সোহোরার্দী পার্কের ল্যাম্প পোস্টের আলোতে রুপালী ছেলেটাকে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে আসতে দেখলো...
রুপালী তার সাথের সবাইকে বলে রেখেছে এই ছেলেটা এলে সে ছাড়া আর কেউ যাবেনা তার কাছে..
লুলা সামসুর বউ আসিয়া রুপালীকে মুখ ভেংচে বলে-এ্যা ঢং কত! ঐ ছ্যাড়া বিয়া করবো তরে?এত পিরিত কিসের?ল্যাহা পড়া করা পুলাপান মাতা গরম হইলে এইহানে আসে। তর মুক দেখছে ঐ ছ্যাড়া কহনো?জীবনেও দেখতনা,তুমি খালি তারে নিয়া খোয়াব দেহো,এমনে কি পেট চলবো তোমার?
আসিয়ার কথা শুনে তার শাশুড়ি ফোঁকলা দাঁতে হাসে...আসিয়ার শাশুড়ি নিজেও তার পঙ্গু ছেলে সামসুর মত ভিক্ষা করে..ছেলের বউ শরীর বেঁচে টাকা আনে সেটা নিয়ে তার কোন ভাবনা নেই তার ছেলেও দোষ দেখেনা ...বউ এর টাকায় কিছু ভাল খাওয়া পাওয়া যায় বলে তাদেরই পাশে ফুটপাতে ময়লা পলিথিনের আচ্ছাদনে স্বঘোষিত ঘরে থাকা আরেক ফকির আলমের দিকে করুনার চোখে তাকায় সামসু..আলমের বউ তাকে ছেড়ে চলে গেছে ... চলে যাওয়ারই কথা..আলমের হাত-পা নাই বউ তাকে নিয়ে ভিক্ষা করতে যেতো, দেখাশোনা সব তার বউ করত, কিন্তু কিছু দিন ধরে এক রিকসাওলার নজর পরেছে তার বউয়ের ওপর..বউ কিছু না করলেও আলমের সন্দেহ যায়না। বউকে সারাক্ষন নোংরা গালি দেয়..বউ বিরক্ত হয়ে স্বামীকে ফেলে ঐ রিকশাওলার সাথেই ভেগে গেছে...
ছেলেটা যে দিক দিয়ে আসছে তার কাছাকাছি অন্ধকারে গিয়ে রুপালী দাড়িয়ে থাকে ...
অপুর মনটা আজ ভাল না..সুমাইয়া আজও তার সাথে ঝগড়া করেছে..অপু মনেমনে সুমাইয়ার চৌদ্দ গুষ্টিকে গালি দিয়ে বলে-শালার হারামীগুলার মন জুগাইতে কত ঢং করতে হয় ..তোদের থেকে রাস্তার মাগী অনেক ভাল...
অপু ঢাকা ভার্সিটিতে এম.বিএ. শেষ বর্ষে পড়ছে..মন খারাপ হলে মাঝে মাঝেই এখানে আসে..তাকে এই পথ দেখিয়েছে তারই হলের রুমমেট বড় ভাই রুবেল..তার কথা হল সাধ মেটালেই সিদ্ধি..অপু কে সব সময় বলতো- দুনিয়ার সব রাস্তায় যত ঘুড়বা ততই জানবা...এই আমারে দেখ আমি এত কিছু জানি(!) কেমনে? কারণ আমি দুনিয়ার সব রাস্তাতেই গেছি..
প্রথম যেদিন অপুকে নিয়ে রুবেল এদিকে এল সেদিন অপু আমতা আমাতা করে বলে- রুবেল ভাই কাজটা কি ঠিক হবে? রুবেল অপুকে অভয় দিয়ে বলল আরে আবার পোলা এইসব কি কয়..শোনো ঐ অন্ধকারে যা হবে তা হবে, আলোতে আসলে সবাই ধোয়া তুলসী পাতা ...ফাঁকে তোমার কিছু অভীজ্ঞতা হবে, মানুষ চিনবা...
সেই থেকে শুরু..
