দিনটা খুব উত্তেজনায় কাটছে আজ! রাতের অপেক্ষায়,কনকের চোখে এখনি চকচকে হাসি খেলছে।
তিথির ফোন আসে,
-‘হ্যালো তিথি! কি খবর?’
-‘হুঁম, ভাল। তোমার?’
-‘ভাল। জানো আজ রাত শহীদ মিনারে কাটাব?’
-‘মানে!?’
-‘মানে আবার কি! শুভ ভাইও থাকবে! ওখানে কি হয় দেখব।‘
-‘ও দুই পাগলে হল মেলা! ভাল। তিন নম্বর পাগল হিসেবে আমাকে নিতে পার। (ছোট দীর্ঘশ্বাস) অবশ্য বাসা থেকে অনুমতি দিবে না।’
-‘(মন খারাপ করে) ও,তাহলে কি আর করা!’
-‘আচ্ছা,ভাল থেকো,রাখি।’
-‘বাই’
-‘বাই’
কথা শেষে ফোনটাকে জড়িয়ে ধরে রাখে তিথি,তার মাঝে শূণ্যতা এসে ভর করে। কেমন খালি খালি লাগে বুকের ভেতর।
‘কিরে, কার ফোন?’ শুভ জিজ্ঞেস করে, ‘তিথিরানীর?’
‘হ্যাঁ’ জবাব আসে।
-‘মেয়েটা যে তোকে পছন্দ করে,বুঝিস?’
-‘তাই নাকি! কি জানি!’ লজ্জায় লাল হয়ে কনক বলে।
-‘আর তুমিও তো সোনা,sinking sinking drinking water’
-‘হা হা হা...আরে ভাই থামেন। রাতে কখন যাবেন?’
-‘সাড়ে দশটায়,পারবিতো সারা রাত থাকতে? অনেক ভীর কিন্তু!’
-‘তো কি! জীবনে প্রথমবার একুশ তারিখে ঢাকায় আছি,এই সুযোগ কে ছাড়ে?’
-‘ঠিক আছে,রেডি থাকিস। আমি একটু বাইরে থেকে আসি।’
-‘আচ্ছা।’
বাবার ফোন আসছে। গত কাল বাসায় কথা হয় নি,আজ বলা দরকার। অথচ, এখানে এত শব্দ! কিছুই শোনা যাবে না। কনক ফোন ধরে না।
সারারাত শহীদ মিনারে কাটিয়ে এগারটায় ওরা হলে ফেরে। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। তিথি ফোন করছে,ঘুম থেকে চোখ মেলে দেখে কনক। সকাল থেকেই মেয়েটা পাগলের মত ফোন করে যাচ্ছে!
‘তিথি,আমি ঘুমাচ্ছি,পরে কথা বলি? বাই।’
-‘হ্যালো,ভাইয়া?’
-‘আরে তিথি! কি ভাইয়া,কেমন আছ?’
-‘ভাইয়া...’
-‘কি ব্যপার? গলা কাঁপছে কেন? কোন সমস্যা?’
-‘পেপার পড়েন নাই আজকে?’
-‘না,একটু আগে ফিরলাম,কেন!?’
-‘খাগড়াছড়িতে গোলাগুলি,কনকের গ্রামে,বাঘাইহাটে...কনক জানে না,আমি ওকে ফোন করলাম,কথা না বলেই রেখে দিল।’
-‘কি! আচ্ছা শোন শান্ত হও। আমি দেখি,কনককে ডাক দেই,চিন্তা করার কিছু নাই আপু। এখন রাখি? আমি পরে তোমাকে জানাব।’
-‘বাই।’
-‘বাই’
পেপার হাতে নিয়ে শুভর আক্কেল গুরুম হয়ে যায়। অবস্থা খারাপ! বেশ খারাপ! কনককে কিভাবে কি বলবে ভেবে পায় না। নিজেই কনকের ফোন থেকে ওর বাবার নাম্বার নিয়ে ফোন দেয়,ওপাশে কেউ ফোন ধরে না। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। কনককে ডেকে তোলে শুভ।
-‘কি ব্যপার,শুভ ভাই?’
