একটা বিষয় নিয়ে লিখবো বলে অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম। কীভাবে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। গতকাল রাতের ঘটনাটা আমার লেখার উৎস হিসেবে কাজ করল। অফিসে এসে জরুরী কাজ গুলো শেষ করে কীবোর্ডে হাত দেবার সময় বের করলাম। আমি আবার লেখার সময় অনেক বানান ভুল করি, তাই এই অনিচ্ছাকৃত বা বলতে পারেন অজ্ঞতা জনিত ভুলের জন্য আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।
আমরা পাঁচ কলিগ একটা রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার শেষ করে বের হয়েছি, একটা ১০/১২ বছরের ছেলে কাছে এলো। জীর্ণ শীর্ণ শরীর, মাথায় টুপি, গায়ে পাঞ্জাবী সাথে পাতলা একটা চাদর জরানো। শীতে ঠক্ঠক করে কাঁপছে, হাতে একটা মানি রশিদ। আমাদের কাছে এসে যেটা বলল, তা হলো -"স্যার আমি একটা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়ি, এতিমখানায় থাকি, আমাদের এতিম খানার জন্য কিছু সাহায্য দিবেন।" রাত তখন দশটা, শৈত্য প্রবাহ, হালকা বৃষ্টির ফোঁটাও আছে। আমরা যেখানে দ্রুত বাসায় ফেরার জন্য ব্যতিব্যস্ত সেখানে ছেলেটা রশিদ হাতে এতিমখানার জন্য চাঁদা সংগ্রহ করছে, এটা কতটা যুক্তিযুক্ত বা বাস্তব সম্মত?এবং কতটা মানবিক আমার জানা নেই।
আমার জানা মতে প্রত্যেকটা হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও তার এতিমখানার জন্য একটা পরিচালনা পরিষদ থাকে। যাদের প্রধান কাজ হলো প্রতিষ্ঠানটির জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। তারপরও আমরা প্রতিনিয়তই দেখি এই ছেলেটির মত শতশত কোমল মতি শিশু রাস্তায়, পার্কে, বাসে, লঞ্চ ঘাটে, বিশ্ববিদ্যালের ক্যাম্পাসে, কলেজ গেটে, হাটে- বাজারে চাঁদা সংগ্রহের রশিদ হাতে ঘুরে বেড়ায়। মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে হাত বাড়ায়।
আমার জানা মতে (জানার ভুল থাকলে সংশোধন করে দিবেন) প্রত্যেকটা মাদ্রাসায় লেখাপড়ার জন্য একটা সময় (সিডিউল) মেনে চলা হয়। কখন ঘুম থেকে উঠবে, কখন দুপুরের খাবার হবে, কখন ঘুমাবে, মানে একটা কঠিন রুটিন মেনে চলতে হয়। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে হয়। অথচ রাত দশটায় একটা কোমল মতি শিশু শীতের রাতে প্রতিষ্ঠানের জন্য চাঁদা (কতটা সত্যি জানি না) চেয়ে বেড়াচ্ছে, এটা কতটা যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশে মাদ্রাসা ও এতিমখানা ছাড়া আর কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য এইভাবে চাঁদা চাওয়ার নজির নেই (যদিও অন্যভাবে তহবিল সংগ্রহ করে)। তাহলে শিক্ষা অর্জনের এই মাধ্যমটিতে কেন ছাত্রদের চাঁদার রশিদ হাতে মানুষের কাছে ছুটতে হয়?
এখন আমার কথা হলো যদি এই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অর্থের জন্য রাস্তায় মানুষের কাছে অনুদান (চাঁদা) চাইতে হয় তাহলে পরিচালনা পরিষদ কী করে? দেশের সরকার কী করে? সরকার কী এই বিষয়টা ওকিবহাল নয়? নাকি এই অর্থ দেশের জঙ্গী সংগঠন গুলো তাদের অনৈতিক কাজে ব্যবহার করে? মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষার নামে জঙ্গী সংগঠন চালানোর তহবিল হিসেবে সংগ্রহ করে?
যে সব গরীব ছেলে গুলো ইসলামিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য এই সব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়, তারা কখন লেখাপড়া করে? তাদের কে যদি অর্থ সংগ্রহের জন্য রাস্তায় নামতে হয় তাহলে এতিমখানার কী দরকার? পরিচালনা পরিষদের কী প্রয়োজন?আসলে চাঁদা সংগ্রহের নামে প্রকারন্তে তাদেরকে কী ছোট বেলা থেকেই ভিক্ষাবৃত্তি শিখানো হচ্ছে না? এই সব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই, আপনাদের জানা থাকলে শেয়ার করবেন কি?
