খন্ড চিত্র - ১
১৯৯৯ সালে একদিন বাবার কাছে শুনলাম বাংলাদেশ এ নাকি একজন অর্থনীতিবিদ আছেন যিনি পৃথিবী জয় (!) করে এসেছেন কি জানি এক থিওরী দিয়ে (তখন micro-credit কি জিনিস বুঝতাম না) । তিনি বাংলাদেশ নাকি এমন একটা ব্যাংক খুলেছেন যেখানে নাকি শুধু গরীবরা হিসাব খুলতে পারে। আমি তখন বোকার মতো বাবাকে বলেছিলাম তাহলে তো বাংলাদেশ এ কোন গরীব থাকবে না। বাবা শুধু মুচকি হেসেছিলো। তারমানে তখন বুঝি নি। অনেক পরে বুঝেছিলাম।
খন্ড চিত্র - ২
দুই দিন পরে স্কুলের মাধ্যমিক নির্বাচনী পরীক্ষা, বসে বসে সামাজিক বিজ্ঞান পড়ছিলাম। হঠাৎ করে মাথায় একটা জমজমাট আইডিয়া আসলো। সাথে সাথে বই বন্ধ করে আমার সব কু-কর্মের সাথী তাওসিফ কে ফোন করলাম।
-হ্যালো, দোস্ত একটা জটিল আইডিয়া আসছে, বাংলাদেশ -এ আর কেউ গরীব থাকবো না।
- কি আইডিয়া ?
-বাংলাদেশের জনসংখ্যা কতো জানিস ?
-ক্যান, তেরো কোটি। (তখন তেরো কোটি ছিলো)
-এই তেরো কোটি মানুসের ১/৪ ও যদি মাসে এক টাকা করে দেয় তাহলে কতো টাকা হয়রে ?
-তিন কোটি।
-আরো কমায় ধরি। ধর এক কোটি টাকা আসলো। আমরা যদি এই এক কোটি টাকা দিয়া প্রতি মাসে ১০০ গরীবরে ইনকামের ব্যবস্থা কইরা দেই, কয়েক বছরে বাংলাদেশ এ কেউ গরীব থাকবো না।
-হ, ঠিক কইসোস।
-কিন্তু টাকা তুলবো কে ?
-তাও ঠিক। এক কাজ করলে হয় প্রতি এলাকা এলাকা থিকা তুইলা আমরা এক জায়গায় করুম। তারপর কোন গ্রাম এ গিয়া দিয়া আসুমনে।
-কিন্তু তোর কথায় মানুস এক টাকা দিব কেন ?
-এহহে এটাতো ভাবি নাই। চল এটা নিয়া আরো চিন্তা করি।
তারপরে আরো কিছু আউল ফাউল কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। কিচ্ছুক্ষন পরে পরীক্ষার চিন্তায় এই ভাবনা কই চলে গেলো মনেই ছিল না।
(আমার কিছু নিজস্ব অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা আছে, তার মধ্যে এটা একটা। আমার এই চিন্তা গুলোকে আমি সামাজিক কল্পকাহিনী বলি।)
খন্ড চিত্র - ৩
২০০৪ সাল। জুনের শেষের দিকে। বাংলাদেশ তখন পানির নিচে। আমার তখন এস,এস,সি পরীক্ষা শেষ। বাসায় বসে থাকি। কোন কাজ নেই। তখন একদিন হঠাৎ আমার সেই এক টাকার থিওরীটার কথা মনে পড়লো। আবার সেই বন্ধুকে ফোন দিলাম। এবার ঠিক হলো আমরা যার যার এলাকা থেকে টাকা তুলবো তারপর কিছু ত্রান সামগ্রী কিনে কোন সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানে দিয়ে আসবো।
আমি আমার এলাকা থেকে ৬৭০০ টাকা তুললাম, আর মুঠোফোন কেনার জন্য কিছু টাকা জমিয়েছিয়াম সেখান থেকে ২৩০০ টাকা দিয়ে ৯০০০ টাকা আর আমার বন্ধুটি ৭০০০ টাকা জোগাড় করলো। সর্বমোট ১৬০০০ টাকা নিয়ে আমরা ডেমোক্রেসিওয়াচ (তালেয়া রেহমান পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান) -এ গেলাম। ওরা টাকা নেয়নি, বলেছিলো শুকনা খাবার আর ওষুধ কিনে দিতে। আমরা তাই করলাম। আমরা দুইজন পিচ্চি পোলা (!) এতো টাকা জোগাড় করার সুবাদে শফিক রেহমান স্যারের কাছ থেকে বাহবা অ পেলাম। উনারা আমাদেরকে এলাকায় দিতে যাওয়ার দিন নিয়ে গিয়েছিলো।
-------******-------
