গত দুই সপ্তাহে আমেরিকার পাকিস্তানকে ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য সারা বিশ্বের খবর মাধ্যমের একটা প্রধান বিষয় হয়ে আছে। তার সাথে সাথে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ জঙ্গি সমস্যাও আন্তর্জাতিক সংবাদগুলোর বড় একটা অংশ দখল করে রেখেছে।
পাকিস্তানকে আমেরিকার মূল্যায়ন ৫০এর দশক থেকে বিভিন্ন চড়াই উৎরাই এর মধ্য দিয়ে চলে এসেছে। ৫০এর দশকে সিয়াটো-সেন্টো চুক্তি থাকা সত্ত্বেও '৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় দুপক্ষকেই আমেরিকার সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়ায় বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল পাকিস্তানকেই। সভিয়েত ইউনিয়ন এর আফগানিস্তান দখল - এ সময়ে দুদেশের মধ্যে বেশ সৌহার্দপূর্ণ এবং সহযোগিতার সম্পর্কই ছিল। সে সময় পাকিস্তান আমেরিকার কাছ থেকে বড় অংকের বেশকিছু সামরিক এবং আর্থিক সাহায্য পেয়েছিল। সাম্প্রতিক সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানের সমর্থন-এর পর থেকেও পাকিস্তান আমেরিকার বেশ সুনজরেই আছে এবং গত কবছরেও বেশ বড় অংকের সামরিক-আর্থিক সাহায্য পেয়ে এসেছে। ২০০৮ এর আগস্ট মাসের এক রিপোর্টে পাকিস্তানে আমেরিকান সাহায্যের কিছু পরিসংখ্যান জানতে পারি।
গত জানুয়ারিতে বারাক ওবামার নেতৃত্বে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ফেব্রুয়ারি মাসেই পাক আমেরিকা সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে একটি ১০০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট তৈরি করে; যার ৮৯ পৃষ্ঠায় দেখতে পাই যে ২০০৭ অর্থবছরে আমেরিকা পাকিস্তানের জন্য নতুন ৭৫০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের পরিকল্পনা তৈরি করেছে। ২০০৮ এর জুলাই মাসে "Enhanced Partnership with Pakistan Act of 2008" নামে সিনেটে বিল উপস্থাপন করা হয়। প্রাথমিক ভাবে এই সাহায্য ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১৩ পর্যন্ত ১.৫ বিলিয়ন ডলার প্রতি বছর হিসেবে দেওয়া হবে এবং সাথে এটাও উল্লেখ আছে যে প্রয়োজনে এই বাৎসরিক সাহায্য ২০১৮ পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এই আইনটি ২০০৮-এ বুশ সরকারের সময় পাশ করা সম্ভব না হলেও আমেরিকান নতুন সিনেট "Enhanced Partnership with Pakistan Act of 2009" নামে সেই একই আদেশ পাশ করেছে কদিন আগে এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এতে স্বাক্ষর করে এটিকে আইনে রূপ দিয়েছেন। এতে দেখা যাচ্ছে যে সরকার পরিবর্তন আমেরিকার নীতিতে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না।
এই আদেশ পাশের পরে আমেরিকা এবং পাকিস্তান দুই দেশেই তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আমেরিকায় প্রশ্ন উঠেছে যে দেশে নিরাপত্তাই সবচেয়ে বড় হুমকি এবং যেখানে সাহায্যের অর্থ খরচের স্বচ্ছতা নেই সে দেশকে কেন এত বিশাল পরিমান অর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। আর এদিকে পাকিস্তানে প্রশ্ন উঠেছে এই সাহায্যের সাথে যে সব শর্ত এসেছে তা নিয়ে; যেমন পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম বা আর্মি এবং আইএসআই এর ভূমিকা নিয়ে শর্ত। এসব নিয়ে আর্মি প্রধান পাকিস্তান আর্মির এই সাহায্যের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাবের কথা সরকারকে জানিয়েছেন; গত ৭ অক্টোবরের সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়। যদিও আর্মির পক্ষ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষিত অসামরিক অর্থ সাহায্যের সাথে জুড়ে দেওয়া শর্ত সম্পর্কে উদ্বেগ এর কথাই বলা হয়েছে শুধু। তবে ধারনা করা হচ্ছে পাকিস্তানে তালেবানি শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায়, যে ব্যর্থতার আঙুল পাকিস্তান আর্মির দিকে উঠেছে তা তারা খুব সহজ ভাবে গ্রহণ করেনি। আর ২০০২ থেকে আমেরিকার দেওয়া আর্থিক সাহায্যের ৭০% এর খরচের কোন হিসাব নেই - এই দায়টাও পাকিস্তান আর্মির ওপরেই চলে যাচ্ছে কারণ ২০০৮ পর্যন্ত পারভেজ মোশাররফ নামক একজন আর্মি জেনারেলই পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় ছিল। এসব কারণগুলো দেখিয়ে আমেরিকা পাকিস্তান আর্মির তালেবান বিরোধী যুদ্ধ জোড়দার করার এবং 'লস্কর-ই-তৈয়ব'-এর মত অন্যান্য জঙ্গি সংঠনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। পাকিস্তান আর্মি এটাকে তাদের জন্য বড় অপমান মনে করছে এবং আমেরিকার নেতৃত্বে দেশের ভেতরে তালেবানদের সাথে যুদ্ধে যাওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে আমার মনে হয় অন্য একটি কারণও থাকতে পারে এই সাহায্যের ব্যাপারে আর্মির নেতিবাচক মনোভাবের; যেহেতু সাহায্য আসছে অসামরিক খাতে ব্যবহারের জন্য, তাতে পাকিস্তানের উচ্চাভিলষী আর্মির নিজেদের অংশের ব্যাপারে অনিশ্চয়তাও তাদের বর্তমান মনোভাবের বিষয়ে প্রভাব রেখে থাকতে পারে। যাই হোক, অতীত চিত্র বলে যে তালেবানদের সাথে পাক-আর্মির যুদ্ধগুলো আনেকটা আমাদের দেশের বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ঘটে যাওয়া দুই বিরোধী পক্ষ বা ছাত্র-পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মতন! একবার তালেবানদের কবল থেকে একটা অঞ্চল আর্মিরা উদ্ধার করে আবার কদিন পরেই তালেবানরা সেই অঞ্চল নিজেদের দখলে নেয়। এই চক্রের মধ্যেই ঘুরছে বিষয়গুলো গত ৮ বছর ধরে।
এদিকে বিরোধী দলগুলোও এই সাহায্যের শর্তগুলোর ব্যপারে তাদের বিরোধিতা স্পষ্ট করেছে। কিন্তু সরকার পক্ষ এই আর্থিক সাহায্যের বিষয়ে তাদের সমর্থন জানিয়েই যাচ্ছে। পাকিস্তানের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমেরিকা গিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি কাগজ নিয়ে এসেছেন যেখানে লেখা আছে যে বর্তমান এই সাহায্য কোন ভাবেই পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার ওপরে হস্তক্ষেপ নয়। বিষয়টা অনেকটা সেই সব চারিত্রিক সনদপত্রের মতন; যেখানে পত্রের উপরে লেখা থাকে 'TO WHOM IT MAY CONCERN' এবং ভেতরে লেখা থাকে যার নামে দেওয়া হচ্ছে তার চরিত্র ভাল, যিনি দিচ্ছেন তিনি উল্লেখিত ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন এবং তাঁর জানা মতে এই ব্যক্তি কোনপ্রকার অসৎ কর্মের সাথে জড়িত না; সেরকম! এখন এই কাগজ হাতে নিয়ে পাকিস্তানের সংসদে এই সাহয্যের বিষয়ে আলোচনা হবে!
