ভাইরাস!!!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৮/০২/২০১০ - ১:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার একজন পরিচিত বড় ভাই, একসাথেই আড্ডা মারি, কিছুদিন আগে বিবিএ শেষ করেছেন। তো, একদিন উনি জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ দিয়ে এসে আমাদের সামনে নতুন একটা আড্ডা মারার টপিক এনে দিলেন। কি কি প্রশ্ন করা হয়েছে, কিভাবে উত্তর দিতে হল এই সব হাবিজাবি কথায় সময়টা পার করে দেয়ার চেষ্টা। দশটার বেশি হয়ে গেলেতো সবাই উঠি উঠি করবেই, কয়েক জনের বাসা আবার উত্তরায় (ঢাকার বাইরে প্রায়)। বিরক্তির মূলে ছিলো একটা রিটার্ন টেষ্ট, একদমই অপ্রত্যাশিত। এমনকি একটা কলম পর্যন্ত সাথে নাই। যখন জানতে পারলেন পরিক্ষার বিষয়- তখন আকাশ অনেক দুরে। কিন্তু উনি রিটার্ন টেষ্ট দিলেন, জানিনা কিভাবে কি! তারপর আমাদের আড্ডা এবং তেনাদের গুষ্ঠি উদ্ধার, এছাড়া তো আর কিছু করার নাই।

এখান থেকেই আমার শুরু - রিটার্ন টেষ্ট।

মনে হতেই পারে, প্রচলিত ধ্যান ধারনা নিয়ে কিছু একটা বলে, শেষের দিকে সম্পূর্ন বিষয়টার পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে এবং তারপর আরও কিছু সমযোদ্ধার মতামতের আশায় আরও কয়েকটা রাত কী-বোর্ড গুতানো,,,এই নিয়েই আমি থাকব। কিন্তু বিষয়টা আসলে এরকম না। প্রচলিত ধ্যান-ধারনার ভুল-ভাল নিয়ে আমার ভেতরে অনেক (___) জমে আছে, আপনাদের ভেতরেও আছে। যখন কিছু করা যাবে, করা যাচ্ছে এবং করছি বলা যাবে তখন সব একসাথে ঢেলে দিবো্ ইনশাল্লাহ। এখন আমি আসলে একটা প্রশ্ন নিয়ে ভাবছি।

পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের নাম কি?

আমি জানিনা। শেষ। কোন চান্সই নাই আমার পরিক্ষায় পাশ করার। আপনারা জানলে নিচে মন্তব্যের স্থানে উত্তরটা দিয়ে দিবেন। আমি আমার বড় ভাইটাকে জানায় দিবো। উনি রিটার্ন টেষ্টে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে এসেছেন "none of those"। মানে আরও তিনটা ছিলো উত্তর, উনার মনে হয়েছে এর কোনটাই নয়। হতেই পারে এমন। তাছাড়া ওখানে যদি সঠিক উত্তরটি থেকেও থাকে তা উনার জানার কথা না। আমরা কয়জন জানি! সেই ১৯৯৮ সাল থেকে এক হাতে মাউস (ডান) আরেক হাতে কী-বোর্ড নিয়ে বসে আছি, চোখের পাতা ফেলতে পারছিনা যদি একটা টার্ন মিস করি তাহলে গাড়ীটাই উল্টায়ে যাবে এই ভয়ে, winrar দিয়ে একটা একটা করে ভাইরাস এফেক্টেড ফাইল খুজে খুজে ফেলে দিয়ে পেন ড্রাইভ ওপেন করি,,,এই আমি, আমিও তো জানিনা। এই লজ্জা কোথায় রাখি!

নিজেকে অনেক ছোট করে ফেললাম; শুনতেই খারাপ লাগে। নিজেকে অনেক ছোট-খাটো করে তুলে ধরলাম; শুনতে ভালো লাগে। লেখতেও।

আমার নিজের সম্পর্কে এত ছোট ধারনা কখনই ছিলো না। কিন্তু প্রশ্নটাই তো আমাকে ভাবাচ্ছে। পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস! ওটা ভাইরাসই ছিলো তো নাকি অন্য কিছু? আমরাতো আবার spyware, adware, passward cracker, malware এবং এরকম আর যা কিছু আছে সবই এক নামে ট্যাগ করে রাখি- ভাইরাস। আরও সহজ করে বলা যায়, পিসিতে ইনস্টল করা এন্টিভাইরাস আমাদের যে সব বিষয়ে হুশিয়ার করে তার সবই ভাইরাস (!)। মানব দেহের কিছু একটা হলে খুব সহজেই এর উত্তর পেয়ে যেতাম। তাহলে এখানে বসে কী-বোর্ড আর নিজের সাথে ধস্তা ধস্তি করতাম না। হয়ত ফেইসবুকে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা অথবা নতুন কোন মুভির টরেন্ট ফাইল খুজে ডাউনলোড করতে দিয়ে একটা বই নিয়ে বসতাম।

মজার একটা ঘটনা বলি। আমি McAfee VirusScan Enterprise 8.0.0 ব্যবহার করি। অনেক আগের একটা ভার্সন, জানি। এর মধ্যে আরও কিছু বের হয়েছে, আমিও বেশ কিছু দিন ব্যবহার করেছি। কিন্তু পরে এটাতেই ফিরে আসলাম। "প্রথম প্রেম" অথবা "পুরাতন জিনিস পছন্দ" এ ধরনের কোন ধারনা আমার মধ্যে কখনই ছিলো না। আমি গো‍‍‍‍ড়াও না। আমার আসলে C: ড্রাইভটাকে ব্লক করে রাখা দরকার যাতে ওখানে কোন কিছুই প্রবেশাধিকার না পায়। McAfee VirusScan Enterprise এর নতুন ভার্সনগুলোতেও এই সুবিধা ছিলো, কিন্তু যেহেতু আমার আগেরটা দিয়েই কাজ চলছে, সেহেতু পরেরটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে ঠিক করে বসে আছি (rots ভাই, প্লিজ!)। তো একদিন আমি nero ইনস্টল করতে দিলাম, এমন সময় ইনস্টলেশন বন্ধ হয়ে "সাবধান বানী" শুরু। পাশে আমার এক ফ্রেন্ড বসে ছিলো। লাফ দিয়ে উঠলো, দোস্ত পিসিতে ভাইরাস। সত্যি সত্যি ভাইরাস এ্যফেক্ট করলেও আমার হৃদপিন্ড হয়ত এভাবে লাফ দিতো না। অহংকারটা আমার। সবসময় বলে বেড়াতাম আমার রুমে ভাইরাস ঢুকলেই আমি টের পেয়ে যাই, পিসি পর্যন্ত আসতে পারে না, পেনড্রাইভে ভাইরাস থাকলে ওটা দরজার বাইরে পেনড্রাইভ সহ আটকায় থাকে (লক্ষ্মন রেখা) ইত্যাদি ইত্যাদি। এজন্যই একটা চান্স পেয়ে দুটা কথা শোনানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা তখুনি বুঝে নিয়ে অবুঝ ছেলেটাকে ঠান্ডা করলাম , ভাইরাস না, ওটা আমার McAfee।
-McAfee মানে?
-McAfee মানে হচ্ছে, McAfee দিয়ে C: ড্রাইভটাকে ব্লক করে রাখা। এতে C: ড্রাইভে .exe, .dll এবং এ ধরনের যে ফাইলগুলো আছে সেগুলো ঢুকতে পারে না।
ঢুকতে পারে না মানে creation, modification, access ইত্যাদি। ওই গাধাটাকে এত কিছু একদিনে বললে শেষে আমার বাসায় আসাই বন্ধ করে দিবে যেটা আমার জন্য খুব খারাপ হবে। ওর কাছে আমি অনেক দিক দিয়েই ধরা।
সফটওয়ার মানেইতো ওটা C: ড্রাইভে কিছু একটা করবে যেটাকে আমরা বলি ইনস্টল। যদি ঢুকতেই না পারে তাহলে ওই কিছু একটা কিভাবে হবে? এখানেইতো ভাইরাসের কথাটা চলে আসে। ভাইরাসের কাজও একই রকম (কিছুটা)। উনাকেও C: ড্রাইভে ঢুকে কিছু একটা করতে হয়। এই কিছু একটা মানে ইনস্টলও হতে পারে এ্যফেক্টও হতে পারে। "আমার পিসিতে ভাইরাস ইনস্টল হয়েছে" শুনতেই হাস্যকর লাগে। "আমার পিসিতে ভাইরাস এ্যফেক্ট করেছে" শুনতে ভয় লাগে। কিন্তু এটাই প্রচলিত কথা, আমরা এটাই বলি। এখন যদি আমি না শুধরায় দিতাম তাহলে আমার ওই ফ্রেন্ডটা এই ব্যাপারটাকে ভাইরাস মনে করেই বসে থাকতো। বলে বেড়াতো, ভাইরাসের কারন সফটওয়ার ইনস্টল হচ্ছেনা, আগেরগুলাও কাজ করছে না এবং আরও কিছু কাল্পনিক সমস্যা "দোস্ত, পিসিটা একটু স্লো স্লো মনে হচ্ছে, না? ভাইরাসের কারনে নাকি?" "কারসারটা নড়ে না কেনো? ভাইরাসটার এত দুঃসাহস?"। হয়তো কোন একদিন রেগে-মেগে C: ড্রাইভ টাই ফরমেট দিয়ে দিতো, আমিই বলেছিলাম এটা করলে ভাইরাস সহ সবকিছুই ক্লিন হয়ে যায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথম ভাইরাস যেটা আসলে কি ছিলো তা আমি অন্তত জানিনা, তার নাম কি? তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন, কখন এবং কবে থেকে বোঝা যাচ্ছিলো যে ওটা একটা ভাইরাস?

