বুদ্ধিমত্তায় অটিজমের প্রভাব : নির্ভানা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৯/১০/২০০৯ - ১০:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অতিরিক্ত বুদ্ধিমত্তা যে অনেক সময় কোন রোগের পূর্ব-লক্ষন হতে পারে একথা ভাবতেও অবাক লাগে । প্রকৃতির অপার রহস্য সম্ভারে কতযে অবাক করা বিষ্ময় রয়েছে তার ইয়ত্তা নেই । ধীর গতিতে হলেও মানুষ একে একে অনেক রহস্যের সমাধান করতে পেরেছে, ভবিষ্যতের জন্য রয়েছে আরও আবিষ্কার-উত্ঘাটন । এ যাত্রার কোন সীমা নেই । কোন শুরু নেই, শেষ নেই । অসুখটার নাম এসপার্জার সিনড্রম । এটা এক ধরনের অটিজম, যার রোগলক্ষন শিশুর তিন বছর বয়সের আগে থেকে প্রকাশ পেতে থাকে । এই রোগ একধরনের স্নায়বিক গঠনগত বৈকল্য, যাকে ধরা যায় অসম্পূর্ন ও ত্রুটিপূর্ন সামাজিক আচারন, দূর্বল ভাষাগত যোগাযোগ, নিষিদ্ধ ও পৌনপুনিক কাজ করার স্পৃহা থেকে । শরীরের প্রতি যত্ন নেয়ার ব্যার্থতা, যেমন ক্ষুধা-তৃঞ্চা, ঘুম, স্নান ভুলে যাওয়া এবং একই শব্দ বা বাক্যের পূন পূন ব্যাবহার দেখে স হজেই এ,এস-রোগ সানাক্ত করা যায়, এরজন্য প্যথলজিকাল পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না । তছাড়া পরীক্ষার মাধ্যমে তেমন কোন বিচ্যুতিও ধরা পড়ে না । জীন দ্বারা এই রোগ বংশধরদের মধ্যে সংক্রমিত হয়, এর সপক্ষে যথেষ্ট গবেষনা সমর্থন থাকলেও, কোন প্রকার এম,আর,আই বা ইমেজিং-এর মাধ্যমে এর সঠিক কোন বিচ্যুতি, চিহ্ন বা কারন পাওয়া যায় নাই । অস্ট্রিয়ার শিশু বিশেষজ্ঞ হ্যান্স এসপার্জার পঞ্চাশের দশকে প্রথম এই অসুখটাকে সানাক্ত করতে সমর্থ হন । তিনি তার নিবিড় পর্যবেক্ষনে থাকা অনেকগুলো শিশুর মধ্যে থেকে কয়েকজনকে আচারনগত বৈশিষ্টের সাহেয্যে আলাদা করতা সক্ষম হন, যারা সঙ্গিদের প্রতি ক্ষিন সমানুভুতি সম্পন্ন, নিজ দেহের প্রতি উদাসীন, মৌখিক বা অমৌখিক উভয় ভাষাই সঠিকভাবে প্রয়োগে ব্যার্থ । আক্রান্ত শিশুদের অসুস্থতার নামকরন করাহয় তার নামে এসপার্জার সিনড্রম হিসাবে । তার এই আবিস্কারের পঞ্চাশ বছর পর অসুখটি সানাক্ত করার একটা মানদন্ড পাওয়া গেছে সত্য, তবে বহু প্রশ্নের মিমাংসা এখনও বাকী ।

গবেষকেরা এই রোগের কারনের বিষয়ে জীনের অবদানের দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করলেও কোন্ বিশেষ জীনটি এর জন্য দায়ী তার কোন সুরাহা হয়নি । জীনকে দায়ি করা হয় এজন্য, একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এ,এস থাকলে তা পরবর্তি প্রজন্মে প্রবাহিত হচ্ছে এবং একই রকম আচারনগত লক্ষন প্রকাশ পাচ্ছে । তবে এক্ষেত্রে বহুমূখী কারন বা উপাদান রোগ-লক্ষন প্রকাশের জন্য দায়ী, এই বিশ্বাস জোরাল । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্ভবত এ,এস-এর জন্য দায়ী একদল সাধারন জীন, যাদের ভেতর একটা সুনির্দিষ্ট এলেলিস রোগটি উত্পাদনে মূখ্য ভুমিকা রাখে । এটাই যদি মূল কারন হয় তবে, এ,এস-রোগে আক্রান্ত প্রতিটা বেক্তির রোগের লক্ষন ও তীব্রতার জন্য একগুচ্ছ এলেলিস-কে দায়ী করার যথেষ্ট কারন রয়েছে । গর্ভধারনের আট সপ্তাহের মধ্যে গর্ভিনী টেরাটোজেনের সংস্পর্শে আসার ফলে গর্ভস্থ শিশু এ,এস- রোগে আক্রান্ত হয়েছে, এমন বেশ কিছু কেস, তথ্য-উপাত্ত গবেষকদের কাছে রয়েছে । কাদের এ,এস-রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী ? প্রধানত: যারা যৌক্তিক বুদ্ধিমত্তা তথা গানীতিক বুদ্ধমত্তার ব্যাপারে অবসেশনে আক্রান্ত হয়, তাদের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাটা সবসময় বেশী । তবে এখনও পর্যন্ত কোন কিছু বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষন, পরীক্ষা, নিরীক্ষার মাধ্যমে সূত্রবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি । কাজেই এসপার্জেস সিনড্রম সম্পর্কে এখনও শেষ কথা বলার সময় আসেনি ।