যাক! এতক্ষণ যা লিখলাম তা তো সবাই জানে এবং এখন যা লিখতে যাচ্ছি সে অংশটুকুও সবার জানা! তাই সংক্ষেপে সারছি; গত সপ্তাহে পাকিস্তানে যে সব সন্ত্রাসী হামলা হলো সেগুলো :
১. অক্টোবর ১০; পেশোয়ার, পাঞ্জাব; পাকিস্তান আর্মি জেনারেল হেডকোয়ার্টার
২. অক্টোবর ১২; সাংলা জেলা; আত্মঘাতী বোমা হামলা, ৬ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত
৩. অক্টোবর ১৫; লাহোর; জাতীয় নিরাপত্তা ভবন এবং পুলিশ একাডেমী
৪. অক্টোবর ১৬; পেশোয়ার; পুলিশ স্টেশন
এর আগে যত আক্রমন হয়েছে তাতে মসজিদ, বাজার, হোটেল, পুলিশ স্টেশন জাতীয় পাবলিক স্পেস থাকলেও সরাসরি পাকিস্তান আর্মির কোন স্থাপনায় বা অবস্থানে হামলার নজির খুব বেশী চোখে পড়ে না। কিন্তু পাকিস্তান তালেবানের এই আর্মি স্থাপনায় ধারাবাহিক হামলা এমন একটা সময়ে করল যখন আর্মির ভেতরেই এই যুদ্ধে অংশগ্রহনের ব্যাপারে অনিশ্চিত মনোভাব দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু বিষয়গুলো এমন ভাবে ঘটছে যেন মনে হচ্ছে, যে যুদ্ধ পাকিস্তান আর্মি নিজেদের ঘাড়ে নিতে চাচ্ছেনা তাই এসে তাদের ঘাড়ের পড়ল। তালেবান বাহিনী যেন দেখিয়ে দিল পাকিস্তান আর্মিকে কতটা নিরাপত্তাহীন অবস্থায় তারা আছে! এই সব আক্রমন দেশের ভেতরে এবং বাইরে তালেবানি শক্তির সাথে যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য করবে তেমনি তাদের আমেরিকান সাহয্যের বিষয়ে তাদের নেতিবাচক অবস্থান থেকেও সরিয়ে আনবে।
এটা অবশ্য জানা কথা, আমেরিকা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার বাস্তবায়ন করবেই। তাই প্রশ্ন জাগে তালেবান বাহিনীর এই হঠাৎ অতিরিক্ত আর্মি বিরোধী অভিযানগুলো কোনভাবে আমেরিকাই করাচ্ছে না তো?! কিন্তু এই চিন্তাকে সমর্থন করতে পারে এমন কোন তথ্য তো আমার হাতে নেই। কিন্তু গত ৬০ বছরের অধিক সময় ধরে 'শান্তিপ্রিয়' আমেরিকা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যতসব সরাসরি এবং সিআইএ দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করেছে, তারপরে এই ধরনের চিন্তা মাথায় আসাটাকে খুব একটা অযৌক্তিক বলে আমার নিজের কাছে মনে হয়না! অপেক্ষা করতে হবে হয়ত ৩০ বছর, এই সময়ে আসলে কি কি ঘটেছিল পাকিস্তানে এবং কারা কি ভূমিকায় ছিল, তা জানতে....
লেখাটা এখানেই শেষ করা যেত কিন্তু মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে একটা প্রশ্ন - আমেরিকার কি লাভ এই সাহায্য পাকিস্তানকে দিয়ে? এখন আমার স্বল্প জ্ঞানে একটু লেখার চেষ্টা করি আমেরিকার কি কি কারণে পাকিস্তানকে এই সাহায্য দিতে চাচ্ছে এবং তাতে আমেরিকার লাভটা হচ্ছে কিভাবে -
যে কথাটা বারবার আসছে 'জাতীয় নিরাপত্তার জন্য' এবং বিশ্বব্যাপি সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের সহায়ক দেশ হিসেবে পাকিস্তানের অবকাঠামোগত উন্নয়নই এই সাহায্যের কারণ, সেটা সত্য। কিন্তু পাকিস্তানে এই অবকাঠামোর উন্নয়ন আমেরিকার লাভ কিভাবে আনবে?
