১।
বন্ধু রাহাতের সাথে ডিনারে বসছি। রাহাত আবার শৌখিন বিড়ি-খোর। আমার কাছে শৌখিন বিড়ি-খোরের মানে যারা ভাব নিতে বিড়ি খায় আর বেশিরভাগ সময় বেনসনের প্যাকেটটা ভর্তিই থাকে। আমি মামুলি(অথবা পেশাদার!)বিড়ি-খোর, আমার অন্তত তিনবেলা খাওয়ার পর বিড়ি না হলে চলেই না আবার প্যাকেটে ৪-৫ টার বেশিও কখনো থাকে না।
রাহাত জিজ্ঞাস করে, ‘দোস্ত বিড়ি আসে? আমার দুই টান লাগবে।’
শুনে হাল্কা চমকেই যাই।
বলি, ‘আসে তো। দুই টান দিবি কেন? তোরে গোটাই খাওয়ামু।’
ও কয়, ‘নারে পুরা লাগবেনা। একটু সর্দি লাগসে। জ্বর-জ্বরও লাগতাসে।’
মনে মনে ‘পেশাদারের হাসি’ হাসি।
মনের হাসি কিছুটা ঠোঁটেও এনে বলি, ‘কি যে বলিস, জ্বর-সর্দিতে বিড়িই তো খাবি। একটা প্যারাসিটামলের জায়গায় একটা সিগারেট খায়া দেখবি জ্বর-টর পালাইসে।’
রাহাত বলে, ‘আরে না। পারুম না। বমি আসে।’
আমি কই, ‘আইচ্ছা তোরে দুই টানই খাওয়ামুনে। তাও বমি করিস না।’
শৌখিনেরা অনেক কিছুই পারে না। কিন্তু মামুলিদেরতো তা পারতেই হয়। শৌখিনের বিশ্বাস হয় দূর্বল আর মামুলিতো এই বিশ্বাসের উপরই চলে। মাঝে মাঝে মনে হয় এইডস্ রোগীও যদি নিয়ত করে বিড়ির দুইএক টান দেয় তো দু'দিনেই সুস্থ হয়ে যাবে।
২।
আমরা তিন পার্টনার আর সুপারভাইজার মিলে ‘থিসিস’ নিয়ে আড্ডা দেই। ফাঁকে ফাঁকে বিস্কুট খাই, ঠান্ডা খাই, মাঝে মাঝে চা-টা খাই। ‘টা’ টা আবার সুপারভাইজার সাহেব একলাই খান। আমাদের দিকে কিছু ধুমা ছুড়েঁ মারেন। টান লাগে তবে বুঝতে দেই না। পাছে উনিই না আবার লজ্জা পেয়ে বসেন। স্যার(এ যুগের ইয়াং স্যার)আমাদের অনেক ভালো বন্ধু। তবে ‘বন্ধু’র মতো একসাথে ধূমপানটাই শুধু করা হয় না।
একদিন স্যারেরই রুমে গেছি তিনজন থিসিস করতে। আলোচনা তো আর স্যারের একটা সিগারেট না ধরানো পর্যন্ত শুরু করা যায় না। স্যার নিজেই উদ্যোগী হলেন। বিপত্তি ঘটলো সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে। এ ড্রয়ার ও ড্রয়ার খুঁজেও কোন আগুনের উৎস পাওয়া যায় না। আমরা তিনজনই চুপচাপ এদিক-ওদিক তাকাতাকি করি। স্যারও চেষ্টা চালিয়ে যান। মিনিট খানেক পার হয়।
হঠাৎই স্যার গম্ভীর হাক ছাড়েন, ‘কই পকেট থেকে ম্যাচটা বের করো দেখি।’
আমি চোখ তুলে তাকাতেই দেখি স্যারের আঙ্গুল আমার দিকেই তাক করা। বলা-বাহুল্য আমার বাকি দুই পার্টনার অধূমপায়ী। স্যার আমারে সিগারেট না খাওয়াইলে কি হবে...‘রতনে রতন চিনে’ কথাটা আরো একবার সত্যি মনে হলো।
৩।
আমার বড়ভাই স্কুল জীবনের শেষ থেকেই নিয়মিত বিড়ি-খোর। প্রাইভেট পড়ার অযুহাতে নেয়া বাপ-মার টাকার বেশ কিছুই তার ব্যয় হতো সিগারেটের পেছনে। আমি রাস্তা-ঘাটে তাকে বিড়ি ফুঁকতে দেখতাম কিন্তু কখনো বাসায় বাপ-মার কানে কিছু লাগাতাম না। কিন্তু পাড়া-পড়শির নালিশে তাকে বাপধনের কাছে ধরা খেতেই হলো।
আব্বা কঠিন হুংকার দিলেন ভাইকে, ‘আমার কষ্টের কামানো টাকা হারামজাদা সিগারেট খায়া নষ্ট করিস। লজ্জা করে না?’
