মায়ের কাছে যাব

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২৫/১০/২০০৯ - ৫:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কানের পাশে যে আমার একটা মাথা আছে সেটা আবিষ্কার করতে আমার এতক্ষন লেগে গেলো! সচলায়তনের প্রথম লিখাটা কি নিয়ে লিখব সেটা খুঁজতেই আমার জান শেষ হওয়ার দশা! হঠাৎ মায়ের ফোন দিলো, গতানুগতিক বোরিং প্যাচাল শেষে মুঠোফোনটা রাখার সাথে সাথে নিজেকে একটা গালি দিয়া নিজেকে বললাম..."নিজের মাকে নিয়ে লিখলে কি তোর জাত যাবে?" গেলে গেছে,আজকে মাকে নিয়েই লিখবো।

আমার মা হয়ত একটু বেশিই দুশ্চিন্তা করতে ভালবাসে। এর জন্য বাবার কাছে ঝারিও খায় মাঝে মাঝে। হঠাৎ দেখা গেলো সকালে মা আমাকে বলল,"রাতে একটা বাজে সপ্ন দেখছি,সাবধানে স্কুলে যাবি কিন্তু।" ওপাশ থেকে বাবার ঝারি,"তুমিকি জীবনে একটা ভাল সপ্ন দেখবানা?" মায়ের দুশ্চিন্তা আমূলক ছিলনা। আমার মত বান্দরকে সাম্‌লাইতে মায়ের হয়ত একটু বেশিই কষ্ট হতো। প্রতিদিন স্কুলে জাওয়ার আগে মা বিরবির করে কি সব যেন বলে মাথায় ফুঁ দিয়ে দিত। স্কুলে গিয়ে ক্লাস শেষে বল্গা হরীণের মত দৌড়াঝাপ শেষে বাড়ী ফেরার আগে তো মাথায় হাত। গালটাল লাল হয়ে আছে, এই আবস্থায় বাসায় গেলে কপালে বিশেষ ভাল কিছু থাকার কথা না। স্কুলের পাশে নদীতীরে গায়ে খানিক বাতাস লাগিয়ে তুমুল আত্মবিশ্বস নিয়ে বাড়ীর দিকে হাটা দেই আর ভাবি আজ মা বুঝবেনা যে খেলছি। আমার আত্মবিশ্বস বাতাসে মিলিয়ে যেতো যখন মা দেখা মাত্রই বলত,"একশবার মানা করি ক্লাস শেষে বাড়ী এসে কিছু খেয়ে পরে খেলতে যা, কে শোনে কার কথা? আমার কথার কি কোনো দাম আছে নাকি? কর যা ইচ্ছা কর। কিচ্ছু বলবনা আর।" কিন্তু প্রতিদিনই বলত মা। একই কথা। তারপর রাগটা ঝারতো যখন রাতে পড়ার টেবিলে বসে ঝিমাতাম। কান ধরে বলতো,"দিনের বেলা একটু ধুমাইলেতো রাতে একটু পরা যায়,যা চোখ ধুঁয়ে আয়।" যেদিন চোখ ধুয়েও কাজ হতোনা মা বলতো,"হইছে তর পরালেখা করার দরকার নাই,যা ঘুমাইতে যা।" আগে মনে হতো মা রাগে কথাগুলো বলতেছে আর এখন মনে হয় হয়ত আমার ঘুমকাতুরে চোখ দেখে মায়ের মায়া লাগতো।

ছোটোবেলা রবোকপ দেখার জন্য পাগল ছিলাম। মা রাতে রবোকপ দেখতে না দেয়ার ভয় দেখিয়ে অনেক পরা আদায় করে নিতো। আমিও বোকার মত বিকালের খেলা বাদ দিয়ে পড়া শেষ করতাম। এমনি একদিন পড়া শেষ করে রাতে রবোকপ দেখার প্রস্তুতি চলছিল। রবোকপ শুরু হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে যখন কারেন্ট গায়েব হয়ে গেল তখন আমার কান্না আর কে দেখে! আমার মনে হচ্ছিল সারাদিনের কষ্টটাই মাটি। আমার মায়েরও তখন মন খারাপ হলো।আমি মাকে বলতে শুনলাম,"মরার কারেন্টটা আর জাওয়ার টাইম পেলনা। থাক বাবা আর একদিন দেখিস।" আদর কিন্তু ঐ রাতেই শেষ।