প্রথমত, বর্তমান বৈশ্বিক আর্থিক অবস্থায় বাজারে অর্থের জোগান হিসেবে এই সাহায্য বেশ কাজের। পাকিস্তানে যে সব উন্নয়ন কাজ হবে তার বেশীর ভাগের তদারক করার জন্য আমেরিকা থেকে 'কনসালটেন্ট' থাকবে। এছাড়া প্রকল্পের পরিকল্পনাও করবে আমেরিকান 'ইঞ্জিনিয়ার'রা। আর যেসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন পড়বে তাও আসবে আমেরিকা থেকে। তাতে দেখা যাবে এই ৭৫০ মিলিয়নের বেশীর ভাগ অংশই আমেরিকার পুঁজি বাজারে ফিরে যাবে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এই উন্নয়ন কাজ আমেরিকা নিজের দেশে কেন খরচ করছে না? এর দুটো বড় কারণ সহজেই চোখে পড়ে - ১. আমেরিকায় উন্নয়নের জন্য পাকিস্তানের মত এতবড় বাজার নেই। ২. পাকিস্তানে কাজ করতে গেলে একেবারে গোড়ার যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে তদারকি পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই আমেরিকার সাহায্য প্রয়োজন হবে। যেটা কিনা নিজের দেশে করতে গেলে গোড়ার যন্ত্রপাতির প্রয়োজনটা তত বেশী হবেনা।
দ্বিতীয়ত, এই সাহায্যের অর্থটা আসছে সরকারের বাজেটের সামরিক খাতে ব্যয়-এর বাইরে থেকে। কিন্তু যখন পাকিস্তান এই সাহায্যটা নিচ্ছে সাথে যে সব শর্ত আছে তাতে স্পষ্ট যে এর পেছনে যুদ্ধের বিষয়টা জড়িত থাকছে। এছাড়া পাকিস্তান পুলিশকে উন্নয়নের কথাও এই সাহয্যের ভেতরে আছে। সেই জন্যও যত অস্ত্র-প্রশিক্ষণ এসব কাজের জন্য আমেরিকার সাহয্য পাকিস্তানের লাগবে। তারমানে আমেরিকার বাজেটের অসামরিক খাতে ব্যয়-এর অর্থ একটু ঘুরিয়ে সামরিক খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা আমেরিকার 'যুদ্ধ-অর্থনীতি'র একটা খুব সাধারণ উদাহরণ।
তৃতীয়ত, পাকিস্তানে ইউএস দূতাবাসের পরিধি বৃদ্ধি। ইসলামাবাদে দূতাবসের উন্নয়নের জন্য হোয়াট হাউস থেকে ৭৩৬ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে কনগ্রেসের কাছে। উল্লেখ্য, গত বছর শেষ হওয়া ইরাকে আমেরিকান দূতাবাস তৈরির জন্য খরচ হয়েছে ৭৪০ মিলিয়ন ডলার। ধারনা করা হচ্ছে এই বিশাল অংকের টাকার একটা বড় অংশ আসবে এই অসামরিক সাহয্যের থেকে।
চতুর্থত, ওপরের পাকিস্তানের মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে যে পাকিস্তানের চারপাশ ঘিরে রেখেছে ইরান, আফগানিস্তান, চীন, ভারত এবং আরব সাগর। বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থায় তো বোঝাই যাচ্ছে পাকিস্তানের গুরুত্ব! আফগানিস্তানে যুদ্ধ এবং ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য পাকিস্তানে শক্ত অবস্থান আমেরিকাকে সাহায্য করবে। আরও যেটা মনে হয়, যে ভাবে বিশ্বছবি বদলাচ্ছে তাতে ভারত-চীনের পাশে একটা শক্ত ঘাঁটিও ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন বলেই মনে হচ্ছে।
এইখানেই শেষ করি। কারণ এরচেয়ে গভীরে ঢোকার জ্ঞান আমার নাই!
অনুপম শহীদ
মন্তব্য
চমৎকার বিশ্লেষণ। একটানে পড়লাম। আরও লিখুন অনুপম ভাই।
কষ্ট করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ!
স্বাগতম অনুপম শহীদ।
যথেষ্ট সময় নিয়ে এই গুরুত্বপূর্ন পোষ্ট করেছেন। পাকিআর্মিদের দিয়ে ইসলামী জঙ্গি দমন হচ্ছে চরম ফাজলামো- এই আর্মি নিজেই তো তাই।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
পাকিআর্মিদের দিয়ে ইসলামী জঙ্গি দমন হচ্ছে চরম ফাজলামো
তেমনি আমেরিকার 'শান্তি প্রক্রিয়া' আরেকটি বড় ফাজলমো!
ধন্যবাদ!
নোবেল লরিয়েট বারাকের শান্তি প্রজেক্ট!
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
শুধু ওবামা-র না! লক্ষ্য করে দেখেন এই 'শান্তি প্রক্রিয়া' গত ৬০ বছর ধরে পৃথিবীর প্রত্যেক অঞ্চলে চলছে!
'মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া' এখন বিঘ্নিত হবে ইউএন-এর হিউম্যান রাইটস কমিশনে গোল্ডস্টোন রিপোর্টের উপর ভোটে ইসরাইল হেরে যাওয়ায়! কিন্তু শান্তির এই প্রক্রিয়া চলছে কতদিন ধরে?!
পৃথিবী জোড়া আরও কতগুলো 'শান্তি প্রক্রিয়া' যে চলছে আমাদের পক্ষে তার খবর রাখাও অসম্ভব!
বুঝলাম আমেরিকার শান্তি প্রক্রিয়া 'শ'-ও বোঝা না। হাসান মোরশেদ আর অনুপম শহীদ ভাইয়ের সাজেশন কি?
আর গভীরে ঢোকার দরকার কি হে দাদা? শুধু চমৎকার লেখাই নয় তথ্য উপাত্ততেও ঠাসা লেখাটি জ্ঞানের পরিধিকে কিছুটা হলেও ছুয়ে গেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ অনুপম!
এস হোসাইন
--------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"
ধন্যবাদ আপনাকেও!
তবে কখনই মনে হয়না সবটা বুঝে ফেলেছি। কারণ যতবার মনে হয়েছে, কিভাবে কি হচ্ছে বেশ তো ধরে ফেলছি তখনই দেখেছি নতুন কোন একটা মোচড়, যার জন্য প্রস্তুত ছিলামনা!
