দুপুরে ঘুম ভাংল মোবাইলের রিং শুনে, দেখি আমাদের ভার্সিটির বড় ভাই কল দিছে। ঘুম ঘুম চোখেই ধরলাম।
“কি মিয়া, তিনটা বাইজা গ্যাছে সেই খেয়াল আছে। রাতে কয়টায় ঘুম দিছস? কয়বার কল দিছি জানস?”
“বাবু ভাই, কোন জরুরী ব্যাপার নাকি?” ঘুম ঘুম কন্ঠে জিজ্ঞেস করি।
“আরে মিয়া, ক্লাস তো করসনাই একটাও, এখন হাত মুখ ধুইয়া টংএ আইসা পড়, ওয়েট করতেছি, কথা আছে।”
আমি দ্রুত বিছানা ছেড়ে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে মায়ের চোখ বাঁচিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। পাড়ার ফ্রেন্ডরা মিলে একটা টং এ আড্ডা মারি, বাবু ভাইও আমাদের পাড়ায় থাকে, এজন্য অন্য ডিপার্টমেন্টের হলেও পাড়ায় তার চলাফেরা আমাদের সাথেই।
“আরে তুই আসছস, বস বস। অই মামা, আরো এক কাপ চা দাও” বলে বাবু ভাই নিজেই সামনে ঝুলানো প্যাকেট থেকে একটা কেক বের করে আমার সামনে ধরেন, “নে খা, কিছুইতো খাওয়া হয়নাই মনে হয়।”
আমার একটু কেমন কেমন লাগে। ব্যাপারটা কি? দলের একমাত্র বড় ভাই, জীবনে সাইধ্যাও তার কাছ থেকে কিছু পাইলাম না, আজকে পুরা দশ টাকার কেক সাধতেছে, সাথে আবার চা।
“ঘটনা কি বাবু ভাই?”
“শুনলাম পাখি ফুড়ুত দিসে?” বাবু ভাই মুখে মিচকা হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করে।
এবার আমার বোধগম্য হয়, সাথে একটু মন খারাপও হয়।
“হ, ভাই” আমি মাথা নিচু করে বলি।
“আরে মন খারাপ করিস না, পাখি এক টা গ্যাসে, আরেক টা আইব, এত পাখি ধরার টাইম আছে?” বাবু ভাই সিগারেটে একটা লম্বা টান দেয়।
“না ভাই, মন খারাপ নাই। খালি একটু ক্যামন ক্যামন করে। এইটারেতো গিফট কম দেইনাই।” এই মেয়ের পিছনে কত টাকা গেল মনেমনে আরেকবার হিসাব করে নেই।
“আরে শুন, তোরা পিচ্চি পোলাপাইন প্রেমের কি বুঝস? সেইদিন মাত্র ধরলি, দুইদিন পর সব ভুইলা যাবি। আমার মত যদি বাল্যকাল থেইকা হইত, তাইলে বুঝতি ক্যামন লাগে।” কথাটা বলেই বাবু ভাই আকাশের দিকে চেয়ে থাকেন। এইটা বাবু ভাইয়ের কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করার চিহ্ন। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে প্রায়ই এই কাজটা করেন।
এইদিকে আমি কেকে কামড় মারতে মারতে চিন্তা করতেছি, বাবু ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড! ক্যাম্নে কি? আমরা জানতে পারলাম না ক্যান?
“বাবু ভাই, আপ্নের কার সাথে কবে হইল? আমরা রে কন নাই ক্যান?”
“চুপ থাক, চিন্তা করতেসি।”
“কি চিন্তা করেন?”
“চিন্তা করি, মাইয়াটা ক্যাম্নে পারল?”
