"ক্রিকেটীয় জীবনধারা।"

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১০/০২/২০১০ - ৬:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি ক্রিকেট খেলাটাকে খুব উপভোগ করি। নিজে সুযোগ পেলেই একটু খেলার পায়তারা করি, যদিও খেলতে পারি না। ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা- সমালোচনা হচ্ছে, সেখানে শুধু শ্রোতা না হয়ে আলোচক বা সমালোচক হয়ে যাই। বিশেষ করে একদিনের ৫০ ওভারের খেলা আমার খুব ভালো লাগে। আমি অফিসের কাজের ফাঁকেও খেলা থাকলে দেখার চেষ্টা করি। আর ছুটির দিন হলে বাসার সব কাজ ফেলে ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য টিভির সামনে রিমোর্টের দখল নিয়ে বসে থাকি।

একদিনের ক্রিকেট খেলার সাথে আমি মানুষের জীবনের খুব মিল খোঁজে পাই। একদিনের ক্রিকেট যেমন ৫০ ওভারে সীমাবদ্ধ মানুষের জীবনটাও বিধাতা সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন। মানুষ ইচ্ছা করলেও সেই সীমাবদ্ধতা টপকাতে পারে না।

বর্তমান ৫০ ওভারের মধ্যে ২০ ওভারকে পাওয়ার প্লে বলে বিশেষ ভাবে শ্রেণী বিন্যাস করা হয়। যার প্রথম ১০ওভার বাধ্যতামূলক। বাকি ১০ ওভারের মধ্যে ৫ওভার ফিল্ডিং সাইড নিজেদের খুশী মত সময়ে নিতে পারে এবং ৫ওভার ব্যাটিং সাইড নিজেদের খুশীমত সময়ে নিতে পারে। আমি যদি একটু অন্যভাবে ধরে নেই তাহলে ৫০ওভারের খেলাটাকে মানুষের জীবনের সাথে মিলে যায়। ধরে নেই ফিল্ডিং সাইড প্রথম ১৫ ওভারকে পাওয়ার প্লে হিসেবে ব্যবহার করবে এবং ব্যাটিং সাইড শেষ ৫ওভার পাওয়ার প্লে হিসেবে ব্যবহার করবে।

মানুষের জীবনকালকেও কয়েকটি শ্রেণী বিন্যাসে বিভক্ত করা যায়। যেমন শিশুকাল, কিশোরকাল, যৌবনকাল, বৃদ্ধকাল ইত্যাদি। ক্রিকেট খেলায় লক্ষ্য করা যায় ব্যাট্স ম্যানরা প্রথম ১০ বা ১৫ ওভার খুব উপভোগ করার চেষ্টা করে। ক্রিকেটীয় ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, রানের পাহাড় গড়ার চেষ্টা করে, মানুষও তার শৈশবটাকে ভবিষ্যতের ভীত হিসেবে গড়ার চেষ্টা করে। মানুষও শৈশব ও কিশোর বেলাটা খুব উপভোগ করে। ক্রিকেট খেলায় যেমন এই সময়ে বেশী উইকেট পড়ে গেলে বড় রানের পাহাড় গড়া কঠিন হয়ে পড়ে, তেমনি মানুষের জীবনেও যদি শৈশব বা কিশোর বেলাটা নষ্ট হয় তাহলে ভবিষ্যত সুন্দর করে গড়ে তুলা কঠিন হয়ে পড়ে।

ক্রিকেট খেলায় দেখা যায় ১৫ ওভারের পর থেকে ৪০ওভার পর্যন্ত ব্যাট্স ম্যানরা ধৈর্য নিয়ে খেলে, বড় রানের জন্য ভীত মজবুত করে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে শর্ট খেলে। মানুষও তার এই সময়টা খুব ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নেয়, ভবিষ্যতের কথা ভাবে, জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবে। যেমন ক্রিকেটে ব্যাটিং সাইড বড় রানের পাহাড় গড়ে দলের জয়কে নিশ্চিত করতে চায়। তেমনি মানুষ তার যৌবন কালে চেষ্টা করে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে ভবিষ্যতকে নিরাপদ করতে। সংসার জীবনে সুখের বসবাস স্থায়ী করতে চায়। ক্রিকেটে এই সময়টা পরিকল্পনা মোতাবেক খেলতে না পারলে যেমন দুর্বল ও ছোট রানের পাহাড় তৈরি হয় এবং জয় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, মানুষের জীবনেও তাই। যৌবনের সঠিক ও যথাযত পরিকল্পনার ফলেই বৃদ্ধকাল নিশ্চিত ও নিরাপদ থাকে। সুখের স্থায়িত্ব মজবুত হয়।

