মেয়েদের কলেজের কমনরুম।আমরা কয়েকটা মেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছি।
একটা মেয়ে বললো ‘তোদের একটা জোক বলি, ওই রকম’...মেয়েটা চোখ টিপলো আর গলার স্বর একটু নামিয়ে আনলো। আমরা চার পাঁচজন কিশোরী (তখন নিজেদের তরুণী ভাবতে ভালো লাগতো, এখন কিশোরী শব্দটা কীযে মিষ্টি লাগে...) ওইরকম জোক শোনার জন্য প্রস্তুত। বেশ একটা চাপা উত্তেজনা। আচমকা একটা আঁতেল মেয়ে বলে উঠলো- ‘এই তোর জোক টা একটু পরে বল,আমি চা শেষ করে নেই। ওই সব জোক আমি শুনবোনা’।মেয়েরা সবাই ওই আঁতেল মেয়ের উপর খুব চটে গেলাম। জোক বলতে চাওয়া মেয়েটা ভীষন অপমানিত বোধ করলো। আমরা এরপর কত্তো সাধাসাধি করলাম, সে জোক বললই না আর। আঁতেল মেয়েটার উপর যারপর নাই খেপে গেলাম সবাই। ওই বয়সে ওই সব জোক শোনার মজাই অন্যরকম!
রাগটা বেশিদিন থাকলো না। আমার ক্লাস করতে ভালো লাগতো না, ফাঁকি মেরে নীচে চলে আসতাম। সব মেয়েরা সীরিয়াস, আমি একা একা এদিক ওদিক ঘুরে পেয়ে গেলাম ওই আঁতেল মেয়েটাকে। মাত্র কদিনের ভেতর আবিষ্কার করলাম সে আঁতেল তো না ই, মহা ফাযিল আর শয়তান। ওদের এস্টাব্লিস্ট শয়তান সঙ্ঘে আমি যোগ দিলাম। কীসের ক্লাস, কীসের পড়ালেখা আমি উচ্ছন্নে যাবার পথ ধরলাম...মোটামুটি বছরদুয়েক আমরা তান্ডব চালালাম কলেজময়।
ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে আমি দূরে চলে এলাম।ওই বদমাশটার খোঁজ পেতাম মাঝে মাঝে। তার তান্ডবলীলা আব্যাহত ছিলো ছোট্ট শহরে...
৭ বছর পর লন্ডন শহরে এক ভয়াল ঠান্ডা বিকালে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক মেয়েকে দেখে আমি ও থেমে গেলাম...একটু দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে গেলাম, আস্তে করে জানতে চাইলাম ‘তুই কি অমুক?’।তারপর কিছুক্ষণ আমার মনে হলো কোন পাপে ওকে আমি চিনতে গেলাম! সে আমাকে এমন ভয়াবহ ভাবে জাপটে ধরলো যে না পারি নিজেকে ছাড়াতে, না পারি নিঃশ্বাস নিতে।আমরা আবার কলেজ জীবনে ফিরে গেলাম। আবার উচ্ছন্নে গেলাম, দ্বিতীয় দফায়...এই দফায় ও দিব্যি ‘ওইসব জোক’ শুনতে পারে, হজম করতে গিয়ে খিখি করে এমন বিকটভাবে হাসে যে ফুটপাথ থেকে লোকজন ঘুরে তাকায়। আমি দেখলাম দুনিয়ার সব দেশের মানুষ উজবুক দেখলে একইভাবে বিরক্তিতে কপাল কুচকায়!
যাই হোক, ওই পর্ব কাটিয়ে আমি ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে সুবোধ হয়ে গেলাম। বছর দেড়েক আগে ওই শয়তান আবার আমাকে উচ্ছন্নে যাবার পথ দেখালো। এতোদূর থেকে বিশেষ কিছুতো করা যায়না, সে আমাকে একটা ব্লগের ঠিকানা পাঠিয়ে দিলো। আগের দুবার আমি উদ্ধার পেয়ে গেছি, এইবার ঝামেলায় বেশ ভালোভাবে জড়িয়েছি। প্রতিদিন এই ব্লগে কিছু সময় কাটানোর নেশা আমাকে পেয়ে বসেছে।এই ব্লগের সবাইকে খুব পরিচিত, আপনজন লাগে।এইবার আমি আর পালাতে পারবোনা...
প্রথম লেখা এইচে বড় করা ঠিক হবেনা। আপনাদেরকে শুধু ওই বদমাশটার নাম আর ওই সর্বনাশা ব্লগটার নাম জানিয়ে দেই- ‘রানা মেহের’ এবং ‘সচলায়তন’।
মন্তব্য
লিখে যান আর আমরা পড়ে যাই।
- বাহ্, আরও একজন পেয়ে গেলাম, 'লতায় পাতায় পরিচিত বন্ধু'। লিখে ফাটায়ে দেন, রানা মেহের তো রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে এখন গ্যালারীতে বসে থাকে আর মাঝে মাঝে পানির বোতলটা নিয়ে দৌড়ে আসে।
লেখায় নাম দিয়েন এরপর থেকে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হেঁহেঁ, আমি অলরেডি উচ্ছন্নে গেছি...
রানাপু'র একটা চরম শাস্তি অবশ্যি প্রাপ্য,
সচলে স্বাগতম!
--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন