ক থাকতে পারে।
আপনি কি রাজশাহী গভঃ ল্যাবরেটরী স্কুলে ছিলেন? নাকি অন্য কোথাও। আমি একজন এক্স ল্যাবরেটরীয়ান। আমার স্মৃতিতে হাতড়ে মুজিব স্যার বলে কাউকে খুজে পেলাম না।
ভাই কুশল, দু:খিত। আমি ঢাকার গভ: ল্যাবের ছাত্র।
সাফি
নারে ভাই রাজশাহী গভ: ল্যাবে ছিলেন হেড মাওলানা স্যার, আরও ২ জন ছিলেন, ৩ জনের এক জনেরও নাম মনে নাই। তবে, মনে আছে, একজনের ছিল ছাগলা দাড়ি, আর কথায় কথায় বেত নিয়ে এসে মারত আর খনখনে গলায় দুষ্ট হাসি দিয়ে বলত, "আমি কিন্তু শাস্তি দিয়ে দিব"। অন্যজন ছিলেন চাপাই নবাবগন্জের, উনি নিজেও কিছু পারতেন না, তাই প্রশ্নপত্র কপি করে দিয়ে আসলে উনি ৫০ এ ১৭ দিয়ে পাশ করিয়ে দিতেন। তবে হেড মাওলানা স্যার বেত ব্যবহার করতেন না, তার বিখ্যাত ছিল কিল, তিনি বলতেন ভাদ্র তাল , আওয়াজও হইত সেইরকম। তবে ৩ জনের মধ্যে হেড মাওলানা স্যার বেশি ভালো ছিলেন।
আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়তে ঢাকা চলে আসি, তাই এর পরে আর কে ছিল, কে ছিলনা, তা মনে নেই, এটা ১৯৯২ এর ঘটনা। নামগুলাকি একটু বলতে পারবেন? এখনো স্বপ্নে আমি রাজশাহী গভ: ল্যাবের বারান্দায় ঘুরাঘুরি করি।
পরে রাতে খাইতে বসে মনে পড়ল, একজনের নাম ছিল সানাউল্লাহ (ইনি শাস্তি দিয়ে দিব বলে নাকি সুরে কথা বলতেন আর মারতেন) আর চাপাইয়ের আমদানির নাম ছিল সাদেক স্যার। হেড মাওলানার নাম আমি কখনোই জানতাম না।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সাফি ভাইজান, জব্বর ছড়া, পুরাই ছড়া তো না যেন আগুনের গোলা। এইটা মিস করলাম কেমনে ঠিক বুঝলাম না। চালাও যাও বস!! আলসেমি কাটিও উঠ, আমরা এমন মজারু লেখা, ছড়া, কবিতা পরার সুযোগ পাই
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
@সাইফ তাহসিন : সাদেক স্যারের আর একটা নাম ছিল "জ্বীনের বাদশ"। ঠিক কি কারণে আমরা তাকে এ নামে ডাকতাম জানিনা। সম্ভবত পূর্ববর্তী কোন বর্ষের ছেলেদের দেওয়া নাম। আমরা স্যারকে ক্লাসে খুব জ্বালাতন করতাম। দেখা গেল ডেস্ক থেকে হঠাৎ কারো পেন মাটিতে পড়ে গেল, ১ মিনিট পরে আর এক জনের জ্যামিতি বক্স পড়ল, এর পরে পড়ল কারো টিফিন বক্স, এরপর একটু পরপর ধুপধাপ করে বিভিন্ন জিনিশ খালি পড়তেই থাকত। স্যার ক্ষেপে লাল হয়ে যেতেন।
নতুন মন্তব্য করুন