অরভিন্দ কাজরিওয়াল
নানুজি, একজন সাধারণ শ্রমিক বাস করেন ভারতের রাজধানী শহর দিল্লীর এক বস্তিতে। তার রেশন কার্ডটি সম্প্রতি কাজ শেষে আসার পথে তিনি হারিয়ে ফেলেন যে কার্ডটির মাধ্যমে তিনি সরকারের সাবাসিডাইজ ডাল, ভোজ্য তেল এবং কেরাসিন পেতেন।
একটি ডুপ্লিকেট কার্ড এর আবেদন করা সত্বে ও তিনি তা পাননি।
অবশ্য সামান্য পরিমাণ ঘুষ প্রদান করলে হয়ত: অনেক আগেই তা চলে আসত। কিন্তু না নানুজি সে পথে না গিয়ে স্থানীয় একটি গ্রুপ [i]"পরিবর্তন" এর সাহায্য কামনা করেন। পরবর্তীতে, তাদের উত্সাহে তিনি তথ্য ও অধিকার কমিশনে রেশন কার্ড না পাবার ব্যাপারে অভিযোগ জানান।
"পরিবর্তন" এর মুল আইডিয়াটা ছিলো অরভিন্দ কাজরিওয়াল নামক ৪১ বছর বয়সী একজন ব্যক্তির। প্রখ্যাত 'ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি ' থেকে মেকানিক্যাল
ইঞ্জিনিয়ারিং এ পাশ করে যেখানে তার অধিকাংশ সহপাঠীরা মার্কিন মুলুকে অভিবাসী হলেন সেখানেই ব্যতিক্রম অরভিন্দ। গ্রাজুয়েশন সমাপ্ত করে ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসে অতিরিক্ত কর কমিশনার হিসাবে চাকুরি নেন তিনি। চাকুরিতে ঢুকেই দেখতে পেলেন তার অধিকাংশ সহকর্মীরাই ঘুষের বিনিময়ে ফাইল আদান-প্রদান করছেন ।
২০০০সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা এবং তার বাস্তব সমাধানের যাত্রা শুরু হয় অরভিন্দের "পরিবর্তন" সংস্থার।
একই সাথে পরিবর্তনের পক্ষ থেকে তথ্য জানার অধিকার(Right to Information, RTI) বিষয়ে জনসেচতনতামূলক প্রচারণাও চালানো হয়। ২০০৬ সালে অরভিন্দ কর কমিশানারের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে "পরিবর্তন" এ চলে আসেন পরোপুরি।
অরভিন্দ নিজে এবং "পরিবর্তন" এর সদস্যদের নিয়ে দিল্লী বিদ্যুত বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন এই মর্মে যে, তাদের সকল বিদ্যুত সমস্যার সমাধান ঘুষ ছাড়াই করে দিতে হবে।
এর পর থেকেই "Don't Pay the Bribe" এই স্লোগান নিয়ে সারা ইন্ডিয়াতে প্রচারানা চালাচ্ছে। ঘুষের বিরুধে এই জিহাদে শরিক হয়েছে হাজার, হাজার সাধারণ মানুষ। তারা তাদের সমস্যাগুলো Right to Information, RTI আইন অনুসারে ঘুষ না দিয়েই সেবা নিতে সচেস্ট হয়েছে।
ম্যাগসাসে পুরুস্কারে ভূষিত ইন্ডিয়ান পুলিশ অফিসার কিরণ বেদী বলেন-"অরভিন্দ একজন সত্যকারের সৃজনশীল সমাজ সংস্কারক, অসাধারণ অনুপ্রেরণার ব্যাক্তি। "পরিবর্তন" এর এমন সাফল্যের জন্য কিন্তু কোন এনজিও'র কাছ থেকে কোন আর্থিক সহায়তা নিতে হচ্ছে না, বরং এর তরুন সদস্যরাই একে পরিচালনা করছেন। কর্মীদের বেতন সংগ্রহ করা হয় এই সংস্থার সদস্য সাধারণ মানুষ ও শুভাকাংখীদের টাকায়। এমনকি অনেক সরকারী কর্মকর্তারাও "পরিবর্তন" এর সাফল্যে আনুপ্রাণিত হয়ে এতে আর্থিক সহয়তা দান করছেন।
"আমাদের কাজের প্রভাব সরাসরি মানুষের জীবনে পড়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের আরো কঠিন কাজ করতে হবে" বললেন সমাজকে বদলে দেয়া অরভিন্দ।
(Rider's Digest- জানুয়ারী ২০১০ সংখ্যা থেকে অনূদিত )
মুসাব্বির
মন্তব্য
অসাধারন।
আমরা কবে পাব অরভিন্দ কাজরিওয়ালের মত কাউকে?
###তাসনীম###
অরভিন্দের মতো মনুষদের জন্যই সমাজে পজিটিভ পরিবর্তন আসে যারা শত নির্যাতন উপেক্ষা করেও তাদের নিজের মত করে প্রতিবাদ করে যায়। স্যালুট!
অনেক ধন্যবাদ পোষ্টটা শেয়ার করার জন্য ।
আমরা এই আন্দোলন শুরু করলেই হয় -- কারো জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে এমন তো কোন কথা নেই ।
--
ইমতিয়াজ মির্জা
চমৎকার!
সিরিজের পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ভাল উদ্যোগ, কিন্তু কথা হচ্ছে শুরুটা করবে কে, শুরু করার মানুষের বড্ড অভাব এদেশে।
-- শফকত মোর্শেদ
ধন্যবাদ আপনাকে খুব ভালো একটা লেখার জন্য। অনেক অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়, সাহস আসে বুকে।
আশা জাগে।পরিবর্তন চাই, পরিবর্তন।
সুযোগ থাকলে পাঁচ তারা দিতাম!
--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বাহ।
ওখানে চা'য়ের বিজ্ঞাপন হয় নির্বাচনের দিন ভোট দেবার জন্য, ঘুষ গ্রহণে বিরোধীতা করে, আর আমাদের চা'য়ের বিজ্ঞাপন হয় নাচানাচি, রেল স্টেশনে চা খাওয়া!!
অনেক বেশি সচেতনতা প্রয়োজন আমাদের। কাউকে এগিয়ে আসতেই হবে। "আলোকিত মানুষ চাই"
- মুক্ত বয়ান।
অসাধারণ একটা বিষয় একটা বিষয় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। কারো অপেক্ষায় না থেকে নিজেই শুরু করে দিতে ইচ্ছে করছে।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
সচলে স্বাগত।
চমৎকার বিষয়। তবে কেবল অনুবাদ না করে বাড়িয়ে লিখতে পারতেন। বেশ কিছু বানান ভুল আছে। কোটেশন দিলে আর ইটালিক করার প্রয়োজন হয় কি? কিছু বাক্য ভেঙে দিলে বা বাড়তি যতিচিহ্ন দিলে অর্থ স্পষ্ট হত।
সমালোচনায় ঘাবড়াবেন না আরো লিখুন।
চাইলে আমরা প্রত্যেকেই এক একজন অরভিন্দ কাজরিওয়াল হতে পারি।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
নতুন মন্তব্য করুন