গ্লুব গ্লুব গ্লুব গ্লুব।
অদ্ভুত রকমের একটা ভোঁতা আওয়াজ আসছে যেন। সে কানের ইন্দ্রিয়টাকে আরো ধারালো করে বুঝবার চেষ্টা করে আওয়াজটা কোত্থেকে আসছে। আবছা মতন একটা বেসিন দেখা যাচ্ছে। হুমম, শব্দটা ওদিক থেকেই আসছে। হয়তো বেসিনের ওপর পানি জমে আছে, আর তার ওপর ট্যাপ থেকে থেমে থেমে পানির ফোঁটা পড়ছে, ভাবে সে। যাক, কান তো একটা সঙ্গী পেল। এবার চোখ তার সঙ্গী খোঁজে। সে যেখানে বসে আছে, তার ঠিক উল্টো দিকের দেয়ালের এক কোণায় একটা ছোট্ট মোমবাতি জ্বলছে। হায়রে তার সলতে! মোমের আলোতে রুমের অন্ধকারটা আরো জমাট বেঁধে যাচ্ছে। কোত্থেকে যেন একটা হিম হিম করা বাতাস ঢুকছে রুমে। আর সেই বাতাসটা মোমবাতির আলোটাকে ফুঁ দিচ্ছে বারবার, কিন্তু নিভিয়ে দিচ্ছেনা। আর তাতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারটা আরো আঠার মত লেগে যাচ্ছে রুমের দেয়ালে। নিজের হাতটা দেখবার মতও উপায় নেই তার। বাঁ কানের পাশ বেয়ে রক্তের সরু ধারাটা শুকিয়ে গেছে এখন। একটা চিনচিন করা ব্যাথা রয়েই গেছে। কিন্তু ব্যাথাটা যে ঠিক কোথায়, সেটাও বুঝতে পারছেনা সে। কটা বাজে এখন? বুঝবার কোনই উপায় নেই।
সে ধরে নেয় এখন বাজে সকাল সাড়ে দশ, প্রায়। চোখটা বন্ধ করতেই সে একটা উজ্জ্বল লনের সামনে চলে যায়। সাইকেলটা কে ফেন্সে ঠেস দিয়ে রেখে হাতে ফ্লায়ারের সেটগুলো নিয়ে দিয়ে আসতে যাচ্ছে বাসার মেইল বক্সে।
"গুড মর্নিং, মিস্টার শ্যালোন। কেমন আছেন? আপনার 'রুডি' এখন ভালো তো?"
ঠিক পাশের বাড়ির লনে ঘাসগুলো ছাঁটতে থাকা অবসর নেয়া আর্মিম্যান পঁয়ষট্টি বছরের শ্যালোন হেসে জবাব দেন, "গুড মর্নিং, ইয়ং ম্যান! হুমম, আমি ভালো, আমার রুডিও এখন একদম ভালো। আর বোলোনা, খুব টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। প্রথম যে ভেটেরিনারির কাছে গিয়েছিলাম, তার ওষুধ খেয়ে তো রুডি আরো অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো মনে হয়। এরপর আমাদের লিবিগস্ট্রিটের ড.হলফম্যানকে দেখালাম, ব্যস, দুদিনেই সুস্থ।"
বলতেই মিস্টার শ্যলোনের কালো কুচকুচে ভয়াল দর্শন ল্যাব্রাডর রুডি কোত্থেকে যেন দৌড়ে চলে এল। আর এসেই একটা আদরের ঘেউ করে লেজ নাড়াতে থাকলো তার দিকে।
"হাই রুডি। ভালো লাগলো তোমাকে ঠিকঠাক দেখে। তা মিস্টার শ্যালোন, আমি যাই। আজ অনেকগুলো কাজ পড়ে আছে। হাতের এগুলো বিলি করা শেষ করে এরপর গ্যারেজেও যেতে হবে", বলে সে।
"ঠিক আছে ইয়ংম্যান,যাও। এই উইকএন্ডে চলে এসোনা বাসায়। এই বুড়োর হাতে বানানো হানি ওয়াফেল খেতে খেতে আড্ডা দেয়া যাবে। অবশ্যই যদি তুমি ফ্রি থাকো", বলেই একটা চোখ টিপি দিলেন মিস্টার শ্যালোন।
হাসতে হাসতে সে জবাব দিলো, "ঠিকাছে, আসবো। আপনার হাতের ওয়াফেল খাবার লোভটাকে তো কোনভাবেই সম্বরণ করতে পারবোনা।"
হাত নেড়ে বিদায় দিয়ে সে এগোয় বাসার দরজাটার দিকে। ফ্লায়ারগুলো বাসার মেইলবক্সে রেখে ফিরে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায় সে। তার মনে হলো ঘরের ভেতর থেকে একটা সুতীক্ষ্ণ চিৎকার যেন এলো। "নাহ, ধুর, আমার মনের কল্পনা এটি," ভাবে সে, "নইলে তো মিস্টার শ্যলোনও শুনতেন।" ফিরে যেতে গিয়েও আবার থমকে দাঁড়ালো। দরজার নিচে একটা প্যাকেজ রেখে যাওয়া। ডিএইচএল এর বক্স। কী মনে করে সে উবু হয়ে দেখলো প্যাকেজটার নাম-ঠিকানা। আরে অদ্ভুত! বাক্সটা তো তার কাছেই এসেছে, 'ডেলিভার টু' এর জায়গাতে তার নাম লিখা! কিন্তু কে পাঠিয়েছে, তার কোন নাম অথবা ঠিকানা নেই! হাতে বাক্সটা তুলে নেয় সে। উল্টেপাল্টে দেখে, নাহ,কোথাও আর কিছু লিখা নেই। আর দশটা সাধারণ ডিএইচএল এর প্যাকেটের মতনই একটা প্যাকেট। খুব ভারি মনে হচ্ছে। নাড়াচাড়া করে বোঝা যাচ্ছেনা ভেতরে কী আছে! খুব দ্বিধায় পড়ে যায় সে। বাক্সটা কি নেবে সে, নাকি যেখানে ছিলো, সেখানেই রেখে যাবে। কিন্তু এটা যে তার কাছেই এসেছে!
