"ওরে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া, বন্দী হইয়া মনোয়া পাখি হায়রে..." - ৬ নম্বর বাসে "তিল ঠাঁই আর নাহিরে"- পরিমাণ ভিড়ের মধ্যে এমন কর্কশ আওয়াজের মধুর সংগীত আপনার নজর কাড়বেই। আমারও কেড়েছে। উৎসের দিকে না তাকিয়েই বলে দিতে পারি নকিয়া-১১০০ গোত্রের মুঠোফোন নিঃসৃত এ ধ্বনি।
- হ্যালো, স্লামালিকুম।
মিহি সুর শুনে আন্দাজ করা যায় - উনি তরুণী না হলেও মধ্যবয়স্ক হবেন না। একই সুরে আবার -
- ওয়ালাইকুম সালাম।
সম্ভবতঃ ওপাশ থেকেও আবার স্লামালিকুম দেয়া হয়েছে। চিকন সুরের বিরক্তি ভরা কন্ঠ সঙ্গী করে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকে বাস।
- আপনি কে বলছেন সেটা বলেন আগে।
- জায়গা দিয়ে কি করবেন? কাকে চাচ্ছেন বলেন।
- এটা ঢাকা।
- ঢাকার কোন্ জায়গা তা জানার দরকার নেই। কাকে চাচ্ছেন বলেন।
- আরে ভাই আপনি কে?
- কি নাম? আবার বলেন।
- না, আপনাকে চিনতে পারলাম না।
- না, এই নামে কেউ থাকে না এখানে।
- বললাম তো এই নামে কেউ থাকে না এখানে।
- আমার নাম জেনে আপনার কি?
- আবার জায়গা... জায়গা দিয়ে কি করবেন? এটা ঢাকা।
- আপনি রং নাম্বারে ফোন করেছেন।
- আমার নাম্বার আপনার ডায়াল লিস্টে আছে।
- না, রং নাম্বার, রাখি।
এই কর্মক্লান্ত বিকেলে ভদ্রমহিলার মনোজগতের কথা কল্পনা করতে মনোবিজ্ঞানী হতে হয় না।
এদিকে বাসটা সামনে এগোতে জোর চেষ্টা করছে। যথারীতি স্বাভাবিক ফলশ্রুতি- অতীব জোরের ব্রেক... আরো স্বাভাবিক পরিণাম- কিছু যাত্রীর সামনের দিকে হেলে গিয়ে পড়ি-মরি অবস্থা। এরই মাঝে আবার আমাদের নজর চলে যায় কর্কশ আওয়াজের মধুর সংগীতের দিকে - "ওরে নীল দরিয়া..."
---------------
আলোর ছটা
---------------
মন্তব্য
লেখাটা পোস্ট করার পর নিজেই পড়ে দেখলাম- যা বুঝাতে চেয়েছি, তা ফুটে উঠেনি মোটেও। তাই শেষ ডায়লগটা পরিবর্তন করে শিরোনামটাও বদলে দিয়েছি। এতে বাস্তব ঘটনা থেকে সামান্য বিচ্যুতি ঘটলেও সত্যটা ফুটে উঠে। ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন এখানে কবে যে পুরুষগুলো মানুষ হবে.
কোন মডারেটর কি এ পরিবর্তনটুকু করে দিতে পারেন?
---------------
আলোর ছটা
---------------
দুঃখিত। ঠিক ধরতে পারিনি। ঘটনার কোন অংশ আপনাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছে?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
জানিনা, আপনি আমার উপরের মন্তব্য দেখেছেন কিনা। বাসে মহিলার কথা শুনে বুঝা যাচ্ছিল- নারীকন্ঠ শুনে ওপাশ থেকে লোকটা শুধু শুধুই কথা বাড়াচ্ছিল, এমনকি নামও জানতে চেয়েছিল। ঐ মহিলা আস্তে আস্তে ক্ষেপে যাচ্ছিল, ফোন শেষে তার বিরক্তি ছিল সুস্পষ্ট।
---------------
আলোর ছটা
---------------
এমন আরেকটি উড়ো আলাপ শুনুনঃ
-হ্যালো, কে বলছেন?
-আমি জীবন।
-এ নামে তো কাউকে চিনিনা। আপনি কাকে চাচ্ছেন?
-আপনাকেই চাচ্ছিলাম।
-আমাকে চেনেন আপনি?
-জ্বিনা। আমার মোবাইলে দেখলাম আপনার নাম্বারটা সেভ করা "জান" নামে। (এ পর্যায়ে মাথায় একটা শর্ট সার্কিট হয়)
তবুও মাথা ঠান্ডা রাখি।
-কে সেভ করেছে? আমি তো করে দিই নি।
-আমিও করি নাই। বুঝতে পারতেসি না কাহিনি কী। তাই ফোন করলাম। আপনার নামটা কি একটু বলবেন?
-(খুব ঠান্ডা গলায়) ভাই, শোনেন। আমিও সেভ করিনাই। আপনিও না। তো, এক কাজ করেন। নাম্বারটা ডিলিট করে দেন।
-তা তো অবশ্যই দিব। তবু আপনার নামটা ...
-(কথা শেষ করতে না দিয়ে) থ্যাঙ্ক ইউ। আমি রাখছি।
সেই লোক আর ফোন করেনি।
এগুলো নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। এখন আর এসব শুনে আবেগতাড়িত হয়ে পুরুষদের গুষ্টি উদ্ধার করিনা।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
এগুলো অনেক পুরান হয়ে গেছে, বুনোহাঁস আপনার সাথে সহমত! তবে, আপনার কথোপকথনটা পড়ে মজাই লেগেছে!
