মনে আছে, প্রথম যেদিন তোমরা আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে উঠেছিলে, আমি সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম। না, তোমাকে ওঠার জায়গা দিতে নয়, তোমাকে দেখে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, তাতে সামনের কিছু চুলের গোছা লেপ্টে ছিল। গলায় ওড়না ঝুলিয়ে দুই হাতে একটা বড় বাক্স নিয়ে তুমি উঠছিলে। ঘর্মাক্ত ও পরিশ্রমে মুখ লাল হয়ে যাওয়া একটা মেয়েকে এত সুন্দর লাগতে পারে তা তখনো আমার জানা ছিল না।
এরপর প্রতিদিনই তোমাকে দেখতে থাকলাম- গোপনে বা সামনা সামনি। তোমার কলেজে যাওয়ার সময়টায় আমিও দরজা খুলতাম কোন এক উছিলায়। এরমধ্যে তুমি তোমার মা’র সাথে আসলে আমাদের বাসায়। পরিচয় হল তোমার সাথে। এরপর থেকে সিঁড়িতে তোমার সাথে দেখা হলে ছোট্ট হাসি দিতে, টুকটাক কথা বলতে-যার সবটাই ছিল তোমার নিজেকে নিয়ে। তুমি কি পছন্দ কর, কি অপছন্দ, তোমার ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন। আমিও বলতে চাইতাম, তবে একটা কথাই- তোমাকে ভালবাসি, বলতে পারিনি।
প্রথম দিকে বান্ধবীদের নিয়ে তুমি যখন বিকেলে রাস্তায় হাঁটতে, আমি মাঠে ফুটবল নয় ক্রিকেট খেলতাম। তুমি তোমার বান্ধবীদের দূর থেকে চিনিয়ে দিতে আমাকে। আমার খেলার দিকে মনযোগ বেড়ে যেত, একটা আলগা গাম্ভীর্য এসে পড়ত আমার মধ্যে। পরে তোমার জন্য খেলা ছেড়ে দিলাম, দাঁড়িয়ে থাকতাম গলির মোড়টাতে। তুমি বান্ধবীদের চোখ এড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে- অতোটুকুতেই ছিল আমার বিশাল সুখ। তারপরো একটু সাহস করে তোমাকে বলতে পারিনি- ভালবাসি।
সলিমুল্লাহয় চান্স পেয়ে যেদিন তুমি চলে যাবে, আমার সাথে দেখা করতে এলে। আমি যেন ভাষা হারিয়ে ফেললাম। তোমাকে না দেখে আমি একটি দিনও কিভাবে কাটাব? তোমার ওই পানপাতা মুখ, মুখের ওই হাসি আমি কিভাবে পাব? ভাবলাম আজ বলেই ফেলি, পারলাম না।
মাঝেমধ্যে ছুটিতে আসতে, তোমার বন্ধুদের গল্প করতে কিন্তু কখনই জিগ্যেস করতে না আমি কেমন ছিলাম। আমার কষ্ট আমি বুঝতে দিতাম না। তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারছ, আমি এতেই খুশি। খুব খুশি। আর বলা হয়ে উঠল না।
বাসা থেকে তোমার জন্য পাত্র দেখছে। মায়ের কাছ থেকে শুনতে পেয়ে বুকটা যেন ফাঁকা হয়ে গেল। আমি কি আর তোমাকে বলতেই পারবনা? তুমিও বা এমন কেন- কিছুই বুঝতে পারোনা? জানলাম তোমাকে নাকি বাড়ি আসতে বলা হয়েছে, পাত্র দেখতে আসবে তোমাকে।
তুমি আসলে। আমার সাথে দেখাও করে গেলে। কিন্তু আমার বলা হল না। গলাটা এত শুকিয়ে যায় কেন? বুঝলাম, এভাবে হবে না। একটা চিঠি লিখে দিলাম। লিখলাম আমার হৃদয়ের সব না বলা কথা, পাঁচ বছরের ভালবাসার কথা।
চিঠি পেয়ে তুমি ছুটে আসলে আমাদের বাসায়, আমার রুমে। তোমাকে কখনো রাগতে দেখিনি। সেই তোমার বাইশ বছরের জমানো সব রাগ যেন আমার উপর উগরে দিলে।
(গল্পের তিনটি সমাপ্তি আছে, যে যার পছন্দ মত বসিয়ে নেবেন। কোনটা ভাল হল জানাইয়েন )
সমাপ্তি ১:
আমি নরকের কীট, আমার যেন পছন্দ করার অধিকার নেই, আমি কিভাবে পারলাম আমার ‘করুণাদাত্রী’কে নিয়ে এমন কথা ভাবতে।
বোবা হলেই কি মানুষ নরকের কীট হয়ে যায়? তাদের কি কখনো ভালবাসতে নেই?
সমাপ্তি ২:
দুহাতে শার্ট টেনে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললে, “কাপুরুষ। এতদিন কেন বলনি।”
কাঁদলেও তোমাকে খুব সুন্দর লাগে, সেদিনই জানলাম। তোমার অনেক ভোগান্তি আছে জীবনে!
