বন্ধু

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৪/১২/২০০৯ - ৭:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাতের মুঠোয় আঁকড়ে ধরে আছি
একরাশ রঙিন কাগজ। ফেস্টুন।
কাগজ? শুধু কাগজ নয় ওগুলো;
অন্তত আমার কাছে তো নয়ই।
তাহলে কি ওগুলো? আমি বলি,
‘ওগুলো স্মৃতি’। হাসলে? হাসির কথা নয় মোটেও!
মনে আছে? সেই যে সেদিন?
মনমরা হয়ে বসে ছিলাম আমি।
কিচ্ছু ভাল্লাগছিল না। এই যে, এখানে,
এই কাগজটিতেই তুমি এঁকেছিলে! দেখ, দেখ!
মনে পড়ে না বুঝি? অমন কৌতুকময় কার্টুন
শুধু তুমিই আঁকতে আমাদের ক্লাসে।
এই ময়লা আধ-ছেঁড়া কাগজটুকু শুধুই কাগজ নয়;
এক টুকরো স্মৃতি এটি। এক মুঠো ভালবাসা।
একটা ছোটগল্প; আমার গল্প, আমাদের গল্প।

মনে পড়ে সেদিনের কথা?
যেদিন তুমি আর আমি কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে,
হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলাম রাস্তায়?
প্রশাসনের পোষা কুকুরের বুটের লাথি খেয়েছিলাম?
এই তো! এ তোমারই সে রুমালখানা।
দ্রুত পকেট থেকে বের করে চেপে ধরেছিলে
বাঁ চোখের ঠিক উপরে।
তোমার হাত সেদিন ভিজে লাল হয়েছিল রক্তে।
আমার রক্তে। তোমার এ রুমাল কি শুধুই একটি রুমাল?
শুধুই কি সুতোর বুনন? এক সাগর ভালবাসা
তুমি আমায় সেদিন উজাড় করে দিয়েছিলে
আমার দেহের রক্তশূন্যতা পূরণ করতে চেয়েছিলে
আঁজলা আঁজলা ভালবাসা দিয়ে।
আজো এই রুমাল বুক চেপে ধরলে
আমি সমুদ্রের গর্জন শুনি;
সেলিম, তমাল, পাপিয়ার আর্তনাদ, কাতর চিৎকার শুনি।
এই রুমাল আমায় স্বপ্ন দেখায়,
আমাদের আসন্ন আগামীকে দেখায়।
এক টুকরো লাল-সবুজ স্বপ্ন এটি।
তোমার, আমার, আমাদের স্বপ্ন।

জীবন মানেই পথ চলা,
আমরাও পথ চলেছিলাম
কখনো ফিরে চাইনি পেছনে
তাই কখনো বুঝিইনি যে
কত পেছনে ফেলে এসেছি সেদিনটিকে
যেদিন তোমাতে আমাতে দেখা হয়েছিল।
একটা হ্যান্ডশেক। হাতে হাত ধরে একটা মৃদু ঝাঁকুনি।
তোমার লৌহকঠিন হাতের কঠোর কোমলতা।
আজো আমি ভুলিনি। ভোলাতে দেয়নি আমাকে
এই কয়েক টুকরো রঙিন কাগজ।

চলে যাচ্ছি আগামীর পথে
তুমি, আমি, আমরা সবাই
কখনো কি ভেবেছিলে,
একদিন আমাদের পথ হবে ভিন্ন?
প্রত্যেকে চলব এক একটি পৃথক পথে?
ওই পথগুলো পরে আর কখনো এক হবে কিনা,
তোমাতে আমাতে দেখা হবে কিনা,
নিয়ন আলোয় ফুটপাথের আড্ডা হবে কিনা,
শীতল রাতে উষ্ণ চায়ের কাপে
আরেকবার ঝড় হবে কিনা,
কখনো কি ভেবেছ? হয়তো ভেবেছ।
তাইতো যখন তোমায় আমি বলেছিলাম
সেদিন সায়েন্স ক্যান্টিনে, তাসের পাতা হাতে,
“এমনিভাবে তাস খেলে যাব সারাজীবন,
তোমাদের ছেড়ে যাবনা কোনদিন।
বাঁচতে পারবনা এ জীবন ছেড়ে”।
মুচকি হেসেছিলে তুমি। একবারও বলনি-
“তাই যেন হয়। সেই ভাল”।

হে বন্ধু, বিদায়। চলে যাচ্ছি বটে,
তবে তুমি যেন যেয়োনা কোথাও!
তুমি থেকো এখানে, ঠিক এই জায়গাটিতে।
যেন আমি পেছন ফিরে তাকালে
আবারো তোমার লৌহকঠিন উদ্ধত হাত দেখি
ওই হাত নেমে যাওয়ার জন্য ওঠেনি।
কান পাতলে যেন তোমার কন্ঠছেঁড়া শ্লোগান শুনি
ওই গান, থেমে যাওয়ার জন্য বাজেনি।
তুমি থেকো কিন্তু! যেয়োনাকো!

অনীক_ইকবাল


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমার মনে হলো শুধু নিচের এই অংশটুকু দিলেই কবিতাটি বেশী ভালো লাগতো।

চলে যাচ্ছি আগামীর পথে
তুমি, আমি, আমরা সবাই
কখনো কি ভেবেছিলে,
একদিন আমাদের পথ হবে ভিন্ন?
প্রত্যেকে চলব এক একটি পৃথক পথে?
ওই পথগুলো পরে আর কখনো এক হবে কিনা,
তোমাতে আমাতে দেখা হবে কিনা,
নিয়ন আলোয় ফুটপাথের আড্ডা হবে কিনা,
শীতল রাতে উষ্ণ চায়ের কাপে
আরেকবার ঝড় হবে কিনা,
কখনো কি ভেবেছ? হয়তো ভেবেছ।
তাইতো যখন তোমায় আমি বলেছিলাম
সেদিন সায়েন্স ক্যান্টিনে, তাসের পাতা হাতে,
“এমনিভাবে তাস খেলে যাব সারাজীবন,
তোমাদের ছেড়ে যাবনা কোনদিন।
বাঁচতে পারবনা এ জীবন ছেড়ে”।
মুচকি হেসেছিলে তুমি। একবারও বলনি-
“তাই যেন হয়। সেই ভাল”।

অনীক_ইকবাল [অতিথি] এর ছবি

বেশ বলেছেন তো! পুরো কবিতা জুড়ে যা বলতে চেয়েছি, তা আসলে ঐ কয়েক লাইনেই বলা হয়ে গেছে। আগে খেয়াল করিনি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

ভালো, আরও লিখুন চলুক

----------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

অনীক_ইকবাল [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভালো। আরও লিখুন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।