আব্বু ফোনে বললো "তুমি এখন আর লেখো টেখো না ?" আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম । আমি তো কোনো দিনই লিখি না । ছোটো বেলায় হাবিজাবি লিখতে চাইতাম , কিছুদিনের মধ্যেই বুঝলাম লেখালেখি আমার কাজ না । মাথার মধ্যে কত শত কথা কিলবিল করে, কিন্তু লিখতে গেলেই সব মিলে মিশে জগা খিচুড়ী হয়ে যায় । কি বলতে চাইছিলাম লেখা পড়ে নিজেই আর উদ্ধার করতে পারিনা । তারপর থেকে আমি পুরোদস্তর পাঠক । আব্বুর প্রশ্নে আবার হঠাৎ করে মনে হলো, আমার কি লেখার কথা ছিল ?
কয়েকদিন পর আব্বুর আরেক প্রশ্ন । "তোমার কাজটা আসলে কি ? " এবারও আমি উত্তরহীন । কোনো কিছুই মাথায় এলোনা । গবেষণার নামে হাবিজাবি যা করছি এক কথায় বুঝিয়ে বলা নিতান্তই অসম্ভব । রাতে চিন্তা করছিলাম আব্বুর কথা গুলি । হঠাৎ মনে হলো কঠিন কথাগুলি সহজ করে লিখে ফেললেই তো হয়। এক ঢিলে দুই পাখি । এরপর কিছুক্ষণ ফোনেটিকে গুতাগুতি করে সত্যিই শুরু করে দিলাম । কম্পুযন্ত্রের মন্তর এবেলা ফাঁস করে দিই ।
কম্পুযন্ত্রের মস্তিষ্ক হইলো এর প্রসেসর । আর কম্পুযন্ত্রের নকশাবিদদের কাজ হচ্ছে এমনভাবে প্রসেসরের নকশা করা যাতে কম্পু তাড়াতাড়ি চলে । শুনতে আশ্চর্য হলেও সত্যি দ্রুতর অপর নাম হলো সরল । যে কাজ যত সহজে করা যায় তা তত দ্রত হয় । তাই যে যত সহজ আইডিয়া দিতে পারে এক্ষেত্রে সে তত বিখ্যাত । কি বিশ্বাস হচ্ছে না ? আপনার কম্পুতে যে প্রসেসর তার নকশার অনেক আইডিয়া আমরা হরহামেশা ব্যবহার করি ।
জব্বার মিয়ার একটা মুদি দোকান আছে । দোকানটা খুবই ছোট । গুদাম ঘরের হাজার জিনিসের সিকি ভাগও দোকানে আটে না । তাহলে জব্বার মিয়া কি করে ? যে জিনিসগুলি বেশি বেশি বিক্রি হয় সেগুলি শুধু দোকানে রাখে । যেগুলি কালেভদ্রে লাগে সেগুলি কষ্ট করে গুদামঘর থেকে নিয়ে আসে ।
হ্যা এ আর এমন কি ? ঠিক এই কাজটা কম্পুতে যে করে তার নাম ক্যাশ । কত শত জিনিস আছে কম্পুর মেমোরীতে । সব তো আর প্রসেসর ব্যাটা নিজের কাছে রাখতে পারে না । তাই যেগুলি বেশি ব্যবহার হয় সেগুলি রেখে দেয় ওর কাছাকাছি । ক্যাশের মধ্যে যা আছে নগদ নগদ ব্যবহার করা যায়, গুদাম ( মেমোরী ) থেকে আনার জন্য সময় ব্যয় করতে হয় না ।
আরও একটা কাহিনী । ছুটির দিনে টোনা টুনি দুজন মিলে গেলাম সিনেমা দেখতে । গাড়ি পার্ক করে লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কাটতে অনেক সময় লেগে যাবে । ওইদিকে সিনেমা শুরু হয়ে যাচ্ছে । আমি গাড়ি থেকে নেমে লাইনে দাড়িয়ে গেলাম । আর গাড়ি পার্ক করে এসে জামাই বাবাজী দেখলো আমি টিকিট নিয়ে দাড়িয়ে আছি । ইহা হইলো কম্পুর prefetching . আমি টিকিট prefetch করে রাখায় আমরা দুজনে সময় মতো সিনেমা হলে ঢুকতে পারলাম । প্রসেসর মিয়া এইভাবে আগে থেকে ডেটা এনে রাখে মেমোরী থেকে, যাতে দরকারের সময় আর অপেক্ষা করতে না হয় ।
এই রকম সহজ বুদ্ধি তো আর হাজার হাজার নেই । ওই দিকে প্রতি বছর নতুন নতুন ফাস্ট এ্যন্ড ফিউরিয়াস কম্পু না হলেও তো চলেনা । সহজ সমাধান , আরে একটায় না হলে দুইটা দাও না । আর শুরু হয়ে গেলো মাল্টি কোরের (multi core) যুগ !!!
