এই লেখাটা মোটামুটি সিরাতের ব্রেইন ড্রেইন লেখার মৃদু রেসপন্স। হালকা গিয়ানী বিষয় নিয়া পোস্ট কিন্তু লেখার মান মোটেই গিয়ানী না।
প্রায় এক দশক দেশের বাইরে কাটিয়ে পরিচিত শহরে অপরিচিতে মত ঘুরে বেড়াই। দেশ না বিদেশ, শিকড় এখানে গাড়ব না ওখানে এইসেই বিভিন্ন বিষয়ে নিজের সাথে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত দেশে। এবারে ফিরে দেখি স্কুলের সহপাঠীদের অর্ধেকের বেশী মনে হয় দেশ ছেড়েছে আর কলেজের গ্রুপ এইটের মাত্র আট দশজন বেশী হলে দেশে আছে এরই মধ্যে সব্বাই উড়ে গেছে। আর যারা ছাত্র অবস্থায় উড়াল দেয় তার সামান্যই শেষ পর্যন্ত ফিরে আসে। গত তিন প্রজন্ম ধরে নিজের পরিবারেই দেখছি।
দেশ না বিদেশ এই অন্তহীন বিতর্কের কোন শেষ আছে কিনা জানিনা কিন্তু সচলে এর আগের আলোচনাটা মনে হয় যথেষ্ট প্রাণবন্ত ছিল। তবে একটি দিক থেকে মনে হয়েছিল যথেষ্ট আলোচনা হয়নি আর তাই সেদিক নিয়েই কমেন্ট না করে আলাদা করে ক'লাইন লেখা।
বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে বড়ই দেশ হিসেবে। আর এদেশের সীমিত সুযোগের মধ্যেও যারা পড়াশোনায় ভাল করে বা ঝলসে ওঠে তাদের অনেকেই বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানে সেরা গবেষক হবার দাবী রাখেন। যার যোগ্যাতা আছে অংকের জটিল এলগরিদম নিয়ে ক্যালটেকের ল্যাবে রাতজাগার বা রোবটিক ব্রেইন সার্জারীতে নতুন মাত্রা যোগ করার তার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা রঙের দলের হয়ে পলিটিক্সে সময় নষ্ট করা রীতিমত ক্রাইম।
একই সাথে যেই ছেলের গ্রামে চায়ের দোকানে বসে বসে সময় কাটানো ছাড়া তেমন কোন নিয়মিত কর্মযোগ্যাতা নেই [সত্যি বলছি এদের সংখ্যা ভয়ঙ্কর ভাবে বাড়ছে!] তার জন্যও মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে সোনার হরিণের সন্ধানে জীবন বাজী ধরাএক হিসেবে জাস্টিফাইড। কিন্তু এই আলোচনা প্রথম দুই শ্রেণী বাদ দিলে বাকিদের জন্য।
ষাট বা সত্তরের দিকে আমার পরিবারের যারা কর্মজীবন থেকে দেশান্তরী হয়েছিলেন তাদের প্রায় সবারই বক্তব্য ছিল যে সরকারী চাকরীতে[সেই সময়ে সরকারই বড় এমপ্লয়ার ছিলেন] সৎ থাকা প্রচন্ড মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। আর গত গত তিন চার দশকে যা দেখছি যে সেই পথ মোটেই সহজতর হয়নি। এখনো আপনি কোন না কোন দলের সাথে একটু তাল না মিলিয়ে চললে, ওপরের বসের খাঁই আর নিচের অধঃস্তনদের সামলে না চললে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।
আর বেসরকারী খাতেরও এইমাপের পুকুর চুরির অবস্থা জানা ছিলনা। আমি আশা করেছিলাম কমপক্ষে এখানে প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশনের জন্য ভেতরের কলকব্জা ঠিক রাখা হবে। কিন্তু সম্ভবত বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাউকদুই চলছে। দুটো উদাহরণ দিচ্ছি যেগুলো শুনে আমার রীতিমত গা রিরি করছে।