ভাই আমার কোন উত্তর দেয় না, মাথা নিচু করে চুপ মেরে থাকে। আব্বা দাঁত কাম্রাইতে থাকে। আম্মা আব্বাকে ‘এটা-ওটা’ বলে শান্ত করার চেষ্টা করে।
কলেজ পাস করেই ভাইজান কপাল জোরে সামরিক বাহিনীতে অফিসারের একটা চাকরি জুটিয়ে নেয়। সিগারেটের ভগ্-ভগ্ গন্ধ(গন্ধের নামটা আব্বার দেয়া) নিয়েই ছুটির দিনে সে বাসায় আসে।
আব্বা স্বাভাবিক কন্ঠে ভাইকে বলে, ‘সিগারেট টিগারেট কি না খাইলে হয় না?’
এবার ভাই উত্তর দেয়, ‘আমি তো এখন নিজের টাকায় খাই।’
ভাই মাথা সোজা রেখেই টিভি দেখতে থাকে। আব্বা এদিক ওদিক তাঁকায়া দাঁত কাম্রাইতে থাকে। আম্মা এবারও আব্বাকে ‘এটা-ওটা’ বলে শান্ত করার চেষ্টা করে।
আমার ছয় বছরের ধূমপায়ী জীবনের শুরুটা কিন্তু মুটামুটি শিশুকালে। শিশুকালের ‘ধূমপানের টুকিটাকি’ না হয় আরেকদিন বলবো নে।
/
ভণ্ড_মানব
মন্তব্য
বেশ লাগলো কিন্তু ...
তোমাদের সুপারভাইজার সাহেব রে কেমন চেনা চেনা লাগে।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
আমারও চেনা চেনা লাগে...
@রেশনুভাই, জ্যোতি ভাই...আমার সুপারভাইজার তো অনেক বিখ্যাত লোক...আপনারা তো চিনবেনই।আর আমারে উনি বিশেষ ভালু পায়।আমিও সমানতালে পাই।
/
ভণ্ড_মানব
- সুপার ভাইজারের গুষ্টি কিলাই। লগে বইসা সিগারেট খাওয়ার পারমিশন না দিলে ক্যামনে কী? আমার এক স্যার ছিলেন। স্ট্যাটিসটিক্সের। মাইকেল তাঁর নাম। একদিন বারান্দায় খাড়ায়া রইদ পোহাইতেছি। স্যার যাওনের সুমায় ডাকলো। এই কথা সেই কথা নিয়া নানান কথা হইলো। হেরপর দেহি মামু পকেট থাইকা বিড়ির প্যাকেট বাইর কইরা নিজে একটা ঠোঁটের কোণায় ঝুলাইলো, আর প্যাকেটটা আমার দিকে তাক কইরা চুপ কইরা থাকলো। "...নাইলে মুরুব্বীরে অপমান করা হইবো"— এই ভাইবা একটা নিয়া আমিও বিড়ির পাছায় অগ্নিতাহুতি করলাম। এঁরা হইলো শিক্ষক বুঝলেন! খালি পকেট থেকে ম্যাচই বাইর করতে কয় না, মাঝে মাঝে নিজের পকেট থাইকা জিনিষও বাইর কইরা দেয়।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বুঝলাম আপনার শিক্ষক অনেক মহাআআআআআআআন।
/
ভণ্ড_মানব
এখানে তো প্রফেসর আর ছাত্র একসাথে বিড়ি টানে। প্রায়ই দেখি লাঞ্চ ব্রেকের সময় নীচে টানতেছে।
ভণ্ডভাই, 'ছ' আর 'স' এর ব্যবহারে একটু সতর্ক হোন।
আপ্নারে অনেক ধন্যবাদ এই ব্যাপারটা নিয়া সতর্ক করার জন্য। সতর্ক হবো। আসলে 'ছ' আর 'স' লিখতে সবসময়ই কেমন যেন কনফিউজড্ হয়া যাই।
/
ভণ্ড_মানব
মজার লেখা। আমি খাই না যদিও- একটা ঘটনা কই।
... এক দোস্তের লগে জিগাতলায় দেখা। সে কয়,কী রে তোরা এইখানে কি করস। আমরা কই- দোস্ত, এই খানে বাংলার এক স্যার থাকে তার বাসায় আসছি পড়তে। দোস্ত বলে, এই এলাকায় স্যার আর আমি চিনি না ?? দেহা তো আমারে...।
সে স্যারের বাসায় আমাগো লগে ঢুইকাই গুলির মত বাইর হইয়া আইলো। আমরা জিগাই, দোস্ত কী হইসে ??
