সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালায় চোখ মেলি। 3’x1.5’ মাপের চারকোণা জানলায় চারকোণা আকাশ ধরা পড়ে। বিশাল আকাশে ক্ষুদ্র আমাকে দেখে অভ্যস্ত আমি বিহ্বল হয়ে আমার চেয়েও ক্ষুদ্র চৌকো আকাশ দেখি। জানলাটাকে গরাদ মনে হয়। ছোট ওই জানালাতে আটকে পড়া আকাশটুকু দেখে আমি বুঝতে পারি না শরৎ এসেছে কী না!
আহ! শরৎ আমি কতই না ভালবাসি.........
বাইরে যাই কাজের খোঁজে,একটা কাজ,খুব দরকার। মা কষ্টে আছে,বুলুটা ভালো নেই। একটা কাজ চাই,কাজ! কাজকে এখন বহু আকাংখিত,দূরে সরে যাওয়া ভালবাসার মানুষ মনে হয়,যতই তারে চাই ততই সে দূরে যায়!
বাইরে যাই,ধোঁয়ায় ঢাকা,দালানে ঢাকা আকাশ দেখি। ওতে কী আর আমার মন ভরে!? আমি তো আবার খোলা আকাশের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া মেয়ে।
‘মফস্বলের কলেজে পড়া মেয়েরে কেডা কাম দিব,শুনি?’ মা বলেছিল।
আমি হেসে বলেছিলাম, ‘দিব মা দিব,কেউ না কেউ ঠিকই দিব।’ কত আর সহ্য করা যায় মায়ের কষ্ট! চলে আসি ঢাকায়,ছোট এক 4’x8’ ঘর খুঁজে দেয় ছোট মামা,বাড়ীওয়ালার দুই বাচ্চাকে সকাল সন্ধ্যা পড়াই। আমার চলে যায়,কিন্তু মা!......?জানি না কিছুই.........
অবশেষে বাড়ীওয়ালার পরিচিত এক জায়গায় আমি কাজ পাই। আমার লম্বা দোহারা গরণ আর মায়াকাড়া চোখ দেখে আমাকে প্রাইভেট সেক্রেটারীর চাকরি দেওয়া হয়। মাকে খবর জানাতে বহুদিন পর আমি আমার আঙিণায় ছুটে যেতে চাই। আবার আমার ওই শহরতলীর খোলা আকাশ দেখব আমি! আহ!
আমার চেনা মফস্বলের পথ ধরি।
সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছিলো সেদিন......ঝুম বৃষ্টি মাখা আঁধারে আমি ছুটি......মফস্বলের বাসস্টপেজ থেকে আমার শহরতলীর পথে রিক্সা নেই। হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে পথ আগলে দাঁড়ায় তিন যুবক......নির্জন পথে আমায় টেনে নামায় রিক্সা থেকে,আমি হতবাক,রিক্সাওয়ালা ভয়ে পালায়। আমাকে টেনে নামায় রাস্তার পাশের পাট ক্ষেতে,আর তারপর............
ভোর রাতের দিকে আমাকে ওরা মেরে ফেলে,আমি চোখের সামনে দেখতে পাই আমার দিকে ছুরি নিয়ে আসছে,এইত,একখুনি বেঁধাবে আমার গায়ে,আমি চোখ বুঁজি,আর্তনাদ বের হয় না আমার কন্ঠ থেকে,জিহ্বা তো আগের রাতেই কেটে দিয়েছে......
মা গুমরে কেঁদে ওঠে, ‘ওরে আল্লাগো,কেডায় করল এই কাম! আমার সুনা,উড গো ময়না,তুমার মায়রে দেহ গো,মা...............’ বিলাপ চলতেই থাকে,আমি ঘুরে ঘুরে মা,বুলুর কাছে যাই। আমাকে কেউ দেখতে পায় না।
আমার লাশটা কাফনের আবরণে দেখি,আমার কান্না পায় না,দূঃখ হয় না,কষ্ট হয় না কোন,অনুভূতির ঊর্ধে কোন জগতে তখন আমি......মাথার উপর খোলা আকাশ,আমার সেই চেনা আকাশ,ভালবাসার শরতের আকাশ,শাদা মেঘের আকাশ,আমার শৈশবের আকাশ,আমি কিছুই দেখি না......কিছুই না!
@স্নিগ্ধা করবী
মন্তব্য
বেশ লাগলো। লিখুন আরো।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
- এরকম একটা খবর কি পড়লাম কোথাও! মনে করতে পারছি না, যাইহোক।
প্রথম লেখা হিসেবে বেশ 'ভারী' একটা বিষয়েই লিখলেন। আরও লিখুন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এটা শুধু সচলায়তনে লিখা আমার প্রথম গল্প নয়,আমার নিজের লিখা প্রথম গল্পও বটে। আর এতে এ ধরণের মন্তব্য আমি আশা করি নি,অনেক ভাল লেগেছে আপনার মন্তব্যে। এর সাথে লিখা ভাল করার জন্য দুর্বল দিক তুলে ধরলে আরও ভাল লাগবে। ধন্যবাদ।
-স্নিগ্ধা করবী
তবে আপনি নিশ্চিন্তে, মন খুলে লিখতে থাকুন (খালি বানানগুলো একটু খেয়াল রাখবেন)। সচলায়তন খুবই সাহায্যপ্রবণ এ ব্যাপারে। অবশ্যই ভালো ফিডব্যাক পাবেন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
স্বাগতম আপুনি!
লিখুন আরো...
--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অস্থির করে দিলেন ।
বরাহের সঙ্গে এই হাঙরকুমীরদেরও শিকার করা হোক।
লেখা ভালো হয়েছে।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ধন্যবাদ সবাইকে। অনেক উৎসাহ পেলাম আপনাদের থেকে।
ধন্যবাদ সবাইকে। অনেক উৎসাহ পেলাম আপনাদের থেকে।
-স্নিগ্ধা
খুবই সেন্সিটিভ সাবজেক্ট। অস্বস্তি হয় পড়তে গেলে।
--------------------------------------
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।
আমার প্রথম লেখার বিষয় ও একি ছিল।কবে আমরা মুক্তি পাব কে জানে!লিখতে থাকুন
সচলে স্বাগত
গল্পের বিষয়টা অনেক গভীর
তবে সরাসরি স্টেটমেন্ট আকারে বাক্যগুলো না সাজিয়ে আরেকটু খেললে গল্পটা নিছক ইনফরমেশন থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র গল্প হয়ে উঠবে খুব দ্রুত
ধন্যবাদ লীলেনদা। ভাল লাগলো আপনার পরামর্শে। কিন্তু লেখালেখিতে নতুন তো,তাই আপনার কথার অর্থটা ঠিক ধরতে পারি নি,একটু যদি বুঝিয়ে বলেন,তাহলে পরের বার ঠিক মত লিখতে পারব আশা রাখি।
-স্নিগ্ধা করবী
ধন্যবাদ সবাইকে।
পত্রিকায় আমরা প্রতিদিনই এরকম খবর দেখি।কিন্তু কিছু খবর আমাদের সামনে আসে না। শৈশবে যৌন হয়রানি ( ধর্ষণ বা অন্য কোন ভাবে ) ,যা ছেলে এবং মেয়ে শিশু,যে কারো ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে এবং অহরহই ঘটে, এসব দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যায়। কখনও কখনও আবার এ ঘটনাগুলো ঘটায় খুব কাছের লোকেরা। কি ভয়ানক! ধিক্কার ঐ সব হাঙ্গর কুমিরদের।
-স্নিগ্ধা করবী
নতুন মন্তব্য করুন