আমার এক ক্লাসমেটের বাড়ী পটুয়াখালীর দক্ষিণের দিকে। কুয়াকাটা যেতে হলে ওদিক দিয়েই যেতে হয়। কদিন আগে বাড়ী থেকে ফিরল ভাঙ্গাচোরা চেহারা নিয়ে। রাস্তার অবস্থা জিজ্ঞেস করায় মজার গল্প শুনলাম। ডানিডার এক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় বছরতিনেক আগে রাস্তা তৈরি হয়। চমৎকার ভাল রাস্তা। এর পরে রাস্তার মেরামতি ও দেখাশোনার দায়িত্ব স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই প্রকল্পের জন্য বেয়াল্লিশ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। তারপরে এলজিইডি, টেন্ডার পাওয়া প্রতিষ্ঠান আর ন্যাতারা মিলে এক টাকাও খরচ না করে পুরোটা গায়েব করে দিলেন। এক্কেবারে পুরোটা, ফলে এখন রাস্তার মাঝখানেই খালবিল।
আরেক বন্ধু আছে এক মোবাইল কোম্পানীর ফীল্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। বিটিএস টাওয়ারে টাওয়ারেই দিন/রাত কাটে বেচারার। টাওয়ারের জেনারেটরের ডিজেল নিয়ে যেই চুরি (ডাকাতি বলাই শ্রেয়) চলছে শুনে মোবাইল কোম্পানীদের জন্য মায়াই হল। প্রায় সপ্তাহেই ওর রিজিয়নেই বিশ থেকে ত্রিশ হাজার লিটার তেলের পয়সা গায়েব। আরো অন্যান্য জিনিষের কোন তো হিসেবেই নাই। বিভৎস অবস্থা।
যারা বিদেশে আছেন তাদের অনেকের যোগ্যতা ছিল ফাসকেলাশ পুলিশ অফিসার হবার অথবা সৎ বুদ্ধিমান দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নিরপেক্ষ জনপ্রতিনিধি হবার অথবা কৃষিতে জনসচেতনতা কর্মী হবার অথবা আরো বহু কিছু হবার যেসব ক্ষেত্রের কর্মীদের আমরা রোজকার জলখাবারের অংশ হিসেবে রুটিনমাফিক গালি দেই কিন্তু নিজেরা বিদেশ ছেড়ে দেশের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াইনা, আর ঢাকার সুশীলরা জেলা শহরের কথাও চিন্তা করতে পারিনা।
এ যেন এক সাপ হাঁ করে লেজ গিলে খাচ্ছে। দেশের সেরার দেশে থাকতে পারছেনা দূর্নীতি আর সামান্য বেতনের কারণে আর একই কারণে দেশ এগুতে পারছেনা যে যারা চুরিচামারী না করে জান লড়িয়ে কাজ করত তারা সবাই বিদেশের মাটিতে এটাসেটা করছেন [মাঝারি থেকে ভাল দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার মানুষ একদম বটম লাইনে সার্ভিস দিচ্ছেন]।
আরো হাজারো লক্ষ উদাহরণ চোখের সামনেই ডানে বামে সবার সামনেই আছে । মাঝেমধ্যে অসহায় রাগে হাত নিশপিশ করে। কি করা যায়, বা কি করা যেত। খালি মনে হয় এক প্রজন্মের ভালমানুষগুলো যাদি বলত যে থেকে যাব দেশে মাটিতেই খেয়ে না খেয়ে দেশ গড়ব তারপরে যা হয় হবে। অথবা বিদেশের সুনিশ্চিত ভবিষ্যতকে রেখে দেশে ফিরে আসতেন যদি কিছু মানুষ তাতে হয়তো দূর্নীতির অদম্য চাকা থামত। হয়তো আরেক প্রজন্ম লড়লে ভালর দিকে এগিয়ে যেত দেশ।