সে বলে- এই ব্যাটার কাসে পড়ন যাইবো না, এর কাসে আমি গতকাল বিড়ির আগুন চাইসি...।
-------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
ইউরোপে যখন থাকতাম, অফিসে রীতিমতো ধূমপানকক্ষ থাকতো, এবং কী এক রহস্যময় কারণে সেখানে পুরুষদের তুলনায় নারীদের ভিড়ই বেশি হতো। আমেরিকায় এসে দেখলাম বেশির লোকে ধূমপান করে না, যারা করে তারা প্রায় একঘরে, এবং ধূমপান করতে হলে রাস্তায় যাও, ঝুপঝুপ করে বরফ পড়লেও তার মধ্যেই দাঁড়িয়ে বিড়ি খাও।
এখন এমন পেশায় এসেছি যেখানে ক্লায়েন্টের কথা ভেবে কাজের সময় ধূমপান করা যায় না, তাদের কোমল নাকে যদি গন্ধ লাগে! কাজেই দুঃখ করবেন না, আপনার চেয়েও খারাপ অবস্থায় লোকে বেঁচে আছে।
সুপারভাইজার স্যারের সাথে সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারটা ছিল আমার একটা অব্যক্ত ইচ্ছা মাত্র। ...তারে আমি বিশেষ ভালু পাই।
আইচ্ছা আপনারা সুপারভাইজাররে থুইয়া অন্য গল্পগুলার দিকে একটু নজর দেন না।
/
ভণ্ড_মানব
যাও বাছা। আগামী ২ মাসের মধ্যে তোমার ইচ্ছা পূরণ হবে।
সুপারভাইজাররে সামনে পাইলে এবার আমিই আগায়া তারে সিগারেট অফার করুম!
আশা পাইলা... সিগারেট খাওয়া হোক বা না হোক, হের লগে আড্ডা দেওনের খায়েশটা তো অন্তত পূরণ হইবো।
/
ভণ্ড_মানব
ভণ্ড মানবে এমুন ভালো লেখা দিলে কিভাবে চলবে? ভণ্ডামির কথা শুনতে মন চায়
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
নামটা আমার 'ভণ্ড' হলেও আমি কিন্তু ভণ্ড না...অনেক ভালু লুক আছি মিয়া।
/
ভণ্ড_মানব
সেটাই দেখলাম। লেখা চলুক তুমুল গতিতে।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
দোস্ত, ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে। চালিয়ে যা।
- শূন্য
থ্যান্কু থ্যান্কু। লেখ কিছু একটা। তোর লেখা পড়তে মন্চায়।
ভণ্ড মানব
ভালো লাগিল। চালিয়ে যান।
মহসীন রেজা
দোস্ত, এইখানে লেখার সিস্টেম টা একটু জটিল, এখনো ধরে উঠতে পারি নাই। লিখব শিঘ্রই।
- শূন্য
তোমার লেখার হাত বেশ চমৎকার।
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
আমার সুপারভাইজার মাউন্টেন ডিউখোর। একদিন এক টিভি চ্যানেল থেকে আইসে তার সাক্ষাতকার নিতে, দেবার পরে ব্যাটা নিজেরে দেখে খুবই দু:খ পাইসে। পরের দিন রিডিং গ্রুপের মিটিং এ কয় : " Did you see me? I was so freaking high on dew!"
লেখা চালায় যান, আস্তে আস্তে ভন্ডামিও
আপনার লেখা পইড়া মনটা উদাস হইয়া গেল, দুইটান দিয়া লই
==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।
দোস্ত মনে পরতেছে সেই দিনের কথা যেদিন জুনিয়র ধূমপায়ী হয়ে তোদের মত সিনিয়র ধূমপায়ীদের কাছে মোটামুটি র্যাগ টাইপ খাইছিলাম। "ভূত" আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল কিভাবে ঠোঁট সুন্দর রেখে ধূমপান করা যায়! লেখাটা বেশ লাগলো...
বাজি লাগবি? তুই একটা প্রেমের কবিতা লিখতে পারলে তরে একটা আমেরিকান বার্গার খাওয়ামু। পারবি?
~>ছদ্মবেশী<~
কি কইলি? আমি প্রেমের কবিতা লিখতে পারুম না?হ...যা লাগ্লাম বাজি।দেখ তো প্রেমের কবিতাটা কেমন হইছে?
প্রেমের কবিতা...
প্রেম সে তো নীল আকাশ...সে পাহাড়...সে সমুদ্র।
প্রেমের সাগরে তুমি তরী, আমি নাইয়া
তুমি শহুরে, আমি গাঁইয়া
প্রেমের ঘরে তুমি বালি্শ, আমি খাট
তুমি ছাগ্ল, আমি মাঠ
প্রেমের আকাশে তুমি মেঘ, আমি বৃষ্টি
তোমার আমার মিলনে হবে নতুন ধারার সৃষ্টি।
তোর ব্লগ টা তো ভালো হইসে
নতুন মন্তব্য করুন