-‘নাও চা খাও’
-‘কি! আমি ঘুমাই,আর আপনি ডাক দিয়া বলেন চা খাইতে! আজব!’ বিরক্ত হয়ে বলে কনক
-‘কথা আছে,চা খাও,তারপর বলি।’
বিরক্ত মুখে চা খায় কনক।
-‘কি হইছে,বলেন?’
-‘ইয়ে...মানে...পেপারটা পড়।’ পেপার বাড়িয়ে ধরে শুভ।
অবাক হয়ে পেপারটা নেয় কনক।
আগে যাও ফোন হচ্ছিল,এখন তাও হচ্ছে না। একঘেঁয়ে কন্ঠে এক মহিলা সংযোগ না দেওয়ার জন্য দুঃখ করেই যাচ্ছে ক্রমাগত। কনক রেডি হয়ে গেছে,সে নিজে গিয়ে খোঁজ নেবে। শুভ ওকে আটকাচ্ছে বারবার।
-‘কনক বোঝার চেষ্টা কর,তোমার জন্য ওই জায়গা এখন রিস্কি। তুমি যাবা ওখানে,আমিও যাব তোমার সাথে,সবকিছু শান্ত হোক,তারপর।’
-‘আমার বাপ-মার কোন খোঁজ নাই,আর আমি এখানে থাকব? আপনি যে আমাকে যেতে না করেন,ওটা তো আমার বাড়ি,যাব না কেন?’
শুভ নির্বাক বসে থাকে,বলার মত কিছু পায় না। শুধু কনককে জাপটে ধরে রাখে।
কয়েক মাস পর..................
তিথি লক্ষ্য করেছে,কনক ওকে এড়িয়ে চলে। বাবার কোন খোঁজ এখনো পায় নি কনক। এর পর থেকে ও কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। তিথির ভাল লাগে না। ওর মনে হয় কনককে সব কিছু বলা দরকার। ওর আরও কাছাকাছি থাকলে হয়ত ওর কষ্ট কিছুটা কমবে।তিথির ইচ্ছে করে কনকের হাত ধরে বলে, ‘তোমার কষ্টগুলো সব আমাকে দাও,এসো,হাত বুলিয়ে দেই তোমার ক্ষতে। এসো কনক,এসো।’ তিথি জানে,এভাবে কখনই ও বলতে পারবে না! মুখে এসে আটকে যাবে। তবুত বলতে হবে। না হয় সাধারণভাবেই বলল, ‘ভালবাসি’।
কনক বুঝতে পারছিল কিছু দিনের মাঝেই তাকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু সেই দিনটা যে আজই কে জানত! কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অবশেষে মুখ খোলে সে,
-‘শোন,তিথি। ভালবাস, ভাল! কিন্তু ভালবাসার মানে বিয়ে,বাচ্চা। ঠিক না? তুমি কি চাও তোমার বাচ্চার নামে চাকমা থাকার কারণে কোন এক দিন সে হারিয়ে যাক? অথবা, কোন এক দিন তার বাবা নিখোঁজ হয়ে যাক? তোমার বাচ্চা বুকে হাহাকার নিয়ে বড় হোক? বল,চাও?’
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামে কনক। তিথির মুখ সাদা ছাইয়ের মত দেখায়। কনকের বুকের ভেতর হাহাকার করে ওঠে। ওর খুব ইচ্ছে করে তিথিকে জড়িয়ে ধরে,একটু খানি আদর করে। ইচ্ছেটাকে দমিয়ে আবারো বলতে শুরু করে,
-‘একুশ তারিখে একদিকে আমি শহীদ মিনারে গেছি অধিকারের আনন্দ দেখতে,আরেকদিকে আমার বাবা নিখোঁজ হয়ে গেছে,নিজের অধিকার রাখতে গিয়ে,বুঝলে তিথি? নিজ দেশে পরবাসী,বোঝ না? আমি তো সেটাই! উফ্...মাথায় অনেক যন্ত্রণা...ভাল থেকো,তিথি। আসি।’
চলে যেতে থাকে সে, তার ছায়া ঝাপসা হয়ে আসে তিথির চোখে! তিথি অনেক বার চিৎকার করে বলতে চায়, ‘আমি তো ওদের কেউ ছিলাম না! আমি তোমাকে শক্ত করে ধরে রাখব,আমার সবটুকু দিয়ে...ফিরে এসো...’। সে কিছুই বলতে পারে না,তার গলায় কিছু একটা আটকে থাকে,ফাঁকা ফাঁকা লাগে সব কিছু। আর বিকেলের সোনা আলোয় সে দেখে কনকের ছায়া ততক্ষণে মিলিয়ে গেছে।
-স্নিগ্ধা করবী
মন্তব্য
মডারেশন নোট:
গল্পের যোগসুত্র গুলো শিথীল। একটা অংশ থেকে আরেকটা অংশে যেতে হোঁচট খেতে হয়। যেমন, শুভ কে? কোন তারা শহীদে মিনারে সারা রাত কাটাচ্ছে?
