রোকেয়া হলের গেট,সময় বিকাল পাঁচটা। হল গেট লোকে লোকারণ্য (বলা উচিত যুবকে যুবকারণ্য!)। প্রতিদিনের নাটকের মহড়া হচ্ছে-‘আপু একটা কল নেবেন’। দয়ালু মেয়েরা নাম আর রুম নাম্বার লেখা ছোট কাগজ নিচ্ছে, একটু এগিয়ে গিয়ে হাঁক দিচ্ছে-‘নিউ বিল্ডিং ৫,অমুক’। এমন সময় একটা কান্ড হলো। হলের ভিতর থেকে হেঁটে আসা একটা মেয়ে আচমকা দৌড় দিলো, অন্যদিকে হল গেটে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলেও ছুটে গেলো। এরা দুজন একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে মহা হইচই জুড়ে দিলো। দুজন একটু ধাতস্থ হবার পর গেটের কয়েক ডজন চোখ ও একটু পলক ফেলার অবকাশ পেলো। পলক ফেলে আবার তাকিয়ে তাদের পাপী মন একটু বিব্রতবোধ করলো! ছেলেমেয়ে দুইটার চেহারা অবিকল একরকম। সবাই খুব স্বাস্তি পেলো- ওহ এরা ভাইবোন, দেশটা এখনো উচ্ছন্নে যায়নি পুরোপুরি! (সচলায়তন এর সব পাঠক ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন এখন)।
এই নাটক হয় আমার ভাই ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাবার পর। পরে একদিন আমাকে এক বন্ধু এসে বলে ‘একদম তোর মতো একটা ছেলে দেখলাম কমার্স ফ্যাকাল্টিতে’! আরেকজন বলে ‘তোর ভাই তো তোর ফটোকপি, কালি একটু বেশি পড়েছে তাই ফটোকপি একটু কালো এসেছে’!!
ভাই ভার্সিটিতে আসার পর আমারতো মাটিতে আর পা পড়েনা। যাকে পাই তাকেই বলি। এরমধ্যে হলে নতুন মেয়েরা আসতে শুরু করেছে, আমরা তীক্ষ্ণভাবে তাদের খেয়াল করছি। তারা কতো বেয়াড়া, উদ্ধত এইসব খতিয়ে দেখছি। একটা খুব মিষ্টি মেয়েকে চোখে পড়লো...একমাথা কোঁকড়ানো চুল, এমন সুন্দর করে হাসে...একদিন ডেকে কথা বললাম, কথাও বলে খুব সুন্দর করে...আমি তখন হলের অন্যসব বন্ধুকে ওই মেয়েটার গল্প করি, ওই পিচ্চিটা কী সুইট দেখছিস্... আমার বন্ধু ‘লাবণী’কে বললাম একদিন। সে তো হাসতে হাসতে বাঁচেনা! আমি ধন্দে পড়ে গেলাম-মেয়েটা কি আসলেই সুইট না? লাবণী বললো- আরে ওইটাতো আমার ছোটবোন। আমার এমন রাগ হলো। ব্যাটা তোর বোন ভর্তি হয়েছে আগে বলিসনি কেনো? ও বললো- সবাই কি তোর মতো, ভাই ভর্তি হয়েছে এটাতো ক্যাম্পাসের কাকপক্ষীর ও জানতে বাকি নাই! তারপর ওই পিচ্চির সাথে দেখা হলে আমি কিছু বলার আগে সেই আমাকে ডেকে, মিষ্টি হাসি আরেকটু বিস্তৃত করে বলে -‘আপু কী খবর’?
লাবনী শয়তানটা নিশ্চয়ই আমার ‘বাকরা’ হবার কান্ড এই পিচ্চিকে বলেছে!
সচল পাঠকরা এই পিচ্চিকে চেনেন- ‘নিঘাত তিথি’।
মন্তব্য
মজার ঘটনা। ভালো লাগলো।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
ভাই কাছে থাকলে আনন্দ হওয়ারই কথা!
আমার অবশ্য বড় বোন নেই। বড় বোনের অভাব আমি খুব ফিল করি। আমার বড় বোন হলে থাকলে আমি ডেইলি দেখতে যেতাম নিশ্চিত।
র হাসান
আচ্ছা, হুমমম
নিঘাত তিথি তাহলে পিচ্চি
...........................
Every Picture Tells a Story
হ, আর সুইট করে কথা বলে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
হা হা হা হাহা.....
(জয়িতা)
মজা লাগলো পড়তে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
এটা মজার হয়েছে রে।
তিথিতো আসলেই একটা পিচ্চি। আর অনেক সুইট।
নেক্সট কে আসছে?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
- নেক্সট (সচলের বাইরের) যে-ই আসে, তার ফটুক চাই। এইসব ফটুক-রেফারেন্স ছাড়া গল্প ছৈল্ত ন!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধন্যবাদ সবাইকে।
@রানা, অন্যকে নিয়ে লিখলে সেটা পড়তে মজাই লাগে...
@ধুগো,রেফারেন্স তো দিচ্ছি। স্থান, কাল, পাত্র সবই আছে। ফটুক নাই, তখন ফটুক তোলার হিড়িক ছিলোনা।
আপনি যদি শাওনের ফটোকপি হন, তাহলে তো আপনাকে আমি দেখছিই!
রানাপু, তিথি'র পর যে কার পালা আসে!
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম, দেশ উচ্ছন্নে যায়নি
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ভাগ্যিস!!
দেশ এখনো উচ্ছন্নে যায়নি!! :)
মজা পাইলাম লেখা পড়ে।
-মুক্ত বয়ান।
নাহিদ আপু,
খুব মিষ্টি একটা লেখা...আর আমার প্রসঙ্গে পড়ে একদম সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম! আমাকে পিচ্চী বললা? কান্ড দেখো, এইটা তো ৯ বছর আগের কাহিনী, আমি তো ব্যাপক বড় হয়ে গেছি এর মাঝে! কিন্তু আমার বড় আপু আর ভাইয়াগুলার কাছ থেকে বরাবরই অসম্ভব আদর পেয়েছি, আমার ইউনিভার্সিটির প্রথম দিনগুলোয় যখন আমার কোন বন্ধু ছিলো না, সেই সময়গুলোর জন্য আমি তোমাদের সবার কাছে ঋনী। এখন এতদিন পরে এক ধাক্কায় আবার ৯ বছর পেছনে চলে গেলাম। থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।
বাই দ্য ওয়ে, আমি কিন্তু দেশে। অনেক দিন একটু খানি সচলে ঢুঁ মারার সুযোগ পেয়েছিলাম আজকে। তখনই তোমার লেখাটা পড়লাম।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
নতুন মন্তব্য করুন