[আমি একটি মুভি ক্ল্যাসিক সিরিজ লেখার চিন্তা করছি। যেখানে আমার পছন্দের কিছু মুভি নিয়ে আমার ধারণা গুলো লিখবো। আপনাদের মতামতের উপর নির্ভর করবে সিরিজটি চলবে কিনা।]
নাম : এ স্ট্রীট কার নেমড ডিযায়ার (A Street Car Named Desire)
পরিচালক : এলিয়া কাযান (Elia kazan)
কাহিনী/চিত্রনাট্য : টেনেসি উইলিয়ামস (Tennessee Williams )/ অস্কার সাউল (Oscar Saul)
অভিনয় : মারলন ব্রান্ডো(Marlon Brando), ভিভিয়েন(Vivien leigh), কিম হান্টার(Kim Hunter), কার্ল মেল্ডেন (Karl Malden) এবং অন্যান্য।
পুরস্কার : ৪টি অস্কার, ১১টি অন্যান্য এবং ১৪টি মনোনয়ন।
ভাগ্য বিড়ম্বিত হয়ে ব্লেঞ্চ ডুব'য় যে কিনা একজন স্কুলশিক্ষিকা (Vivien Leigh) তার অন্তসত্ত্বা ছোট বোন স্টেলা (Kim Hunter) এবং স্বামী স্ট্যানলি কলওয়াস্কির (Marlon Brando) সাথে থাকতে আসে নিও অরলেন্সের ফ্রেঞ্চ কলোনীতে। ব্লেঞ্চ তার বোনকে জানায় যে, ঋণের কারণে তাদের সকল সম্পত্তি হারিয়েছে, এ কারণে সে কয়েকদিনের জন্য এখানে থাকতে এসেছে। স্টেলার স্বামী স্ট্যানলির সাথে পরিচিত হওয়ার পর, ব্লেঞ্চ তার বোনকে আক্ষেপ করে বলে কিভাবে সে (স্টেলা) এমন একজন অসভ্য, পাশবিক চরিত্রের মানুষকে নিজের স্বামী হিসেবে বেছে নিল। এদিকে স্ট্যানলি প্রথম দেখা থেকেই আপাত দৃষ্টিতে 'সভ্য'(refined শব্দটির বাংলা হিসেবে ব্যবহৃত) ব্লেঞ্চকে সন্দেহ করতে থাকে এবং সে সম্পত্তি বিক্রির কাগজপত্র দেখতে চায়। স্ট্যানলি'র বাড়িতে তার বন্ধুরা তাস খেলতে আসে তাদের মধ্য মিচ (Karl Malden) একজন। সে ধীরে ধীরে ব্লেঞ্চ'র প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে এবং তাকে বিয়ে করতে চায়। এদিকে স্ট্যানলি খবর নিয়ে জানতে পারে যে, ব্লেঞ্চ ১৭ বছর বয়সী একজন ছাত্রের সাথে দৈহিক সম্পর্কের জন্য স্কুল থেকে বহিস্কৃত। মিচ এ কথা জানার পর ব্লেঞ্চকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। স্টেলাকে হাসপাতালে ভর্তি করে এসে স্ট্যনলি ব্লেঞ্চকে বাসায় একা পায়, এবং স্টেলা'র জন্য এতোদিন যে ক্ষোভ অবরুদ্ধ ছিলো তা বের হয়ে আসে।
সংক্ষেপে, এটা হচ্ছে এ স্ট্রীট কার নেমড ডিযায়ার -এর কাহিনী। অভিনয় প্রতিভা, চমৎকার কাহিনী আর একজন অনবদ্য পরিচালক একসাথে হলে যে কি ধরণের শিল্প তৈরী হতে পারে তা এই মুভিটি না দেখলে বোঝা যাবে না। টেনেসই উইলিয়ামস তার লেখনিতে মানুষের সম্পর্ক এবং তার তিক্ততা নগ্ন কিন্তু শৈল্পিক ভাবে বর্ণনা করেছেন। আর এলিয়া কাযান সেই শৈল্পিক বর্ণনাকে পর্দায় দেখিয়েছেন আশ্চর্য সুন্দরভাবে।