চমৎকার তথ্যবহুল একটি পোস্ট। অনেক ধন্যবাদ।
'যে ভাবে বিশ্বছবি বদলাচ্ছে তাতে ভারত-চীনের পাশে একটা শক্ত ঘাঁটিও ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন বলেই মনে হচ্ছে।'----ভালো পয়েন্ট।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
অপেক্ষা আসলে জানার, কি কারণে এত গুরুত্ব এই দেশটার - আমেরিকার কাছে। তার আগে পর্যন্ত শুধুই এই সব অর্থহীন স্পেকুলেশন!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
ইরান আর কোরিয়ার সম্পর্কে আমেরিকার ভীতি তো আছেই। বাকি দেশ দুটোর মানুষদের কর্মদক্ষতাকে আমেরিকানরা সমীহের চোখে দেখে।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে আমেরিকার উদ্দেশ্য-বিধেয় পরিস্কার করে বুঝতে আপনার এই লেখা নিশ্চয়ই সাহায্য করবে।ধন্যবাদ অনুপম ভাই।
মহসীন রেজা
ধন্যবাদ!
তবে এর মধ্যে আমার নিজের বলতে কিছুই নাই সবই অন্যের কথা-তথ্য-উপাত্ত! আমি এক জায়গায় করে পোস্ট করেছি মাত্র। তবে কিছুমাত্র সাহায্যে আসলে লেখাটা সফল হবে।
চমৎকার একটা পোস্ট
সবচেয়ে ভাল লাগল সাহায্যের অর্থের ব্যবহার আর পুনরায় তার দানকারী দেশে ফিরে যাওয়ার বিশ্লেষণটা। এই জিনিসটা আসলে আর ভাল করে ফোকাস করা দরকার। দাতা দেশ গুলো তাদের সাহায্যের একটা বড় অংশ নানা আরোপিত বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে যে তাদের দেশে পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে যায় শুধু তাই না আর অনান্য নানা ক্ষেত্রে কড়া কড়া শর্ত দিয়ে যে সর্বশেষ লাভক্ষতির হিসেবে তাদের লাভের অংকের পরিমাণ বেশী থাকে এটা সাধারণত কখনই মূলধারার গণমাধ্যম গুলোতে কেন জানি তেমন একটা তুলে ধরতে দেখি না। আর এটা বেশী ফোকাসড না হওয়াতে মানুষের মনে এই দাতাদের নিয়ে অনেক সময় প্রচুর ভুল ধারণা থেকে যায়।
ভাল থাকবেন। সচলে আপনার আর বিশ্লেষণমূলক লেখা আশা করছি
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
এই রাজনৈতিক সাহায্যের বিষয়টা খুব মোটা দাগে বুঝি! আর আমেরিকার যুদ্ধ নির্ভরশীল অর্থনীতি কিভাবে টিকে আছে- এটাও আমার কাছে একটা বড় বিস্ময়!
মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর সমস্যা হলো তারাও এই চক্ররই অংশ। তাই তাদের প্রচার দাতাদের দিকেই যাবে। এর ভেতর থেকেই তথ্য সংগ্রহ করে নিজেদের বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করতে হবে।
ধন্যবাদ!
চতুর্থত, ওপরের পাকিস্তানের মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে যে পাকিস্তানের চারপাশ ঘিরে রেখেছে ইরান, আফগানিস্তান, চীন, ভারত এবং আরব সাগর। বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থায় তো বোঝাই যাচ্ছে পাকিস্তানের গুরুত্ব! আফগানিস্তানে যুদ্ধ এবং ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য পাকিস্তানে শক্ত অবস্থান আমেরিকাকে সাহায্য করবে। আরও যেটা মনে হয়, যে ভাবে বিশ্বছবি বদলাচ্ছে তাতে ভারত-চীনের পাশে একটা শক্ত ঘাঁটিও ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন বলেই মনে হচ্ছে।
এটাই হচ্ছে সবচে' গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এই উদ্দ্যেশ্যের জন্য বাড়তি খরচও সই। রাজনৈতিক সাহায্যের যে অংশ ভিন্ন আকারে দেশে ফিরে আসে তা কিছুটা কম হলেও এই পয়েন্ট বিবেচনায় আমেরিকার সাহায্য কার্যক্রম "জারী রহেগা"।
চমৎকার পোস্ট অনুপম! এমন পোস্ট আরো চাই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পড়ার ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
অসাধারণ লেগেছে! সহজ ভাষায় সুন্দর বিশ্লেষণ। পাকিস্তানকে স্পন্সর তো কম করলো না আমেরিকা, একটা লঞ্চিং পয়েন্ট ধরে রাখার জন্য বহুদূর যেতে রাজি তারা।
আমার খুব শান্তি লাগে পাকিস্তানে ঝামেলা দেখতে। আর্মির হাতে তালেবান, তালেবানের হাতে আর্মি......সব, সব। এই একটা bigotry আমি খুব আমেজের সাথে পালন করি, করে যাব।
ঝরঝরে এমন বিশ্লেষণধর্মী লেখা আরো পাবো আশা করি!
ধন্যবাদ!
আমারও দারুণ লাগে যতক্ষন এই ঝামেলা গুলোকে শুধুই পাকিস্তানে আভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে মনে হয়। কিন্তু যখন দেখতে পাই যে এই ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মোড়কে হচ্ছে তখন একটা অস্বস্তি কাজ করা শুরু করে!
ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ!
আমারও দারুণ লাগে যতক্ষন এই ঝামেলা গুলোকে শুধুই পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে মনে হয়। কিন্তু যখন দেখতে পাই যে এই ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মোড়কে হচ্ছে তখন একটা অস্বস্তি কাজ করা শুরু করে!
ভাল থাকবেন।
আপনার 'নিজস্ব' চিন্তা ভাবনার সাথে একমত পোষন করছি।
আপনার কি মনে হয় না ব্যাপারটা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে?
স্পার্টাকাস
এরকমের একটা আভাস তো পাওয়া যাচ্ছে, তাই এই লাইন লেখা। কিন্তু আসলেই একটা শক্তিশালী জায়গায় যাওয়ার আগে দুদেশেরই অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশের ভেতরেই অনেক বিষয় আছে যেগুলোকে মোকাবেলা করা এই দুইদেশের নেতৃত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ!
আমি রাজনৈতিক(দেশি বা বিদেশি!) ব্যাপার স্যাপার বরাবরই এড়িয়ে চলি। তাও বন্ধুর পীড়াপীড়িতে কেম্নে কেম্নে যেন পড়ে ফেললাম(অনেক কষ্ট হইছে কিন্তু )। তবে অনেক জ্ঞানার্জন হলো। আপনি ভাই চরম বিশ্লেষক।
ভালো থাকবেন।
/
ভণ্ড_মানব
কষ্ট দেওয়ার জন্য দুঃখিত, মানব!