[লেখার নাম দিতে চেয়েছিলাম ‘ভাল মানুষেরা কেন চলে গেল’ কিন্তু ব্রেন ড্রেনের সাথে মিলিয়ে বাংরেজী শিরোনাম দিলাম ]
ফরিদ, বইমেলা
মন্তব্য
অত্যন্ত সুলিখিত। কিন্তু যেমন আশা করেছিলাম তেমন বিশ্লেষণ নাই। কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে সম্ভবত আলোচনার ক্ষেত্র তৈরী করলেন। সেটাও মন্দ নয়।
এই বিতর্ক, আলোচনার কোন শেষ নাই। বিদেশে বসে ইমপারশিয়াল মন্তব্য করা কঠিন। তবে ব্রেইন ড্রেনে যাওয়ার চেয়ে ব্রেইন-ড্রেইন খারাপ না। আজকাল সবাই যেখানে গ্লোবালি কমপিট করার কথা বলছি (ব্যবসা-বাণিজ্য-গবেষণা ইত্যাদির বিচারে,) সেখানে ব্রেইন-ড্রেইন বলে আদৌ কোন শব্দ থাকা উচিত কিনা সেটাই আমার কাছে বিরাট একটা প্রশ্ন।
হুমকিটা শুরুতেই ছিল, বিষয় হালকা গিয়ানী হইলেও লেখার মান অতটা গিয়ানী না। তবে এক অর্থে তাহলে দেশের ভেতরে থেকে যারা চুরিচামারি না করে কম পয়সায় সাধারণ কাজ করছে তারা বোকা? আর তারা বোকা না হলে যারা ফাইটা না দিয়া দেশে ছেড়ে গেছে তারা... কি বলমু তাদের জানিনা।
ভাল্লাগছে লেখাটা।
পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা
আমারও ভাল্লাগলো।
কী বোঝাতে চাইলেন ঠিকমত হয়তো বুঝতে পারিনি, তবে যা বুঝেছি তার উত্তরে আপনার লেখাই কোট করি:
এই আলোচনার কোনই শেষ নাই। থাকুক যে যার মত।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
আমার নিজের দেখা জনগণের মধ্যে এই রকম একটা হিসেব পাই:
যাঁরা দেশে রয়েছেন তাঁরা কেউ কেউ হয়তো হলেও হতে পারে, কিন্তু অনেকেই (সম্ভবতঃ অধিকাংশই) দেশে আছেন (১) কোনো বিশেষ কারণে বা (২) বাইরে যাবার সুযোগ পান নি বলে। বিশেষ কারণের মধ্যে দেশের লাইফস্টাইল, পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্য, বাবামা'র দায়িত্ব ইত্যাদি আরো অনেক কারণ থাকতে পারে। এছাড়া অনেকে আছেন যাঁরা মাঝে মাঝে দু-দশ মাসের জন্য যান, আবার ফিরে আসেন দেশে, কারণ লং টার্মের হিসেবে দেশে থাকা তাঁদের জন্য ভালো। বিদেশের তুলনায় দেশের চাকরির নিরাপত্তা বেশি, বা দেশে বাড়িঘর রয়েছে, এবং যে চাকরি করছেন তা পছন্দসই, ইত্যাদি।
আমি কিন্তু এই লেখার মূল সুরের সাথে একমত হতে পারলাম না।
নৈতিকতা, বিষয়টি আপেক্ষিক এবং পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এর সাথে মানুষের আত্মমর্যাদা এবং বেড়ে ওঠার পরিবেশও সম্পর্কিত।
বিদেশে গেলেই মানুষ সৎ থাকবে সে কথা মানতে পারলাম না রে ভাই। উন্নত বিশ্বে সিস্টেমের কারনেই অসৎ হতে পারে না মানুষ। আপনি ট্যাক্স ফাঁকি দেবেন তার উপায় নেই - কারণ ভুয়া বিল বানাতে পারবেন না বা নিজের ব্যান্ক অ্যাকাউন্ট সহজে লুকাতে পারবেন না। কারও কাছে ঘুষ চেয়েছেন তো আপনাকে ধরিয়ে দেবে পুলিশে - কারণ ওইখানে ঘুষ দেবার চল নেই। ওখানে আত্মমর্যাদাকে বড় করে দেখা হয় বলে কেউ ঠেকে না গেলে অসৎ হয় না।
