সত্যজিত রায় বলেছিলেন "গুপি গায়েন বাঘা বায়েন" এ "জানার কোন শেষ নাই জানার চেষ্টা বৃথা তাই" ছবিটা যখন দেখেছি তখন এর কঠিন মর্মার্থ ভাল করে বুঝিনি। তবে জীবনের পথা চলতে গিয়ে তা হাড়ে, মজ্জায়, মাংসে, রক্তে, শিরায় অথবা আর যা কিছু আছে তাতে বুঝেছি।
কোন কিছু জানেন ত হয়েছে "ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে" অবস্থা আপনার। জীবনের কোন এক সময় পড়াশুনা ছাড়া আমি আর কিছু জানতাম বলে মনে হয়না। আহা, কি সুন্দর ছিল জীবন আমার তখন !!!
আমার সিনিয়র ক্লাসের আপাদের চমৎকার বোটানি প্র্যাক্টিক্যালের খাতা দেখে অভিভুত হয়ে কষ্ট করে নিজে নিজে আকা শিখলাম। এতে আমার বোটানি প্র্যকটিক্যালের খাতা ক্লাসে সব চাইতে সুন্দর হলো।ক্লাসে আমার প্রিয় বাধবী ছিল ৯ জন। একজন আমাকে বলল ওর খাতাটা একে দিতে। আর যাবো কোথায় বাকি ৮ জনের মুখ কাল ওদেরটা ও করে দিতে হবে বলে। এদিকে আমার এত সময়ও ছিল না। কি করি মহা বিপদ!
আমার কাজিনরা নিজেদের জামা নিজেরা বানিয়ে খুব গর্ব নিয়ে পরত। তাই দেখে জামা বানানো শিখতে ইচ্ছে করলো। আর যাই কোথায় এর পর থেকে নিজের বানানো জামা ছাড়া পরতেই পারতাম না বহু বছর। সেলাই করতে করতে ঘাড়ে কঠিন ব্যথা হয়ে গেল। শুধু নিজের জামা নয় যেখানেই যাই সাবই আমাকে তাদের জামা বানিয়ে দেবার জন্য আব্দার করত। বেড়াতে গেলেও ঐ একই কাজ আহ জ্বালা আরকি। শেষে সময় বুঝে এক সময় ডিক্লেয়ার দিলাম আমি সেলাই পারিনা।
এক সময় পিয়াজটাও কাটতে হয় কি করে তা জানতাম না। রান্না করতে আমি সব সময় পছন্দ করতাম। তাই বড় হবার পরে এক্সপেরিমেন্ট মুলক রান্না বহুবারই করেছি। দেশে থাকতে মাছ টাছ আমকে কাটতে কম হয়েছে কাজের মানুষের উদারতায়। তবে চিংড়ি যে কখনও বাছিনি তা নয়। এই মাছ জিনিসটার এত পচা গন্ধ কেন হয় বহুবার ভেবেও কুল করতে পারিনি, অথচ রান্না করার পর কি মজা খেতে! ভেবেছি মাছের যদি এত গন্ধ তবে নদী বা সাগর ভড়া এত মাছ তাতে নদীর বা সাগরের পানি কেন মাছের মত গন্ধ নয়। পানিতে নামলে কেন গায়ে মাছের গন্ধ হয়না। ক্লিফকে জিঙ্গেস করায় ও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়া বলে " আই ডোন্ট নো"!!! :০
বিয়ের পরে সব মেয়েরাই রান্না পারুক না পারুক তাদের রন্ধন কার্য দিয়ে হাজবেন্ডকে অবাক করে দিতে চায়। আমিও তাদের থেকে আলাদা কিছু নই। বিশেষ করে যেহেতু ক্লিফ কখনও বাংগালী খাবার আগে খায়নি তাই আমার উৎসাহ ছিল আরো বেশি। আর তাই করতে গিয়ে আবারও নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল ! মাথা খটিয়ে নতুন রান্না শিখি আর নতুন নতুন নাম না জানা রেসিপি আবিস্কার করি। সেই রান্না খেয়ে সে আর বাইরের রান্না খেতে চায় না। সিংগাপুরে অলমোস্ট সবাই বাইরে তিন বেলা খায়। কারন সবাই চুরান্ত পর্যায়ে ব্যস্ত থাকে কাজ নিয়ে, তাছাড়া রান্না খাবার এখানে সস্তা। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলামনা বিয়ের আগে। হায়রে কপাল আমার সেই আমি এখন রোজ রান্না করি। এখানেই শেষ নয় উনি তার দেশ বিদেশের বন্ধুদের দাওয়াত দেন আমার কলার মোচা, কলার এটে চিংড়ি, বিফ ভুনা আর চিংড়ির মালাইকারি বা সিফুড পাস্তা খাবার জন্য। মানুষ আসে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা ইউ কে থেকে। হায়রে আমার কপাল!! আমি যে ভাল রাধুনী তা নয় কিন্তু, যেহেতু বাংগালী খাবার ওদের কাছে নতুন তাই ওরা ওতেই বেশি মজা পায়।
সেই পচা দুর্গন্ধ যুক্ত চিংড়ি বাছতে গিয়ে আমার এখন বারোটা। তার উপর নতুন কায়দা শিখেছি এখানে এসে চিংড়ি বাছার। সেটা হলো এক বন্ধু বললো চিংড়ির পিঠে ও পেটে লম্বা শিরার মত নালিতে ওদের একগাদা হাগু থাকে। আর ওটা আমাদের কোলেস্টরেল বাড়ায়। ওটা ফেলে দেয়া ভাল বাছবার সময়। আর যাই কোথায় নেক্সট টাইম চিংড়ি বাছতে গিয়ে ওর পিঠ টা আর পেট টা লম্বা করে হাল্কা চাপে চিড়তেই দেখি কালো কালো লম্বা নালি ভড়া হাগু। ও বাবাগো। দেশে কখনও এই ভাবে চিংড়ি বাছতে দেখিনি বাড়িতে। দেখা মাত্র আর এটা না ফেলে পারিনা এখন। আর এ যেন এক লম্বা ডিসেকসন প্রসেসে চলে চিংড়ি বাছা, এর মাঝে এর গন্ধে আমার কম্ম কাবার। আর ক্লিফের আমার চিংড়ি রান্না খুবই পছন্দ :(। ( হা হা হা এই ফাকে আপনাদের ও চিংড়ি বাছার এক্সট্রা জ্বালাতন দিয়ে দিলাম যারা জানেন না ব্যাপেরটি )
শিখলাম গ্রাফিক ডিজাইনিং নিজের কাজের জন্য নিজে নিজে। এই আমার পেশা এখন। ব্যস্ত থাকি অলমোস্ট সব সময়। এর মাঝে দেশে গেলে বেড়াতে আর বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে খুব। দেশে গেলে মা আমাকে বললো বাবার নাতির নতুন কম্পানির লোগোটা করে দিতে। হায়রে আমার বেড়ানো।
কারো জন্মদিন বা কোন অনুষ্ঠান হলেই ক্লিফ আমাকে বলে কাস্টমমেইড বার্থডে কার্ড বা ইনভাইটেশন বানাতে।
অবশেষে রিয়েলাইজ করলাম শেখার কোন শেষ নাই শেখার চেষ্টা বৃথা তাই। কারন স্বর্গে গিয়েও ধান ভানতে হবে। কিছুদিন হলো ভাইয়োলিন শিখছি জানিনা এর জন্য আবার কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য !!! বাদ দেব কিনা ভাবছি। :০ ছোট বেলায় ফুফু নাচের ইস্কুলে পাঠিয়ে নাচ শিখিয়েছিল আর যেখানেই যেতাম বা কেউ বাড়িতে বেড়াতে এলেই আমাকে বলতো একটা নাচ দেখিয়ে দাওতো মেয়ে !!! মহা চিন্তায় আছি ভায়োলিন নিয়ে বর্তমানে তাই !
:)
দিশা___
মন্তব্য
গুরুর নামের বানান "সত্যজিৎ" হবে।
আপনি ঠিক বলেছেন। দুঃখিত ভুলের জন্য। ইংরেজী বানানটা জানতাম। বাংলাটা এবার জানলাম। ধন্যবাদ !!
