নভেম্বরের তিন, সাল দু'হাজার আট। সকাল থেকে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে সারা বিশ্ববিদ্যালয় (আই ইউ টি) জুড়ে। আবাসিক হলের ঘরে ঘরে অনেক অচেনা মানুষের আনাগোনা। কারো কারো চেহারার আদলই বলে দিচ্ছে তাঁরা কার অভিভাবক। অপ্রচলিত রঙের একটা গাউন পরে তাঁদের সন্তানেরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের দেখছে। কারো কারো মুখে পরিষ্কার অসন্তোষ, টুপিটা মাথায় ঠিকমত আটছে না। পাশ থেকে অভিভাবক নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বাৎলে দিচ্ছেন কিভাবে তা পরা উচিৎ। হাল্কা শীতের বাতাস বইছে, কিন্তু উত্তেজনায় কারো সেদিকে খেয়াল নেই। আজ আমাদের বহুলপ্রতীক্ষিত সমাবর্তন।
অনিবার্য কারণে আমার মা বাবা আজ আসতে পারেননি। আমার দুঃখে কাতর হওয়ার কথা ছিল, হলাম না তার কারণ সম্ভবত আমার এক রুমমেট। তারও অভিভাবকদ্বয় অনুপস্থিত এবং এতে কেন যেন তাকে আনন্দিত দেখা গেল! আমরা পুরনো অভ্যাসে আনন্দ ভাগ করে নিলাম এবং নিরাপদ দূরত্বে এসে আয়েশ করে সিগারেট ধরালাম। বন্ধুটি পাড় ধূমপায়ী (এ কারণেই আনন্দিত কিনা কে জানে!), আমি 'প্রয়োজন'মাফিক। একদিনের 'ভালো ছেলে'রা আমাদের হিংসাতুর দৃষ্টিতে আড়চোখে দেখতে লাগল। ঘরকে ভদ্রস্থ চেহারায় আনতে তাদের অনেক ধকল গেছে গতরাতে। আমরা যে কুটোটাও নাড়িনি তা বলাই বাহুল্য।
যথাসময়ে আমরা মুখে প্রয়োজনীয় ভাবগাম্ভীর্য এনে মিলনায়তনে ঢুকলাম। কিছু নিয়মমাফিক বক্তৃতা আর আনুষ্ঠানিকতা শেষে সবাইকে একটি করে কাগজ ধরিয়ে দেয়া হল। তিনজন ব্যতিক্রম। তারা কাগজের সাথে একটি করে ধাতব চাকতিও বাগালো। অনুষ্ঠান শেষে মিলনায়তন থেকে বের হয়ে অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী আমরা আকাশে টুপি ছুঁড়ে মারলাম। কম করে হলেও দশজন স্থিরচিত্রগ্রাহক নিয়োগ দেয়া হল মুহূর্তটাকে ধরে রাখার জন্য। বেশ ক'বার সম্মিলিত টুপি ছোড়াছুড়ির পর পাওয়া গেল মনমত ক'টা ছবি। অত্যুৎসাহী ক'জন থলের মধ্যে গাউন ভরে নিকটস্থ স্টুডিওতে চলে গেল দেয়ালে টানানোর মত ব্যক্তিগত ছবি তোলার জন্য। আমরা, যাদের ছবি তোলার উৎসাহে ভাটা পড়তে শুরু করেছে, চলে গেলাম জোব্বা আর টুপি জমা দিতে। একসময় গুরুজনেরা চলে গেলে ঘরদোর স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে আনতে ব্যস্ত হল সবাই। 'ভালো ছেলে'রা আগুন খুঁজতে গিয়ে গলদঘর্ম হল। ঘরের সামনের বারান্দা আবার হয়ে উঠল ছোট ক্রিকেটের লর্ডস। উচ্চলয়ের ভিনদেশি গান বাজতে শুরু করল পাশের ঘর থেকে। ল্যানে গেম ক্রিয়েট হল। নষ্ট করার মত সময় বেশি নেই হাতে। আর ক'দিন পরই এসব হবে ইতিহাস।
খোমাখাতা জিনিসটা না থাকলে হয়তো এই নভেম্বরের তিনটাও চলে যেত শুধু আরেকটা তারিখ হয়ে। ক'জন বেরসিক বন্ধু তাদের স্ট্যাটাসে ঝুলিয়ে মনে করিয়ে দিল, এক বছর পূর্ণ হল সেই স্বপ্নমাখা দিনের। স্বাভাবিক নিয়মেই সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে, পড়ছে এদিক সেদিক। রুমমেট বন্ধুটিও এ সপ্তাহেই দেশ ছাড়লো চাকরির সুবাদে। এক বছরের ছোট ভাইদের আজ সমাবর্তন।
তোদের অভিনন্দন।
রাহিন হায়দার
মন্তব্য
ভালো লাগলো। সচলায়তনে স্বাগতম!