এর পরেও উন্নত বিশ্বে কি অসৎ মানুষ নেই? ওখানে ঘুষ এবং কর ফাঁকি দেয়া (উদাহরণ মাত্র) হয় না? হারিকেন ক্যাটারিনার সময় লুট - অরাজকতা হয় নি? যখনই সিস্টেম থাকবে না তখনই মানুষের আসল চেহারা বেড়িয়ে পরে।
আমাদের দেশের দুর্নীতির মূলে আছে কম আয় এবং দারিদ্র। বাংলাদেশের সরকারী চাকুরেরা প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে তিনগুণেরও বেশী বেতন কম পায় সেটা জানেন? আমাদের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় আমলার বেতন মাসে ২৫০০০ টাকা। এই বেতন কর্পোরেট সেক্টরে একজন নতুন চাকুরের বেতনের সমান। ভারতে একজন ফুল সেক্রেটারী পায় মাসে ৭৫০০০ রুপী। যারা নীতিবান থাকতে চান তারা এই বেতনে অনায়াসে সৎ থাকতে পারবেন।
অথচ সরকারী কর্মচারীর বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব গেলে সাইফুর রহমান মন্তব্য করেছিলেন - "ইগুলান তো ঘুষ খায়, বেতন বাড়ায়া খি অইব? (দু:খিত সিলেটি টানটা আসল না) । একজন পুলিশ কন্সটেবলের বেতন ৪০০০ টাকা এবং এতে তার সংসার চালাতে হয় - যা আপনার আমার পরিবারের হয়ত এক রাতের বাইরে খাবার খরচ।
দুর্নীতি দমন করা সহজ যদি সবাইকে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার মত পরিবেশে রাখা যায় - ন্যায্য বেতন, দ্রব্যমূল্য সহনশীল, স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত সিস্টেম ইত্যাদি। তাহলে দেখবেন অনেকেই সৎ থাকবে ও থাকতে চাইবে। কারণ আত্মমর্যাদা ও সম্মান ঐতিহ্যগতভাবেই আমাদের বড় সম্পদ।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
রেজওয়ান ভাই, পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এখানে আবারো সেই পৌনঃপৌনিক প্যাচ। বিদেশের ‘নিশ্ছিদ্র’ ফিনান্সিয়াল আর ট্যাক্স সিস্টেম যে কতটা তলাহীন ঝুড়ি সেটা তো গত এক বছরের অর্থনৈতিক মন্দাই দেখিয়ে দিয়েছে। সবার নাকের ডগা দিয়ে অকল্পনীয় পরিমাণে দূর্নীতি হয়েছে কয়েক যুগ ধরে। কিন্তু ভাল সিস্টেম থাকার কারণে আমজনতার বেশীরভাগই দূর্নীতি করেনা বা করতে হয়না।
আমাদের বেসিক সিস্টেমই ভাঙ্গা। আর লেখার মূল বক্তব্য হল যাদের ক্যালিবার ছিল কিছু করার তাদের অনেককেই দেশ ফিরে পাবেনা। সমস্যা আর তার সমাধান চিহ্নিত করা এক জিনিষ আর সমস্যার মাঝে ঢুকে জান কালা করে সেটাকে ঠিক করা আরেক জিনিষ।
অতি খাসা মন্তব্য।
এই কথাটাতে অতি সরলীকরণ করা হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের খুব কম অংশ সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে থাকে। এদের অনেকে এখন ভিন্ন দেশের নাগরিক। বাকীরা বৈশ্বিক মন্দায় আক্রান্ত হয়ে চাকুরির অনিশ্চয়তায় আছে বা মধ্যপ্রাচ্যে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
ভারতের সরকারের নীতির কারণে অনেক প্রবাসী ভারতীয় ফিরে এসে এখন দেশে বিনিয়োগে ব্যস্ত। সেদেশে কি দুর্নীতি উধাও হয়ে গেছে? সেটা নয়।