নৌকায় করে যাচ্ছি। চারিদিকে যতো দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। পাশে আরেকটা নৌকা ছিলো। ভাবলাম তারা ও আমাদের মতো ত্রান দিতে এসেছে। একটা উঁচু বাধের মতো জায়গায় নৌকা থামানো হলো। আর আমাদের পাশের নৌকাটা বেশ খানিকটা দূরে নামলো। আমরা ত্রান দিচ্ছি, ঔষুধ দিচ্ছি, পানি বিশুদ্ধীকরন ট্যাব্লেট দিচ্ছি, এমন সময় এক মহিলার আর্তচিৎকারে সবাই ফিরে তাকালাম কি হয়েছে দেখার জন্য। দেখি আমাদের পাশের নৌকাটি ত্রান দিতে নয়, লোন -এর কিস্তি নিতে এসেছে।
খন্ড চিত্র - ৪
২০০৭ সালে বাংলাদেশের একজন কৃতি সন্তান শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পায়। সে আর কেউ না, ওই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ।
(লেখাটি কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য লেখা হয়নি ।)
--- একজন নীল ভুত
মন্তব্য
আরো অনেক বিশদে লেখা দরকার। মাইক্রো ক্রেডিটের ফানুশ দিয়া জগতের সব কিছু আদায় করে ফেলেছেন উনি। কিন্তু গরীবরা আরো গরীবতর হয়েছে।
শেষ প্যারাটায় এসে ধাক্কা খেলাম।
...............................
অন্ধকারে অন্ধ নদী
ছুটে চলে নিরবধি
ধন্যবাদ, রাহিন ভাই।
ওরে বাবা ... জাতির ভাবমূর্তি বেচা লোকগুলাকে তো প্রব্লেমে ফালায়া দিলেন। আমার দেশের কুত্তাও কুত্তা না। চাইপা যান ...
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আমার আগের কমেন্টটা, যেটি এখনো দেখতে পাচ্ছি না, কাউকে আহত করার জন্য লেখা হয়নি। আমি, এই বিষয়ে সচল পাঠকদের 'গঠনমূলক' আলোচনাই প্রত্যাশা করি।
আরেকটা কথা বলা হয়নি, একজন নীল ভুত অনেক সুন্দর ভঙ্গিতে লেখাটা লিখেছেন।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ধন্যবাদ। সচলে এটা আমার প্রথম লেখা ।
এখানে কিছু অতি সরলীকরণ করা হয়েছে। প্রথমত: ক্ষুদ্রঋণের মডেলটি এখন বাংলাদেশের অনেক এনজিও ব্যবহার করে - একটাই কারণ এটি চালানোর জন্যে দান প্রয়োজন হয়না - একটি আত্ম নির্ভরশীল একটি সামাজিক ব্যবসা। মুহম্মদ ইউনুসের মডেলটিতে ১৬টি নীতি এবং আরও অনেক কিছু নৈতিক ব্যাপার আছে যেটি তার সংগঠনেই ঠিকমত পালন হয় কিনা সেটা সমালোচনার যোগ্য। তবে ঠিকমত পালন হলে কিন্তু আপনি যা বললেন তা হবার কথা নয়। অন্যান্য এনজিওরা ওইসব নীতিমালার ধার ধারেনা। কাজেই আপনি যেই উদাহরণ দিলেন সেরকম ঘটনা হয়ত ঘটেছে অন্য কোন এনজিওর মাধ্যমে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে।
তাদের মডেল অন্যেরা বিকৃতভাবে ব্যবহার করলে এতে মুহম্মদ ইউনুস বা তার প্রতিষ্ঠান কেন পাপের ভাগীদার হবেন সেটি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। এর প্রতিকারের জন্যে সরকারী নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় হতে হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
কার্যকরী এবং সর্বোপযোগী হওয়ায় সারা বিশ্বে মাইক্রো ক্রেডিট ধারণাটি ছড়িয়েছে। মাইক্রোক্রেডিট মডেল এর অনেক অপভ্রংশও হয়েছে জগৎ জুড়ে। ফলে মূল ধারণাটি বদলে এখানে অনেক ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। এ সবেরই দায় দায়িত্ব মুহম্মদ ইউনুসের ঘাড়ে চাপিয়ে তার নোবেল পুরস্কার নিয়ে কটাক্ষ করতে হবে এমন কোন কারণ আমি দেখি না।
