অনেক দিন ধরে যা মনে আসছে তাই লিখে যাচ্ছি । পাঠক শ্রেনীর নিন্দা-প্রশংসার কোনরকম তোয়াক্কা না করে, লিখছিতো লিখছি : অনেকটা ক্ষ্যাপার মতো । হঠাত্ করে নিজেকে প্রশ্ন করে বসলাম, কেন লিখছি এবং কেনইবা লিখবো ? উত্তরখানা পেলাম অনেকটা এরকম :
Eventually, I write to please myself,
With things come out from deep and dark:
Towards light and flashed flare.
Want to be happy little more,
with share and blinks:
Unconditioned, free and fair.
কেন আমরা লিখি অর্থাত্ লেখালেখির উদ্দেশ্য সম্পর্কে সব লেখিয়েদের প্রায় একই রকম অভিমত । সবাই মোটামুটি একটা বিষয়ে একমত যে, লিখে তারা বিরাট মানষিক প্রশান্তি পেয়ে থাকেন । আমারও ধারনা তাই । একটা প্রশ্নের উত্তর পাবার পর পিঠেপিঠি আর একটা প্রশ্নের উদ্ভব হলো । লেখার এই প্রেরনাটা আসে কোত্থেকে, কিভাবে ? লেখার এতসব উপাদান, মালমশলা, শব্দ সম্ভার কলমের ডগা থেকে ফটাফট বেরিয়ে আসে কোথা থেকে, কি প্রকৃয়ায় ? বিশেষকরে কবিতার ব্যাপারটা বেশ রহস্যময় এবং কখনও বিমূর্তও বটে । তাই কবিতা ও কবির রহস্য উত্ঘাটনে উঠেপড়ে লাগলাম । অনেক চেষ্টা চরিত্র করে পরিচয়ের সীমানার মধ্যে দুইজন নারী ও একজন পুরুষ কবির সন্ধান পাওয়া গেল । অল্প ক্লেশে কবি প্রাপ্তিতে মনটা ভরে গেল আশায়-আনন্দে । ভাবলাম, যাক এতদিনে হয়তো অনর্থক অথচ দামি একটা কৌতুহলের সুরাহা হতে চলেছে । এতটা আশাবাদী হওয়ার কারন আরকিছু নয় : কবিত্রয় আমার থেকে যথেষ্ট প্রবীন ও অভিজ্ঞ, তাদের কাছ থেকে সঠিক ত্বত্ত মিললেও মিলতে পারে । সেযাই হোক, এমন তিনজন কবিরত্ন আমাকে সাক্ষত্কার দেবার জন্য যে রাজি হয়েছেন, তাতে নিজেকে ধন্য মনে হলো ।
অবশেষে হাড়কাপানো তুষার-শুভ্র শীতের কোন এক পড়ন্ত বিকেলে, তিন প্রবীন কবিকে কফির নিমন্ত্রনে এক ফার্ষ্টফুড রেস্তরায় একত্রিত করা গেল । পুর্ব নির্ধারিত আলোচ্যসূচী ছিল কবিসভার জন্যে । আমার প্রশ্নের অন্তর্নিহিত তাত্পর্য অনুধাবন করে, প্রথমেই তিনজন হেসে নিলেন মিনিট খানেক । পরিবেশটা বেশ প্রানবন্ত হয়ে উঠল ধীরে ধীরে । ছোট একটা রেকর্ডার এনেছিলাম সাথেকরে, অনুমতি নিলাম সেটিকে ব্যাবহারের জন্য । তাদের কোন আপত্তি নেই ওটি ব্যবহারে । বললে, ভালইতো তোমার কষ্টটা কম হবে । অযথা কাগজে কলমে ঘসাঘসির দরকার হবে না । দেখলাম, তিনজনই খুব সুন্দর করে কথা বলে । একেবারে খাটি কেমব্রিজ উচ্চারনের ইংরেজি, শুনলে প্রানটা ভরে যায় সাহিত্য ও শব্দমালার সৌন্দর্য রসে । আমার প্রশ্নের উত্তরে তাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনার মর্মার্থ অনেকটা এরকম : মনের ভেতর ভাব আসে, সেই ভাব শব্দমালার উপর ভর করে কলমের ডগা দিয়ে বেরিয়ে আসে । একসময় লেখাটা শেষ হয় । তার ফলশ্রুতিতে আসে এক চরম প্রশান্তি । এই প্রশান্তির জন্য কবির মনটা চাতক পাখীর মত তৃঞ্চার্ত হয়ে থাকে অপেক্ষায় । তখন আর কারও পক্ষে ভেবে