দুর্নীতির কারনে অসৎ হয়ে যাব বলে দেশে থাকব না এ কথাটি সত্যি হলে আমার বর্তমান আবাসস্থল ইন্দোনেশিয়ার (আমার মতে বাংলাদেশের চেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত একটি দেশ) লোক দলে দলে লাইন দিত বিদেশে যাবার জন্যে। এখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতি স্বীকৃত।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
"বিদেশে গেলেই মানুষ সৎ থাকবে সে কথা মানতে পারলাম না রে ভাই"
আমার মনে হয় লেখাটা দুর্নীতি বিষয়ে না, দেশে থাকব-নাকি বিদেশে যাবো সেটা নিয়ে। প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট- অন্ততঃ চাকুরী বিষয়ে। পরিশ্রম করে লেখা পড়া শিখে চাকরী পাইনি। চাকরী না পাই অন্ততঃ ফেয়ার কম্পিটিশনের নিশ্চয়তা যদি পেতাম তাহলেও ধন্য হতাম। যে 'ব্রেইন' নিয়ে আলোচনা চলছে তাদের বেশিরভাগই কিন্তু দুর্নীতি করত না। কিন্তু এরা কখনো সুযোগ পাবে না। আশ্চয্য সব পলিসি বানানো হয় আমাদের দেশে- শুধু লেখা পড়া জানলেই চলবে না, রাজনীতিও জানতে হবে...ব্যাঙ্কের চাকরির জন্য দোয়া কুনুত জানতে হবে...
ধারণা, ইচ্ছা আর বাস্তবতা এক নয়। শিক্ষা শেষে চমৎকার একটা স্বপ্ন স্বপ্ন মন নিয়ে আমরা বেকারত্ব অবসানের অপেক্ষায় চাকুরি খুঁজি। বেকারের কাছে সহানুভূতি জানানো ছাড়া সহজে কারো কিছু চাওয়ার থাকে না বলে দায়বদ্ধতাও খুব একটা থাকে না। একটা অসহনীয় শূন্যতার মধ্যে চাকরি পাওয়াটাই তখন সবচেয়ে বড় ও একমাত্র চাওয়া থাকে। নিজের খাই-খরচ তখনো পারিবারিক লঙ্গরখানার দায়িত্বে থাকে। এরপরই সব পাল্টে যায়। যেদিন থেকে একে একে দায়বদ্ধতা ঘাড়ে পড়তে থাকে সেদিন থেকেই প্রয়াত হুমায়ুন আজাদের প্রবচনটির মাহাত্ম্য বুঝতে শুরু করেন সবাই- 'বেতন বাঙলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় প্রতারণা। এক মাস খাটিয়ে এখানে পাঁচ দিনের পারিশ্রমিক দেয়া হয়।'
দশ বছর চাকরি করে বিয়ে-বাচ্চা ফলিয়ে সর্বোচ্চ পনের হাজার টাকা বেতন হাতে নিয়ে ঢাকা শহরে বর্তমানে বাসা ভাড়া নিম্নে আট হাজার, সন্তানের লেখাপড়া বাবদ নিম্নে দুই থেকে তিন হাজার, অনিবার্য চিকিৎসা খরচ নিম্নে এক থেকে দুই হাজার, অফিস যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক নিম্নে দুই থেকে তিন হাজার, পরিবারের অন্যান্য সামাজিক ও মেইটেন্যান্স খরচ দুই থেকে তিন হাজার, বাড়িতে বাবা-মা'র প্রতি যদি দায়বোধ থাকে সেখানে নামমাত্র দুই থেকে তিন হাজার, আরো আকস্মিক খরচ অন্তত এক হাজার হিসাব করুন। সারামাসের খাইখরচ ও লজ্জা বাঁচানোর খরচ এখনো আসে নাই। সেটা না হয় বাতাস খেয়ে আর গাছের বাকল পরেই কাটালেন। হিসেব কি মিলে ? আমাদের সরকারি বেতন ভাতার নমুনার এক চিমটি হাল দেখালাম কেবল।
