জায়গা হলো অবশেষে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ৩০/০১/২০১০ - ১২:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্কুলে আমাদের এক "ভাবী সমিতি" আছে।
প্রথম প্রথম আমি সেখানে বেশ ম্রিয়মাণ থাকতাম, মেয়ের তখন ৩ বছর, ঘরে আরেকটা সদ্যজাত; আমিও দৌড়ঝাঁপ করে অফিসে ছুটতাম। এই ভাবী-গ্রুপকে কেবল দূর থেকেই দেখতাম স্কুলের বাইরে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন। কেউ কেউ ঘরের আটপৌরে পোষাকে চলে এসেছেন চোখে ঘুমের ছাপ নিয়ে, কেউ এরমাঝেই বেশ চমক-লাগানো সাজ দিয়েছেন; আবার কারো কারো পায়ে কেডসের সাথে জিন্সের প্যান্ট, যেন মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছেন এইরকম।
মাঝে মাঝে আমি হাই-হেলো টাইপ কথাবার্তা বলার চেষ্টা করেছি, আমাকে কেউ তেমন পাত্তা দিত বলে মনে পড়েনা। তবে পাত্তা পাওয়া শুরু করলাম যখন তারা আমার বাচ্চার নাম জানলেন। "ও আপনি জাইনা'র মা?" মেয়ের খ্যাতির কারণে আমার কিছুটা খতির মিলে গেল, যদিও ওনাদের কথার দৌড় আর টপিকের সাথে তাল মেলানোটা ছিল বেশ কষ্টকর!
চাকরি ছাড়ার পর ভাবীদের সাথে আরো বেশি সময় দেওয়া শুরু করলাম। ওনাদের আলাপের টপিক ধরে ফেললাম বেশ দ্রূতই। "আর বোলেন না ভাবি; এদের হাব-ভাবে মনে হবে যেন বাসায় আমি-ই মেইড আর উনি ঘর চালান!" "ভাবি দাঁড়ান দাঁড়ান, গলারটা নিশ্চয়ই বাইরে থেকে? কী যে মানিয়েছে না আপনাকে!!" "আমার শাশুড়ি তো সামনা-সামনি আপনাকে চামচে তুলে মধু খাওয়াবে, কিন্তু পেছনে এমন সব..." "স্কুলের ডায়রীটা দেখেছেন? সব যদি আমি-ই বাসায় পড়াবো তাহলে তোদেরকে এত টাকা দেই কেনো?" ইত্যাদি।
আমার বড়মেয়ে খুবই বন্ধু-পাগল। নার্সারিতে থাকতেই সে আমার ফোন নাম্বার মুখস্ত করে ক্লাসে বিলোনো শুরু করে দিলো। বাসায় একেক দিন একেক টা চিরকুটে বন্ধুদের ফোন নাম্বার লিখে আনতো আর ওর বাবার দেওয়া এক ডায়রীতে টুকে রাখতো। বিভিন্ন সময়ে ওর ক্লাসের বন্ধুদের মা'রা ফোন করে আমাকে প্রশ্ন করেছেন "ভাবী কাল সত্যিই কি আপনার বাসায় দাওয়াত?" আমি শুনে আকাশ থেকে পড়তাম, মেয়ে আমাকে না-জানিয়ে ক্লাসের বন্ধুদের দাওয়াত দিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত ওকে প্রমিস করলাম ওর স্কুলের পাশাপাশি যেদিন বাসা নেবো সেইদিন দাওয়াত দেবো।
স্কুলের পাশে বাসা নিয়েছি। দাওয়াত দেবো দেবো করে আর হয়ে ওঠেনি; ঘরের কাজে সাহায্য করার মত কেউ ছিলনা এটাও আরেকটা কারণ। তারমধ্যেও বেশ কজন ফ্রেন্ড বাসায় এসে ঘুরে গিয়েছে। আমার মেয়েদের জন্য ওদের বাবা আলাদা খেলার রুম করে দিয়েছেন যেখানে তাদের দোতলা খাটের সাথে স্লাইড জুড়ে দেওয়া আছে। বন্ধুদের মুখে মুখে সেই স্লাইডের কথা ক্লাসের অনেকেই জানলো এবং আমার কাছে মা'রা বলতে লাগলেন ওনাদের বাচ্চারা জাইনার বাসায় যেতে চায়।
অগত্যা। গতকাল সেই দাওয়াত হলো। আমার মেয়ে চেয়েছিল ক্লাসের সবাইকে দাওয়াত দিতে (তারমানে ৩০ জন); আমি অনেক বলে কয়ে বুঝিয়ে সুজিয়ে সেটা ৮ জনের মধ্যে লিমিট করেছি। গার্জিয়ানরা আমার কাছে বাচ্চার কার্ড দিয়ে দিয়েছিলেন আগেই; আমি স্কুল থেকে ৬টা বাচ্চা রিসিভ করে লটবহর নিয়ে ঘরে আসলাম। রাস্তা ঘাটে, বিল্ডিং এ মোটামুটি দেখার মত এক দৃশ্য। সবাইকে স্কুলড্রেস পালটে ফ্রেস করে খাওয়াতে খাওয়াতে হাজির হলেন আরো দুইজন মা; সাথে ওনাদের বাচ্চা।
আমার ঘরে বাকি সারাদিন কী হয়েছে তা নিশ্চয়ই আর বলে বোঝানোর দরকার নেই। বাকি দুই ভাবির সাথে তাল মিলিয়ে আড্ডা মারলাম। বিকেলে অন্য বাচ্চাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য এলেন অন্য ভাবিরা (একজন ভাই)। চা-নাস্তা পর্বও হলো বিকেলে।
ঘর খালি হলো তখন রাত আটটা। মেয়ে দুইজন তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম।
আমার বেশ ভালো লাগছে গতকালের পর থেকে। মনে হয় "ভাবি-সমিতি" তে আমার একটা পাকাপোক্ত জায়গা হয়েছে। হাসি

-শাফক্বাত আনোয়ার
গৃহিনী


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

কারো কারো পায়ে কেডসের সাথে জিন্সের প্যান্ট, যেন মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছেন এইরকম।

ঢাকা শহরে জিন্সের প্যান্ট পরে মানুষে মর্নিং ওয়াক করে নাকি !

