গতকাল রাতে তিনটায় আমার গাড়ীর ভিতর তিনটা ভূত বসে ছিলো । না, না, চমকে উঠার কিছু নেই - খুবই ফ্রেন্ডলী ভূত।
রাত তিনটায় হাইওয়ের উপরে তিক্ত ঘোলা কুয়াশায় আমি যখন দুনিয়াটাকেই "মাদারচোদ" বলে গালি দিয়ে উঠছিলাম তখনই ভূত বাবাজীদের আগমন । গাড়ীময় পোড়া সিগারেট/গাঁজার গন্ধ । ভূতের গন্ধ এমন অদ্ভুত হয় নাকি ?
আপনারা নিশ্চয়ই ভূত দেখতে কেমন এটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে গেছেন ? আপনাদের কৌতুহল নিরসন করার জন্য বলছি -- ভূত দেখতে ভূতের মতো -- মানে ক্যামন যেনো আবছায়া ঘোলাটে । তাছাড়া ভূত দেখতে কেমন সেটা চিন্তা করলে ভূত দেখে ভয় পাওয়ার ব্যাপার চলে আসে। আমি তখন ডোন্ট কেয়ার মুডে গিয়ার তুলে দিয়েছি । অন্য যেকোন দিন হলে নিশ্চয় পেটের ভিতর ডাক শুরু হয়ে যেতো -- আমি হলাম যে কিনা ভূতের সিনেমা দেখে ভয় পায় ।
যাক -- রাত তিনটায় কোন ট্রাফিক নেই , আমি তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন । এখানে ব্যাপারটা কেমন উল্টা হয়ে গেছে ওরাই আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন না ।
আমার ঠিক পিছনের ভূতটা অন্যদের উদ্দেশ্যে বললো,
"এখন যে গাড়ী চলছে সেটাই সত্যি"।
আমার পাশেরটা- "গতকাল সে খুব খুশীমনে গাড়ী চালাচ্ছিল।"
তার পিছনের জন - "অনেকেই আগামীকাল গাড়ী চালাবে।"
আমি মনে মনে বিরক্ত আর কিঞ্চিত কৌতুহলী, এই নিঃসঙ্গ রাতে কারো সঙ্গ মন্দ লাগছে না -- হোক না ভূত ।
আমি আলোচনায় যোগ দিলাম ব্যংগভরে "এই কথা গুলো প্রথম শুনলাম!? খুবই ইন্টারেষ্টিং।" আমার খোঁচায় ভূতেদের কোন প্রতিক্রিয়া হলো না । আপনারাই বলুন ভূত উদয় হয়ে ভয় দেখানোর বদলে বস্তাপঁচা তামাশার কথা বললে মেজাজটা খিচে যায় না?
ভূত গুলো হঠাৎ ফিসফিসে করে ভূতের ভাষায় আলাপ জুড়ে দিলো।। আমি দুঃখিত, আমি সেই ভাষা জানি না। তবে সেগুলো আমার এ্যাটিটুড সংক্রান্ত বলেই মনে হচ্ছিলো।
আমি রাস্তার দিকে মন তাকালাম । দুরে দুরে কুয়াশার দেয়াল । সত্যি বলতে একটা ভুতূরে রাত। গাড়ীর হেডলাইটের আলো ছাড়া তেমন কোন আলো নাই । ছিটেফোটা কিছু মনুষ্যসৃষ্ট আলো চোখে পড়ছে । নখ তোলা বিকৃতদেহী ডাইনীর মতো গাছ গুলো । আমার মনে মধ্যে এই অশরীরি রাতেও ফাজিল গান বাজতে থাকে -"ভূতের রাজা দিলো বর, জবর জবর তিন বর।" খোড়া ভূত,কানা ভূত,পঁচা ভূত ইত্যাদি রকম ভূতের চেহারা মনে পড়ে।
আমার পাশের ভূতটা বিড়বিড়ানী থামিয়ে বলল "ও যদি গতকালকে গাড়ী না চালাতো তবে আজকে ওর এইখানে গাড়ী চালানোর কথা ছিলো না"
আমার পিছনেরটা বলল "এখন এই ঠান্ডা রাতে গাড়ীর চালাতে চালাতে চাঁদের আলো খেতে দারুন লাগে"
আমি জিজ্ঞেস করলাম - "চাঁদের আলো খেতে ক্যামন?"
জবাব এলো -রক্তের সাথে ঠান্ডা দুধ মিশিয়ে খেলে যেমন লাগে!