তবে, সেটা লিখে জানানোর জন্য ধন্যবাদ!
১
তালেবান আক্রমনের, এবং ব্যাপকভাবে ইসলামিক চরমপন্থীদের আক্রমণের কিছু দিক আমাকে বেশ ভাবিত করে। যেমন ধরেন - পেশোয়ারে দ্বিতীয় আক্রমনটা করেছিল ১৩ না ১৪ বছরের একটা ছেলে। আবার ইরাকে ডাউন্স সিনড্রোমে আক্রান্ত মহিলাদের দিয়েও আক্রমন চালানো হয়েছিল (খুব সম্ভবত বাগদাদে)। ডাউন্স সিনড্রোমের এক পর্যায়ে মানুষ তো আর ঠিক 'সেনটিয়েন্ট' থাকে না, সুতরাং এটাকে জোম্বি এ্যাটাকও বলা যায়।
এই জিনিসটা একদিক দিয়ে তীব্র খারাপ লাগার মত একটা ব্যাপার, আরেকদিক দিয়ে চরমপন্থার তীব্রতা উপলব্ধির আরেকটা ব্যাপার। অনেকটাই 'নো হোল্ডস বারড' ব্যাপার।
খারাপ লাগবে কেন সেটা তো জানাই - মনুষ্যত্ব ইত্যাদি চলক। মজার ব্যাপার হল, এ ধরনের চরমপন্থীদের ধাক্কায় যখন আমেরিকা কান্দে, তখন বাকিরা একরকম মজার আমেজ পায় (অনেকটা উপরের সংসপ্তক ভাইয়ের মত)।
আমি ব্যক্তিগতভাবে এরকম আক্রমনে খুবই হতাশ হই। এদের চরমপন্থার প্রতি একটা পারভার্স এ্যাডমায়ারেশন থাকে (যুদ্ধ যখন করবিই তখন টোটাল ওয়ার কর!), কিন্তু জিনিসটা যে কতটা সেল্ফ-ডিফিটিং, সেই দূরদর্শীতার অভাব এদের মধ্যে দেখি বড় বেশি।
২
এভাবে দেখলে তালেবান মূলত গাধা। বড় গাধা।
পাকিস্তান এমনিতেই রাডিকালাইজড হচ্ছে। ওয়াজিরিস্তান থিকা বাইর হইয়া শহরে আক্রমনের কি দরকার। আস্তে আস্তে রাডিকালাইজ কইরা পাওয়ার নিয়া নে! অলরেডি তো বেশ কিছু ধর্মীয় পার্টি আছে, তোরা ওগুলিতে যা-গা বা ওগুলির মত কিছু একটা কর!
তালেবানের একটা বিশাল সুবিধা হচ্ছে নিজেদের স্ট্রংহোল্ড - দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান, উত্তর ওয়াজিরিস্তান, এমনকি মালাকান্দও। কুররাম-ও হইতো, কিন্তু কুররাম-এ প্রচুর শিয়া। শিয়ারা দেওবন্দী তালেবানগো দেখতারেনা।
এই স্ট্রংহোল্ড থাকাই হয়তো এদের এত আক্রমনাত্মক করসে। আফ-পাক সীমান্তের এসব পান্ডববর্জিত জায়গায় ব্রিটিশ, আমেরিকান, রাশিয়ান, মুঘলরা অভিযান চালাইলেও জীবনেও থাকতে চাবে না। কিন্তু ওয়াজির বা মেহসুদদের বাসাই ওখানে। এরা বারে বারেই এদের পেইন দিসে। উইকিপিডিয়ায় গেলে দেখবেন যে এরা ৪৭-এ কাশ্মীররে এ্যাটাক করসিল, কিন্তু যুদ্ধ করতে এতই মজা পাইছে (লুট, ধর্ষণ) যে কিসের কি এলাকা দখল, ডানে বামে ফালতু স্কারমিশে নিয়োজিত হয়ে গেছে। যুদ্ধ এদের জন্য রীতিমত একস্ট্যাসি - ঠিক এ কারণেই এদের হারানো এত কঠিন। এটা নতুন কিছু না - যতদিন এরা মুঘলদের সাপোর্ট করসে, মুঘল সাম্রাজ্য টিকে ছিল, যখন গেছে গা, তখন মুঘলরাও বলছে টা টা!
আরেকটা জিনিস মনে রাখা দরকার, পাকিস্তান আর্মিতেই বহু ওয়াজির সাব-ট্রাইব, মেহসুদ, আফ্রিদি ইত্যাদি আছে। সকল ট্রাইবালই তালিবান না, তবে এদের সমাজব্যবস্থা বেশ, বেশ conducive to that।
৩
এখন কথা হইল, আমেরিকার তালেবানরে সামলানোর কি দরকার পড়ছে? সেভাবে দেখলে, পাকিস্তানেরই বা কি দরকার পড়ছে?
আমার মোটা বুদ্ধিতে যা আসে তা কই।
তালেবানের উদ্দেশ্য আঞ্চলিক। আমেরিকার দুই পয়সার ঠ্যাকা নাই এদের কামড়ানোর।
সমস্যা তখন যখন তালেবান আল-কায়েদার সাথে মক্সো করে। এবং তালেবান তা করসে, করতেসে, (করবে?)। আল-কায়েদা বড়ই উপকারী তালেবানের জন্য। তালেবানের অস্তিত্বের জন্য। এটা ওদের 'আদর্শের' একদম বেসিকে। আল কায়েদারে হঠাৎ টা-টা কওয়া ওদের স্বার্থের বিপরীতে - বেসিক ভেঙ্গে যাবে যে! তাছাড়া, এই যে উজবেক, চেচেন, অন্যান্য নানা ককেশিয়ান, উইঘুর - এরা আসে, আল-কায়েদার মত একটা ইন্টারন্যাশনাল আমেজ না থাকলে এরা কি আসতো?