অভিনয়ের কথা বলতে হলে প্রথমেই বলতে হবে মারলন ব্রান্ডো'র কথা। তিনি 'স্ট্যানলি' -কে এতো দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন যে পরবর্তী একটা পুরো প্রজন্ম, পাচিনো থেকে শুরু করে নিকলসন, তাঁর থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এ স্ট্রীট কার নেমড ডিযায়ার গতানুগতিক (তৎকালীন) ধারার ছবি ছিলো না। এখানে সম্পর্কের তিক্ততা ছিলো, পশুত্ব ছিলো, যৌনতা ছিলো আর একধরণের 'passion' (এই মুহূর্তে এর সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ মনে পড়ছে না) ছিলো - এই সবগুলো অনুভূতিকে মিশিয়ে তৈরী করা 'স্ট্যনলি'-কে অন্য কেউ হয়তো এমন বাস্তবিক ভাবে যুটিয়ে তুলতে পারতো না। মারলন ব্রান্ডোর পরেই আসে ভিভিয়েন লেয়'র কথা। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত কিন্তু আত্মবিশ্বাসী, তিক্ত অতীত লুকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা এবং একই সাথে আবেগপ্রবণ আশ্রয় খোঁজার জন্য যে দ্বিত্ত সত্তার প্রয়োজন হয় সবকিছুই ফুটিয়ে তুলেছেন ভিভিয়েন লেয় তার দক্ষ অভিনয় প্রতিভা দিয়ে। আর এই অভিনয়ের জন্যই পেয়ে যান তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অস্কারটি। স্বামী এবং বোনের সম্পর্কের টানাপোড়েন -এর মাঝে পড়ে একজন মানুষকে যে দিশেহারা অবস্থায় পড়তে হয় সেই অবস্থাটাই রূপায়ন করেছেন কিম হান্টার এবং নিজের ক্যারিয়ার সেরা অভিনয় করে জিতে নেন নিজের প্রথম অস্কার পুরস্কারটি।
পুরো সিনামাটা জুড়ে কখনই কোন সুখানুভূতি নেই। পছন্দ করার মতো কোন চরিত্র ও নেই। কিন্তু পুরো সিনামাটার সমস্তটা সময় জুড়েই মনে হবে অনুভূতি গুলো খুব পরিচিত। আর এজন্যই হয়তো এ চলচ্চিত্রটিকে, চলচ্চিত্রের ইতিহাসের একটি মাইল ফলক বলা হয়।
--- একজন নীল ভূত।
মন্তব্য
রিভিউ ভালু হইসে ..আরু পড়তে মঞ্চায় ঃ)
রিভিউ ভালু হইসে..আরু পড়তে মঞ্চায় ঃ)
desire- ডিজায়ার , হলে মনে হয় বানানটা ঠিক হতো। তবে পাঠুদা থাকলে নিশ্চিত করে বলতে পারতো...
ছবিটা দেখিনি। ব্রান্ডোকে নিয়ে বলার কিছু নেই, সত্যিকারের গডফাদার। ভিভিয়ান লেই'কে সাইকোতে ভালো লেগেছিলো।
ছবির নাম , পরিচালক, কাহিনী, অভিনেতা- এদের নাম এভাবে না দিয়ে শেষে লেখার মাঝে দিলেই মনে হয় ভালো হৈতো। এইভাবে পড়লে কেমন য্যান সিনে ম্যাগাজিন পর্তাসি মালুম হয় ( এটা আমার মত। অন্য কারো হয়তো আবার এটাই পছন্দ হবে। )
অতএব, খেয়ালখুশি মত লিক্তে থাকেন।
_________________________________________
সেরিওজা
সবই কইলেন, কিন্তু ক্যামন লিখছি হেইটাই কন নাই ... :'(...
এরমানে ভালো লেখতাম পারি নাই...। :'(
----নীল ভূত।
হিচকক'র সাইকোতে মনে হয় ভিভিয়ান লেয় ছিলো না। যতোখানি মনে পড়ে তার নাম ছিলো জ্যানেট লেয় (Janet Leigh)... তারপর ও শিওর হয়ে বলবোনে।
আপনেই ঠিক
সাইকো'তে জ্যানেট লেই ছিলো- ডিভিডিটা আরেকবার দেখলাম। ভিভিয়ান্রে খুব সম্ভবতঃ 'গন উইথ দ্যা উইন্ড'এ দেক্সিলাম। মনে পর্তেসেনা শিউরলি...
