উপসংহারের আগে :
আমি বিছানার পাশে বাবার মাথার কাছে বসে আছি। আমার ভাই বোনেরাও আছে সাথে। আমি অঝোরে কাঁদছি। বাবার চোখ দিয়েও টপটপ করে পানি পড়ছে। বাবা কয়েকদিন ধরেই প্রচন্ড অসুস্থ। বাবা বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। বুঝতে পারছি বাবা আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
তারও আগে যা ঘটেছিলো :
আমরা ছোট্ট একটা দোতলা বাসায় থাকি। আমরা মানে আমি আমার ৮ ভাই বোন এবং বাবা। আমিই সবার চেয়ে বড়। ছোটবেলার স্মৃতি যেখান থেকে মনে করতে পারি শুধু বাবার কথাই মনে আছে। আমার বা আমাদের মা নেই। দুঃছাই, বাবার কথা লিখতে গিয়ে নিজের কথা লিখছি।নাহ্, এখন শুধু বাবার কথাই লিখবো।
আমার বাবা যখন বিশ্ববিদ্যালেয়ে পড়তেন কেনো জানি তার একবার শখ জাগলো প্রামাণ্যচিত্র বানাবেন। বিভিন্ন বিষয় ঘেটে এদিক সেদিক ঘুরে তিনি ঠিক করলেন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটা কাজ করবেন। আমার বাবা একটু পাগলাটে ছিলেন কোন কিছু একবার মাথায় ঢুকলে সেটি করেই তবে শান্তি পেতেন। তিনি বিভিন্ন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে এমন সব প্রতিষ্ঠানে ঘুরতে লাগলেন। একবার সেইসব প্রতিষ্ঠানটির একটির সাথে বাবা ধামরাই নামে এক এলাকায় গিয়েছিলেন সেখানে প্রতিবন্ধী শিশুদের বাবা মায়ের সাথে কথা বলে তাদেরকে বিভিন্ন জিনিস শেখাবেন বলে। বাবা অবশ্য ততোদিনে প্রামাণ্যচিত্র বানানোর পরিকল্পনা বাদ দিয়ে, তার অবসর সময় ওই প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ করেছেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। বাবারা ওই এলাকায় গিয়ে একটা চার বছরের প্রতিবন্ধী বাচ্চার খোঁজ পান। বাচ্চাটির মা জন্মের পরপরই মারা যায়, আর বাচ্চার বাবাটি কয়েকদিন আগে বাচ্চাটিকে রেখে নিখোঁজ হয়ে যায়। বাচ্চটি তখন সেই এলাকার চেয়ারম্যনের বাসায় ছিলো।
বাচ্চাটিকে ওই প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে আসতে পারছিলো না কারণ ওই প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের রাখার আবাসিক জায়গা ছিলো না। আর চেয়ারম্যান লোকটিও বাচ্চাটিকে রাখতে চাচ্ছিলো না। তখন আমার বাবা একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বাচ্চাটিকে সাথে করে নিয়ে আসেন। আর সেই বাচ্চটিই হচ্ছি আমি।
উপসংহার :
আজকে আমার সেই বাবা আমকে রেখে, আমাদেরকে রেখে চলে যাচ্ছেন। আমার মতো বাবার আরো আটটি সন্তান আছে। আমার ভাই বোনেরাও সবাই আমার মতো প্রতিবন্ধী। বাবা আমাদের জন্য নিজের সব সুখ ভালোবাসার দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। বাবা তার সারাটি জীবন উৎসর্গ করেছেন আমাদের জন্য। আমরা যেনো নূন্যতম অধিকারটুকু আদায় করতে পারি সে চেষ্টাই করেছেন সারাজীবন। অথচ বাবার এই শেষ দিনে চোখের পানি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারছি না।
বাবা কি দরকার ছিলো আমাদেরকে এতো ভালোবাসার ?
--- একজন নীল ভুত।
(লেখকের কথা : আমি সমাজের সেইসব অক্ষম মানুষদের মধ্যে একজন যারা অনেক কিছু ভাবি কিন্তু কিছুই করতে পারি না। আমার অপরাধবোধ থেকে এই লেখাটি লিখেছি, কেননা এই গল্পে ধামরাই অংশটুকু সত্য।আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছি কিন্তু এখনো পারিনি এই গল্পের বাবাটির মতো সাহসী সিদ্ধান্তটি নিতে।)
মন্তব্য
একজন নীল ভূত, গল্পের বাবার মতো সত্যিই কি ওরকম কেউ আছেন যিনি এক বা একাধিক 'অনাত্মীয়' প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের পালন করেছেন???
না আপু, এই গল্পের বাবাটি একটি কাল্পনিক চরিত্র। তবে আমি আশা রাখি আমার দু'টি সন্তান হবে একজন আমার ঔরসজাত, আরেকজন প্রতিবন্ধী শিশুকে দত্তক নেবো। দোয়া করবেন যেনো বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় হারিয়ে না যাই।
পড়লাম। সুন্দর স্বপ্ন।
ধন্যবাদ।
স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, স্বপ্ন মানুষকে বড় হতে পথ দেখায়। আপনার শুভ স্বপ্ন সফল হোক। ধন্যবাদ।
দলছুট।
এই রকম একজন বাবা হতে পারলে জীবনে কি কিছু আর প্রয়োজন?
যদি পারতাম এই রকম হতে......................... আফসোস।।।।।।।
এই রকম না হতে পারেন, কিন্তু একটা বাচ্চার দায়িত্বতো নিতে পারবেন। সেটাই বা কম কি?
ছুয়ে গেল লেখাটা
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
বস আপনি আমার লেখায় মন্তব্য করছেন, আমি অনেক খুশি হইসি। আমি আপ্নেরে (আপ্নের লেখাকে পড়েন) অনেক ভালো পাই। (sarcasm করতেসি না ,সত্যি সত্যি)
প্রতিবন্ধীদের জন্য আপনার প্রচেষ্টা দেখে অনেক ভালো লাগলো।
চালিয়ে যান ভাই...
__________________________________
যাক না জীবন...যাচ্ছে যখন...নির্ভাবনার(!) নাটাই হাতে...
__________________________________
যাক না জীবন...যাচ্ছে যখন...নির্ভাবনার(!) নাটাই হাতে...
ভাইয়া আমি নীল ভুত। আমারে চিনেন নাই ?
অতি সুন্দর স্বপ্ন! সবকিছুই এরকম সুন্দর হোক, সেটা কাম্য।
আপনি এই অধমের পোস্টে মন্তব্য করায় ভালো লাগতেছে।
নীল ভুত।
বিষয়টি দারুণ লাগলো। লেখাও সাবলীল। লিখতে থাক আরো।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
ধন্যবাদ রাহিন ভাই...
নতুন মন্তব্য করুন