আল-কায়েদার জন্য আমেরিকার ঠ্যাকা আছে। কেবল আমেরিকার 'আদর্শের' জন্য হইলেও। সুতরাং পাক আর্মিরে মাথায় হাত বুলায়, লাইত্থায়-গুঁতায় আমেরিকা পাঠাইলো দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে।
মজার ব্যাপার হল, এই ৫০,০০০ মেহসুদ কিসুই না। ফালতু। ডানে বামে লাখে লাখে ওয়াজির - এরা সব হাক্কানি নেটওয়ার্কের অংশ। হাক্কানি যারে বলে এক্সপ্লিসিটলি আল-কায়েদা।
আমেরিকা জানে হাক্কানিরে এক টানে আপরুট করা অসম্ভব। কিন্তু বায়তুল্লাহ-হাকিমুল্লাহরে সম্ভব। হাক্কানিরা পাক আর্মির সাথে রীতিমত চুক্তি করসে - আমরা আফগানিস্তানে এ্যাটাক করুম, তোমরা আরামে থাকো। বায়তুল্লাহর জিল বেশি, ওর ভাল্লাগে নাই, ও বলে না, আমি পাকিস্তানরেও এ্যাটাকামু! ভাবলে অবশ্য সেই দূরদর্শী বেশি, তবে ইন দ্য ভেরি লং রান। এত লম্বা সময় কোন কামে লাগবো না। মিলিট্যান্ট আইডিয়লজিগুলি ওই সময়ে হয় মূলধারায় মার্জ করবো, নাইলে এক্সটিংক্ট।
তো, বায়তুল্লাহ বা ওর সাইডের মেহসুদদের মোটামুটি ধ্বংস করা যায়। এরা মূলত যাযাবর টাইপ, ভেড়া-মহিষ চড়ায়, জনসংখ্যা ওয়াজিরদের মত আউট-অফ-কন্ট্রোল না। চারপাশের তালেবান আর হাক্কানিরাও এদের উপর কিছুটা ক্ষ্যাপা - ব্যাটা, কইলাম একটু সামলায় কর! সুতরাং যদি তা করাই যায়, হোয়াই নট? পাকিস্তানরা সাড়ে সাত বিলিয়ান দেও, রিমোট কন্ট্রোলে উপজাতীয়দের সবচেয়ে ফ্যানাটিক এলিমেন্টটারে মারো।
প্লসিবল মনে হয়? আমার নিজেরই পুরাপুরি মনে হয় না। কিন্তু আমি চেষ্টা করতেসি ফিগার আউট করার। পুরা ঘটনায় মাঝখানে বিশাল কিছু গ্যাপ রয়ে গেসে। ওগুলি চাপার উপর রাখতেসি।
৪
এখানে বিশাল একটা ভূরাজনৈতিক ব্যাপার আপনি আপনার পোস্টে অলরেডি কইসেন - চীন-ভারত। এই কয়দিন আগেও জিলানি, তার আগে জারদারি চীনে গেল। চীনের ভারতরে কখনোই ভাল্লাগে নাই, লাগবেও না। এখন চীনের গ্রেট পাওয়ার হওয়া মোটামুটি শেষ, সুপারপাওয়ার হইতে হইলে ভারতের সাথে একটা দফারফা দরকার। এল্লাইগ্যা পাকিস্তানরে খুব, খুব দরকার চীনের। পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক পজিশনটা খুবই মজার। শালারা এক্সপ্লয়েট করতে পারলো না।
৫
ইরানে রেভ্যুলুশনারি গার্ডের পিশিনে যে আত্মঘাতী বোমা হামলায় মারা হইসে, সেটার জন্য ইরান দুষছে পাকিস্তানরে। (আর কি বাকি ছিল কন!) এইটা খুব মজার একটা ব্যাপার। জুন্দুল্লাহরে যে পাকিস্তানের সুন্নীরা বড়ই পছন্দ করে এটা জানা কথা - রাফিদি শিয়াদের বিরুদ্ধে দরকার এরকম (লস্কর ই তাইয়েবা আর লস্কর ই জাংভির অফিশিয়াল মতামতেই, বিশেষত দ্বিতীয়টার! সিপাহ-ই-সাহাবা তো মনে হয় লস্করেরই 'সেনাবাহিনী')।
এখন তো আমেরিকান হকদের নড়ে-চড়ে বসার কথা। আরি, পাকি চরমপন্থীগুলিরে তো আমরাও ব্যবহার করতে পারি!
ভূরাজনীতি বড়ই মজার ব্যাপার।
৬
আমি আপনার সব উপসংহারের সঙ্গে একমত না, তবে কারণ ছাড়া না বললে তো লাভ নাই। তবে, লেখার জন্য ধন্যবাদ। এরকম আরো লেখেন। সচলায়তনে এরকম লেখা কমই আসে।
দারুন!
আপনি আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে যা লিখেছেন তা নিয়ে আপনার সাথে আলোচনায় যাওয়ার মত অত গভীর জানা আমার নাই! আসলেই পাকিস্তান আফগানিস্তানের এই সব আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোকে কিভাবে কাজে লাগিয়ে আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসে রূপ দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে আরও বিশদ ভাবে লিখলে উপকৃত হব। এটা অনুরোধ!
১-এ আপনি যে কথাটা বলেছেন এইসব চরমপন্থী হামলার ব্যাপারে আমাদের এক চোখা দৃষ্টি ভঙ্গি আসলেই হতাশাজনক! (সংসপ্তক অবশ্য আপনি যা বলছেন সেরকম কিছু বলেছেন বলে আমার মনে হলোনা)
আসলে সন্ত্রাসবাদ নাকি মুক্তিযুদ্ধ - এদুটোর ভেতরে বিভেদটা চিন্তার-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থানগত পার্থক্যের কারণেই আসে। বিংশ শতকের শুরুতে বা ৭১ সালে আমরা মানে বাঙালীরা; পৃথিবীর একটা বড় অংশের মানুষের কাছে সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলাম! কিন্তু আমাদের কাছে তো তা মুক্তিযুদ্ধ।
তবে ২-এর প্রথমেই আপনি যা বলছেন সেটা আমার কাছে স্পষ্ট হলো না! আপনি বলছেন,
পাকিস্তান এমনিতেই রাডিকালাইজড হচ্ছে।...আস্তে আস্তে রাডিকালাইজ কইরা পাওয়ার নিয়া নে! অলরেডি তো বেশ কিছু ধর্মীয় পার্টি আছে, তোরা ওগুলিতে যা-গা বা ওগুলির মত কিছু একটা কর!