এই অসুখের কারনসমূহ যদি এতটাই ধোয়াসে হয়, তাহলে এর চিকিত্সাইবা কেমন হবে । রোগলক্ষন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর চিকিত্সা শুরু করা ভাল । একথা মনে রাখা দরকার কোন নির্দিষ্ট ওষুধ বা থেরেপি বা কোন প্যাকেজ ট্রিটমেন্ট এই রোগের জন্য প্রযোজ্য নয় । লক্ষন ভিত্তিক এই রোগের চিকিত্সা প্রধানত মৌখীক বা অমৌখীক ভাষার দক্ষতা বাড়ানো, অবসেশন বা পৌনপুনিক চিন্তা ও কর্মধারাকে পরিবর্তন, সামাজিক ও যৌক্তিক ব্যাবহারের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নানা রকম থরাপী প্রয়োগ করে রোগের তীব্রতাকে কমিয়ে আনা হয় । একথা সত্য, অন্যসব রোগের মত এরোগের জন্য কোন ঔষধ বা চিকিত্সা ব্যবস্থা স্থির করা অসম্ভব ।

অনেক বিশেষজ্ঞের ধারনা মহামতি নিউটন এ,এস-রোগে আক্রান্ত ছিলেন । প্রধান যে তিনটি লক্ষন এরোগে প্রকাশ পায়, তার সবগুলি বিজ্ঞানি নিউটনের মধ্যে ছিল । তিনি প্রায় বন্ধুহীন ছিলেন । হাতে গোনা যেকয়জন বন্ধু তার ছিল তদের সংগে প্রায়ই তিনি দুর্ব্যাবহার করে ফেলতেন । মোটেই ভাল বক্তা ছিলেন না তিনি । একই বাক্য ও শব্দের পুনরাবৃত্তি ছিল তার অভ্যাস । আর সামাজিকভাবে কারও সাথে মৌখিক বা লৌকিক ব্যাবহারে তার কোন দক্ষতা ছিল না । তারপরেও তিনি নিশ্চিতভাবে জিনিয়াস ছিলেন ।

আর ব্যাতিক্রমিচিন্তার নায়ক বিজ্ঞানি আইনস্টাইনের কথা নাহয় নাই বললাম । দ্বিতীয় স্ত্রী বিয়োগের পর নিজের শারিরীক যত্নের ব্যাপারে পূরাপূরী উদাসীন এই অসম্ভব জিনিয়াস বেক্তিটি নির্ভরশীল ছিলেন বেক্তিগত সেবাকর্মী বা নার্সের উপর । শ্রোতাদের কষ্টকরে বুঝে নিতে হতো তার বক্তৃতার মর্মকথা, কারন তা অনেক সময় একই কথার পূনরাবৃত্তিতে ভরা থাকতো । অনেক গবে ষক মনে করেন এসপার্জেস সিনড্রমে আক্রান্ত বেক্তি প্রেম-ভালোবাসা, সংগীত প্রীতি, এমনকি অধিকার আদায়েও সক্রিয় হয় । তাদের প্রধান অসুবিধা হলো হালকা আলাপচারীতায় অপারগতা । অধিকাংশ সময় ভারী-গুরুগম্ভীর বাক্যালাপে তাদের প্রশান্তি ।

নিউটন ও আইনস্টাইনের ব্যাপারে এভাবে গড়পড়তা সিদ্ধান্ত দেবার ব্যাপারে কোন কোন গবেষক মনে করেন, জীবন-চরিতের উপর নির্ভর করে কাউকে এ,এস- রোগে আক্রান্ত ঘোষনা দেওয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় । তরা মনে করেন, এই সমস্ত ব্যতিক্রমী মানুষদের ক্ষেত্রে অতিবুদ্ধিমত্তাই তাদের চরিত্রকে ব্যাতিক্রমী আকার দান করেছে ।