তবে সরকারের নীতিমালা কঠোর হওয়া উচিত ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বিভিন্ন এনজিওর ব্যবসা বন্ধ করতে।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
ধন্যবাদ, আপনার জবাবের জন্য। আমি কিন্তু লেখাটি লেখার আগে কিছু পড়াশুনা করেই লিখেছি। আর খন্ড চিত্র -৩ এর ঘটনাটি আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া।
গ্রামীন ব্যাংকের কোন defaulter নেই কেনো জানেন ? কারণ কেউ যখন ঋণ শোধ করতে না পারে তখন তাকে আরো বড় অংকের ঋণ দেয়া হয়, এবং সেখান থেকে আগের ঋণের পরিমাণ অর্থ কেটে নেয়া হয়। এর মানে আপনি virtually (এর বাংলা জানি না ) কোনোদিন ঋণ শোধ করতে পারবেন না।
আমার প্রশ্ন ছিল ওরা কি গ্রামীণ ব্যাংকের ছিল না কি অন্য কোন এনজিওর?
মাইক্রো ক্রেডিট নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় উদ্যোগ হচ্ছে কিভা (http://en.wikipedia.org/wiki/Kiva_%28organization%29)। এতে অনলাইনে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে পুঁজি সংগ্রহ করে ক্ষুদ্র ঋণ হিসেবে ঋণ যাদের দরকার তাদের দেয়া হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে (উইকিপিডিয়ার লিন্কে তালিকা দেখেন) বিভিন্ন দেশ ভেদে তারা ১% থেকে ৪০% সুদ চার্জ করে থাকে। এবং সেইগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের নীতি দ্বারাই নির্ধারিত হয়ে থাকে।
এটি খুবই অনৈতিক একটি ব্যাপার এবং দেশের আইনের পরিপন্থী। যেখানে আমাদের দেশে দেউলিয়া আইন বিদ্যমান - যাতে একজন লোক সর্বসান্ত হলে সব মওকুফ করে আবার নতুন শুরু করার সুযোগ দেয়।
ওই যে বললাম না? এগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। আমাদের দেশে ক্ষুদ্র ঋণ সম্পর্কে কোন সঠিক নীতিমালা নেই যেটা খুবই দরকার।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
আমি যতো দূর মনে করতে পারি গ্রামীন ব্যাংক -ই ছিলো। আমি সিউর হয়ে জানাবো আপনাকে। ধন্যবাদ।
সচলে স্বাগতম নীল ভুত।
একটা লেখায় যদি হেয় করার সর্বজন সম্মত হেয়কারী উপাদান থাকে তবে লেখক লেখার নিচে কী লিখে দিল তাতে কিছু আসে যায় না। আপনি যখন জয় পাশে বন্ধনীতে ! দেন তখনই বোঝা যায় উদিষ্ট বিষয়ে আপনার অবস্থান কোথায়।
সে অবস্থান বিবেচনাতেই আপনি আপনার পছন্দমাফিক চিত্র তুলে আনবেন, সেটা বিচিত্র নয়। তবে সেসব চিত্রের বাইরেও যে চিত্র নেই তাও সঠিক নয়।
অর্থনীতিতে আপনার যথেষ্ট ধারণা আছে ধরে নিয়েই বলি: গ্রামীণের অনন্যতা রিপিটিটিভ লোন দেয়াতে না। অনন্যনতা হলো কোন কোল্যাটারাল না রেখেই লোন দেয়া। এটা যদি পুরোপুরি সঠিক কথা নয়। কারণ কোন মূল্যবান বস্তু/বিষয় কোল্যাটারালের বদলে কিছু মানুষকে সমিতি করে দেয়া হয় যারাই নিজেরাই নিজেদের গ্যারান্টর হিসাবে কাজ করে। আপনার লেখায় এসব দিক পুরোপুরি অনুপস্থিত, এবং অনেকটা ইচ্ছেকৃতভাবে।
আপনার বন্ধুর সাথের৩/১ কোটি টাকা জমানোর বুদ্ধি আসল। টাকা ছেপে নেয়ার বুদ্ধি কেন নয়? দুটোর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? গরীব মানুষকে শ্রেফ অর্থ দান করলে বা ত্রাণ দিলেই তারা স্বাবলম্বী হয়ে যাবে? আপনার অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা কী?