আমার মনে হয় পাকিস্তান দেশ হিসেবে যেমন তেমনি প্রত্যেকটা দলই ইসলামি ভাবাদর্শে বিশ্বাসী। তো সেখানে রেডিক্যাল চিন্তাভাবনা হবে যদি এই ধর্মীয়-রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে এসে কেউ অন্য কিছু করে।
৩ নং-এ এসে আপনি লিখছেন,
তালেবানের উদ্দেশ্য আঞ্চলিক। আমেরিকার দুই পয়সার ঠ্যাকা নাই এদের কামড়ানোর।
এই জায়গাটাতেও মতে মিললোনা! ঠেকা আমেরিকার আছে - যুদ্ধটা খুব বেশী প্রয়োজন আমেরিকার অস্তিত্বের জন্য! যুদ্ধ থাকলে ধ্বংস-ও থাকবে, ধ্বংসের উপরে উন্নয়নও থাকবে আবার সেই উন্নয়নকে ধ্বংসের অস্ত্রও থাকবে। এটা হলো মোটা দাগের কথা। যুদ্ধের যে নীতিতে আমেরিকা ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আছে তাতে আমরা নিজেরা কিভাবে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কাজ করছি তা বোঝা এবং মানা আমাদের নিজেদের জন্যই শক্ত হয়ে যায়!
৪-এ লিখছেন,
সুপারপাওয়ার হইতে হইলে ভারতের সাথে একটা দফারফা দরকার
এই দফারফাটা বলতে কি বোঝালেন জানি না! তবে আমার মনে হয় চীন-ভারত যদি পরস্পরের সাথে যুদ্ধে যায় তাহলে তারা সুপারপাওয়ার হিসেবে দাঁড়াতে পারবে না। তবে এব্যাপারেও আমার কোন ধারণা নাই যে ভবিষ্যত সুপারপাওয়ারগুলোর চেহারা কিরকম হবে?!
যাই হোক! যে জায়গাগুলোতে কিছু দ্বিমত আছে সেগুলোই শুধু লিখলাম, এজন্য কিছু মনে করেন না! তবে অনুরোধ করব এই অঞ্চলের ভূরাজনীতি নিয়ে বড়সড় একটা (বা কয়েকটা) লেখা লেখার জন্য!
আর আপনি যে কষ্ট করে এত বিশাল একটা মন্তব্য লিখেছেন এই জন্য ধন্যবাদ! আমার লেখাটা তো স্পেকুলেশনে ভরা তো তাতে মতের মিল না হওয়াটাই স্বাভাবিক - হয়ত আপনি এমন কিছু জানেন যা আমার জানা নেই। তো যে জায়গাগুলোতে দ্বিমত সেগুলো নিয়ে লিখলে খুশি হব। নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় তাতে!
ভাল থাকবেন!
আপনে বড়ই ভাল মানুষ। আর শোনেন, মনের সুখে মতামত দিয়ে গেছি, বেশি ডিপে আবার যাইয়েন গা না!
আস্তে আস্তে উত্তর দেই।
এটা মনে হয় আপনি আমারে ঠিক বুঝেন নাই। আমি এই বিষয়টা ছুঁই-ই নাই।
আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে পাকিস্তান *ইসলামিকভাবে* অনেক রাডিকালাইজড। তালেবান বা আল-কায়েদা এত আজাইরা লাফালাফি না কইরা এই সামাজিক ধারাটাকেই হয়তো আগাইলে পারতো।
তবে এখন যখন বলতেসি, মনে হচ্ছে একটা পয়েন্টে এসে ধাক্কা খেয়ে যাইতো। তখন এগুলি করতেই হইতো।
সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করলে পারতো।
এখানে আরেকটা দৃষ্টিভঙ্গী আসতে পারে, আমেরিকার মত হয়তো তালেবানেরও আফ-পাক স্ট্র্যাটেজি আছে! দুইটাকে জোড়া লাগাইতে গিয়ে এই অবস্থা। অলরেডি তো খবরে বলতেসে শীর্ষ তালেবান নেতারা মধ্যপ্রাচ্যের দিকে চলে গেছে!
আমার মনে হয় যুদ্ধটা তখনই প্রয়োজন যখন তালেবান আল-কায়েদার বন্ধু হয়ে যায়। মিত্র হয়ে যায়। গত দেড় যুগ ধরেই তালেবান আল কায়েদার মিত্র।
তালেবান আল-কায়েদারে ফালায় দিলে কি হবে তার অংশবিশেষ হিলারি ক্লিনটনের কথা শুনলেই বোঝা যায়, যখন তিনি গুড আর ব্যাড তালেবানের কথা বলেন।
যুদ্ধ আর আমেরিকা বিষয়ে অনেক কথা বলা যায়, বলা হইসে। 'জার্নালস অফ অ্যান ইকোনমিক হিটম্যান'-ও আছে, আবার 'আমেরিকা অ্যালোন'-ও আছে। সেটা নিয়ে না হয় পরে কথা কমু। সংক্ষেপে এতটুকু কই - আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদী মানলাম, কিন্তু অনেকের অ্যান্টি-আমেরিকানিজম আমার হুদাই ডগমাটিক লাগে। এটা নিয়ে ব্লগার ইশতিয়াক রউফের একটা দারুণ লেখা ছিল। যাহোক, আমেরিকারে আলগা কিছু বেনেফিট অফ ডাউট দেয়া আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত তো বটেই। লেটস এগ্রি টু ডিসএগ্রি, অল্প একটু!
আজকে এ নিয়া দারুণ একটা আর্টিকেল পড়লাম, কিন্তু সেটা অফিসে রয়ে গেছে। ইয়াহুতে একটা গ্রুপ আছে, 'জিওপলিটিক্স টুডে'। পুরা নার্ড পর্ন! ওটার মেম্বার হয়ে যান তাড়াতাড়ি!
আরো লেখেন, আরো লেখেন, আরো লেখেন। আমি সচলায়তনের উপর আপাতত চেইতা আছি, তাই লিখতেছি না। লিখলে কমু।
লেটস এগ্রি টু ডিসএগ্রি!
এই কথার পরে আর ভাই, কি বলব? কিছু জায়গায় মতের মিল হলো না; কিন্তু তাতে কি!