মুসলমান হিসেবে ইসলামিক শিক্ষা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক না হলেও প্রয়োজন। আমি যদি আস্তিক হই, আল্লাহতে যদি আমার বিশ্বাস থাকে তাহলে নামাজ পড়ার জন্য, কোরআন পড়ার জন্য ইসলামিক শিক্ষা, আরবী শিক্ষা জানা থাকা ভালো। কিন্তু যারা এই শিক্ষা প্রদান করছেন তাঁরা কেন এই কোমল মতি শিশুদের হাতে চাঁদার রশিদ তুলে দিচ্ছেন? কেন প্রকৃত শিক্ষা না দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শিখাচ্ছেন? বাংলাদেশ সরকারের কী কোন বিভাগ নেই এই বিষয়টা তদারকি করার? আমাদের কী এই বিষয়ে কোন কিছু করার নেই।
আমরা অনেকে আছি ধর্মের কথা বিবেচনা করে, নেকী হবে ভেবে নীরবে পকেট থেকে টাকা বের করে দেই। আসলে কী এটা ঠিক? আল্লাহর পথে সাহায্য করার জন্য অনেক পদ্ধতি আছে, পথ আছে, আমরা কী সেই পথে সাহায্য করতে পারি না। আমার এই অজানা প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানা নেই, আপনাদের আছে কি?
কামরুজ্জামান স্বাধীন।
মন্তব্য
পোস্টটায় চোখ বুলিয়ে গেলাম। একটু অপ্রাসঙ্গিক একটা প্রশ্নঃ
কেন? স্বভাষায় প্রার্থনার ব্যাপারে কোরআনে কি কোন বিধিনিষেধ আছে? অন্যভাবে নেবেন না প্রশ্নটা। এটা নিছক আমার কৌতুহল।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
রাহিন ভাই, আমি কিন্তু বলেনি যে ইসলামী শিক্ষা জানা বাধ্যতামূলক, আমি বলেছি জানা থাকা ভালো। নামাজের সময় সূরা-কেরাত কিন্তু পড়তে হয়, তবে আপনি যদি সব গুলো সূরা-কেরাতের বাংলা অর্থ জানেন বা মনে রাখতে পারেন তাহলে ভিন্ন কথা। ধন্যবাদ চোখ বুলানোর জন্য।
কামরুজ্জামান স্বাধীন
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
ধন্যবাদ মাহবুবুল ভাই। আপনি বিষয় গুলো আরো সুন্দর ভাবে যোগ করেছেন। আপনার অন্তর্ভুক্তি লেখাটার মান বাড়িয়ে দিয়েছে।
কামরুজ্জামান স্বাধীন।
আপনাকে অভিনন্দন। এই বিষয়গুলোকে আলোচনায় আনার জন্য। শিরোনামে যদি ক্রমিক ব্যাবহার করেন তাহলে আরেকটু ভাল হয়।
---
মাথায় টুপি পড়ে মাদ্রাসার প্যাডে টাকা চাইলেই আমাদের দেশে শিক্ষার জন্য কিছু পাওয়া যায়। এভাবে কিছু মাদ্রাসা চলে ও কিছু শিশু (কু)শিক্ষা পেয়ে বেড়ে ওঠে। সেখানে তার একটি ঠিকানা থাকে, একটি পরিচয় থাকে, স্বপ্নও থাকে।
প্যান্ট গেঞ্জি পড়া শিশু যদি প্যাড হাতে তার প্রাথমিক স্কুলের ফুটোচাল সারানোর চাঁদা চাইতে আসে, দিনের শেষ সে বলার মত কোন টাকা তুলতে পারবে কি না, এতে আমার সন্দেহ আছে। মোল্লা চেহারা, মোনাজাতে বসা শিশু ইত্যাদির প্রতি বাংলাদেশীর একটি জাতীয় দূর্বলতা আছে। এটা বিক্রি করা সহয, তাই যত্রতত্র এটাকে প্রয়োগ করা হয়।
আরো বঞ্চিত শিশুও হাত পাতে। তারা মাদ্রাসায় ঢোকে না। ফুটপাথ হয় তার শিক্ষালয়। সেখানে তার পরিচয় নেই, স্বপ্ন নেই। যদি শিশুটির দিক থেকে দেখি, তাহলে মাদ্রাসাটি তার হাতে প্যাড হাতে ধরিয়ে দিয়ে তার জীবনে একটি দিক নির্দেশনা দিয়েছে, সেটা ভুল হোক কলুষিত হোক, ফুটপাতের চাইতে ভাল। নয় কি?