কি মনে হচ্ছেনা এই কাজ আপনিও পারবেন ? আসলেই তাই । আমার কলিগের দাবী সব বিশ্ববিদ্যালয় আর কোম্পানী মিলে কম্পিউটার আর্কিটেক্টের সংখ্যা হাজারও পেরুবে না । তাই চলে আসুন এই দলে ।
( ফাঁকতালে নিজের ফিল্ডের কিছু অ্যাডভারটাইজমেন্ট করে নিলাম )
মন্তব্য
ধন্যবাদ
এটা একটা কাজ করলেন? এত ঝরঝরে একটা লেখা দিলেন আর নামটা লিখলেন না?
লেখাটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। আরও লিখুন এইভাবে সহজ করে কম্পু আর্কিটেকচার নিয়ে। শুভেচ্ছা!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
মানাবি, খুব সুনদোর হোয়েছে। কত সহজ ভাষায় জটিল জিনিস লিখে ফেললি!!
মানাবি আপু? দারুণ!
সচলে স্বাগতম!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
শীতল আর তানিম, দুজনকেই ধন্যবাদ
আপনার লেখার বিষয়টা ভারী কিন্তু আপনি চেষ্টা করেছেন সহজ সুন্দর করে লিখতে। সেটা করতে যেয়ে সম্ভবত অনেক কিছুই বাদ পড়ে গেছে যেকারণে লেখাটাতে কোথাও কোথাও ছেদ পড়েছে বলে মনে হল।
সচলায়তনে স্বাগতম।
ধন্যবাদ । আমি লেখালেখিতে একদমই নতুন । পড়তে গেলে আমারও মনে হয় ছেদ পড়ছে , কিন্তু ঠিক মেলাতে পারিনা ।
আমিও কম্পিউটার সায়েন্স এর ছাত্র, এই লেখাটা আরেকটু আগে লিখেলে অনেকে পরীক্ষাগুলা আরেকটু ভাল দিত মনে হয়! লোল!!
- শূন্য
আসলে জিনিসগুলি খুবই সোজা , কেনো জানি আমাদেরও অনেক কঠিন করে পড়ানো হয়েছিল ।
শুধু হাসি দিয়ে কি বোঝায় ?
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
স্বাগতম।
______________________________________________________
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
ধন্যবাদ সুহান
চমৎকার হইসে !
ধন্যবাদ নাবিলা । আমার বন্ধুরাই আমার পাঠক
বন্ধুরা ছাড়াও বাকিরা আছে
লেখার ধরন খুবই পছন্দ হলো!
স্বাগতম, মানাবি
ধন্যবাদ
টেক লেখাই সম্বল ।
আরে! সাগর পারের সুন্দর ছবির মালিকান মানাবি আপুনি! চমৎকার লিখেছেন! এখন বলেনতো আমি কে?
----------------------------
ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং
ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু।
অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং
নৈবাসনাৎ কায়মেতৎ চলিষ্যতি।।
- ললিতবিস্তর
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
তুমি খুব দুষ্ট একটা বালিকা যে সবাইকে চমকে দিতে ভালবাসে
ললিতবিস্তরের লাইনগুলির অর্থ কি ?
হাহাহাহাহা! সেই সাথে একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছো আপু, আমি শীতল আপুরে ভালুবাসি!
ললিতবিস্তরের এই শ্লোকটার অর্থ হলোঃ
ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং - এই আসসনে আমার শরীর শুষ্ক হোক
ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু। - ধ্বংস হোক ত্বক, অস্থি, মাংস,
অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং - [যতদিন] বহুকল্পদুর্লভ জ্ঞান অপ্রাপ্ত থাকবে
নৈবাসনাৎ কায়মেতৎ চলিষ্যতি।। - [ততদিন] এই আসন থেকে দেহ সঞ্চালিত হবেনা।
আমার ক্ষেত্রে এটার মানে একটাই, ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে বসেছি, যা চাই তা না পাওয়া পর্যন্ত সুইভেল চেয়ার ছাড়তাম্না!