অপু অন্ধকারে এসে বুঝলো তার কাছাকাছি কেউ ..একটু কাছে গিয়ে বুঝল যে কাজে এসেছে সেই কাজের লোক কাছেই আছে...অপু আরেকটু কাছে গিয়ে বলল..ঐ কত টাকা ? রুপালী কাছে এসে বলল ..আপনে যত দেন
অপুর মেজাজটা গরম হয়ে গেলো ..রেগে গিয়ে বলল ..ঐ হারামজাদী মেজাজ গরম করবিনা কত টাকা বল..রুপালী এবার বলল-৪০ টাকা দিয়েন ...আপু বলল-২০ টাকা পাবি..রুপালী মুচকি হাসলো, অন্ধকারে তা দেখা গেল না।মুখে বলল -ঠিক আছে ..মনে মনে বলল-মানুষ গুলা আজব,এক টাকা বেশি দিবো না আবার দামও জিগায়...
তারপর সবই গতানুগতিক...হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হলে রুপালি চাপা গলায় বলে -চলেন ছাউনির নিচে যাই গায়ে বিষ্টি পরতাছে..অপুর রাস্তার মাগীদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করেনা তারপরও বিরক্তি নিয়ে বলে-না এখানেই ঠিক আছে..
কাজ শেষে রুপালী অপুর চোখের আড়ালে একটু দূরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে...অপু ঝুম বৃষ্টির মধ্যে ভিজে হাটতে হাটতে একটা সময় চোখের আড়াল হয়ে যায়
রুপালী মনে মনে বলল-আহা.. মানুষটা বিষ্টি পছন্দ করে...
৮ বছর পর...
অপু সুমাইয়াকে আর তার ছোট মেয়ে বৃষ্টিকে নিয়ে গাড়িতে করে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বেড়াতে আসে...
বৃষ্টিকে গাড়িতে বসিয়ে অপু আর সুমাইয়া ফুটপাতে দাড়িয়ে চা খেতে গাড়ি থেকে বের হয়..পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলোকে ছুঁয়ে আসতে..
যাওয়ার সময় সুমাইয়া মেয়ের মাথায় চুমু দিয়ে মেয়ের মত অনুকরন করে আধো বোলে বলে- আমলা চা খেয়ে আসি ..তুমি একটু বসো আম্মু..বৃষ্টি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়..।অপু এগিয়ে এসে মেয়ের গালে চুমু দিয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে ফুটপাতে দাড়িয়ে দোকানদারকে দু'কাপ চা দিতে বলে...
গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল অনেক্ষন থেকেই ....বৃষ্টি জানালার বাইরে হাত বের করে পানির ফোঁটা গুলো ধরতে..এমন সময় তার থেকে দুই-এক বছরের বড় এটি মেয়ে আসে কদম ফুল নিয়ে..বৃষ্টির কাছে এসে বলে ফুল নিবা..? বৃষ্টি মেয়েটিকে সুর করে জিজ্ঞেস করে-তোমার নাম কি...? মেয়েটি বলে-বিষ্টি..মেয়েটি এবার বৃষ্টির নাম জিজ্ঞেস করে..বৃষ্টি তার নাম বলেই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়..
সুমাইয়া অপুকে ডেকে বলে-এই অপু দেখ মেয়েটা কি সুন্দর..
অপু বিতৃষ্না নিয়ে বলে সুন্দর হলে তাদের আরও বিপদ..এদের জন্ম এখানে মরবেও এখানে
সুমাইয়া বিরক্ত হয়ে বলল-ধুর তুমি খালি বাজে কথা বলো..
সুমাইয়া মেয়েটির কাছ থেকে দুটি কদম ফুল কিনল...
সুমাইয়া জানে অপু বৃষ্টি পছন্দ করে তাই গাড়িতে বসে সুমাইয়া বলল-আজ আরও কিছুক্ষন ঘুড়বো বৃষ্টিতে...
অপু হেসে বলল-ঠিক আছে..
সুমাইয়া বলল-বৃষ্টি হচ্ছে অথচ বৃষ্টির গান নেই এটা কেমন কথা..
গাড়িতে বেজে উঠলো -আকাশ মেঘে ঢাকা শাওন ধারা ঝরে....
গাড়িটা নড়ে উঠে চলে গেল...কদম ফুল হাতে ফুটপাতে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির শরীরে ঠান্ডা বৃষ্টির পানি কাপন ধড়িয়ে দিয়েছে..তাকে হাতের বাকি ফুল গুলো বেচতে হবে..
গাড়িতে থাকা বৃষ্টি আর ফুটপাতে দাড়িয়ে থাকা বৃষ্টির অনেক ব্যবধান ..যদিও একটি জায়গাতে তাদের অনেক মিল..তাদের দুজনের জন্মদাতার বৃষ্টিপ্রীতি থেকেই তাদের নামকরন করা হয়েছে....