ধর্মের প্রতি যতদিন এই প্রচলিত দুর্বলতা থাকবে, বলতে হবে আমাদের এটাই প্রাপ্য।
---
যদি ধর্মকে আলাদা করে রাখি, তাহলে আমার মনে হয় আগের পলিটেকনিকের ছাত্রের ও এই মাদ্রাসার ছাত্রের অবস্থার বিশেষ কি পার্থক্য আছে? গোড়ার সমস্যা একটিই - দেশের শিক্ষাব্যাবস্থার অপর্যাপ্ততা ও শিক্ষাব্যাবস্থায় নিচুতলার মানুষের প্রতি সরাসরি অনিহা; দুভাবে প্রকাশিত।
সরকারের কাছে দেশের সব শিশুকে বিনা বেতনে প্রাথমিক স্কুলে পাঠানোর মত টাকা নেই, এটা বিশ্বাস করা যায় না। এটাই যদি করা না যায়, তাহলে আমাদের রাজকোষের হাজার কোটি ডলারের কোন দাম নেই।
ভাল নীতিমালা আর তার কড়াকড়ি প্রয়োগ না থাকলে কিন্ডার্গার্টেন বলেন, বাংলা স্কুল বলেন, আর মাদ্রাসা বলেন- এগুলোকে দিন কে দিন গোস্তের দোকান হয়ে যাওয়া থেকে ঠেকানো যাবে না।
একমত
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। বিষয় গুলো স্পর্শকাতর,তারপরও আমাদের কী একটু সচেতন হওয়া উচিত না? ধর্মব্যবসায়ীদের জেনে রাখা ভালো, মানুষ এখন অনেক বেশী জানেও বুঝে, সুতরাং সব বদলে যাওয়ার দিনে, পুরাতন ও প্রচলিত পন্থায় আর কতদিন নোংরামী করবে তাঁরা।
কামরুজ্জামান স্বাধীন।
আপনার বোধ হয় একটু ভুল হচ্ছে । বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক এবং এ বছর থেকে পাঠ্যবইও বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
এ সরকারি স্কুলে হতে পারে। কিন্তু বেসরকারি স্কুলেও কি প্রাথমিক শিক্ষা আইন করে অবৈতনিক করা হয়েছে? প্রাথমিক স্তরের বেসরকারি মাদ্রাসা, স্কুল আর কিন্ডার্গার্টেনগুলোর বেতন আদায়ের বিরুদ্ধে দেশে আইন তৈরী হয়ে গেছে - তাই বলছেন?
স্বাধীন ভাই
আপনি যদি কেবল জানার জন্য এ ধরনের পোস্ট সিরিজ আকারে দেয়া শুরু করেন তবে আমি বলব আমি আগ্রহী না। কোন কিছু জানার জন্য হচ্ছে উপযুক্ত ফোরাম, ব্লগ না
সব মাদ্রাসাই রুটিন মেনে চলে না; সবারই হোমরাচোমরা নিয়ে গঠিত পরিচালনা কমিটি থাকে না। ভুয়া চাদা তোলা মানুষ যেমন আছে, সত্যিকারের মাদ্রাসা পড়া ছেলেপেলেও আছে যারা মাদ্রাসার জন্য চাদা তোলে।
একটা মানুষ কতটা গরীব হতে পারে, অথবা একটা মাদ্রাসা কীভাবে চলতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের খুব অল্পই ধারণা আছে।
ধন্যবাদ আলমগীর ভাই। আসলে আপনি যে অর্থে জানার কথা বলছেন, আমি সে অর্থে বলছি না। আমি সবার মতামত ও মন্তব্যের মাধ্যমে অনেক কিছুই জানতে পারছি। সেটা কী কম জানা? আর ব্লগটা কী একটু বুঝিয়ে বললে উপকৃত হব। আমার জানার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে তাই জানতে চাই। ধন্যবাদ বিষয়টা পড়ার জন্য।
কামরুজ্জামান স্বাধীন।
নতুন মন্তব্য করুন