খাইছে আমারে, এত প্রেম, এইটাতো শুনা লাগবই। “কি হইছে বাবু ভাই, আমারে কন, আল্লার কিরা আমি কাউরে কমুনা। ছোটন শাওন মিঠু কাওরে না।” চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলি।
বাবু ভাই এক টা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন,“শুনবি? আচ্ছা।”
“জানস তো আমি এক টু পাগলা কিসিমের। অনেক কাজ নিজে মজা পাই বইলা করি, অনেক কাজ অন্যে মজা পায় বইলা করি। তাদের মজা দেইখা আমারো মজা লাগে। সেই হাই স্কুল থেইক্যা আমি এমন। রাতবিরাতে শহর চইষ্যা বেড়াই। বাসায় জানতে পারেনা, ভোরের দিকে আইসা পড়ি। ক্লাস নাইনে যাইয়া আমাদের সাথে একটা মাইয়া ভর্তি হইল, সুন্দর না, কিন্তু ক্যান জানি ভাল লাগে। ক্লাসে বইসা আমি খালি হ্যার দিকে চাইয়া থাকি। একদিন হ্যায় নিজেই আমার সাথে কথা কইতে আইল। অবাক হয়ে দেখলাম, আমার নাম হ্যায় জানে, আমি যে পাগলা- এইডাও জানে। হয়ত পাগলা বইলাই একটু প্রশ্রয় দিছিলো। কিন্তু আমারতো মামা মাথা খারাপ হইয়া গেল। ক্লাসের কোন বালের মাইয়া আমারে পাত্তা দ্যায় না, এইটা দিছে- এইখানে নিশ্চই একটা কিন্তু আছে। তারপর থ্যাইকা ক্লাসের পরে প্রায়ই কথা টথা হইত। আর আমি রাতে শুইয়া বা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এইগুলা চিন্তা করতাম।”
আমি একটু মোবাইলটা বের করে টাইম দেখি, সন্ধ্যায় একটা হাজিরা দিতে হবে সংসদের সামনে। তাড়া দেই,” ভাই, আপ্নের হিস্টোরি ছাড়েন, আসল কথায় যান। ক্যাম্নে কি হইল?”
"এক শীতকালে রাত দুইটা আড়াইটার দিকে দেখি হাঁটতে হাঁটতে নদী গবেষনা কলোনীর সামনে আইসা
পড়ছি। এইখানে ওরা থাকে। নদী গবেষনা চিনস তো?”
আমি দুই দিকে মাথা নাড়ি।
“এইযে এইদিকে ফরিদপুর শহর, এইদিকে নদী গবেষনা কলোনী, বিশাল বাউন্ডারী, মেইন রোড ধইরা গ্যালে প্রায় ২-৩ কিলোমিটার হাঁটতে হইব, আর এইদিক দিয়া শটকাট মারন যায়।” বাবু ভাই বেঞ্চে আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুকি করে আমাকে ডিরেকশন বুঝানোর ট্রাই ন্যায়।
“কলোনীর গেট পাহারা দ্যায় থ্রি নট থ্রি বন্দুক হাতে কিছু সিকিউরিটি। তাই আমি সামনাসামনি না গিয়া শটকাট মাইরা পিছন দিকে গ্যালাম। অইখানে দশ ফিট মত বাউন্ডারী ওয়াল। আশেপাশে চাইয়া দেয়ালে উঠলাম, ঘাপটি মাইরা রইলাম দেয়ালের উপর পাঁচ মিনিট, তারপর আশেপাশে কাউরে না দেইখা নামলাম।”
“গার্ড হাঁটাহাঁটি করে না?”
“করে, কিন্তু তখন আছিলোনা। যাউক, তারপর মাইয়ার একতলা পাকা বাড়ি, পাশের ডাব গাছে উইঠা জানলার কার্নিশে পা দিয়া হ্যারার ছাদে উইঠা গেলাম।”
“তারপর?”
“তারপর কিছু আকাম করছি। ছাদে কিছু খড় আছিলো আঁটি বান্ধা একপাশে জড়ো করা, অইগুলা দিয়া ষোল গুঁটির ছক বানাইলাম ইয়া বড়। তারপর কয়লা পাইছিলাম, অইগুলা দিয়া লিখলাম ক্যামন আছ, এইসব হাবিজাবি। নাম টাম লিখিনাই। পাগল হইলেও অত পাগল না। তারপর একটা মোড়া আর কলসি পাইলাম। ট্যাঙ্কের উপরে উইঠা ঢাকনির উপর মোড়া, তার উপর কলসি উপুড় কইরা রাখলাম। এরপর আর কিছু করনের না পাইয়া নাইমা চইলা আসলাম।”
“কিছু হয়নাই? মাইয়া জানতে না পারলে লাভ কি?”
“আরে শুন, সকালে ক্লাসে গিয়া শুনি কলোনীর একটা বাসায় নাকি ভুতের আছর পড়ছে, আর অই বাসায় নাকি আমরার অই মাইয়াটা থাকে। আরো শুনলাম, এইটা মাইয়ার বাপের বিপক্ষ দলের কামও হইতে পারে।”
“ক্যান, মাইয়ার বাপ ক্যাম্নে কি?”