পরদিন থেকে আবার শুরু। আমার বাদরামির যেমন শেষ ছিলোনা,শেষ ছিলনা মায়ের লাঠীশোটারো। চীরুনী,ডাল ঘুটনী,ঝাড়ু থেকে শুরু করে আমার নিজের স্কেলটাও থাকতো মায়ের আস্ত্রাগারের তালিকায়। কিন্তু মা মারলে কেন জানি ব্যাথা লাগতোনা! তবে কাঁদতাম অনেক। না কাঁদলেতো মাইর থামার সম্ভাবনা কম! এক বৃহস্পতির কথা বলি। অর্ধদিবস স্কুল শেষে বাড়ী ফেরার কথা। আমি ও আমার মত কতিপয় বান্দর অর্ধদিবস ক্লাস আর বাকি অর্ধদিবস খেলাধূলা উদ্ধার করলাম। বাড়ীর দরজার সামনে এসে মনে হল আজকে আমি শেষ। যাই কথা সেই কাজ। দরজাটা খুল্লো,আমি ঘরে ঢুকলাম,আবার দরজাটা লেগে গেলো আর আমি তাকিয়ে দেখি মায়ের হাতে ইয়া বড় একটা ডালঘুটনী। এই ওয়েপনটাকে আমি প্রচণ্ড ভয় পেতাম। এবার শুরু হল দৌড়। আমাদের ঘরে চারটা রুম। আমি একটাতে লুকাই,মা খুঁজে বের করে ফেলে।আন্য রুমে যাই। আভাবে সার্কেলের মত ঘুরতে থাকি। হঠাৎ দেখি মা নতুন টেকনোলজি আমদানী করেছে। এক একটা রুম পার হওয়ার সময় দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে। সব রুম হারিয়ে আমি খাবার টেবিলের চারপাশে ঘুরতে থাকি। একসময় হাতছাড়া হয় সেটাও,কারণ মা ওটাকে টেনে একপাশে সরিয়ে দিয়েছে! এইবার আমি কই জামু! এতক্ষ্ণেণে মায়ের মেজাজ চরমে উঠে গেছে। কানে ধরে মা নিয়ে গেলো খাবার ঘর থেকে। ডালঘুটনীর প্রথম তোপ যখন পীঠে পরল, আমি অজ্ঞান হয়ে পরে গেলাম খাটের উপর। মা আমার কোনোকিছু না বুঝেই কোলে করে নিয়ে গেলো বাথরুমে। সাওয়ারের নিচে মা যখন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে পানি দিচ্ছিল ঠিক তখনই আমি হেসে উঠলাম। আইবার আমার অভিনয় বুঝতে পেরে মা আবার গেলো খেপে। মারতে নিলো কিন্তু পারলোনা। হাসতে থাকলো। রাতে বাবা শুনেও খানিকটা মজা পেলো। সবাই মিলে আবার একদফা হাসাহাসি হয়ে গেলো।

অনেকদিন সেই হাসির আসর বসেনা। কিভাবে বসবে?
পড়ালেখা শিখিয়ে বড় করতে যে বাড়ী থেকে আমাকে বের করে দিয়েছে বাবা। শিক্ষাগ্রহণ শেষ। বাকি রইল উচ্চশিক্ষা। হয়ত ওটাও করতে হবে। সবই হয়ত হবে কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার, মায়ের আদর আর বকুনি মাখা সেই সোনালী দিনগুলো আর ফিরে আসবেনা।এখন আমাকে কেউ বকেনা,পেটায়না,খবরদারী করেনা। আমি চলি আমার ইচ্ছামত,যেমনটা চাইতাম ছোটোবেলায়। নিজেকে কেমন জানি দড়ি ছাড়া গরুর মত লাগে আজকাল। অনেকদিন পর পর যখন দু-এক দিনের জন্য বাড়ী যাই মা তখন এটা ওটা রান্না করতেই ব্যস্ত হয়ে যায়, মাঝে মাঝে এক-আধটুকু গল্প হয় আর তাতেই আমি বুঝতে পারি আমার জন্য আমার মায়ের ব্যাকুলতা আর ভালবাসা।

মনেমনে বলি," মা,এই জন্যই হয়তো তোমার নাম "মা" "।

ভালোই হইছে দূরে থেকে। এই রাত ৪:০০ টায় না ঘুমিয়ে তোমার কথা লিখছি জানলে হয়তো এতক্ষণে গোটা দশেক কর্ণমর্দণ খেয়ে জেতাম!


মন্তব্য

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগল। লেখকের নাম নাই কেন?


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

পুতুল এর ছবি

আপনার নামটা জানলে ভাল লাগতো। লেখা ভাল হয়েছে আরো লিখুন। মাকে শ্রদ্ধা।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মা'কে নিয়ে লেখাগুলোর নিজের কাছে যথেষ্ট আবেদন থাকে। যদিও অনেক সময় সে আবেদন পাঠককে ছুঁতে পারেনা, তবুও অনুভূতিগুলো লিখে রাখা ভালো।

সচলায়তনে স্বাগতম।

আলমগীর এর ছবি

স্বাগতম।
আরো লিখুন।
(বানান খেয়াল রাখুন)।

ছায়ামূর্তি [অতিথি] এর ছবি

ভাল্লাগ্লো। আপনার নামটা জানা হলো না !