-----------------------------------------------------------------------
(আমি কি আর লিখবোওওওও?)
-----------------------------------------------------------------------
~..::সাদাত::..~
মন্তব্য
লেখেন, ডি এইচ এল'এর বাক্সে কী আসলো জানতে কৌতূহল হচ্ছে!
এইতো লিখলাম ! ভয়ে ভয়ে আছি, আবার মার খাবোনা তো!
-------------------------
।।সাদাত।।
হা হা হাআআ
================================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।
ভাইরে, খাবেন্না এই গ্যারান্টি দিতে পার্ল্লাম্না যে
তবে, কথা দিলাম মার দিলেও একদম মেরে ফেলা হবে না
যাক, তাও ভালো। কম কম মাইরেন।
--------------------------------
।।সাদাত।।
হা হা - আমার কি এমনই 'খান্ডারনি' রেপুটেশন? আচ্ছা, অসুবিধা নাই
জরুর লিখবেন...
মাঝপথে ঝুলিয়ে রাখলেন বলে ভুগবেনও!
--------------------------------------------------
"আমি তো থাকবোই, শুধু মাঝে মাঝে পাতা থাকবে সাদা/
এই ইচ্ছেমৃত্যু আমি জেনেছি তিথির মতো..."
*সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
পুরোটা লিখলাম। এবার ভুগবোনা তো?
---------------------------
।।সাদাত।।
ধুর মিয়া... না, আর লিইখেন না! আজব!
কালকেই বাকিটা দেন!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
সরি মৃদুল ভাই, লেইট করে দেরি করে ফেললাম। ক্ষমাপ্রার্থী। বাকিটা দিলাম।
-----------------------
।।সাদাত।।
এমুন জাগায় থামায় কেউ? পাবলিকের মাইর খাইতে না চাইলে বাকিটা জলদি ছাড়েন। আর ইয়ে মানে লিংকুটা ফেবুতে দিতে ভুইলেন না, আমি তো এইখানে আসিনা।
অটঃ ভুট দিতে চাইসিলাম, পারলাম না :।
সাবু ভাই, আপনারে এখানে পাইয়া খুব ভালো লাগছে। জলদিই দিলাম, মাইরেননা।
ফেবুতে লিংকাবো অবশ্যই।
আর ভুটের দরকার নাই। দিতে চাইসেন, ওতেই পাইসি।
-------------------------------
।।সাদাত।।
- অন্যের বাড়ির দোরে সে নিজের নামে প্যাকেজ পেলো? ঘটনা সাংঘাতিক মনে হচ্ছে। পরের পর্ব লিখে ফেলুন শীঘ্রই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হুমম, ঘটনা সাংঘাতিকই।
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্যে। বাকিটা লিখেছি।
-------------------------
।।সাদাত।।
আপনি দেখি অতিশয় খ্রাপ্লুক!!!
বাকিটা নামান জলদি।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
হে হে, নামাইসি বাকিটা।
---------------------
।।সাদাত।।
তারপর...?
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
তারপর বাক্সে বন্দী ২য় পর্ব!
-------------------------------
।।সাদাত।।
বাকি অংশে (আমি কি আর লিখবোওওওও?) এমন কিছু লিখবেন না, কথা দেন!!! - ছাড়পত্র।
আচ্ছা, আর লিখিনি।
ভয়ে ভয়ে লিখা।
-------------------
।।সাদাত।।
অসাধারণ! গল্পের গতি আর সাবলিল ভঙ্গি মুগ্ধ করেছে আমাকে।
যে প্রশংসা বাক্যটা মাথায় এসেছে সেটা আপাতত জমিয়ে রাখলাম। পরের পর্ব পড়ি, তারপর বলব।
সচলায়তনে স্বাগতম।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অশেষ ধন্যবাদ। আর অসাধারণ মন্তব্য পেয়ে খুব খুব খুশি লাগছে। পরের পর্বটা পড়ে জানাবেন কেমন হল।
নিরন্তর শুভকামনা জানবেন।
--------------------------------
।।সাদাত।।
নতুন মন্তব্য করুন