মাই গড ! কি আজীব রেসিপি।
বাকী ভূতটা বল্লো "গাড়ী চলতে চলতে কালো কুয়াশার ভিতর হারিয়ে যাবার সম্ভবনা আছে"
আমি এইধরনের আলাপে আর উৎসাহ না দেখিয়ে সরাসরি আক্রমন নেমে পড়লাম "তোমরা কি চাও"
পিছনেরটা বল্লো "তুমি এখন ঠিক মতো গাড়ী চালাও এটাই আমি চাই "
পাশেরটা বল্লো "তুমি একদিন একজনকে চাপা দিয়ে পালিয়েছ, আবার একটা লোককে এ্যাক্সিডেন্ট হবার পর হাসপাতালে পৌছে দিয়েছিলে ।
তুমি আগে সবসময়ই সুখী অথবা দুঃখী অবস্থায় গাড়ী চালিয়েছ"
ভূতের গুপ্তজ্ঞানে আমি চমকিত হলেও শেষের এ্যাবসার্ড লাইনে হাসি পেলো এতো মেজাজ খারাপের মাঝেও।
আমি তো সুখী না হয় দুঃখীই ছিলাম এরজন্য সাইকিক/ভূত হতে হয় না তো।
আমার কোনার দিকের পিছনেরটা বল্লো - "আগামীকাল গাড়ী চালানোটা একঘেঁয়ে ব্যাপার"
একঘেঁয়ে শব্দটা গাড়ীর ভিতর ঘুরতে শুরু করে। এটা যেমন কটু শ্বাসরোধী একটা গন্ধে পরিনত হয়ে আমার মগজে লাথি মারতে থাকে । আমি ক্ষিপ্ত হয়ে যাই -- অনেক দিনের জমে থাকা ক্ষোভে ভূতেদের চৌদ্দগুষ্ঠি তুলে গালিপালাজ শাপশাপান্ত দিতে থাকি । গাড়ীটা যে একটা খোলা উঁচু ব্রীজের উপর চলছে এটা হঠাৎ খেয়াল হয়। আমি কেন বাড়ী থেকে বের হয়েছি মনে পরে তখন। আমি গাড়ীটাকে ব্রীজের রেলিং এর উপর তুলে দেই । পতনের সময়ের কয়েকসেকেন্ডে নিজেকে আমার মুক্ত স্বাধীন মনে হয় ।
ঐ কয়েক মুহূর্তে আমি মনে করার চেষ্টা করি আমি কেন আত্মহত্যা করতে এসেছিলাম। সেটা কি দিনের পর দিন বোর হওয়া? নাকি কাউকে সবকিছু দিয়ে বিশ্বাস করে ঠকা? জগৎসংসারে কেয়ার করার মতো মানুষের অভাব ? সাফল্য ব্যর্থতার দুইটার স্বাদ এইরাতের মতো তিক্ত হয়ে যাওয়া ?
আমি মনে করতে পারি না ।
--
ইমতিয়াজ মির্জা
মন্তব্য
- বস, আপনে এখন ব্লগাচ্ছেন কোত্থেকে? নেটস্পিড কেমন? জানিয়েন, কয়দিন পরতো ঐখানেই আসা লাগবে। কী কী সাথে লাগবে আগে থেকে জানা থাকলে নিয়া আসতাম। ব্লু-রে ডিস্কে বলিউডি নাইকাদের গীতমালা পাওয়া যায়?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বস ! এটা কি কইলেন -- মইরাও নেট নিয়া চিন্তিত! -- কি দিন আসলো মানুষ এখন হুরপরী বাদ দিয়া নেট নিয়া চিন্তা করে
এইখানে আসার সময় কিছু নাইকি পরা নাইকা আনলে মন্দ হয় না -- বাদশাহী ইশ্টাইলে আসর বসানো যেতো
জীবনে তো কিছুই ছিলো না খেতা বালিশ ছাড়া -- এখন এখানে যদি কোলবালিশে হেলান দিয়ে মজা লুটতে পারি !
--
ইমতিয়াজ মির্জা
যদিও ব্লগরব্লগর ট্যাগ দিয়েছেন, কিন্তু আপনার লেখাটা গল্প হিসেবে পড়লাম। বেশ ভালো লাগলো।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
অনেক ধন্যবাদ ।
ভালো থাকুন ।
আমি গল্প হিসাবেই লিখেছি ।
--
ইমতিয়াজ মির্জা ।
ভুতের সাথে সফর শুভ হোক। গল্প হিসেবেই ভালো লাগলো।
সুন্দর...
---- মনজুর এলাহী ----
ভূতের সাথে সফর শুভ হৌক !?
এটা কিছুতেই শুভ হৈতে পারে না !
---------
অনেক ধন্যবাদ পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য।
--
ইমতিয়াজ মির্জা ।
এটা কি সত্যি ব্লগরব্লগর ?? দিব্যি একটা গল্প বলে মনে হলো যে...
তিনভূতের কথাবার্তায় অনেকটা ক্রিস্মাস ক্যারল টাইপ গন্ধ পাচ্ছিলাম। পরে আবার আরেকটা গল্পের কথা মনে হলো। খুব সম্ভবতঃ সেটা মার্ক টোয়েনের কোন একটা গল্প। পুরোনো কোন একটা বাড়িতে কয়েকটা শিশুতোষ ভূত বাস করতো , তাদের নিয়ে...