( জয়িতা )
মন্তব্য
বস, বানানের দিকে একটু যত্ন নেবেন অনুগ্রহ করে। ...
_________________________________________
সেরিওজা
গল্পের থিমটা ভালোই লাগলো।
=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
অপু... কাজটা ভালা কর নাই। নিরাপদ যৌন মিলনের ব্যপারে তোমাকে আরো সিনসিয়ার হইতে হবে। তা না হইলে, নিজের পাশাপাশি বিষ্টি, বৃষ্টি এবং সুমাইয়া সবার জীবনাবসানের জন্য তোমার দায় এড়ানো অসম্ভব।
যদিও আমার এটা করা শোভা পায় না, তারপরও-
ঘুড়বা - ঘুরবা
ঘুড়বো- ঘুরবো
অভীজ্ঞতা- অভিজ্ঞতা
বিতৃষ্না- বিতৃষ্ণা
কাপন- কাঁপন
---- মনজুর এলাহী ----
সুহান ভাই..
ভাল বাংলা বানান শিক্ষা বই জানা থাকলে বলবেন অবশ্যই....
আমি বাংলায় পুওর... (অতিব লজ্জাকর ব্যাপার)..
ফাহিম ভাই..
আপনাকে ধন্যবাদ...
(জয়িতা)
বানানের জন্যে আলাদা করে বই পড়া খুব বেশি দরকার বলে মনে হয় না । আপনি নিয়মিত খবরের কাগজ বা অন্যান্য বই পড়লে সেটাই যথেষ্ট হওয়ার কথা।
_________________________________________
সেরিওজা
গল্পের থিমটা ফাটাফাটি......।
---নীল ভূত।
ভালো লাগলো।
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
গল্পের থিমটা সুন্দর। কিন্তু কেমন যেন হঠাত করে শেষ হয়ে গেল। আরেকটু টেনে নিয়ে শেষ করতে পারতেন। তারপরও ভালো লেগেছে।
খুব ভালো লাগলো আমার। লিখতে থাকুন।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
মনজুর এলাহী ..
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভুল গুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য...
অন্যদের..
আপনাদেরকেও ধন্যবাদ...
গল্পের একটি থিম পেয়ে গেলাম আর লিখে দিলাম ব্যাপারটা আসলে এমন নয়...
কোন গল্পই কিন্তু গল্প নয় ,আমারা গা বাঁচাতে গল্প বলে চালিয়ে দেই আরকি.......
(জয়িতা)
- আপনে কি হারায়া গেছিলেন নাকি? বিষ্টি আর বৃষ্টির গল্প ভালো লাগছে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
গল্প ভাল লেগেছে...গল্প হলেও এমনি সত্যি কিছু অভিজ্ঞতা আছে! পরে সময় পেলে বলব!
নিয়মিত লিখুন!
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
আপনার অভিজ্ঞতার কথা শোনার জন্য অধির আগ্রহে রইলাম................
(জয়িতা)
হেইই জয়িতা...
অনেকদিন পর।
ভালো লাগলো লেখাটা।
...........................
কেউ আমাকে সরল পেয়ে বানিয়ে গেছে জটিল মানুষ
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
লা..লা..লা...লা...... আমি আগের ঠিকানায় আছি...সময় করে এসো একদিন...
আসলেই অনেক দিন পর..
শিমুল আপু আপনি ভাল আছেনতো.........
(জয়িতা)
লেখাটা অনেক ভালো লাগলো... অনেকদিন আপনার মন্তব্য পড়ি, গল্প পড়লাম এই প্রথম। নিয়মিত লিখুন না কেন?
আমার কাছে মনে হয়েছে শেষ প্যারাটা না হলেই ভালো হতো। ভেবে দেখবেন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চেষ্টা করব নিয়মিত লেখার....
শেষের প্যারাটা দরকার এই কারণে যে...." স্বীকৃতি " এমন একটি শব্দ যে এটা যার থাকে সে এসি গাড়িতে চরতে পারে..বাবা -মার আদর পায়...সামাজিক সম্মান নিয়ে বড় হয়...কিন্তু এই শব্দটি যার ভান্ডারে নেই একই রক্তের হলেও সমাজের সব কষ্টকে সাথে নিয়ে তাকে বড় হতে হয়, তার জন্য কেউ থাকেনা.....
এই ব্যাপারটা অনুভব করতে শেষ প্যারাটি দরকার........আপনার কি মনে হয়....................??
(জয়িতা)
নতুন মন্তব্য করুন