মাইক্রোক্রেডিটের ধারণায় ইউনুসের অবদান স্বীকৃত। এটা হাসিনার ডিগ্রী কিনে আনার মতো না। ইউনুসের থিওরি যে সব এনজিও সঠিকভাবে প্রয়োগ করবে এটা নিয়ে চিন্তা করে ইউনুস থিওরি দেন নাই। কেউই দেয় না। ইউনুসের নিজের সমস্যা থাকতে পারে, তার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু সেটার জন্য তার দেয়া থিওরিকে সমালোচনা করতে হলো যথাযথভাবে করতে হবে এ লেখায় যেটা পুরোপুরি অনুপস্থিত।
মোটের উপর লেখাটায় সার বস্তুর চেয়ে সস্তা আবেগ বেশী। তার চেয়ে বড় কথা, শিরোনামটা ভুল। ইউনুস তাঁর অবদানের পুরস্কার পেয়েছেন এটা সত্য কথা কল্পকাহিনী নয়।
লেখা থামাবেন না।
কোন আবেগ সস্তা, কোন আবেগ দামি এটা কোন মানদন্ড ঠিক করে দেয় ? আর শিরোনামে ইউনুসের নাম তো কোথাও নাই। আছে ভিতরে। ইউনিসের নোবেল প্রাইজ কল্পকাহিনী - এটা আপনি কই পাইলেন ? কল্পনা অবশ্য ভালো জিনিস ... কিন্তু লেখাটাও মন দিয়ে পড়া জরুরী।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
কত টাকার কম থাকলে একজনকে গরীব বলা হয়?
পুরো লেখায় কোথায় একটা কাহিনী আছে যা কল্পকাহিনী? যদি নাই থাকে তবে শিরোনামে কল্পকাহিনী শব্দটি কোথা থেকে আসে? আমার মন্তব্যের জবাব লেখকই দিক। নোবেলপ্রাপ্তিকে লেখক কল্পকাহিনী বলেছেন - এমন দাবী আমি কোথায় করেছি। (নিচে যূথচারীর মন্তব্যে কী লিখেছি দেখুন।)
প্রথম প্যারা বাবার কাছ থেকে শোনা কথাই যদি কল্পকাহিনী হয়, তবে সেই মাইক্রোক্রেডিটের জন্য ইউনুস (প্রতক্ষ্যভাবে) নোবেল পুরষ্কার পায়নি। পেয়েছে ভিন্ন স্বীকৃতি, নোবেল পাওয়ার বহু আগেই। সেই স্বীকৃতিও কল্পকাহিনী নয়।
আপনি এর আগে তর্কের রুচি নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। এ লেখাতেও এক মন্তব্যে অপ্রাসঙ্গিকভাবে কুত্তা শব্দ এনেছেন আবার গঠনমূলক (কোটের মধ্যে) সমালোচনার ইঙ্গিত করেছেন।
আমি আপনার সাথে কোন ধরনের কথা বলতেই ইচ্ছুক নই। আমার এ মনোভাবটা আপনাকে জানানোর জন্যই এ প্রতিমন্তব্য।
এই তো ! ধন্যবাদ।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
এই তো!