_________________________________________
সেরিওজা
আসলে লেখা সংরক্ষন করার সময় ক্যাটাগরী সিলেক্ট করতে ভুলে গিয়েছিলাম। এটা মোটেই ব্লগর ব্লগর না।
হমমম ক্রিসমাস ক্যারলের ভূতেরা উপদেশ ময় ছিলো -- এইখানে ভূতেরা নির্লিপ্ত । আমার অবশ্য ক্রিসমাস ক্যারলের কথা মাথায় ছিলো না । আপনি বলাতে একটু মিল খুজে পেলাম।
মার্ক টোয়েনের গল্পটা মনে করতে পারছি না -- নামটা মনে আছে কি ?
--
ইমতিয়াজ মির্জা ।
ভালো লাগলো; কথোপকথনগুলান বেশি।
"Life happens while we are busy planning it"
অনেক ধন্যবাদ ।
আমার সাথেও কিছু ভুত থাকে। আমার সুখ দুখের ভাগিদার। নইলে হয়তো আমিও ব্রিজের রেলিং এ উঠে পরতাম।
তাই তো ! কালকে রাতে গাড়ীতে আপনিও ছিলেন নাতো ?
রেলিং উঠলেও লাভ নাই -- না উঠলেও ক্ষতি নাই । জীবন এমনই ।
--
ইমতিয়াজ মির্জা ।
গতকাল রাতে তিনটায় আপনার গাড়ীর ভিতর তিনটা ভূত এর সাথে দেখা হবার আগে তিন জন মানুষকে সাথে নিয়ে তিন ঘন্টা ধরে তিন বোতল সাবাড় করেছিলেন নাকি দাদা ?
(অদ্ভুত তো! রেজিঃ না করেও এখানে কমেন্টানো যায়??
জবাবও দেয়া যায়। বুঝলেন?
তিন ষ্টিক হৈতে পারে -- বোতল হৈতে পারে না
কমেন্ত দিলেনই যখন এতো কষ্ট করে -- একটু গুণকীর্তন করতে ক্ষতি কি ছিলো ?
==
ইমতিয়াজ মির্জা
কোন দয়াবান মডু ভাই/বোন ব্লগর ব্লগর থেকে গল্প ক্যাটাগরী করে দিবেন প্লীজ ।
সাথে এরশাদ দাদু -- এই জিনিসটা আমার জোশ লাগে
ভুলবশত অন্য ক্যাটাগরীতে চলে গেছে -- আর লোকে আমার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাইতাসে !
--
ইমতিয়াজ মির্জা
সন্দেহ নিয়েই তো তাকাবে! আপনি তো ভাই লোক ভাল না...দিব্যি একটা সুন্দর গল্পকে ব্লগরব্লগর বলে চালিয়ে দিলেন! লিখার স্টাইল এনজয় করেছি ভাই,ভীষণ রকম!
ভূতবাস শুভ হোক......আমাকে রাস্তাটা দেখিয়ে দিন তো,ওখানে গেলে কি ভাল লিখা যায়!!!!!????? তাহলে আমিও যাব।
-স্নিগ্ধা করবী
খাইসে ! আসলে কোন ধ্যানে পোষ্ট দিয়ে ফেলেছি খেয়াল ছিলো না ।
ভালো লেখার রাস্তা বড়ই কষ্টকর -- আপনার জন্য এই অশুভ কামনা আমি কখ্খনো করতে পারি বলুন ?
শান্তিতে থাকুন ।
মন্তব্য পড়ে মজা পেয়েছি -- ধন্যবাদ ।
--
ইমতিয়াজ মির্জা
বেশ লাগলো। অন্যরকম গন্ধ।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
অনেক ধন্যবাদ ।
রজনীগন্ধার শুভেচ্ছা ।
--
ইমতিয়াজ মির্জা ।
গল্পটাবেশভালোলাগ্লো..
অনেকধন্যবাদদেয়াহৈল।
গল্পের প্লট টা চমৎকার। গল্পের নাম এমনও হতে পারতো - 'চতুর্থ ভূত' অথবা "চতুর্থ ভূতের বিষাদ কাব্য"। [শফকত - ]
আপনি কই ছিলেন ভাই গল্প লেখার পর আরেকজনকে পড়িয়ে নাম ঠিক করতে পারি নাই ।
আমি সাধারনত শিরোনাম নিয়ে ঝামেলায় পড়ি কম ।এবারের টাই কিছু খুজে পাচ্ছিলাম না ।
থ্যাংকস পড়েছেন আর কমেন্ত করেছেন বলে ।
-- ইমতিয়াজ মির্জা ।
নতুন মন্তব্য করুন