ধন্যবাদ আপনাকে।
সচলে স্বাগতম। দেখা হবে আপনার অন্য কোন লেখায়
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ।
লেখা চমৎকার হইছে। আমারও মনে পড়ে গেল অক্টোবর ৭, ২০০৪ এর কথা। ভালো থাকো।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
ধন্যবাদ রেজওয়ান ভাই!
ভালো লিখেছিস !! হাসু কে পড়তে দিবো, হ্যাঁ ??
রাহিন ভাই, অনেক স্মৃতি মনে করায় দিলেন। আজ আমাদের সমাবর্তন হইলো। দিদার ভাইয়ের সাথে ছবি তুললাম। উনিও গত বছরের এই সময়ের কথাগুলা বললেন। কে কোথায় থাকব...কিন্তু এসব দিন সারাজীবন মনে থাকবে। স্মৃতিচারণ অতি উত্তম হইছে।
/
ভণ্ড_মানব
হুম... সবাই এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে...।
খুব অল্প কয়েকজন আন্ত বিভাগীয় বন্ধুদের সবাই আজ দেশ ছাড়া...
ইশ! আজকে সারাটাদিন শান্তি মতো সিগ্রেট খাইতে পারিনাই
যদিও, বেশি দারুন একটা দিন গেলো আজ। বেশি বেশি দারুন।
পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা
কেন জানি লেখা টা আমার খুব ভাল্লাগছে......!
কেন জানি পড়ে মনে হলো লেখা টা আমার জন্য ই লেখা......!!
খুব বাজে রকমের স্বার্থপর আচরণ.....!!!
তাতে কি......দিন টা তো আমাদের ই ছিল....আমি না হয় আমার বললাম আর কি......!!!!
ধন্যবাদ রাহিন ভাই।
ছোট ভাই গুলো কে মনে রাখার......উহু ভুলে না যাওয়ার জন্য......
আরে নিয়াজ মামা
তোমাকেই খুঁজছে সচলায়তন।
/
ভণ্ড_মানব
তোর ভাল্লাগাতে আমারো ভাল্লাগলো
সচলায়তনে নিবন্ধন করেছেন কি?
এখনও করা হয়নি।
করে ফেল। দেরি করে লাভ নাই। লেখা ভালু হচ্ছে।
হ!
----------------------------
ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং
ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু।
অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং
নৈবাসনাৎ কায়মেতৎ চলিষ্যতি।।
- ললিতবিস্তর
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
শুরুতেই ছক্কা। চমৎকার লাগলো।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আরমানু আমারে খুইজা লাভ নাই............এক ফেইসবুক নিয়া ই দিন পার হয়ে যায়......!!
ভাল লাগল৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ভাল লেখা জারি থাকুক
কনফুসিয়াস ও দময়ন্তীকে ধন্যবাদ। উৎসাহ পাচ্ছি।
সুন্দর হইসে.....আমার এখনো মনে পরে Nov 3rd, 2008....এটা কখনো ভূলবার না.
নতুন মন্তব্য করুন