“আরে মাইয়ার বাপ আবার ওই কলোনীর নেতাটেতা নাকি মাথা টাইপ কিছু।”
“তারপরে?”
“এরপর এইটা ১০-১২ দিন পর ধামাচাপা পইড়া গ্যালো। আমি তখন ক্লাসে যাইয়া মাইয়াটারে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম, কি তোমরার বাসায় নাকি ভুতের আছর, আর আছে? মাইয়া চোখ সরু কইরা কয়, কামটা তুমি করছ নাকি? আমি আবার হ্যার সামনে মিথ্যা ক্যাম্নে কই? একটা হাসি দিলাম।”
“মাইয়া কি খেপছে?”
“আরে না, এরপর থেইকা তো মাইয়া আর আমার গলাগলি সম্পর্ক!”
“তাইলে কি হইল বাবু ভাই? আপ্নে না ছ্যাঁকা খাইছেন?”
“কে কইল ছ্যাঁকা খাইছি?” বাবু ভাই শুধায়।
“আপ্নেই না কইলেন আমার কষ্ট আপনি বুঝেন।”
“আরে আমিতো কইছি আমার মত যদি বাল্যকাল থেইকা হইত, তাইলে বুঝতি ক্যামন লাগে।”
“হ হ, তাইলে?”
“ঠিকি তো আছে, এই বয়সে প্রেম করতেছ বইলাইতো ইচ্ছামত ধরতেছ আর ছাড়তেছ, আমার মত বাচ্চাকাল থেইক্যা হইলে কি আরেকটা ধরার ইচ্ছা থাকত? একটা মায়া পইড়া যাইত না?”
“আপনার গার্লফ্রেন্ড, এতদিনে আমরা জানলাম না ক্যান?”
“বছরে একটা মাস আমি বিড়িটিড়ি খাইনা খিয়াল করছস?”
“হ, গত অক্টোবর মাসেই তো, আপ্নে কইছিলেন বমি বমি আসে বইলা খাইতেছেন না।”
“হ্যায় কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় মারা গ্যাছে, ব্রেইন স্ট্রোক কইরা, অক্টোবর মাসে।”
স্পার্টাকাস
মন্তব্য
স্পার্টাকাস, কিছু মনে করবেন না, লেখাটা কেমন খাপছাড়া লাগলো! শিরোনাম আর লেখার ভঙ্গির সাথে শেষটা একদম যায় নি - 'হাল্কা সুরে বলা কিছু গভীর কথা' হিসেবেও ঠিক মানতে পারলাম না।
এই মন্তব্যে নিরাশ হবেন না দয়া করে, পরের পোস্ট পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম
- শেষের লাইনটা মোটেও আন্দাজ করা যায়নি। সেদিক দিয়ে গল্পটা ভালো লেগেছে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অই মিয়া স্পার্টাকাস, কিরা কইরা কিরা ভাংগ!! তুমি তো মিয়া মানুষ ভালু না!
গল্পটা অনেক সাবলীল গতিতে এগোচ্ছিল। শেষে সত্যি একটা ধাক্কা খেয়েছি। পাগলের ভালোবাসার পাগলামী বহিঃপ্রকাশ হলে আরো ভালো লাগতো। শুধু একমাস সিগেরেট না খাওয়ার ব্যপার স্যপার তো স্বাভাবিক মানুষের কাজ রে ভাই।
---- মনজুর এলাহী ----
বিড়ি যে খায়, সেই জানে এটা ছেড়ে থাকতে কত কষ্ট।
খারাপ না।
হুম...শেষটা এমন হবে বুঝতেই পারি নি। সহজ সরল ভাষায় একটা করুন গল্প। ভাল লেগেছে।
চমৎকার লাগলো গল্পটা
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
ক্যাটাগরিতে দেখছি গল্পও আছে স্মৃতিচারনও আছে।
এটা কোনটা?
--
ভাল লেগেছে।
স্মৃতি বড়ই বেদনার।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
সার্থক গল্প, ধাক্কা দিয়া পাঠককে পানিতে একেবারে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
শিরোনামের সাথে মেলাতে পারছি না। কথোপকথন সাবলীল ছিল,ভাল লেগেছে। শেষটায় চমকে দিলেন।
-স্নিগ্ধা করবী
নতুন মন্তব্য করুন