আর আলোর ছটা, আপনার লেখনী চমৎকার! লেখার ঢং-ও সুন্দর, শুধু টপিকটা কেমন গতানুগতিক হয়ে গেছে! আরো সুন্দর কোন ঘটনা নিয়ে লিখুন, অপেক্ষায় রইলাম!
কাকুল কায়েশ
সমস্যা কী জানেন, কল্পনাশক্তি বড়ই দুর্বল আমার। তাই আমার বেশিরভাগ লেখাই হয় আমারই আশেপাশে ঘটা কোন নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সেখানে যত না থাকে কাহিনী, তারও চেয়ে বেশি থাকে সত্য।
প্রশংসাটুকু শুনে ভাল লাগল, আর সমালোচনার জন্য কৃতজ্ঞতা।
---------------
আলোর ছটা
---------------
উড়ো আলাপ পছন্দ হয়েছে
---------------
আলোর ছটা
---------------
দেখলাম। তাও বিশেষ কিছু ধরতে পারলাম না। মাথার উপর দিয়ে গেলো বোধহয়।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ছোটবেলায় চিত্র আঁকলে নিচে লিখে দিতে হত - "চিত্রঃ গরু", না হলে কেউ বুঝতে পারত না কী এঁকেছি। আপনার মন্তব্য দেখে সে কথাই মনে হচ্ছে
উপরের ডায়লগগুলো শুধুই ভদ্রমহিলার। প্রত্যেকটা ডায়লগের মাঝে অপর প্রান্তের পুরুষের ডায়লগ আছে, যা একপাশ থেকে শোনা যায় না। আশা করি- আন্দাজ করা যায় কী বলেছিল সেই লোক। মোবাইলে অপরিচিত মহিলাদের পেয়ে খাঁজুরে আলাপ করার ঘটনা বিরল নয়। এই সাধারণ সত্যটা তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। এখনও না ধরতে পারলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী আমার অপারগতার জন্য।
কষ্ট করে পড়েছেন ও বুঝতে না পারার পরেও ২ বার মন্তব্য করেছেন - তাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
---------------
আলোর ছটা
---------------
আপনার মন্তব্য করার উৎসাহ এবং লেখার ফলোআপ করতে দেখে আগ্রহ জন্মালো। এরকম ব্লগার আমার পছন্দের। লেখাটা পড়লাম। লেখাটা যেতে যেতে পথে পথে ব্লগের মতই (মানে মাইক্রো ব্লগ আরকি) হয়েছে। অনেকটা আলোর ছটার মতো, একটুখানি ঝিলিক মেরেই মিলিয়ে গেল।
আরো লেখার প্রত্যাশা রইল।
আমি এখন যে অফিসে চাকরি করি, সেখানে বেশ আরাম। ৫টা বাজতেই বের হয়ে যাওয়া যায়, আসলে এটাই চায় অফিস। তাই সন্ধ্যা আর রাতে বিশাল অবসর পাই মাঝে মাঝেই। এ সময়টুকু অন্য কিছু না করলে নেটেই বসে থাকি। এ কারণে ল্যাপটপের সামনে ঘন্টা ১৫ কেটে যায় প্রায়শই।
বেশি প্রত্যাশা করবেন না, বেশি দুঃখ পেতে হয়
---------------
আলোর ছটা
---------------
এই লেখা কি ব্যক্তিগত ভূয়োদর্শনমূলক নাকি ?
দয়া করে "ভূয়োদর্শন" শব্দটার সঠিক অর্থটা জানাবেন কি? সিরিয়াসিলি জানতে চাইছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
"ভূয়োদর্শন" জিনিসটা আসলেই কি? আন্দাজ করতে পারি - আমার জন্য অপমানসূচক।
লেখা খারাপ হতে পারে, তা মানতে কোন কুন্ঠাবোধ নেই। এ কারণে কেউ ১ তারা দিলেও মেনে নিতে পারি হাসিমুখে। কিন্তু ...
---------------
আলোর ছটা
---------------
ঠিক!
আর একে কিন্তু প্রযুক্তির অপব্যবহার বলা যাবে না।
আপনার চোখে পড়েছে বলে আপনি বললেন; ভাল। কিন্তু অনেক মেয়েরাও কিন্তু এরকম কাজ করে বেড়াচ্ছে। শুধু ছেলে/পুরুষদের দোষ দেয়া পক্ষপাত করা হবে। সর্বক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা সবার কাম্য।।
মন্তব্যটা কী নিরপেক্ষ?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
হে! হে! হে!
কি জানি, আমি তো ব্যালান্স করবার চেষ্টা করতেছিলাম।
হয়তো নিরপেক্ষ... কিংবা নর-পক্ষ।
কোথায় যেন শুনেছিলাম - "দুনিয়ায় শিশু আর পাগল ছাড়া আর কেউ নিরপেক্ষ নয়।"
ধন্যবাদ তাহসিন আহমেদ গালিব, চেষ্টা করব নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে।
---------------
আলোর ছটা
---------------
ভদ্রমহিলার উচিৎ ছিল সেসময় 'এটা ঢাকা' না বলে মস্কো বা তেহরান বলা।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
হা হা হা আপনার মন্তব্য পড়ে হাসতে পারলাম [বাকিগুলোতে সিরিয়াস ভঙ্গিতে উত্তর দিতে হয়েছে ]
---------------
আলোর ছটা
---------------
নতুন মন্তব্য করুন