আপনি বরং আরেকটু বলেন। সচলায়তনের উপরে রেগে থেকে কতদিনে লিখবেন না লিখবেন! আর রাগ ছুটতে ছুটতে চিন্তাও ছুটে যেতে পারে তাই এখানেই দুইটা কথা বলে রাখেন।
আর আর্টিকেলটার লিংক দিয়েন ভাই!
যাই হোক! লেখেন দেখি... যা মনে হলো আপনি না লিখলে খুব একটা ভাল থাকবেন না! তাই লেখেন... রাগ-টাগ ছাড়েন রে ভাই! মন্তব্য লিখতে যখন বাধা নাই তখন লেখার বিষয়েও ছাড় দেন! সব তো নিজের হাতেই... (না জেনে ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বললাম, মনে কিছু নিয়েনা!)
ভাল থাকবেন!
আমি আপনাকে ভারত-চীন আর্টিকেলটা মেইলে ফরওয়ার্ড করে দিলাম।
ধুর মিয়া, আপনার কথা শুনে একটা লেখা লিখাই ফেললাম। দেখেন গিয়া।
উদ্ধৃতি
'এই ৭৫০ মিলিয়নের বেশীর ভাগ অংশই আমেরিকার পুঁজি বাজারে ফিরে যাবে।'[i]
দুদিন আগে 9/11 conspiracy নিয়ে একটা ডকুমেন্টারী ফিল্ম দেখলাম এখানকার একটি লোকাল টিভিতে(গোথেনবার্গ)।সেখান থেকে যা বুঝলাম- ২য় বিশ্ব যুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকের ইরাক,আফগানিস্থান,পাকিস্তান, যেখানেই আম্ররিকা জড়িত, সবকিছুর মূলে তার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। বারাক সাহেব তার কাছে কিছুই না। যুদ্ধ হল পৃথিবীর সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। তাই যেখানেই গণ্ডগোলের আভাস সেখানেই আম্ররিকা আর তার পেছনে ডলার ছাপাতে ব্যস্ত ফেডারেল রিজার্ভ।ডলার ছাপাও,অস্ত্র বানাও,অস্ত্র বেচো- সবকিছুর পেছনেই একটি শব্দ- profit.
আর আমরা আমজনতা-বুদ্ধিজীবীরা বিশ্লেষন করে করে ক্লান্ত। সমাধান তবুও মেলে না।
স্বপ্নদ্রোহ
যুদ্ধের যে নীতি বা সাহায্যের রাজনীতি এগুলো খুব সহজে ধরা যায় না। আর যদি বা যায়, তার পক্ষে প্রচার-প্রচারনা এত বেশী থাকে যে বিরূদ্ধ মত কারো কানে পৌঁছে না!
এইখানে মোটা দাগে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার কীর্তিগুলো পাবেন। দেখতে পারেন।
আশাবাদী হওয়া ছাড়া আর কি করার আছে; জানি না দেখেই বোধহয়; বিশ্বাস করি এক সময় এই সিস্টেম নিজেই নিজের ধ্বংস নিয়ে আসবে!
ভাল থাকবেন!
না, ব্যাপার দুটা কোনো ভাবেই একরকম না। আমেরিকার উপর আঘাত দেখে মজা পাওয়া আর যে পাকিস্তানী আর্মি আমার দেশে চূড়ান্ত বর্বরতা দেখিয়ে গিয়েছে তারা তাদের নিজ দেশবাসীর উপর একই হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে দেখে মজা পাওয়া এক কথা নয়।
আপনি হয়তো বলবেন 'মনুষ্যত্ব ইত্যাদি চলক' এ দুই ই এক কথা, হত্যা তো হত্যাই,
আমি বলবো আমার ক্ষুদ্র প্রাণে এতো মানবিকতা নেই, আমার মজাই লাগে। এইটা নিয়ে বিশেষ লজ্জা-শরম ও নাই আমার।
আরে না না, আমি আপনাকে নিন্দা করছিলাম না তো মোটেও। আচ্ছা মানুষ খালি চ্যাতে ক্যান?!
আমি জাস্ট বলতেসিলাম যে এরকম আরো আছে, অন্য পার্টিরও। মানে, ধরেন, ৯/১১ হওয়ার পর প্যালেস্টিনিয়ানরা মজা পাইসে। রেভ্যুলুশনারি গার্ড মারা যাওয়ায় সিস্তান-বালুচিস্তানের সুন্নীরা মজা পাইসে। চীন এখন ধরা খাইলে অনেক ভারতীয় খুশি হবে। আপনি পাকিস্তান পেইন খাইলে খুশি হইয়া মজা পান সেটা আপনার ব্যাপার। আমি সেই ভ্যালু জাজমেন্টের দিকে একেবারেই নাই।
আমি ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট পাই চরমপন্থীদের চরমপন্থা দেখে। যেমন ধরেন, এই যে ইরাকে কিছুদিন আগে একটা মাইনরিটি ধর্মের একটা পুরা গ্রাম উড়ায় দিসিল, ৫০০ না কত লোক মারা গেল, হাজারই মনে হয়। তারপর ধরেন উত্তর ইরাকে এক পুলিশ পরিবারের ১১ জনরে এলোপাথাড়ি গুলি কইরা আল কায়েদা মারলো। কিছুদিন আগে কুররামে গনহারে শিয়া মরলো।
আমি নিজে জারক্বাউয়ির মৃত্যুতে মোটামুটি খুশিই হইসিলাম। হালা বদের বদ বদি।
তবে সাধারণ পাকিস্তানি মারা গেলে আমি কষ্টই পাই, খুশি হই না। সেটা আমার ব্যাপার, আমি কারো উপর ইমপোজ করি না আমার ভ্যালু জাজমেন্ট এই দিক দিয়া।
এই আর কি। রাগ করবেন না যেন!
আরেকটা কথা মনে পড়লো, চীন এখন ধরা খাইলে উইঘুররাও খুশি হবে। তালেবানদের সাথে বেশ কিছু উইঘুর যুদ্ধ করতেসে। এটা কি অবাক একটা জিনিস!
অনুপম শহীদ, পোস্টটা খুবই পছন্দ হলো। বিশেষ করে আপনার বিশ্লেষণের 'ধরন'টা ভালো লাগলো বেশ
ধন্যবাদ!
নতুন মন্তব্য করুন