দিশা___
"জানার কোন শেষ নাই জানার চেষ্টা বৃথা তাই" কথাটা পুরোপুরি সত্যি। এ কারণেই রান্নাবান্না জানার পরও বউকে দিয়েই ভাত রাঁধাই। ☺
উমমম ব্যপার কিন্তু ঠিক না
দিশা___
কথাটা "হীরক রাজার দেশে" তে ছিলো না?
কোন কিছু শিখলেই করতে হয় তাই আমি কিছুই শিখি নাই, তাই কিছুই পারিনা।
লেখা ভাল্লেগেসে
ঠিক বলেছেন। খুব ছোট বেলায় দেখা বলে শুধু প্রধান চরিত্রে নাম টাই মনে আছে।
দিশা___
হুম। চিংড়ি আমার বড়ই পছন্দের জিনিস, পেটে লম্বা শিরার মত নালি ফালি বলে তো ভীষণ প্যাঁচ লাগিয়ে দিলেন।
দেশে গেলে মা আমাকে বললো বাবার নাতির নতুন কম্পানির লোগোটা করে দিতে। - বাবার নাতি? নতুন লাগল এক্সপ্রেশনটা।
ঠিক !! আমি একা প্যাচের ভেতর থাকলে একাকিত্বের কষ্ট, তাই আপনাদেরও সাথে নিলাম ;)
মেলবোর্ন বেড়াতে আসেন।
নিশ্চই যাবো একদিন !! ধন্যবাদ !!
দিশা___
ভাল লাগলো...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ
দিশা___
দারুন, এরকম ঘন ঘন লেখা চাই
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য !! ভাল থাকবেন !!
দিশা___
দারুন, এরকম ঘন ঘন লেখা চাই
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
ধন্যবাদ !!
দিশা___
আমাগো একদিন দাওয়াত কইরা খাওয়ান গো আফা
নিশ্চই !! তবে আপনাকে এবার রাধতে হবে ! আমি তো রান্নাই জানি না হা হা হা
দিশা___
তোফা, তোফা...
আফা কি সিংগাপুরে নাকি... আহারে, আগে জানিলে আপনার চিংড়িটা খেয়েই আসা যাতো
বেপার না, পরেরবার শিউর খামু।।
---নীল ভূত।
ঠিকই বলেছেন !! নেক্সট টাইম। তবে ঐ যে বলেছি আমিত রান্নাই ভুলে যাচ্ছি
দিশা___
লেখা বেশ ভাল লাগসে। আমার অবশ্য কিছুই শিখতে মন চায় না। ভীষন আলসে আমি।
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
আপনার পদানুসরন করব ভাবছি
ধন্যবাদ !!
দিশা___
হে হে...স্পেশালিস্টের ত দাম থাকবোই.. তয় সিংগাপুর আইলে স্পেশাল চিংড়ি খাইতে চাই...
চমৎকার হয়েছে!
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
উমম আপনার বাড়িও যেতে চাই আপনার রান্না খাবার জন্য !
লেখা ভাল্লাগলো। আর আপনার লেখালেখিতে উৎসাহ দেখে আরো ভালো লাগছে। চালিয়ে যান আপু।
চিংড়ি নিয়ে আলোচনা শুনলাম যদিও এই জিনিস্টা আমি খাই না...একবার খেয়ে দেখবো নাকি?
__________________________________
যাক না জীবন...যাচ্ছে যখন...নির্ভাবনার(!) নাটাই হাতে...
__________________________________
যাক না জীবন...যাচ্ছে যখন...নির্ভাবনার(!) নাটাই হাতে...
একবার খেয়ে দেখুন তাহলেই বুঝবেন
আপনের দেখি আমার মতো অবস্থা...
সিঙ্গাপুরে আমাদের এক সচল পড়তে গেছে ক'দিন আগে। বেচারা হাত পা মাথা পুড়ায়া কী না কী রান্ধে... আপনের ঠিকানা তারে দিয়া দিলে কাম হইতো, বেচারা মাঝে মধ্যে গিয়া চিঙড়ি ভূনা খায়া আসতে পারতো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আহহহ মরার উপর খাড়ার ঘা
নতুন মন্তব্য করুন