কয়েকটি বিষয়ে আমার নোট আছে।
@ নীল ভুত, ইউনুস নোবেল পুরস্কার পান ২০০৬ সালে, ২০০৭ না।
@ রেজওয়ান ও আলমগীর, মাইক্রোক্রেডিট বা অন্য কোনো অর্থনৈতিক তত্ত্বের জন্য ইউনুস নোবেল পাননি, তিনি এবং গ্রামীণব্যাংক যৌথভাবে নোবেল পেয়েছেন শান্তিতে এবং ওই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের বদৌলতেই।
নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন সন্দেহজনক ব্যাপার তৈরি হয়েছে। দুচারজন ভালো লোক যে অন্তত শান্তিতে নোবেল পদক পায়নি একেবারেই তা নয়, তবে আজকাল ব্যাপারটি অনেক বেশি সন্দেহের উদ্রেক করে। যা-ই হোক, বিশ্বব্যাপী ইউনুসের তত্ত্ব বলে তেমন বিশেষ কিছু নেই অথবা থাকলেও তার বিশেষ কোনো সমাদর নেই, যতোটা আছে তার গ্রামীণব্যাংক মডেলের (অন্তত নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবাঙ্গালি/অবাংলাদেশি অর্থনীতির গবেষক বন্ধুরা আমাকে তেমনটিই বলছেন)।
ইউনুসের এই মডেল তথা গ্রামীণব্যাংক বা এনজিওগুলোর ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম, দরিদ্র পর্যায়ে কনজ্যুমার বজায় রাখার চেয়ে বেশি কিছু করেছে বলে মনে হয় না। যেকোনো উদ্যোগেরই সত্যিকারের উপকারভোগী কিছু লোক থাকে, এই কার্যক্রমের-ও আছে। তবে বাস্তবিকপক্ষে তথ্য হলো, এটা সামগ্রিকভাবে দারিদ্র কমাতে মোটেও সাহায্য করেনি, বরং বাড়িয়েছে। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তবাহী অনেক প্রকাশনা বাজারে আছে, দেখতে পারেন। এমনকি যেখানে গ্রামীণব্যাংক কাজ করেছে গত ১০-১৫ বছর যাবৎ, সেখানে দারিদ্রের পরিবর্তন বিশ্লেষণের খুঁটিনাটি কাজ-ও হয়েছে। ফল খুবই হতাশাব্যঞ্জক। (ঢাকায় নেই বলে তথ্যসূত্র দিতে পারলাম না, একটু খোঁজ করলেই বইগুলো পেয়ে যাবেন, আজিজ মার্কেটেই পাবেন)
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
মাইক্রোক্রেডিটের জন্য নোবেল পেয়েছেন এটা আমি বলিনি। (ইমপ্লায়েড মনে হতে পারে)। ইউনুস/গ্রামীণ (শান্তিতে) নোবেল পাবার বহু আগে থেকেই মাইক্রোক্রেডিট থিওরি আলোচিত হয়ে আসছে।
লেখার বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না। তবে লেখা অনেক ভালো লেগেছে। বেশি বেশি লিখুন। আরো বড় লেখা দিন...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমার এই এক দোষ 'অপরের ভুলই মহাদোষ নিজের হলে খোশ!'
আমার অন্য দোষ-- নিজে পারিনা, তাই বলে অন্যের সমালোচনা ছাড়িনা।
রেগে বলে রামপাল "এ জন্যেই আমাগো এই হাল।"----------- আসুন না সমালোচনা ছেড়ে, হিনমন্যতা ঝেড়ে নিজ-নিজ অবস্থানে থেকে দেশটাকে দাড় করি। কাঁদা ছুড়াছুড়িতে সময় তো গেল প্রায় ৪ দশক। আর কত? আমরা (নতুন প্রজন্ম) ও পথে যাব কেন?
এস হোসাইন
---------------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"
ক্ষুদ্র সূচিকা?