Shafqat এর ছবি

জ্বী ভাই, পরে। আমি নিজে পরিনা কিন্তু অন্যদের তো দেখি। ভালই লাগে।
-শাফক্বাত

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ভাবীদের নিয়ে একটা আলাদা গল্প আর বাচ্চাদের নিয়ে একটা আলাদা গল্প হলে আমার আরো বেশি ভালো লাগতো হাসি
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

শাফক্বাত [অতিথি] এর ছবি

আলাদা করে আমি লিখি; এখানে নয় যদিও। অতিথি হয়ে লেখাটা কেমন যেন লাগে। আমার অন্যব্লগ আছে; সেখানে লিখি। এখানেও পারমিশন পেলে লিখবো আশা করি।
-শাফক্বাত

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ভাবীদের নিয়ে একটা আলাদা গল্প আর বাচ্চাদের নিয়ে একটা আলাদা গল্প হলে আমার আরো বেশি ভালো লাগতো হাসি
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তাসনীম এর ছবি

লেখায় সাবলীলতা আছে, চালিয়ে যান। ভালো লেগেছে।

মেয়ের কারনে খ্যাতি আমি এবং আমার স্ত্রীও পেয়েছেন। আমার মেয়ে একজন বেবি সিটারের কাছে থাকত...ওখানে অনেকগুলো বাংলাদেশী পরিবার ছিল, আমরা কাউকে চিনতাম না। দেখা গেল আমাদের সবাই চেনে সামারার বাবা ও মা হিসাবে। আমরাও ওদের দাওয়াত দিয়ে বন্ধুত্ব পাকাপোক্ত করি। আমাদের কালচারে খাওয়ার সাথে বন্ধুত্বের কোথায় যেন একটা গভীর সম্পর্ক আছে।

আরেকটা ব্যাপার, আমার বড় কন্যার নামের মাঝেও "জাইনা" নামটা আছে, আমাদের খুব পছন্দের নাম। আপনার কন্যাদের জন্য আদর রইল।

শুভেচ্ছা।

--------------------------------------
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সচলে দেখি দুই খান "সামারা-র বাপ" আছে দেঁতো হাসি

তাসনীম এর ছবি

দারুন...চলুন আমরা একটা ক্লাব গড়ে তুলি...খুঁজলে পাওয়া যাবে আরো কয়েকটা।

--------------------------------------
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- জিন্সের প্যান্ট আর কেডস-এর কথা পড়ে একটা ছবি দাঁড় করাতে চাইলাম। সেটা খুব বয়াবহ একটা দৃশ্যে দাঁড়ালো শেষমেশ।

আমাদের দেশী মহিলাদের কেনো জানি না এই পোষাকে ঠিক ভালো লাগে না। কোথাও, কী জানি একটা সমস্যা আছে!

আপনার লেখা ঝরঝরে লাগলো। পিচ্চিদেরকে শুভেচ্ছা। ভাবী সমিতির সবাইকেও। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

_প্রজাপতি এর ছবি

শাফক্বাত তোমার লেখা পড়ে মজা লাগলো। জ়াইনার নামটা দেখে চেনা চেনা লাগছিলো। আমাকে কিন্তু তুমি চেনো। আমার বোনকে তুমি পড়াতে আসতে ইস্টার্ন হাউজিং এ । সচলে স্বাগতম ।
-------------------------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মনে হয়েছে আপনি প্রবাসী পটভূমিতে লিখেছেন, ভুলও হতে পারে......
অনেক শুভকামনা।

শেখ আমিনুল ইসলাম

চেকার এর ছবি

ডুপ্লিকেট পোস্ট

http://www.somewhereinblog.net/blog/Shafqat/29088134

লেখিকা সম্ভবত সচলের নীতিমালার সাথে পরিচিত নন, তবে মডুদের এই ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকা উচিৎ। দুটি ব্লগেই একই সময়ে পস্টটা এসেছে।

শাফক্বাত [অতিথি] এর ছবি

ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। দুপুরে এই লেখা পোস্ট করে রাতেও যখন দেখলাম সচলে লেখাটা প্রকাশ হয়নি আমি কিছুটা হতাশ হয়েই স্মৃতি থেকে আবার লিখলাম এবং সামহোয়্যারে দিয়েছি। ভেবেছিলাম আমার লেখা সচল কর্তৃপক্ষের ভাল লাগেনি তাই ছাপায়নি। এখন দেখতে পাচ্ছি এখানে দেরী করে লেখা ছাপানো হয়েছে।
আমি নীতিমালা জানি এবং খুশী হবো যদি এই লেখা মুছে দেওয়া হয়।
অনেক ধন্যবাদ সকলকে।
-শাফক্বাত আনোয়ার

প্রবাসিনী এর ছবি

কিউট গল্প
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।