খুব বেশি দিন হয় নাই আমার বিদেশ আসার।ভাগ্যের অশেষ কৃপায় হোক আর নিজ কর্মের গুনেই হোক, বাংলাদেশ থেকে বি এস সি (Engg.) শেষ করে ভর্তি হলাম বেশ নামী একটা বিশ্ববিদ্যালয় এ। যেটা কিনা আবার পৃথীবির শ্রেষ্ট বসবাস যোগ্য শহর এ অবস্থিত। নুতন পরিবেশ, নুতন মানুষ, নুতন শহর সব মিলিয়ে বেশ ভালোই যাচ্ছিল।যেহেতু মাস্টার'স প্রোগ্রাম এ পড়া, তাই প্রথম থেকেই একটা ধরনা ছিল যে, পড়া শেষ না করে বুঝি আর দেশে যাওয়া হবে না। একে তো টাকা নাই, তার উপর আবার "ইন্টারনেশিয়নাল পোর গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট"। সেই ভেবে প্রথম টার্মটা বেশ ভালো ভাবেই কেটে গেল। এরপর জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত অনেক আড্ডা, ঘুরাঘুরি এর ফাকেফাকে পড়াশুনা করলাম। কিন্তু সবকিছু ভালো ভাবেই যাচ্ছিল।
আগস্ট মাসে ডিসিশন নিলাম, আর না এবার দেশে যাবো। সব বন্ধুদেরকে বললাম "চল দেশে যাই ডিসেম্বর এর দিকে"। তখন অনেকেই সায় দিলো ঠিক আছে, যাবো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি একাই গেলাম।
ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ ঢাকায় পৌছালাম। অনেক দিনপর বাবা-মা, ভাই-বোনদের দেখে আমার ২৩ ঘন্টার ভ্রমণ ক্লান্তি কেমন জানি চোখের পলকেই মিশে গেল। সেই পুরানো ঢাকা শহর। আহা! বলে একটা দ্বীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। কিন্তু কেমন জানি, একটা অজানা ভালো লাগায় বুকটা ভরে গেল। ঢেড় বছরে তেমন কিছু পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হলো না। সেই পুরানো যানজট, কালোধোয়া, ধূলিবালি, গাড়ির আওয়াজে কেমন জানি নিজেকে নুতন করে খুজে পেলাম। এবার ঢাকায় ঘুরার আলাদা মজা ছিলো। এতোদিন একাএকা অথবা বন্ধুদের সাথে ঘুরতাম, এবার খুব নিজের আপন একজনকে নিয়ে ঘুরছি। সব মিলিয়ে ছিলাম একটা ফুড়ফুড়ে মেজাজে।
ঢাকার মানুষ গুলো কেমন জানি আরো বেশি যান্ত্রিক, আরো বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছে। কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় পাচ্ছে না। সবাই কেমন যেন একটা নাম জানা উদ্দেশ্যের দিকে ছুটে চলেছে। এক সময় আমি নিজেকেও খুজে পেলাম এই মানুষ গুলোর মাঝে। একদিন ট্যাক্সি নিয়ে এক জায়গা থেকে ফিরছি। তখন ও সন্ধ্যা হয় নাই। আমাদের গাড়ির ড্রাইভার বেশখশ মেজাজেই গাড়ি চালাচ্ছে। আর আমি রাস্তার দুই ধারের ব্যস্ত মানুষ গুলো দিকে কেমন জানি অবাক হয়ে তাকাছিলাম। হঠাৎ কোথা থেকে জানি একটা মহিলা এসে আমাদের গাড়ির উপরে এসে আছড়ে পড়ল। সাথে সাথে এক বিকট শব্দে গাড়ির সামনের কাচটা ভেঙ্গে গেল। মনে হলো মুহূর্তের জন্য সেই মহিলা গাড়ির ভিতরে চলে আসছে। কিন্তু ড্রাইভার বেচারা জানে বাচার ভয়ে এক সামনে বের করে কিভাবে যেন মহিলাকে নিচে ফেলে দিল এবং মহিলা আবার গাড়ির সামনে পড়ায়, ড্রাইভার তাকে চাপা দিয়েই পালিয়ে আসলো। পুরো ঘটনা মনে হয় ঘটলো জাস্ট চোখের পলকে। ফাকা রাস্তা পেয়ে ড্রাইভার মোটামোটি সেখান থেকে পালিয়ে এল। আর আমি কিছু বলার আগেই সে আমাদের কিছু দূর পরে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দূরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকল। আর আমাকে বলে, ভাইয়া তাড়াতাড়ি অন্য একটা গাড়ি নিয়ে এখান থেকে সরে পরেন। আমার যতদুর মনে পড়ে আমি মনে হয়, এক পলকের জন্য পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখেছিলাম, মহিলাটি রাস্তার মাঝে পড়ে কাতরাছে।
সেখান থেকে পালিয়ে এসে নিজেকে কেমন জানি ছোট মনে হচ্ছিল। কিন্তু এটাও জানি যে সেখান থেকে চলে না আসলে, নিজেকে খুব খারাপ একটা অবস্থায় খুজে পেতাম। হয়ত দেখা যেতো, মানুষে গণপিটুনিও খেয়ে গেছি।
পরের দিন মোটামুটি সব পত্রিকা পাতা খুজে দেখার চেষ্টা করলাম, কোথায় কোন মৃত্যূ সংবাদ ছাপিয়েছে কিনা। কিন্তু কিছুই খুজে পেলাম না। হয়ত অনেক ঘটনার অন্তরালে, আরো একটি ঘটনা লুকিয়ে গেল।
___________
শুভ্রসাদা
মন্তব্য
কেমন যেন ধুক করে ওঠলো বুকটা. মনে মনে ভাবলাম আমি হলে কি করতাম?