ভাই নীলভুত লেখাটা ভাল লেগেছে।
তবে দিন শেষে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কিন্তু একটি ব্যাঙ্ক তথা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়। হয়তো বিনা জামানতে তুলনামূলক ভাবে গরীব জনগষ্ঠিকে ঋণ দেয় বলে, এর কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশী।
আপনার কি মনে হয় জোর ( for the lack of better terms) না করলে দুর্নীতিতে এক নম্বর দেশের ঋণগ্রাহকরা, ঋণের অর্থ ফেরত দিত??
microcredit কিন্তু dr. yunus এর নিজের থিওরি নয়। উনি শুধু একটি লিখিত থিওরিকে বাস্তবায়ন করেছেন। আমি জানি যে এমন ও ঘটনা হয়েছে যে বাড়ীর চাল খুলে নিয়ে গিয়েছে লোন শোধ না করতে পারবার জন্য। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় মানুষকে একটু চাপে না রাখলে দেখা যাবে সবাই এই ঋণটি দান হিসাবে গন্য করবে। গ্রামীন বিশ্বাস করে যে charity দারিদ্র দূর করবার উপায় নয়, তার বদলে তা দারিদ্রকে আরো বারীয়ে দিতে সাহায্য করে। আপনি হয়ত জানবেন অনেক গ্রামের মানুষ চড়া সুদে বিভিন্ন মহাজনদের থেকে সুদ নিয়ে থাকত। আমি যতটুকু জানি গ্রামীন ব্যাঙ্ক rate অনুযায়ী সুদে লোন দিয়ে থাকে। এবং তাদেরকে লোন দেয় যাদের পক্ষে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নেওয়া সম্ভব নয়।
২০০৭ সালে বাংলাদেশের একজন কৃতি সন্তান শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পায়। সে আর কেউ না, ওই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ।"
আপনার এই লাইনটি পড়ে আমার খারাপ লেগেছে। আমি সাত বছর ধরে নর্থ আমেরিকাতে বসবাস করছি তাই বলছি, এইখানে বেশীর ভাগ মানুষ বাংলাদেশকে চিনে দারিদ্র আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য। উনি নোবেল পাবার পর একটু শান্তি লাগে এখন পুরো নর্থ আমেরিকার মানুষ না হলেও অন্তত আমাদের university economics department এর ছাত্র, ছাত্রী ,প্রফেসরা বাংলাদেশকে চিনে তার গ্রামীন ব্যঙ্কের নোবেল পুরস্কারের জন্য।
এখানে একটু বোঝার ভুল আছে মনে হয়। ক্ষুদ্রঋন কোনো তত্ত্ব নয়। তবে ড ইউনুসের উদ্ভাবন হচ্ছে গ্রুপ লেন্ডিং। অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে ঋন না দিয়ে একটা গ্রুপকে ঋন দেয়া হয়। গ্রুপের সবাই পরস্পরের উপর নজরদারি, পরস্পরকে তাদের বিনিয়োগ বা খরচের ব্যপারে পরামর্শ দিতে পারে। এতে করে স্বচ্ছতা+জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি হয়। গ্রুপের বাকিরাই যদি মনে করে তবে কাউকে গ্রুপের সংযোজন করে নিতে পারে বা গ্রুপ থেকে বাদ দিতে পারে। এর ফলে প্রচলিত অর্থে জামানত না হলেও একধরনের সামাজিক জামানত ব্যবস্থা হিসাবে ঋন খেলাপের সম্ভাবনা কমে যায়। এটা ইউনুসেরই উদ্ভাবিত। কিন্তু তিনি কেবল উদ্ভাবন করেই ক্ষান হন নি এটাকে প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন। সেটাই তার সবচেয়ে বড় অর্জন। কারন কোন রকম এনফোর্সমেন্ট ব্যবস্থা না থাকলে কোন ব্যঙ্ককিং ব্যবস্থাই কাজ করে না। কিন্তু স্বল্প আয়ের লোকেদের ঋন দেয়া অনেক ব্যায়বহুল এবং ঝুকিপূর্ণ সেটা কাটিয়ে ওঠার জন্য তাঁর উদ্ভাবন অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে। সেটা আমরা অনেকেই বুঝতে চাই না।
তার এই মডেলকে পৃথিবীর নানা দেশে কপি করা হয়েছে। যেমন আমেরিকার ৪৫ টি স্টেটে এই ধরনের প্রোগ্রাম নেয়া হয়েছে। গ্রামীন মডেল অনুসরন করে।
ভুত,তুমি সচলেও হানা দিলা দুস্ত?ইউনুস ভাইয়ের উপর তোমার ক্ষোভ?তুমি আরো কিছু ওই রকম এনজিও এর কথা শুনলে বুঝতে পারতে দুনিয়ার মজা।
লেখা তর মতই হইসে।লিখতে থাক।পড়ে পড়ে মনের খিদা মিটাই।
কেউ_না
ধন্যবাদ সবাইকে মন্তব্যের জন্য। আমার লেখার কিছু কথা পরিষ্কার করে বলা দরকার।
১।আলমগীর ভাই,
আমি কোন অংশটুকুকে 'সামাজিক কল্পকাহিনী' বলতে চেয়েছি আমি ব্যাখ্যা করেছি। আশাকরি আরো একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ে মন্তব্য করবেন।
২।আলমগীর ভাই,
আমার লেখার 'সস্তা' আবেগটুকু হলো, "অর্থনীতিতে ড. ইউনুস নোবেল পেলে আমার কিছু বলার ছিলো না, কিন্তু শান্তিতে ? কিভাবে ?