যখন আমরা বুঝতে শুরু করলাম যে কিছু একটা আছে যেটা কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর, ফাইল নষ্ট করে দেয়, তথ্য গায়েব করে দেয় এবং আরো অনেক ঝামেলা করে তখন আমরা এটার নাম দিলাম ভাইরাস। যেহেতু ভাইরাস শব্দটার সাথে আমরা আগে থেকেই পরিচিত যা কিনা জীব বিজ্ঞানের ভাষা এবং “ক্ষতিসাধন” করাই যার কাজ সেহেতু ভাইরাস শব্দটাই যুক্তিযুক্ত মনে করা হল কম্পিউটারের জন্য। কিন্তু যখন আমরা ভাইরাস শব্দটা জানতামই না তখনও ভাইরাস ছিলো। আমরা জানতাম না, অসুস্থ হতাম, অনেকে মারাও যেতো। আমার এই সেক্টরে খুবই কম ধারনা কিন্তু মেডিকেলের যে কোন স্টুডেন্ট স্বাচ্ছন্দে বলে দিতে পারবে কোনটা মানব দেহের কিংবা জীব বিজ্ঞানের প্রথম ভাইরাস। মেডিকেলের স্টুডেন্ট ছাড়াও অনেকে হয়ত জানে কোনটা মানব দেহের প্রথম ভাইরাস, আমি জানিনা। তবে কম্পিউটারের ভাইরাস এতটা ভয়ংকর না আমাদের জন্য। কারন এটা আমরাই তৈরি করি। কখনও কাজের জন্য (কি কাজ সেটা আরেক ইতিহাস), কখনও অ’কাজের জন্য। জানতে হবে, কবে আমরা জানতে পারলাম যে আমাদেরই তৈরি করা একটা প্রগ্রাম যা কিনা খুব কাজের কিন্তু কোনও না কোন ভাবে অন্যদের জন্য ক্ষতিকর? অথবা, আমাদেরই তৈরি করা একটা প্রগ্রাম যা কিনা "ক্ষতিসাধন" করার জন্যই সর্বপ্রথম তৈরি করো হয়েছিলো?