অনেকদিন “আগে ডার্ক সাইড অব দ্যা জিনিয়াস” নামে একটা মুভী দেখেছিলাম, সেটা ছিল একটা ফিকশন বা গল্প । বাস্তব জগতে এ,এস-রোগে আক্রান্ত অতিধীশক্তি সম্পন্ন মানুষরা মোটেই গল্পের মত অতটা নেতীবাচক নয় । তবুও আমরা আশায় আছি হয়তো অদূর ভবিষ্যতে মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অনেক জিনিয়াসের সমাজ-সংসারকে দেবার ক্ষমতাকে বহুগুনে বাড়িয়ে দেবে, তাদের আরোগ্য দেবে, দেবে শান্তি ।

এস, কে, নির্ভানা
ইমেইল :


মন্তব্য

মৃত্তিকা এর ছবি

সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন। চলুক
তবে অনেকে হয়তো 'এলিল' বা 'টেরাটোজেন' এসব শব্দের অর্থ বুঝবেননা তাই পাশে ব্র্যাকেটে লিখে দিলে ভালো হতো বোধ হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্টব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ । মনে হয়েছিল টার্মদুটো সবার জানা । পরবর্তিতে অবশ্যই খেয়াল করবো ।
নির্ভানা

অতিথি লেখক এর ছবি

পরবর্তিতে আর ভুল হবে না । ধন্যবাদ ।
নির্ভানা

আলমগীর এর ছবি

সচলে স্বাগতম।
লেখার ব্যাপারে:
শিরোনামে অটিজমের বদলে এসপার্গার লিখলেই বেশী উপযুক্ত হতো, কারণ পুরো লেখাতে আপনি এসপার্গার নিয়েই বলেছেন।

অসুখটার নাম এসপার্জার সিনড্রম । এটা এক ধরনের অটিজম, যার রোগলক্ষন শিশুর তিন বছর বয়সের আগে থেকে প্রকাশ পেতে থাকে ।

এখানে একটু বিভ্রান্তি আছে।
অটিজম কোন নির্দিষ্ট রোগের নাম না। ইংরেজীতে বলার সময় বলা হয়, অটিজম স্প্রেকট্রাম ডিসঅর্ডার। সে স্প্রেকট্রামের অপেক্ষাকৃত ভাল দিককে বলা হয় এসপার্গার। আর তিন বছরের আগে থেকে প্রকাশ পেতে থাকে- এটাও নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। অটিজম/এসপার্গারের এসেসমেন্ট করতে হলে শিশুকে অন্তত তিন বছর বয়েস হতে হয় (অস্ট্রেলিয়াতে)। পুরো লক্ষণ প্রকাশ পেতে আরো সময় লাগে।

অটিজমে/এসপার্গারে আক্রান্ত কারো অতি ধীশক্তি থাকতে পারে। কিন্তু সেটা ব্যতিক্রম বলাই ভাল।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি একদম ঠিক বলেছেন । কিঞ্চিত অলসতার জন্য কথাগুলো বাদপড়ে গেছে । সংশোধনের জন্য ধন্যবাদ ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সংশোধুংলো বুঝে নিলাম । ধন্যবাদ ।

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

লেখাটা ভাল লাগল।
আরো লিখুন।
--------------------------------------------------------

--------------------------------------------------------

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালোলগলে অনুপ্রানিত হই । অনেক ধন্যবাদ ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনুপ্রানিত হয়েছি । কৃতজ্ঞ ।

জাহেদ সরওয়ার এর ছবি

ভাবনা জাগানিয়া লেখা।
*********************************************

*********************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

স্বাধীন এর ছবি

লেখাটি ভাল লেগেছে। লিখতে থাকুন। ভাল থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, পড়ার জন্য । শুভকামনা করি ।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ভাল্লাগলো। আরেকটু বিস্তারিত হলে আরো ভাল্লাগতো হাসি
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলা টাইপিং-এ এখনও দক্ষতা অর্জন করতে পারিনি । তড়াতাড়ি করে লিখতে গিয়ে অনেক তথ্য বাদ পড়েছে, কিন্তু এডিট করার কোন ব্যবস্থা নেই । তাছাড়া জেনেটিকালি অলস আমি । পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মিউটেশন ঘটিয়ে আলসেমি দুর করুন (ঠিক বললাম তো, নাকি)।

অতিথি লেখক এর ছবি

অবশ্যই ঠিক । থ্যাংকু ।

তুলিরেখা এর ছবি

লেখাটি চমৎকার। অনেক কিছু জানা গেল। আরেকটু বিস্তারিত হলে আরো ভালো লাগতো। আর, বানানের দিকে একটু খেয়াল রেখে।
আপনাকে সচলে স্বাগতম।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকেও ধৈর্য্য-পরীক্ষা দেবার জন্য ধন্যবাদ । বাংলা টাইপটা আর একটু রপ্ত করতে পারলে অবশ্যই বিস্তারিত লিখবো ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।