আমার ঞ্জান সীমিত, তাই দয়া করে গ্রামীন ব্যাংক, ড. ইউনুস এবং শান্তি এই তিনটা শব্দ ব্যাখ্যা করবেন।"
৩। আমার কল্পকাহিনীতে আমি দানের কথা বলিনি। প্রমাণ :
এখানে 'ইনকামের ব্যবস্থা' বলতে আমি community based development বুঝিয়েছি।
আর এই জন্যই এই অংশটির নাম কল্পকাহিনী।
নীরা আপনার জবাব পেয়েছেন বলে ধরে নিচ্ছি।
৪। আর সবশেষে, আমার লেখাটির উদ্দেশ্য ছিলো সমালচনা নয়, আমার ব্যক্তিগত অনুভূতিকে ব্যক্ত করা। কারণ দিন শেষে ব্লগ তো অনুভূতি শেয়ার করারই জায়গা, তাই নয় কি ?
আমার কথা একটাই। ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংক এর যতোটা প্রশংসা হওয়া উচিত তার থেকে অনেক বেশি সমালোচনা হওয়া উচিত। অথচ কি আশ্চর্য, ইউনুস নিয়ে কিছু বললে সবাই এসে দেশের স্বার্থ, মহান ব্যক্তি বলে এড়িয়ে যান। সবার ক্রিটিক্যাল বিশ্লেষণ হওয়া উচিত। এ ধরণের লেখাই ক্রিটিক্যাল বিশ্লেষণের দুয়ার খুলে দেয়। খুব ভাল লাগল।
গ্রামীণ ব্যাংকের কেবল সাফল্যটাই মানুষকে জানানো হয়, বা কেবল সাফল্য নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হয়। কিন্তু ক্ষুদ্র পর্যায়ে এর মহা মহা কুফলগুলো সবার অজ্ঞাতে রয়ে যায়। এ নিয়ে একটা লেখার লিংক দিচ্ছি, কেউ চাইলে পড়ে দেখতে পারেন:
আমার ইতিহাস ভাবনা - মাহমুদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আমার মতে প্রশংসা সমালোচনা দু'টিই আরো বেশি হওয়া দরকার। আমার মতে কোনটাই আসলে ঠিক মত করা হয় না।
যেমন যেই পোস্টটার লিঙ্ক আপনি দিলেন সেটাও একটা আবেগাশ্রয়ি লেখা। যুক্তিগুলোর সংযোগ বেশ দুর্বল। যদিও অনেকেই চমৎকার বলে মন্তব্য করেছেন বক্তব্যের নাটকিয়তাই এর কারন। জোবরা গ্রামের ব্যপারটা একটা রাজনৈতিক ব্যপার। সুফিয়ার গল্পের সত্যিকারের ভার্সনটা বোধহয় অনেকেই জানেননা। তিনি অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থায় মৃত্যু বরন করেছেন। কিন্তু সেটার জন্য ক্ষুদ্র ঋন বা গ্রামীন দায়ি নয়। তার স্বামী অত্যন্ত দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হন। সেখান থেকে তার পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। এটার দায় গ্রামীনের উপর চাপান হয় রাজনৈতিক কারনে।
আলমগীর ভাই কি আমার প্রশ্নটার জবাব দিবেন না ?