দেখার ইচ্ছা, প্রেরনা বা কৌতুহল কোনটাই থাকে না, কিভাবে, কেমন করে লেখাগুলো মনে এলো, শব্দমালা কিভাবে চয়ন হলো । আমরা যা পাবার তা পেয়ে গেছি, তবে কেন আর পেছন ফিরে চাওয়া ? একটা কিঞ্চিত্ আদিরসাত্তক দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে : প্রায় সব পুরুষই কাঙ্খিত ক্ষলনের পর পাশফিরে ঘুমিয়ে যায়, পাশে শায়িত নারীর দিকে ফিরেও দেখেনা । এর একটা জীববৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাতো অবশ্যই আছে । সেটা বাদ দিয়ে কবিরা যেভাবে ব্যাখ্যা করবে তা অনেকটা এরকম : পুরুষপ্রবর তার দেহ-মন-আত্তার জন্য যা চাওয়ার ছিল তা পেয়ে গেছে । এখন আপাততঃ তার আর কিছুর দরকার নেই । পাকা কলা বা রসুগোল্লা খাওয়ার পরে চা যেমন পানসে লাগে তেমনই । এই অবস্থায় পরম সুখী পুরুষটি বলতে পারবেনা তার আনন্দের ত্বত্তগত ভেদ । স্বভাবিক দৈনন্দিন জীবন প্রবাহের মাঝখানে যদি তাকে ঐ আনন্দানুভূতির কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, তখনও সে ব্যার্থ হবে তা বোঝাতে । তবে, তাকে প্রশ্ন করার সঠিক সময় হচ্ছে বিশেষ আনন্দ-সমাধির মুহুর্তটি । কিন্তু ঐ সময়টা অন্য কোন কিছু করার জন্য নয়, কারন তাতে আনন্দ-সমাধিচ্যুতি (Ecstasy) ঘটতে পারে । ঠিক তেমনি কবিতা মনের মধ্যে কিভাবে আসে, কি অনুভুতির জন্ম হয় তার সৃষ্টি ও প্রকাশে, তার বয়ান শুধু ওর সৃষ্টি মুহুর্তেই করার উপযুক্ত সময় । অনেক কথার মাঝে কিছুটা সময় নিরব কেটে যায় । গ্লোরিয়া আকস্মত্ নিরবতার বরফ ভাঙ্গে । বলে চলে সে সবলিল ভঙ্গিতে, কোন একটা উপমা দিয়ে কবিতা সৃষ্টির মুহুর্তকে সামান্য হলেও বোঝান যেতে পারে । পারিপার্শিক কোন অসংগতি, আনন্দ বা সৌন্দর্যের উপকরনসমূহ পঞ্চেন্দ্রিয়ে গ্রহনের পর, কবিমনে তা নিজের মত করে প্রকাশ করার জন্য একধরনের চাপ সৃষ্টি হয় । এই চাপ কিছুটা গর্ভবতী নারীর প্রসব বেদনার মত । তবে তা অনেক বেশী মানষিক, প্রসব বেদনা অনেক বেশী শারীরিক । কবির মনে এই চাপ কখনও কমে না, উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে । একসময় রহস্যময় কোন কারনে, চাপমূক্তির জন্য খাতা কলম নিয়ে বসে পড়ে কবি । শব্দে শব্দে মূক্ত হয় চাপ থেকে, সাময়িক ভার মূক্তি ঘটে তার একটা কবিতার জন্মের মধ্য দিয়ে ; ঠিক যেমন সন্তান জন্মের মধ্যদিয়ে গর্ভীনির প্রসব বেদনার পরিসমাপ্তি ঘটে ।
কবি তার ভাবজগতে শ্রেষ্ঠ, অনন্য এবং একা তবে নিঃসঙ্গ নয় । নিজের সম্পর্কে তার ধারনা উচ্চ হওয়া বাঞ্ছনীয়, অন্যের অবস্থান সম্পর্কে সে কিছুটা নিরপেক্ষ, তবে অন্যকে নীচ ভাবা কবির স্বভাব বিরুদ্ধ । এই অতি উচু মাত্রার সেল্ফএস্টিম কবিকে অমর সৃষ্টিতে প্রনোদনা যোগায় । কবির এই অবস্থাকে অনেক সময় অহংকার বলে ভুল হতে পারে । অহংকারের বেলায় নিজেকে অতিবড় ভাবার সংগে যোগ হয় অন্যকে ছোটভাবার স্পৃহা এবং তা অহংকারীর কথা, কাজে ও দেহভাষায় তীব্রভাবে প্রকাশ পায় । অহংকার পরিবেশকে কলুশিত ও অস হনীয় করে তোলে । পক্ষান্তরে উচ্চ স্তরের সেল্ফএস্টি কবির ভাবজগতে অবস্থান করে । তবে তা তার অন্তরের সৌন্দর্যকে ইতিবাচক প্রকৃয়ায় পারিপার্শিকতাকে উন্নয়নের মানষে প্রকাশ পায় । কবির এই প্রকাশ কোন অবস্থাতে অন্যকে হেয় করেনা বরং মানুষের অভ্যন্তরিন সৌন্দর্যকে বের করে আনতে স হয়তা করে । তবে কবিতা সৃষ্টির পুলকানন্দ কবিকে একেবারে পেয়ে বসে । একটা কবিতায় কবির কিঞ্চিত্ পিপাসা নিবৃত হবার পর দ্বিতীয়টি সৃষ্টি করবার জন্য চিত্ত আবার তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠে । তার এই কাব্যতৃষ্ণা দোলকের গতির মত বার বার অতিক্রম করে চলে সৃষ্টির দিগন্ত রেখাটিকে । কাব্য ও কবিতার বিমূর্ত তত্ত্ব অনুসন্ধানে যত সুক্ষ্ন বহুমাত্রিকতায় যাইনা কেন, সবখানেই ত্রিমাতৃক এই মরনশীল দেহটার অস্তিত্ব অনুভব করি আর তাই, প্রবীন কবিত্রয়ের সাথে আমিও কিছুটা একমত । তবে, আমি কিন্তু কবি নই ।
আবর্তনেই সুন্দরতম
নিকশ কালো অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া সেও ভাল,
তবু আপন হৃদয়-প্রদীপ জ্বেলে অন্ধজনে দেহ আলো ।
মূক্ত মনের পূন্যভূমে স্বাধীন-প্রানের দীপ জ্বালো,
সেই দীপেরই আলোর ছটায় অন্ধমনে দেহ আলো ।
কি লাভ থেকে দিন-রজনী বিষয়ভাবে আত্তহারা !
মূক্ত-ভাবে হৃদয় হবে, মূক্ত-স্বাধীন পাগল পারা ।
ভালবাসার নিলয় যেমন, তেমনি আছে জ্ঞানের আলো,
দুইয়ে মিলে সাম্য হলে, ঘুচবে মনের সকল কালো ।
যুক্তি মাঝে মূক্তি খুজো, প্রেমে খুজো স্নিগ্ধ ছায়া,
এই দুয়েরই দোলন দোলায় যুক্ত তোমার সকল কায়া ।
হারিয়ে যাওয়া এতই সোজা ! কোথায় তুমি হারিয়ে যবে ?
বৈপরীতের দোলন-দোলায় আবার তোমার জন্ম হবে ।
অসীম-আকাশ, শুন্য মাঝে কে যেন আজ ডাকছে মোরে,
আমার নতুন জন্ম হলো বৈপরীতের বাসর ঘরে ।
এস, কে, নির্ভানা
ইমেইল:
মন্তব্য
ভালো লিখেছেন।
আকাশে মেঘ সাজলে যেমন বৃষ্টি হয়, তেমনি মনে ঘটনার সমারোহ ঘটলে কবিতা বা গল্প হয়ে কলমের ডগা বেয়ে সাদা কাগজে নেমে আসে।
চোখের দেখা যখন মনের গভীরে রেখাপাত করে, মনকে ভাবিয়ে তোলে, তখনোও কবিতার উদ্ভব হয়।
মানুষ যেমন নূতন প্রজন্মকে ডেকে আনার জন্য মিলনের মত্ত হয়, তেমনি কবিরা, লেখকরা ঘটনার সাথে, বা সামাজিকতার সাথে নিজেদের মনের ও চোখের মিলন ঘটায়, তখন নূতন লেখার প্রসব হয়।
এই গুলি আমার ধারনা,আপনার লেখাটা পড়ে মনে হলো।
ধন্যবাদ।
দলছুট।
আপনার মন্তব্য খুব ভাল লাগলো । কবিতার ব্যপারটা আমার কাছে সব সময় রহস্যময় মনে হয় । ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অসংখ্যা ধন্যবাদ ।
নির্ভানা।
দারুন লিখেছেন । প্রিয়তে রাখলাম ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আমার নিজের কাছে লেখাটা মোটেই দারুন লাগে নাই, তবে লিখতে খুব ভাল লাগে ,
আপনার ভাললেগেছে বুঝতে পেরে আরও অনুপ্রানিত হলাম । ধন্যবাদ ।
নতুন মন্তব্য করুন