বিষয়টি ঘোর অন্যায়। আবার রূঢ় বাস্তবতা হলো ওখান থেকে না পালালে আপনার জীবন নিয়ে হয়তো টানাটানি পড়ে যেত; এ এক বিড়ম্বনা। বিদেশে আপনি অবশ্যই থামতেন বলেই বিশ্বাস করি, কারণ থামলে বরং পালিয়ে যাওয়ার চেয়ে বিপদ/অপরাধ কম। দেশের বাস্তবতায় হয়তো সেটা আপনি করতে পারেননি। অপরাধবোধ হয়েছিল কি আপনার? পরে কখনো কি ঐ মহিলার খোঁজ নিয়েছিলেন? ধারণা করছি নিয়েছিলেন।
আমার খুব চেনা একজন মানুষেরও ঠিক একই রকমের একটা ঘটনা ঘটেছিল। ধারণা করছি আপনি সেই চেনা মানুষটি নন।
আপনার পালিয়ে আসাটা স্রেফ অন্যায়। এটা কোনো ব্যাখ্যাতেই গ্রহণযোগ্য না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমি রাগিবের সাথে সম্পূর্ণ একমত৷ উনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন৷ আপনি যা করেছেন তা অন্যায় ও অপরাধ৷
ছি:
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
কিছু মনে করবেন না। ঘটনা পড়ে পলায়নপনাকে স্রেফ কাপুরুষতা হিসেবে দেখছি।
==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বোধহয় ঘটনার আকস্মিকতায় একদম স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন।
ঢাকার মানুষজন আসলেই বড় যান্ত্রিক আর মায়ামমতাহীন হয়ে গেছে।
কিন্তু আপনি দেশের বাইরে থেকে এসে ওদের মতো হলেন কীভাবে?
পালিয়ে গিয়েছিলেন, দোষ দেই না। আমরা এই জীবনে অনেক কাজই কাপুরুষের মতো করে ফেলি। পরে মর্মযাতনায় ভুগি। আয়নার দিকে তাকাতে পারি না।
আপনার লেখায় সেই মর্মযাতনা খুঁজে পেলাম না।
সমস্যাটা কি আপনার ভাষার?
-------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
সহমত...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আমার কথাগুলোই মৃদুল ভাই বলে দিয়েছেন।
- মানুষ পরিস্থিতির শিকার। আপনি সেই পরিস্থিতি এড়াতেই ঘটনাস্থলে থামার সাহস করেন নি। কিন্তু যেকোনো ঘটনাস্থলে জনসংখ্যার আধিক্যের একটা সুবিধা আছে আমাদের দেশে।
আপনি ঘুরপথে, ট্যাক্সি থেকে নেমে একজন সাধারণ পথিক হিসেবেই ওখানে যেতে পারতেন। একটু কষ্ট হয়তো হতো। হয়তো বার কয়েক যানবাহন বদলাতে হতো। কিন্তু যাঁকে চাপা দেয়া হলো, তাঁকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারতেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারতেন। এটা করতে পারলে হয়তো এখানে, মন্তব্যের ঘরে আমাদের প্রতিক্রিয়াগুলোও ভিন্ন হতো, আপনার নিজের ভেতরে যদি কোনো যাতনা থেকে থাকে এখন, সেটা থেকে আপনি মুক্তি পেতেন অন্তত এটা ভেবে যে, কিছু তো করতে চেষ্টা করেছিলেন!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সহমত
আমার ধারণা এ লেখার পেছনে কাজ করছে আপনার অপরাধবোধ। দীর্ঘদিনের গা বাঁচানো স্বভাব বশত আপনি এড়িয়ে গেছেন ঠিকই, কিন্তু বিবেকের দংশন এড়াতে পারেননি। সবার মন্তব্য তো দেখলেন। আমার বিশ্বাস আপনি নিজেও বেশ বোঝেন যে কাজটা ঠিক হয়নি।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
নতুন মন্তব্য করুন