বন্ধু আড্ডা গান*নক্ষত্র

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০১/২০১০ - ৫:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আপনাদের মধ্যে কার কার বড় ভাইবোন আছে হাত তুলুন তো!
ভ্রু কুঁচকে ভাবছেন বাংলাদেশের মত বিপুল জনসংখ্যার দেশে ছোট ভাইবোনেরা এমন কি বিরল প্রানী যে হাত তুলতে হবে!কিন্তু ঘটনা আসলে এইটা না।শাসনের আতিশয্য আর আদরের বাড়াবাড়ি কি জিনিস আমরা ছোটরাই জানি সেকারনেই সকল ছোট ভাই বইনেরা জায়গা থেকে আওয়াজ দিন

ছোটবেলা থেকেই জানি আমার বড় দুই ভাইবোন উত্তর মেরু র আমি দক্ষিন মেরু!চেহারায়।চলনে কাউকে বিস্বাস করানো কষ্ট যে আমি ওদের ই সহোদরা!চোখা চেহারার ফরসা দুই ভাইবোন শ্যাম বরন আমাকে দেখলেই গান গায় "কাল মাইয়া কাল বইলা...।'আর আমি নিজেকে কাল ভেবে কেঁদে বুক ভাসাই।মায়ের ন্যাওটা আমাকে কাঁদানোর ফলাফল ভাল নয় সুতরাং পিঠ বাচানোর জন্য একখানা স্বরচিত ছড়া আবৃত্তি এবং আমার রাগ জল!এহেন দুই ভাইবোনের সাথে আমার খাতির হয়না।ওরা দুইজন পাড়া মাতায় আর আমি একা একা পাতা কুড়িয়ে রান্না বাটি খেলি।অন্যায় যার ই হোক রায় সবসময় ছোট মেয়ের পক্ষে সেই রাগে আমি ওদের শত্রুপক্ষ!আমাকে ওদের খেলায় কখনো নেয়া হয়না।হঠাৎ সাত/আট বছরে আমার বিছানা বদল এবং আমার শত্রুমহলে বসবাস শুরু!এরপর সময় বহিয়া যায় র আমার বড়ো দুইজন আমার অতি প্রিয় বন্ধু হয়ে যায়।আমাদের বাসায় তখন আব্বু পুরোপুরি একনায়কের ভূমিকায়।দুইদিন পর পর নতুন নিয়ম জারি হয় আর আমরা তিন ভাইবোন আইনের ফাঁকফোঁকর খুজি।আমাদের র ভাইয়ার রুমের মাঝখানে একটা জানালা ছিল সেই জানালা দিয়েই পড়ার সময় আমাদের ধুমসে আড্ডা!আব্বুর আওয়াজ পেলেই ছু্ট এবং আমরা অতি মনোযোগী ছাত্র!ওরা আরেকটু বড় হয়ে যাবার পর রাতের খাওয়ার শেষে আমরা ৩ ভাইবোন আয়েশ করে বসি উঠি রাত ২টায়।আমাদের ঠেকায় সাধ্য কার!কি কথা হয়না আমাদের!কখন ও ভাইএর প্রেমে পড়ার গল্প শুনি শুনে পুচকা আমি আবার সাজেশন ও দেই,কখন ও ওদের ক্লাস এ ঘটা ঘ্টনা,ওদের কোন স্যার কেমন,সারাদিন কি হল না হল,ওদের বন্ধুরা কে কেমন আমরা সবকিছু শেয়ার করি স।।অব!আমার বড় বোন অবশ্য ওর বড় বোনের সত্তা ভুলে যায়না।যখন তখন হুকুম জারি তো আছেই গল্পের ফাকে ফাকে উপদেশ ও আছে।ঈশপের গল্পের মতই বিশেষ কোন ঘটনা বলে সেই বিষয়ে আমাকে সতর্ক করা হয়।আমার কথা বার্তা,চাল চলন আমার পুরো টিনএজ সময়টুকু মায়ের মত ও আমায় ঘিরে ছিল!ভীষন বিরক্তহতাম খবরদারিতে ওর একটাই জবাব আমি চাইনা তুমি কোনকারনে কখনো কষ্ট পাও।তাই সব বলে রাখি জানিয়ে রাখি।এত ইমোশনাল কোনোকিছুর জবাব হয়না!

একসময় আমার বড় বোনের বিয়ে এবং চাকরি সুত্রে ভাইএর ও দেশের বাইরে যাওয়া।যে দুইজন এর সাথে সারাক্ষন আমার খুনসুটি চলত,অন্যায় আবদার ,জেদ ধরা হঠাৎ দেখি ওরা আমার পাশে নেই।প্রবাসী বড়বোনের সাথে সপ্তাহে দুইবার কথা হয়।ওর সংসার এর গল্প শুনি,পিচ্ছিগুলোর গল্প শুনি কিন্তু আর বলা হয়না আমার মজা করে কাটানো কোন দিনের কথা,আমার বন্ধুদের কথা,বৃস্টিতে ভেজার কথা হয়তো ওর ও আমাকে বলা হয়না আমেরিকার তুষারপাত অথবা সংসারের ঝামেলার কথা!ভাইয়ের সাথে ইমেইল এ কথা হয়।ও দেশে আসলে ওএখন অনেক কিছু বলা হয়না।আমার মন খারাপ হলে ও ভাই আমার পাশে থাকে তবে আমার বন্ধুটিকে আর ডাকিনা।
প্রবাস নিয়ে লেখা গুলো পড়ে কখনো ভাল লাগা,অথবা কখনো মন বারান্দার চিলতে রোদ্দুর ঢেকে যাওয়া এই আমার অত মনকাড়া পোস্ট লেখা হয়ত সম্ভব নয় ।প্রবাসী নই বলে এক টুকরো বিদেশ দেখানো ও সম্ভব নয়।আমি শুধু মায়ের চোখের জল দেখি,বোনের ধরা আসা গলা শুনি............
আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আমার ভাইয়ের বিয়ে এই মাসে! ডামাডোলের মধ্যেই আতঙ্কে আছি ও বদলে যাবেনা তো!কি জানি কি হয়!অপেক্ষায় আছি............


মন্তব্য

ইবরাহিম যুন [অতিথি] এর ছবি

যে ভাই এত ভালোবাসা পেয়ে বেড়ে উঠেছে, সে বদলাবে না। আর ও তো আপনার বন্ধু’ও । এদেশের কয়টা ভাই বোনে’র বন্ধু হতে পারে ?
সবসময় যেন আপনাদের আন্তরিকতা, ভালোবাসা অটুট থাকে শুভকামনা রইল।

ইবরাহিম যুন

নক্ষত্র [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ মুন আপনাকে!

রেশনুভা এর ছবি

সপ্তাহখানেক আগের লেখা। আজ পড়লাম।
মানুষ পাল্টায় না; পারিপার্শ্বিকতা বদলে যায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।