অন্যকেউ দিলেও হবে
একজন নীল ভুত।
আমি যেটা বুঝেছি দারিদ্রের সাথে শান্তির সরাসরি সম্পর্ক আছে। একজন আয় উপার্জনহীন ব্যক্তি খুব সহজে তার হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেই সন্ত্রাসি হয়ে উঠতে পারে, অথবা অল্প কিছু টাকার জন্য মানুষ খুন করে বসতে পারে। সন্ত্রাসে জড়িত হবার পেছনে দারিদ্র একমাত্র কার্যকারন না হলেও একটা বড় কারন। কিন্তু খেটে খাবার সুযোগ তৈরি হলে, পেটে ভাত থাকলে মানুষ খুব কম ক্ষেত্রেই সন্ত্রাসি কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। যেহেতু গ্রামীন মডেলের ক্ষুদ্রঋন দারিদ্র দূর করার ক্ষেত্রে অনেক দেশে কার্যকর হয়েছে, সেই কারনে এই ব্যপারটিকে শান্তি পুরষ্কারের জন্য বিবেচনা করাটা আমার কাছে একেবারে অবাস্তব মনে হয় নি।
আর অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কারের ক্ষেত্রে সাধারনত বড়মাপের তাত্ত্বিক অবদান থাকা দরকার হয়। গ্রামীন মডেলের তাত্ত্বিক দিক ততটা ইন্টারেস্টিং নয় কিন্তু ব্যবহারিক দিক অত্যন্ত সরল কিন্তু কার্যকর। যারা অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন তাদের অবদান গুলো বিচার করে দেখতে পারেন। কিন্তু তাত্ত্বিক উৎকর্ষ না থাকলেও গ্রামীন মডেলটি একটি অনবদ্য উদাহরন। আমি আমার অর্থনীতি আর দারিদ্র নিয়ে স্বল্প জ্ঞানের আলোকে সেটাই মনে করি। আমার মনে হয় গ্রামীন মডেলটিকে আরো উন্নত করার সুযোগ হয়ত আছে। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে গ্রামীন একটি ক্রমবিবর্তিত প্রতিষ্ঠান। এই বিবর্তন প্রক্রিয়াটি বেশ কৌতুহল জাগান একটা বিষয়।
একটা বিষয় যোগ করে যাইঃ বাজার অর্থনীতির ধারনার উপর প্রতিষ্ঠিত বলে এই ধারনা বাম রাজনীতিকদের অপছন্দ; আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি স্বল্প সময় নাক গলানর দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন বলে আওয়ামি বা বিএনপির রাজনীতিও তাকে পছন্দ করে না এবং সমালোচনা করে সুযোগ পেলেই। কিন্তু অন্যদিকে সরকার এই গ্রামীন মডেল অনুসরন করেই পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন তৈরি করেছে। কাজেই যদি আসলে দারিদ্র বিমোচন ব্যপারটিতে আগ্রহ থাকে তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা মতাদর্শ তাড়িত ধ্যান ধারনাগুলোকে এড়িয়ে এর ক্ষুদ্রঋনের ধারনাকে বোঝার চেষ্টা করাই হয়ত বেশি দরকার। গঠনমূলক সমালোচনা করা হলে এই ব্যবস্থার আরো উন্নতি করা হয়ত সম্ভব।
ভাই আপনার প্রশ্নের উত্তর nobel prize nominators রা ভাল বলতে পারবে।
পোস্টটা সচল করলাম।
আমার মতে সমস্যা মাইক্রোক্রেডিট বা, ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতির না; সমস্যা হলো এর সাথে যুক্ত নৈতিকতার-মানবিকতার। মাইক্রো-ক্রেডিটকে আসলে পূর্ণাঙ্গভাবে ফাইনেনসীয়ালী-হেল্পিং-ক্রেডিটে রূপান্তর করতে পারলে সমস্যাটা মিটানো সম্ভব। তবে, এর জন্য মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লোনগ্রহীতার ব্যাপারে লজিস্টিক সার্পোট, মানবিক ও নৈতিক দিকগুলো বিবেচনায় প্রায়োরিটি দিতে হবে এবং কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। লোনগ্রহীতাকে কাসটোমার না ভেবে সদস্য মেনে কাজ করা উচিৎ।
নতুন মন্তব্য করুন