সমাপ্তি ৩:
“ছিঃ ছিঃ তোমাকে সবসময় আমি ভাই বলে জেনেছি। সেই তুমি এমন করতে পারলে? তোমরা মেয়েদেরকে কি ভাবো?”
আমার এখানে আর কি বলার আছে? শুরুতেই কেন যে ভালবাসার কথা বললাম না!
স্পার্টাকাস
মন্তব্য
আমিও একটা দিলাম।
---------------------------------------------------
- "এটা কী?" হাতে চিঠিটা নাঁচাতে নাঁচাতে বলল ও।
- "দেখতেই তো পাচ্ছ।" হৃদপিন্ডটা এরকম বিশ্রীভাবে লাফাচ্ছে কেন এই চিন্তা করতে করতেই উত্তর দিলাম আমি।
- "দেখ, আমি কিন্তু তোমাকে বন্ধুই ভেবে এসেছিলাম। আমি ..." ওর দিকে এগিয়ে আসতে থাকি আমি। আমাকে আসতে দেখেই ওর কথা আটকে যায়।
চিঠিটা যে হাতে ধরা ওর, আমি সেই হাতটা ধরি; একবারেই আলতো করে। আমাদের দুজনের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসগুলো আর আলাদা করা যাচ্ছে না এখন।
-"না, প্লীজ ...।" অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে ও। পিছিয়ে যেতে চায়। ওর নত মুখখানি চিবুক ছুঁইয়ে উঁচু করি আমি। ভয়ে অথবা অজানা কোন কিছুর আশংকায় ওর পেঁয়াজ রঙা ঠোঁটদুটো তখন একেবারেই সাদা।
অল্প ক'টা মুহুর্ত পরে,
ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ছুটে বেরিয়ে যায় ও।
আমি তাঁকিয়ে থাকি আকাশের দিকে। বৃষ্টি আসি আসি করছে। কতগুলো কাগজ সুন্দর করে টুকরো টুকরো করি আমি।
আমি ওকে বলেছিলাম "তবে আমি ভুল মানুষকেই ভালোবেসেছিলাম। ভালোবাসাটুকু ফিরিয়ে দাও।"
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
রেশ্নুভাই, আপ্নেরটা সমাপ্তি ৪। তয় আমার এক ফ্রেন্ডের আরেকটা সমাধান আছে....মেয়েটার ফিজিক্যাল প্রব্লেম আছিলো।
স্পার্টাকাস
শেষ হওয়া উচিৎ দ্বিতীয় সমাপ্তি দিয়েঃ [দুহাতে শার্ট টেনে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললে, “কাপুরুষ। এতদিন কেন বলনি।”
কাঁদলেও তোমাকে খুব সুন্দর লাগে, সেদিনই জানলাম। তোমার অনেক ভোগান্তি আছে জীবনে!]
আপনি মানুষটা খুব আশাবাদী।
স্পার্টাকাস
আহা রে। কোন্টা যে হবে! ভাবনায় পড়ে গেলাম।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনি কি করবেন চিন্তা করেন।
স্পার্টাকাস
ভালবাসার গল্প অমীমাংসিত থাকাই ভালো... *তিথীডোর
তিনটার একটাও না
শেষটা হবে এইরকম
: চিঠির সময়তো শেষ মনু। এখন হেডম থাকলে মায়ের কাছে টেন্ডার সাবমিট করো। তবে মনে রাখবে কম্পিটিশন কিন্তু কড়া...
(তয় ভাইবা দেখো টেন্ডার দিবা না বিয়ের পরে সাবকন্ট্রাক্টে কাজ করবা)
পুরা গুল্লি ফিনিশিং হইসে এইটা!
নায়ক তো চাকরী বাকরী করে না...টেন্ডার সাবমিট করলে তো রিফিউজ হইয়া যাবে
স্পার্টাকাস
হোহোহোহোহো ............মজা পাইসি পইড়া
ধন্যবাদ কাকে দিব??
স্পার্টাকাস
সাব কন্ট্রাক্টের মন চায়
সমাপ্তি ২-তে নায়িকা কতৃক নায়কের বুকে মৃদু ঘুসি মারার অংশটুকু অনুপস্থিত!
আমারো মাথায় আসছিল,যান মনে মনে দিয়ে দিলাম
স্পার্টাকাস
সুখময় সমাপ্তি হওয়াই ভাল ।
সুখময় সমাপ্তি হওয়াই ভাল ।
মেয়েটা ছেলেটার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে বলবে, 'তোমার এত লজ্জা কিসের? তুমি না ছেলেমানুষ?'
আর ছেলেটা তখন মেয়েটার ঠোঁটে গরম নিঃশ্বাস ফেলে বলবে, 'তুমি না সাইকোলজি পড়্, তোমার এতো টাইম লাগে কেন?'
মেয়েটা ছেলেটার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে বলবে, 'তোমার এত লজ্জা কিসের? তুমি না ছেলেমানুষ?'
আর ছেলেটা তখন মেয়েটার ঠোঁটে গরম নিঃশ্বাস ফেলে বলবে, 'তুমি না সাইকোলজি পড়্, তোমার এতো টাইম লাগে কেন?'
নতুন মন্তব্য করুন