আর লেখা ভালা হৈসে- ঐ লয়া টেনশনের কিসু নাই। লেক্তে থাকেন।
_________________________________________
সেরিওজা
গন উইদ দ্যা উইন্ড -এ ভিভিয়েন লেয় ছিলো। অস্কার ও পাইছে।
----নীল ভূত।
হিচকক'র সাইকোতে ভিভিয়েন লেয় ছিলো না। জ্যনেট লেয় (Janet Leigh) ছিলেন।
----নীল ভূত।
*
আহা, প্রিয় ছবির কথা মনে করিয়ে দিলেন! ছিমছাম রিভিউ।
*
শিরোনাম বেশি লম্বা লাগলো। শুধু বাংলা বা ইংরেজি নাম দিলেই চলতো (ব্যক্তিগত মতামত)।
*
"পরিশীলিত" শব্দটা খুঁজছিলেন?
*
ডিজায়ার-এর পক্ষে আমিও।
*
ভিভিয়ান লেই-এর খুব বিখ্যাত একটা সংলাপ ছিলো এই চলচ্চিত্রে।
"I have always depended on the kindness of strangers"
ধন্যবাদ।
আমি বুঝতে পারছিলাম না কোনটা দেবো। তাই দু'টোই দিয়ে দিছি
না। পুরো সিনেমাটিতে মারলন ব্রান্ডোর মধ্যে একটা উগ্র ধরণের আবেগ ছিলো, নিয়ম ভাংগার একটা প্রচেষ্টা ছিলো আমি সেই অংশটুকু কে passion বলতে চেয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে 'উগ্র আবেগ' লেখা যেতো।
আমিতো পরিবর্তন করতে পারবো না (আমাকে কেন যে এখনো সচল বানায় না (রাগের ইমো)), আপনারা কেউ পারলে করে দিন।
----নীল ভূত।
এখানে পরিশীলিত বলতে চেয়েছিলেন কিনা বলছিলাম।
দুঃখিত বড়ো ভাই, 'মন্তব্য করুন' - এ ক্লিক করার পরপরই মনে হলো আপনি ওইটাকে বলছেন। আমি ক্যন্সেল ও চাপছিলাম। কিন্তু ততোক্ষনে হয়ে গেসে। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ইশ্তিয়াক ভাই।
---নীল ভূত।
দুঃখিত ইশতিয়াক ভাইয়া,
আমি মন্তব্যটা করেই বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু ততোক্ষনে পোস্ট হয়ে গেছে। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
---নীল ভূত।
এই কাহিনী আমাদের স্বাধীনতার আগেই "গাড়ির নাম বাসনা" নামে অনুবাদ করে শহীদ মুনীর চৌধুরী মঞ্চস্থ করেছিলেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মূলত, এটা টেনেসি উইলিয়ামস'র নাটক ছিলো, এবং সেটা বহুবার মঞ্চস্থ ও হয়েছে।
আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন আমি সেটা বুঝি নাই
চলুক চলুক
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ধুমায়া সিনেমা নিয়া লেখতে থাকেন... ডেইলি একটা কইরা... পাঠক হিসাবে খাড়াইলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ডেইলি একটা কইরা লিখলে তো আমি শহীদ হইয়া যামু। ভাই আংগুল দিয়া এমনি লেখা বাইর হয় না। কত কোতায় কোতায় লেখা বাইর করতে হয়। যদি বুঝতেন।
ওহে বিজন বন, ভালো হচ্ছে লেখা। রিভিউটা আরো বিশদ হলে আরো ভালো লাগতো। চলুক।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
রাহিন ভাই, আপনি কই হারায় গেছিলেন ?
ধন্যবাদ,
--- নীল ভূত।
ভাল লাগল...
(জয়িতা)
বাহ। বেশ লাগল। রিভিউ লেখা নিয়মিত চলুক।
বিজন, তোর কাছে কি আইএমডিবি'র সবগুলা মুভি আছে?? রিভিউ ভাল হইছে।
স্পার্টাকাস
নতুন মন্তব্য করুন