খেলার শেষ পাঁচ ওভার যেমন ব্যাট্সম্যানরা আবার উপভোগ করে। খেলার সব ধরনের ব্যকরণ ভুলে ইচ্ছে মাফিক শর্ট খেলে, প্রথম ১০-১৫ ওভারের আচরণে ফিরে যায়। মানুষও তেমনি শেষ বয়সে এসে আবার বালক বা কিশোর হয়ে যায়। এই সময়টা তাঁরা আবার উপভোগ করতে চায়, কিন্তু দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেয় না। নিজের ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য রেখে যেতে চায় নিরাপদ জীবন, সুখের আবাস ভুমি। যেমন ক্রিকেট খেলায় ব্যাট্সম্যানরা চায় বড় রানের পাহাড় গড়তে, দলের জন্য নিরাপদ লক্ষ্য স্থির করতে।

আমার কাছে মানুষের জীবনটাকে একটা জীবন্ত একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ মনে হয়। আমরা খেলে যাই, আর চারিপার্শ্বের মানুষ সেই খেলা দেখে। ভালো খেললে হাত তালি দেয়, প্রশংসা করে, উচ্ছ্বাস করে। আর ব্যর্থ হলে আসে পাশের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়, সানিধ্যে আসতে চায় না, লোকচক্ষুর অন্তরালে গালি দেয়। যেমন আমরা খেলোয়াদের ব্যর্থ হলে হরহামেশা দিয়ে থাকি। খেলায় যেমন খেলোয়ারদের প্রতিটি বল বিশ্লেষন করে খেলতে হয়, ঠিক তেমনি জীবনেও প্রতিটি সময়কে হিসেব করে চলতে হয়, সময়কে কাজে লাগাতে হয়। ক্রিকেট খেলায় দলের জয়ে যেমন সারা দেশ নাচে, খুশী হয় তেমনি ব্যক্তি জীবনে সফল হলে পরিবারের সদস্যরা নাচে, খুশী হয়, কখনো কখনো দেশের মানুষও ব্যক্তি সাফল্যে নাচে, খুশী হয়, হাততালি দেয়, সুখ ও সাফল্য কামনা করে।

এই ক্রিকেটীয় জীবনটাকে আমরাই গড়তে পারি, আমরাই নিজের রানের পাহাড় গড়ে ভবিষ্যতে নিরাপদ ও নিশ্চিত জীবন যাপন করতে পারি। আমরাই আমাদের জীবনের নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রক।

============
কামরুজ্জামান স্বাধীন।


মন্তব্য

সাবিহ ওমর এর ছবি

আমি পঞ্চাশ ওভারের পাওয়ার প্লে চাই...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। ভাই প্লিজ এনজয় পাওয়ার প্লে। আমিও তাই চাই।

==========
কামরুজ্জামান স্বাধীন

কায়েশ এর ছবি

আপনার কম্পারিসনটা একদিক দিয়ে ঠিক আছে, কিন্তু আপনি শুধু একপক্ষ দিয়েই বিচার করেছেন ভাই! শুধু ব্যাটসম্যানদের দিয়ে উদাহরন দিলে কি চলবে?
ক্রিকেট তো শুধু ব্যাটসম্যানদের খেলা না, তাই না? বোলার-ফিল্ডারদের দিয়ে আরেকটু উদাহরন দিলে লেখাটা সম্পুর্নতা পেতে পারতো:)

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভাইয়া আসলে আমি এখানে বোলিং ও ফিল্ডিংটাকে দেখিয়েছি ব্যাট্সম্যানের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে, যেটা মানুষের জীবনেও বিরাজমান থাকে। বোলিং ও ফিল্ডিংকে যেমন মোকাবেলা করেই রানের পাহাড় গড়তে হয়ে ঠিক তেমনি জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করেই উন্নতি করতে হয়। তবে আপনার কথা ঠিক, লেখায় এই ব্যাপারটা উল্লেখ করলে ভালো হতো। ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।

==========
কামরুজ্জামান স্বাধীন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।