দুর্নীতি করতো না কথাটা ফ্যাশন হিসেবে ভালো, তবে বাস্তবে এর কোন বেইল নাই। কিছুতেই ভাববেন না যে আপনাকে কটাক্ষ করছি। এই বাস্তবতায় রোস্ট না হলে এর মাহাত্ম্য বুঝা সম্ভব না। আমার তো মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ সে তুলনায় অনেক ফেরেশতা, নয়তো আপাদমস্তক সবাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। নইলে এতোদিনে ভেঙেচুরে সব ফালাফালা করে দিতো। এদেশে একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার বৈধ বেতনের চাইতে ঢাকা শহরে একজন রিক্সাড্রাইভারও কয়েকগুন বেশি আয় করেন।
যাক্, এসব নিয়ে লিখতে গেলে কাসুন্দি অনেক বড় হয়ে যায়। ভাত দিবার মুরোদ নাই কিলাইবার গোঁসাই হয়ে আর যা হোক দুর্নীতি নির্মূলের কথায় ভণ্ডামি ছাড়া আন্তরিকতার লেশমাত্রও নেই। ন্যুনতম আয়ের ব্যবস্থা না করে অমিয়বাণী দিয়ে কোন লাভ নাই। যে রাষ্ট্র তার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের গ্রহণযোগ্য বেতনটাই নিশ্চিত করতে পারে না, সেই রাষ্ট্র দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করতে দুর্নীতি উচ্ছেদের ডাক দেয়। এর চেয়ে প্রহসন আর কী হতে পারে !
তাই এই পোস্টের ব্রেন ড্রেন আলোচনায় রেজওয়ান ভাইয়ের মন্তব্যকে অনেক যথার্থ বলেই মনে হয়।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমাদের দুর্ভাগ্য বলেন আর সৌভাগ্য বলেন আমরা এমন একটি দেশে জন্মেছি যেখানে আমাদের যে সাবজেক্ট ভাল লাগে তা পড়তে পারি না। এখানে ফেয়ার কম্পিটিশন বলে কিছু নেই। নিজেকেই বিভিন্নভাবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। এখানে কথায় চিঁড়ে ভেজে না, তদবিরের দরকার হলে সেটাও করতে হয় নিজেরই স্বার্থে - সেটাও একটি যোগ্যতা। এখানে পড়াশোনাই যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি নয়। আমি দেখেছি কিভাবে গ্রাজুয়েশন না করেও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে এবং অপরকে না ঠকিয়ে ব্যবসা করে মানুষ কোটিপতি হয়েছে। আবার আমার এক মাস্টার্স পাশ কাজিন আছে যে কম বেতনে চাকুরিতে ঢুকবে না বলে বলে চিরদিন বেকার রয়ে গেল। এখন যে ব্যক্তিটি ব্যান্কের চাকুরির জন্যে দোয়া কুনুত শিখেছে - সে কোন উপায় না দেখেই শিখেছে -কারণ তাকে একটি চাকুরি পেতে হবে। কিন্তু তার এই শেখাটা তাকে তার প্রতিযোগীদের কাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছে।
আমার দেখা প্রবাসী বাংলাদেশী সমাজে প্রধানত: দুই প্রকারের মানুষ। এক শ্রেণী উচ্চ শিক্ষার জন্যে যায় স্কলারশীপ নিয়ে। এরা খুবই ট্যালেন্টেড এবং এদের বরং দেশে থাকলে উপযুক্ত শিক্ষা লাভের সুযোগ থাকত না। এটাকে ব্রেন ড্রেন না বলে ব্রেন সেইভ বলা ভাল - কিন্তু এদের সংখ্যা হাতে গণা। ব্যক্তিগত টাকায় যারা পড়তে যায় তাদের অনেকেই জীবনের বাস্তবতায় পড়াশোনা শেষ করতে পারে না এবং তা না করতে পারলে উপরের দলের কাতারে আসা কঠিন - কারণ বিদেশী স্থানীয় ডিগ্রী ছাড়া বিদেশে ভাল চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব (জার্মানী -ফ্রান্সে আমেরিকার এমবিএ পাশ দেরও চাকুরী পাওয়া কঠিন)।