বর্ণনা অপ্রতুল। যেমন কনক কেন ফোনে কিছু শুনতে পাচ্ছিল না? সে যে শহীদ মিনারে আছে, সেখানে প্রচুর হৈচৈ এগুলো পাঠককে কল্পনা করে নিতে হয়।
কিছু বানান ভুল। যেমন: "ভীর"
প্রকাশের কারন:
গল্পের মুল বিষয়টা অনেক গভীর এবং জোরালো। বিষয়টার আবেদনটা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
যদি কিছু মনে না করেন- 'সূত্র' ও 'কারণ' বানান দুটো বিশেষ যত্নের দাবিদার।
গল্প ভাল লেগেছে।
---------------
আলোর ছটা
---------------
বানান ভুল ধরার জন্য ধন্যবাদ।
তবে এই মন্তব্যটা অপ্রাসঙ্গিক। ভুল বানান মডারেশন সর্ম্পকিত নোটটাকে অকার্যকর করে না। বানান ভুল ধরে মডারেশন নোটকে খাটো করার সুক্ষ্ম চেষ্টাটা পজেটিভ মনে হল না।
একটু ভুল বুঝলেন। মডারেশন নোটকে খাটো করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। বরং আপনার পরামর্শ দেখে আমি নিজেও শিখে নিয়েছি কী করলে ভাল হয়। তবে আমার ছোট্ট একটা সমস্যা আছে- আমি প্রত্যাশা করি যে অন্যের বানান ভুল ধরবে সে নিজেও বানানের ব্যাপারে অধিকতর মনোযোগী হবে। আর কোন মডারেটরের কাছ থেকে সে প্রত্যাশাটা আরেকটু বেশি। আশা করি বুঝাতে পেরেছি।
ভাল থাকুন।
---------------
আলোর ছটা
---------------
ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।পরবর্তীতে সতর্ক থাকব আর শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব।
-স্নিগ্ধা করবী
ভাল গল্প তো, মডারেশন নোটের দরকার ছিল না...
যদিও বর্ণনাটা একটু তাড়াতাড়ি টাইপ, তবুও গল্পের আবেদনটা সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেলো। আমরা কিভাবে এখন ওদের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের 'মানুষ' বলে দাবী করবো তা ভাবতেই পারছি না!!
এই নগ্ন বর্বরতা বন্ধ হোক, আমরা মানুষ হয়ে উঠি আর একবার ... প্লিজ ... ...
===============================================
রাজাকার ইস্যুতে
'মানবতা' মুছে ফেলো
টয়লেট টিস্যুতে
(আকতার আহমেদ)
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
গল্প ভাল্লেগেছে!
পাহাড়ে বাঙালির পাকিপনা বন্ধ হোক...
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমাদের 'মানুষ' হওয়ার অনেক বাকি....
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
প্রচলিত সহজ ধারায় "আসুন সবাই উঠে দাঁড়াই" বা "চলুন প্রতিবাদ করি" এসব না বলে এই গল্পের পরিপ্রেক্ষিত তৈরী করে বর্তমান পরিস্থিতির আবেদনটা পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়াটা খুব কার্যকর লাগলো।
বেশ ভাল লাগল আপনার গল্পটা! সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন সমসাময়িক এই বিষয়টাকে।
========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
চমৎকার গল্প । বিচ্ছিন্নতার গল্প । মানবিকতার গল্প ।
আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় এমন গল্প ।
.......................................
তোমারই ইচ্ছা কর হে পূর্ণ ....
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ধন্যবাদ সবাইকে। অনেক ধন্যবাদ...
-স্নিগ্ধা করবী
নতুন মন্তব্য করুন