বানান একটু দেখেশুনে, বস।

অতিথি লেখক এর ছবি

মাকে নিয়ে লেখা_মায়ের জন্য লেখা _বিশ্ব জয় সম।----------------সচলায়তনে আপানাকে সুস্বাগতম, শুভেচ্ছা রইল। লেখা ভাল হয়েছে বিধায় ভাল লেগেছে কিন্তু বানানের এই লাজুক অবস্থা কেন হে ভায়া?
এস হোসাইন

---------------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লিখতে থাকেন ঘ্যাঁজম্যাজ কইরা। লেখাটা আপনার নিজের ব্লগে প্রকাশিত দেখলাম। লেখার এক্সক্লুসিভিটি খিয়াল কইরা: http://www.sachalayatan.com/sachalayatan/17756। চোখ টিপি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

যূথচারী এর ছবি

অফ টপিক- বিয়ে করেন, মায়ের স্মৃতি না হোক, উইপেন (ডালঘুটনী, চিরুনি ইত্যাদি)-এর স্মৃতি ঠিকই প্রত্যাবর্তন করবে। চোখ টিপি


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

ওডিন এর ছবি

এইজন্যি আমি ওইদিকে পা বাড়াচ্ছি না- এক মহিলারে সামলাইতেই চুল পাকতাসে- আবার বিয়ে! জ্বলন্ত উনুন থেকে ফুটন্ত কড়াই ...

-----------------------------
I touched her thigh
(And death smiled)

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ছদ্মবেশী।
বানানের এই নাজুক আবস্থার জন্য সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। লেখাটা ছাপা হবে বুঝতে পারলে একটা অভিধান সাথে নিয়ে লিখতে বসতাম।
লেখাটা পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। হাসি

সাফি এর ছবি

শুরুতে মায়ের সাথে কথাকে বোরিং, কিন্তু তারপরেই স্মৃতিচারণ, সময়ই মনে হয় আমাদের রুপান্তরটা আরও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

দোস্ত, দারুণ লিখসোস। ইদানিং সবাই কেমন জানি মন খারাপ করা লেখা লেখতেসে।

- শূন্য

রানা মেহের এর ছবি

ভালো লাগলো পড়ে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

সাফি ভাই, বোরিং এই জন্য বল্‌লাম যে প্রতিদিন একই কথা...কি করিস?শরীর ঠিক আছে? দিয়ে খাইছিস?বাড়ি আসবি কবে? আপনার মন্তব্যটা পড়ার পর থেকে এই প্রশ্নগুলো আর বোরিং মনে হচ্ছেনা! আর আপনার দ্বিতীয় কথার সাথে আমি পুরোপুরি একমত। আর যাদের আমরা আসলেই ভালবাসি তাদের বেলায় হয়ত আমাদের ভাল রূপটা বারবার ফিরে আসে!
শূন্য, দোস্ত হল খালিতো, আমার কেমন যানি দম বন্ধ হয়ে আসতেছে। তাই হয়ত মন খারাপ মার্কা লেখা চলে আসছে।:)
রানা ভাই, "ভালো লাগলো" শুনে ভালো লাগলো...ধন্যবাদ। হাসি

~>ছদ্মবেশী<~

গৌতম এর ছবি

আমি প্রায় প্রতিদিনই মার উপর বিরক্ত হই- প্রতিদিন দুইবার ফোনো একই কথা জিজ্ঞেস করে বলে- দাড়ি, কমা, সেমিকোলনসহ। কিন্তু যে দিন কোনো কারণে মিস যায়, অর্থাৎ মা ফোন করতে পারে না- সেদিন কেমন যেন খালি খালি লাগে। এ কী জ্বালার মধ্যে পড়লাম!

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

দোস্ত লেখা ভালো হইছে। মা'রে মনে পড়লে বাড়ি থেকে ঘুরে আয়।
জগতের সকল মা'য়ের জন্য শ্রদ্ধা।
/
ভণ্ড_মানব

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভালো লাগলো ভাই, বানানের প্রতি খেয়াল রেখে ঘ্যাজম্যাজ করে লিখে যান! দেঁতো হাসি

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই আধমের লেখা পড়ার জন্য গৌতমদা, দুষ্টাপু ও আমার ভণ্ড বন্ধুকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর গৌতমদার সাথে আমি পুরোপুরি একমত। আমি বোরিং বলতে এটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম...বোরিং কিন্তু মোটেই বিরক্তিকর নয় হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

দোস্ত, ভার্সিটি পাশ কইরা মনে হইতেছে অনেক কিছু কইরা ফালাইলাম। অক্ষন মায়ের কোলে ফিরা যাইতে পারলেই বাঁচি।

স্পার্টাকাস

অতিথি লেখক এর ছবি

ল যাইগা...

~>ছদ্মবেশী<~

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।