আরেক শ্রেণীর লোক হচ্ছে যারা দেশে একটি ভাল চাকুরি পায় না এবং ব্যবসা বা অন্য কোন আয় রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারে না। শেষ চেষ্টা হিসেবে বাপের ভিটে মাটি বিক্রি করে বিদেশে যায় যে কোন কিছু করতে এবং অনেক কষ্ট করে। যাদের বিদেশী কোন ডিগ্রী নেই তাদের মধ্যে খুব কম লোকই তাদের লেখাপড়া অনুযায়ী উপযুক্ত কাজটি করতে পারে বিদেশে। অথচ ধরুন বিদেশে হোটেলে কাজ না করে (যে কোন কাজই কাজ - আমি সেটিকে অশ্রদ্ধা করছি না) সে হয়ত দেশে তার সাধ্য মত কোন একটি সৃষ্টিশীল কিছু করার চেষ্টা করতে পারত।
রণদীপম দার উপরের কমেন্টটি পড়ে দেখুন। এত কষ্টের মধ্যে থেকেও দেশের অনেক মানুষের মুখে হাসি থাকে, মানুষ সৃষ্টিশীল হয়। তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে আসে।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
সেটাই। এটা খুব ছোট্ট একটা নাম্বার - কিন্তু কত লোক মনে করি, আরে, আমিও তো এদের দলে, আমার কেন হবে না? এবং তারপর সেই পরিমানে হতাশও হয়। আমি নিজেই অনেকটা এরকম করি নাই তা না, কিন্তু এখনো সামলায় আছি (মানে, এখনও জিম্যাট টিম্যাট দিয়া নিজেরে গাধা প্রমান করি নাই! )।
আরেকটি ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষণঃ
বিদেশ থেকে ফেরা জনগণ দেখি দুই ধরণের কাজ করে। ১) প্রিমিয়াম সার্ভিস যেগুলোতে আমজনতার প্রবেশাধিকার নাই অথবা এক্কেবারে হুদাই [লাক্সারী ব্র্যান্ডের দুকান, জিম বা চিকেনশপ ] অথবা ২) মাগনা চ্যারিটি সার্ভিস।
কিন্তু দৈনন্দিন ব্যাবহারের সিস্টেমকে ঠিক করা বা উন্নয়ন করার উদাহরণ কমই [আমার চোখে পড়েছে]।
এই লিখার উদ্যেশ্য কাউকে কটাক্ষ করা বা আহত করা না, কিন্তু অন্তহীন সমস্যার লিস্টি যে আছে সেই ফর্দ নিয়ে কার কাছে যাব আজকাল তা আর বুঝিনা!
আমার দেখা বিদেশ ফেরত লোকজন অবশ্য টপ করে ফ্ল্যাট কিনে ফেলে, আমার জানামতে এটাই দেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা, ১বছরেই দ্বিগুণ হয়ে যায় দাম।
কিছুদিন আগে এটিএন বাংলাতে পুলিশদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করেছিল, তাতে পুলিশের এক কন্সটেবল বলেছিল - "পেট ভরা গরুরে ক্ষেতে নিয়ে ছেড়ে দিলেও সে কিছুতে মুখ দিবেনা" কথাটা খুবি রুঢ় কিন্তু বাস্তব।
টাকার নেশা হয়ে যাওয়া অল্প কিছু মানুষবাদের দূর্নীতিটা এখনও চাহিদার যোগানদিতেই সীমাবদ্ধ
ওরে। দারুণ তো!
রেজওয়ান ভাই আর রণদীপমদাকে দারুণ মন্তব্যের জন্য অনেক জাঝা!!
নতুন মন্তব্য করুন