এমনও হতে পারে, প্রথম ভাইরাস টা যে তৈরি করেছিলো সে তার উদ্দেশ্য হাসিল করে ফেলার পরে প্রগ্রামটা ডিলিট করে নিজেও কেটে পড়েছে। প্রথম ভাইরাস তৈরির যে আজীবন সম্মাননা, তার চেয়ে তার কাছে তখন তার উদ্দেশ্যটা সফল করাই বেশি গুরুত্বপূর্ন ছিলো। সে ক্ষেত্রে তো আমরা কখনই জানতে পারবো না কোনটা প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস।

আবার এমনএ হতে পারে, যখন আমরা জানলাম কিছু একটা আছে যা কিনা ভাইরাস তার আগেও হয়ত কিছু একটা ছিল যা ভাইরাসের মত ক্ষতি করে দিয়ে ইতিমধ্যে ইতিহাস। কিন্তু না জানার কারনে আমরা পরেরগুলা নিয়েই হা-হুতাশ করছি।

অতিতে যেটাই হয়ে থাকুক তা দিয়ে এখনকার সমস্যার সমাধান হবেনা বোঝা যাচ্ছে। তার চেয়ে ভালো যেটা আমরা সবাই জানি তা নিয়েই থাকি।

পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস (ভাইরাস নামে কিছু একটা আছে এটা জানার পরে)-
Creeper virus, সর্বপ্রথম এটা ডিটেক্ট করা হয় ARPANET থেকে। ১৯৭১ সালে Bob Thomas এই প্রগ্রামটি তৈরি করে যা ARPANET'এর TENEX operating system কে আক্রমন করে।

BRAIN নামে একটা প্রগ্রাম তৈরি করে পাকিস্তানের Basit ও Amjad,দুই ভাই। অনেকের মতে নাকি এটাই পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস (১৯৮৬)।

Elk Cloner নামে আরকটা ভাইরাসের কথা শোনা যায় যা কিনা ১৯৮১ সালে তৈরি করা হয়েছিলো Apple II কম্পিউটারের জন্য।

উপরের সবগুলোই আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়, কখনই বুঝে উঠতে পারি না কোনটাকে ছেড়ে কোনটাকে ধরি। সময়ের বিবেচনায় Creeper virus অগ্রাধিকার পেতে পারে কিন্তু Basit ও Amjad ভাই এর কাজটা অনেক বেশি জনপ্রিয়। এমনকি আমার বড় ভাই তার পরিক্ষার খাতায় নাকি এই নামটাও দেখেছিলো (সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দিন)। কিন্তু উনি এটা মার্ক করেননি। ওখানে Creeper virus এর কথা ছিলো কিনা জানিনা। তবে Elk Cloner এর কথা অনেকেই জানেনা (হয়ত), আমিও জানলাম একটু আগে Google এ সার্চ দিয়ে। তখন অবশ্য চিন্তাও করিনি সার্চ দিয়ে এত কিছু পাওয়ার পর মাথাটা এভাবে CRACK আর এখানে লিখতে বসে যাবো।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মূল ঘটনাটা হয়ত মজার হতে পারত। কিন্তু অতিরিক্ত/এলোমেলো আলোচনায় মূল বক্তব্য খুঁজে পাওয়া দুরূহ। তাছাড়া প্রচুর ভুল শব্দের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। যেমন: রিটার্ন টেস্ট নয়, মনে হয় রিটেন টেস্ট (written test) হবে। আরো যত্ন এবং ফোকাসড লেখা চাই আপনার কাছে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।