ভালো থেকো আপু, আরও লিখো!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
চমৎকার আপনার লেখনি, সচলের দুর্মুখদের পক্ষথেকে স্বাগতম
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ধন্যবাদ । তবে দুর্মুখ কেন বুঝলাম না !!
কয়েকদিন যাক, বুঝে যাবেন
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
congratulation - র বাংলা কি?
অভিনন্দন শব্দটা ব্যবহার করতে পারেন, আর ভবিষ্যতের জন্যে এখানে দেখে নিয়েন
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
দুর্ধর্ষ লেখনী---! অনেক মজা পেলাম।
সচলায়তনের বিষাদ-সভার সভাপতির শুভেচ্ছা গ্রহন করুন!
সুস্বাগতম!!!
ধন্যবাদ , ধন্যবাদ
কবি বলেছেন হর্ষ-বিষাদ সবই এক
বাহ। লেখা পইড়াও আনন্দ আর নিজের লাইনের লোক দেখে আরও আনন্দ। যদিও আমার কাজ গুদামনির্ভর; যাতে আপনার আরও তাড়াতাড়ি মালামাল দোকানে নিয়া যাইতে পারেন।
আরো লিখেন।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
নিজের লাইনের লোক পাইলে আমিও মহা আনন্দিত হই । আর গুদাম ঘর নিয়ে তো এখন ভাল ভাল কাজ হচ্ছে । আপনার কাজও নিশ্চয়ই ফাটাফাটি কিছু ।
ধন্যবাদ আপনাকে ।
চেষ্টা করব ভাল কিছু লেখার ।
লেখার স্টাইলটা মজার!
নিয়মিত লিখবেন আশা করি।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ধন্যবাদ আপনাকে । আমার সবসময় ধারণা ছিল আমি কিছু লিখলে তা প্রচন্ড বোরিং হবে
আমাদের মত টেকি কানাদের জন্য আরও কিছু উদাহরন সহ বাংলা তর্জমা চাই।
স্বপ্নদ্রোহ
আসলে কেউই টেকি কানা না । আমরা ভয় পাই যে বোধহয় জিনিসটা অনেক কঠিন , বুঝিয়ে দিলেই সেটা জলবৎ তরলং
- আপনার বন্ধুরা ছাড়াও আপনার পাঠক আছে এখানে, দেখলেন তো!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দেখলাম
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ক্যাশে নিয়ে আমার একটা লেখা আছে। (নিজের বিজ্ঞাপন করলাম আপনার মতোই )
আরো, আরো লিখুন। তবে, যতি চিহ্নের (দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, প্রশ্নবোধক চিহ্ন, আশ্চর্যবোধক চিহ্ন) ঠিক আগে কখনও স্পেস দিয়েন না।
আপনার লেখাটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
যতি চিহ্নের ব্যাপারে সাবধান হব আগামীতে।
আপনাকে স্যার মানলাম। এতো সহজ করে বুঝাতে পারেন। কম্পুকানা লোক আমি। এখন থেকে কোনো কিছু বুঝতে আপনার শরনাপন্ন হবো কইলাম!
..................................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
ধন্যবাদ। আমি শিক্ষক হিসেবে প্রচন্ড খারাপ
আশা করি কোনো লেখায় কাহিনীগুলি লিখবো।
আপু ভাবছি আম্মু আব্বু কে লিংক টা দিয়ে দিবো। এই জিনিস গুলো যে এতো সহজে বলা যায় মাথায় আসে নি। যদিও আমার মাস্টার্স এর বিষয় আলাদা, আমার সব সময় এই টপিক টার ব্যপার এ অনেক রিসার্চ করার আগ্রহ ছিলো। আরেকটু বিস্তারিত লিখেন আপু।আমার মনে হয়ে তাহলে আন্ডারগ্রেডরা প্রথমবার কম্পুটার আর্কিটেকচার পড়ার আগে আপনার লেখা পড়ে খুব উপকার পাবে। খুব আগ্রহী হয়ে অপেক্ষায় থাকলাম পরের লেখার জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন