একটি পরাজিত গল্পের বইয়ের অবিজ্ঞাপন--কাকমানুষের চকখড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৭/০২/২০১০ - ১১:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
আমি আসলে লেখক নই। অন্তর্জালের পাল্লায় লিখছি ৬/৭ মাস। এর আগে মন্তব্য লিখেছি। কিছু কিছু অর্বাচিন রাজনৈতিক পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখেছি। কয়েকটি কবিতাও লিখেছিলাম কয়েকজন কবির ঠেলায়। এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা নির্মম।
কবিরা খুব জটিল প্রকৃতির প্রাণী। ঝামেলা পাকানোই এদের কাজ। গালি দেওয়াই এদের আওয়াজ। আমার দাদুর স্বভাব ছিল খুব মিনমিনে। সাত চল্লিশ সালে তার একটি বাড়ি দখল করে নিল কিছু লোকজন। ওপারে তবু গেলেন না। বললেন, দেশের মানুষইতো নিছে, নাকি? পঁয়ষট্টিতে আধখানা বাড়িটাও নিয়ে গেল। তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। লুকিয়ে ছুকিয়ে থাকেন। তবু দেশ ছাড়ার নাম নেই। আর একাত্তরের পরে যে টুকু অবশিষ্ট ছিল জমি জিরেত, এগুলোর উপরে কী একটা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিল যুদ্ধফেরতা নেতা। নেতা বললেন, কেমন লাগছে কাকু? দাদু মিনমিন করে বললেন, বেশ ভাল।
--বিপ্লব বিপ্লব লাগছে না?
--কোন বিপ্লব যেন?
-- আপনেরা যে বিপ্লব চাইতেন। সর্বহারার রাজত্ব।
--অ, বি.প..ল..ব। বিপ্লব নয়, সর্বহারা। সর্বহারা সর্বহারা লাগছে।
সর্বহারার জয় করবার জন্য রয়েছে সারা দুনিয়াটিই। সুতরাং আমার দাদু বাস্তুচ্যুত হয়ে আমাদের জন্য রেখে গেলেন সারা দুনিয়াটি। কে যে কোথায় কেটে পড়েছে--ঠিক নেই। শুধু দাদু মরে যাওয়ার আগে কানে কানে বীজমন্ত্র দিয়ে গেলেন, নো ঝামেলা। কোনো ঝামেলার মধ্যে থাকবি না। কেটে পড়াই উত্তম মার্গ। এটাই বিপ্লব। কেটে পড়া বিপ্লব, বেঁচে থাক বাবা।
আমি দাদুর কথা বেদবাক্য মনে করছি। কেটে পড়তে পড়তে এখন পগার পার হয়ে গেছি। তাকিয়ে দেখি অদূরে স্ট্যাচু অব লিবার্টি মুচকি মুচকি হাসছে। আর ফিসফিস করে বলছে, দাদুর কথা ভুলো না কিন্তু। হু, ভুললে খবর আছে।
আমার দাদু স্বর্গীয় বিধুঁভূষণ রায় আমার মাথার ভেতরে সব সময় জেগে থাকেন। তাকে ভোলা কঠিন।
সুতরাং ঝামেলাপূর্ণ কবি হওয়া বিষবৎ। কবিতা লেখা বাদ। রাজনীতি মহাঝামেলা পূর্ণ। সুতরাং উহা হইতে সদা দূরে থাকি। কি আর করা। একা একা বকবক করতে করতে কিছু গল্প লিখে ফেলেছি। পরাজিত মানুষের গল্প। গৃহহীন মানুষের গল্প। এই গল্প কারো ভাল লাগবে না, এটা জেনেই লিখেছি। ভাল লাগলেই নয়া ঝামেলা হয়ে যেতে পারে। এরকম আশংকায় আছি। শুনেছি, বইমেলার পাঠককুল আমার সম্মান রেখেছেন। তারা সর্বনিম্ন সংখ্যায় বইটি কিনেছেন। ইহা একটি রেকর্ড।
এবং রেকর্ডটি কিঞ্চিৎ ভাঙা।
কাল সারাদিন আর সারারাত তুষার পড়েছে। হাঁটু ডুবে গেছে। কাজে গিয়ে দেখি--স্কুল বন্ধ। আর আমার হাতে হ্যারিকেন। মনে বেশ আনন্দ হল। এই শালা স্বপ্নের দেশও আমাকে চিনতে পেরেছে। বলছে, তলপি তলপা গুটিয়ে রাখো। তলপি থাকলে তো গুটিয়ে রাখার প্রশ্ন আসে! আর কোন নরক বাকি আছে যে সেখানে যেতে পারি ঝামেলা এড়াতে? কিন্তু ঠিক ঠিক যেতে তো হবে। এটাও তো ঠিক।

তার আগে আমার বইটি হারিয়ে যাবে। বইটির একটি ঠিঁকুজিনামা রেখে দেই। অইটে দেখিয়ে বলা যাবে--এইটা একজন বোকাসোকা লোকের আমলনামা, যার ট্যা ফু নেই। লোকটি কান্নার সময় হাসত। আর হাসার সময় কানত। শব্দহীন।

আমার বইটির ঠিঁকুজিনামা। বিজ্ঞাপন মনে হলে ডিলেট করে দেবেন। আমাকে ভয় পাওয়া কিছু নেই। আমি আমার দাদুর নাতি।

কাকমানুষের চকখড়ি
(গল্পের বই)
কুলদা রায়

প্রকাশক: আমার প্রকাশনী
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৩৪
প্রচ্চধ : সুমন
মূল্য : ১৫০ টাকা

KAKMANUSHER CHALKKHORI
a collection of stories
BY KULADA ROY
New York, USA.

উৎসর্গ

তিন পুরুষ-
হে জল, শরচিহ্নিত ঘড়ি

আমার প্রপিতামহ স্বর্গীয় সৃষ্টিধর রায়
আমার পিতামহ স্বর্গীয় বিঁধুভূষণ রায়
আমার পিতা স্বর্গীয় শঙ্করকুমার রায়

ভুমিকথা :

জলকে জলের মত ভেবেছি, পদ্মপাতায় জলদেবী বসে-
ঋষিকা মৌসুমী লিখত, আমাদের বাগানে একটি টুনটুনি পাখি বাসা বেঁধেছে। আমি তখন ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে। ঢেউ গুনছি। আর বুঝতে পারছি- টুনটুনি পাখিটি আমার বুকের মধ্যেই উড়ে আসছে। পাখিটি প্রাণজ। ওর প্রাণ আমার প্রাণে বাঁধা। সেই মধ্য আশিতে। ঋষিকা মৌসুমীর কাছে লিখতে লিখতে এই গল্পগুলির বীজ উপ্ত হয়েছিল।
আর আজ আমি নিজেই একটি টুনটুনি নয়- সমুদ্রপাখি। ডানা নেই। আছে হাহাকার।
চোখ খুলে দেখি আমার বড়ো মেয়েটি খট খট করে লিখছে। আর ছোট মেয়েটি আমার কাছে কাগজ আর কলম দিয়ে বলেছে- লেখ বাবা। লেখ।
-কী লিখব মা?
-তোমার ইচ্ছে। ইচ্ছে লেখ।
মেয়েটি একটি আঁকাবাঁকা দাগ দিয়েছে কাগজের উপরে। বলে, কি লিখছি জান বাবা? লিখেছি-একটি পরীকথা। আর এই দাগটি হল আকাশযথা। অই দাগটি- মাটিব্যাথা। ফুল ফুটেছে। চাঁদ উঠেছে। হাতি নাচছে। ঘোড়া নাচছে।
হা হা হা। কী রূপ লিখছে আমার মেয়ে। যেন পাতা। একটি গাছ। ভরভরন্ত ফল। মিষ্টি সুবাস। কী সহজ। কী সরল। প্রাণদায়ী। আমি এই গাছটির নিচে একটু বসি। আর আমার বড়ো মেয়েটি পিয়ানো বাজায়। ছোট মেয়েটি নিষ্পত্র ডানা মেলে উড়ে যায় তার আকাশযথায়।
আমি আমার বড়ো মেয়েটির সঙ্গে লিখি। ছোট মেয়েটির সঙ্গে লিখি। লিখতে লিখতে হাঁটতে শিখি। হেঁটে হেঁটে অনেকদিন পরে কাজে যাই। বসে থাকি। বিড় বিড় করে বলি, এসো ঘুম। এসো আনন্দ। এসো জীবন। হে কদম, পক্ষীভুত রোদ।
ততদিনে স্বজনের ভস্ম থেকে নতুন পাখিরা এসে গেছে। আমার কাঁধে এসে বসেছে। ওদের লেজটি দেখে আমার প্রাণ নতুন করে ভরে এসেছে। আমি লেজের ছায়াটিকে মনে করে লিখেছি। ছায়াটির নড়াচড়া দেখে হেসেছি। আর কিছু নয়। অন্য কিছু নয়।
সোহম। আমি সে-ই। সে-ই আমি।
কী দরকার অন্য কিছুর।

মধুবাতা ঋতায়তে-

এই গল্পগুলো- অমি রহমান পিয়ালের তাড়ায় লিখিত হয়েছে। কবি বন্ধু তুষার গায়েনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন কথা হয়েছে লেখলেখি নিয়ে। আর মদদ জুগিয়েছেন কথাশিল্পী পাপড়ি রহমান, কবি সেলিনা সিকদার, জামিলা হাসান, ক্রিস্টিনা রোজারিও। এঁদরে শত্রুতাও মধুর।
বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ পাঠিয়ে দিয়ে মনীষী কলিম খান প্রশ্রয়ের হাসি হেসে উঠেছেন। খোঁড়া পাহাড় ডিঙোতে যাচ্ছে। শ্রী কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস এরকমই বলেছিলেন।

স্নেহজল- জলের স্নেহ-
এবং আমার চাচা আলোকচিত্রী নাইব উদ্দিন আহমদ চেয়েছিলেন যেন আমি লিখি। কি লিখব? তিনি সকল লেখার পারে চলে গেলেন এ শীতে। তাঁর আশ্রয় না পেলে আমি কি কখনো তাঁর চোখদুটো চেয়ে নেয়ার সাহস পেতাম?

ঋণস্বীকার দীনস্বীকার-

জলকে জলের মত ভেবেছি, পদ্মপাতায় জলদেবী বসে
প্রফেসর আব্দুল কুদ্দুছ মিঞা, প্রফেসর সুবোধ চন্দ্র সরকার, প্রবীর শিকদার সুজন, গৌতম শিকদার
কবি তাপস গায়েন, কলিম খান, সুশান্ত দাশগুপ্ত, মাহমুদুল হাসান রুবেল,
Dr. Jagadeesh Sindagi, Ms. Mary Matos, Manica Naraine, Fiona Johnson, Jenifer, Crystal, Julious Oluokun, Olakunle, Myson Jean Jaques, Kendrick, Hans Piere, Lopej, Benny, Folake M Sodia, Mojeed, Belliboot, Md. Shohail Shafi, Md Ashraf, Dr. Allarakha Sheikh,

ফ্লাপ পরিচিতি-

কুলদা রায়
জন্ম অঘ্রাণে। দিনটি অজানা। বৃহস্পতিবার। গোপালগঞ্জ শহরের একটি শুদ্র গৃহহীন পরিবারে। পঁয়ষট্টির ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়।
একাত্তরে এক কুলদা রায়কে দেখা যায় দেশান্তরে। বাবার কাঁধে চড়ে যাচ্ছে। আরেক কুলদা রায় দুর্ভিক্ষের মধ্যে সংগ্রহ করছে রিলিফের দুধ। আরেকজন বসে আছে পরেশ মাস্টারের মুদি দোকানে। পাথুরে শ্লেট, লকলকা বেত আর বাটখারা তার সহপাঠী। পড়ছে- ঐ অজগর আসছে তেড়ে।
বুড়োমানুষের চিঠি লিখছে অন্য কোন কুলদা রায়। এর পরে লিখবে কয়েকটি মুদি খাতা। বাবার খাবার পৌঁছে দেবে বাজারে। তারপর স্কুল। আরেকজন স্কুল থেকে দেখতে যাবে ধানক্ষেত। পাঠাগারের বইয়ের ছদ্মলিপি লিখে দেবে অন্য আরেক রায়। তিন পাগলের সঙ্গে খাবে দুধভাত। যাবে পালাগানে।

আরকজন কুলদা রায় কবিতা লিখে ভর্তি হয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরেকজন ফাঁকে ফাঁকে করছে দক্ষ শ্রমিকতা, তারা গোণা, পোস্টার লেখা, দেখনদারী। আরেকজন মেতে আছে ধানের ফুল নিয়ে দীর্ঘ গবেষণায়। তার অভিসন্দর্ভ- ধানের আমিষ বাড়ানোর উপায়। এর মধ্যে একজনের হাতে ঝুলছে কৃষি বিদ্যায় স্নাতকোত্তর।
একজন কবিতা লিখত নাম লুকিয়ে- আনন্দ রোজারিওর কবিতা। দুএকটা ছোট কাগজ প্রকাশও করেছে। কেউ কেউ দিয়েছে ফিরিয়ে । আরেকজন দীর্ঘ পনেরটি বছর বরিশালের গ্রামে ঘুরেছে নদী, নালা, খাল, বিল, ফসল, গাছপালার সঙ্গে। দেখে বেড়িয়েছে গাছের রোগ-পোকার জগৎ। মাটির স্বাস্থ্যকথা। পাঁচটি বছর তার জলবাস। আর কৃষকের সঙ্গে হেঁটে চলে গেছে আরেকজন কুলদা রায়।
অন্য একজন চলে গেছে সমুদ্র পেরিয়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে লিখছে গল্প। অন্তর্জাল-সাহিত্য।
এসব কুলদা রায়ের কোন বই নেই। অন্য কোথাও এরা লেখে না। কেন লিখবে?
এদের একজন থাকে নিউ ইয়র্কে। গৃহহীন। স্ত্রী মেরী হালদার। দুকন্যা পূর্বা অতন্দ্রিলা আর প্রজ্ঞা পারমিতা। সঙ্গী একটি বিড়াল আর তিনটি পাখির ছায়া।

(গল্প শুরুর আগে-)

নদী মরে গেলে সত্য হারিয়ে যায়
দুপাড়ের মানুষের বুক থেকে ঝরে পড়ে
বয়সের মতন এক একটা নিটোল স্বপ্ন
প্রতিটি গল্পের সাথে জেগে থাকে দীর্ঘশ্বাস
এরকম কথা আমাকে শুনিয়েছে একজন বুড়ো চাষি

আমি সেই থুত্থুরে বুড়ো চাষির বুকের ভিতরে
হাত দিয়ে দেখি-
অনেক দূরের সবুজ ধান
পুড়তে পুড়তে হলুদ হয়ে যায়-

সূচিমুখ

১। হারিয়ে যাওয়া : শোলার ফুল
২। আলো ও হাওয়ার গল্প
৩। টম সাহেবের বাড়ি
৪। যে কথা আগুনের- যে কথা স্নেহজলের
৫। গোলাপ সুন্দরী
৬। ছাতিম পাতা
৭। মেঘ মল্লারের কথা : একজন পাথর মানুষের কথা
৮। গোফাগুন
৯। কবিতা অথবা রহস্য খোলার রেঞ্চ
১০। প্রজ্ঞা পারমিতার জলতল অথবা এ্যান্ডারসনের চকোলেট
১১। কৌটো ও মেঘকুঁড়ি
১২। জলের ঈশ্বর : ঈশ্বরের জল
১৩। ঈশ্বরের চোখ : আদিপাঠ
১৪। পরীকথা
১৫। একটি হত্যাকাণ্ডের নিষ্পত্র ডানা
১৬। নির্বাসন শিখিনি, মৃত্যু কবজ
১৭। আমি নই ক্ষত্রিয়
১৮। ছয়ফুল মুলক বদিউজ্জামাল উরফে চান্দু মিয়ার সহি সফরনামা
১৯। যে কথা রক্তের, হাহাকারের
২০। নারাণকাকুর মেটিরিয়া মেডিকা
২১। কাকমানুষের চকখড়ি
২২। একটি বুড়ো আম গাছ অথবা অমৃত ফল বিষয়ক যাদুবাস্তব গল্পের খসড়া
২৩। ইঁদুর অথবা নক্ষত্রের রোদ
২৪। মল্লদের শালবন
২৫। পাতা ঝরার গান : পতিত শ্রমণ
২৬। হাওয়া পুলিশের পেরজাপতি : আধখানা নভেলেট
২৭। ভাসান চর- হাসান চর
২৮। আখুঞ্জীনামা/১ : অতি আদুনিক নোবেল : গৈয়া বাগানের পিয়ারা বিগম
২৯। আখুঞ্জীনামা/২ : নয়া ছিঃনেমা : দি বেড বাগ- যহন ছারপুকা আইল
৩০। আখুঞ্জীনামা/৩ : আয়ুব খানের ঘোড়া : কে তাহারে চিনতে পারে
৩১। পরিশিষ্ট


মন্তব্য

পলাশ দত্ত এর ছবি

এখানে প্রবেশের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। এই বই নিদেনপক্ষে ১০০ বছর বাচবে।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অভিনন্দন বইয়ের জন্য
অপেক্ষা করছিলাম বইটার

০২
সচলে বোধহয় প্রথম লেখা। স্বাগত

০৩

আনন্দ রোজারিও কি আপনি?

কুলদা রায় [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ, মাহবুব লীলেন। আনন্দ রোজারিও নামে কিছু কবিতা লিখেছিলাম। এখন অতীত।

হাসিব এর ছবি

কুলদা রায়, গল্প চাই । গল্প; নতুন গল্প ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ফেসবুকের পরিচিতি ধরে এবার সচলায়তনে।
স্বাগতম কুলদা রায়।

গল্প দিন, গল্প পড়ি।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হিমু এর ছবি

ভূমিকাটা চমৎকার। বইকে চেনা যায় না, লেখককে চেনা যায়।

নতুন লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

কুলদা রায় [অতিথি] এর ছবি

আপনি কিন্তু আমার ত্রুটিটা ধরে ফেলেছেন। আমার বইটিই চেনার দরকার ছিল। আমাকে নয়। সেই কাণ্ডটিই ঘটল।
বইটি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। বলা ঠিক নয়।

আমার বইয়ের একটি পরিচিতি লিখেছিলেন এক বন্ধু। তার সঙ্গে আমার ৪৩ বছরের বন্ধুত্ব। লিখে তিনি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন-- আমার মতো অভাজনকে তিনি চাঙ্গে তুলেছেন।
কোনো দিনতো চাঙ্গে উঠতে চাই নি।
সুতরাং বাদ।
প্রকাশক রুবেল খুব হতাশ হয়েছিলেন। তার আশা ছিল- এই বই পরিচিতি থাকলে দুএকজন পাঠক বাড়লেও বাড়তে পারে। পরে একটি পোস্ট দিয়ে এই ফ্লাপটি আমার ব্লগে শেয়ার করেছিলেন। তার পোস্ট থেকে তুলে দিলাম লেখাটি।
মাফ করবেন।

কোন এক সবুজ মাঠ অথবা শস্যক্ষেতের মধ্য দিয়ে ঝিরঝির করে বয়ে যাওয়া খাল যার উপর ঝুঁকে আছে বহুবর্ণ মানুষের ছায়া-- তাদের বিচিত্র জীবন ও ঘর-গেরস্থালী, প্রতিদিনকার সুখদুঃখ ও অনুভবরাশি-- বাংলার একান্ত প্রাণের স্পন্দন ছোট ছোট সরল বাক্যে ও অনায়াসভঙ্গিতে উঠে আসা অন্তরঙ্গ কথকতা-- কুলদা রায়ের গল্পের প্রাণ যা পাঠ মাত্রই পাঠক চুম্বকীয় আবেশে ছুটে চলেন। ভাষা ও ভঙ্গিতে সরল কিন্তু চেতনায় প্রখর কুলদা রায় গভীরভাবে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও রাজনীতিসচেতন যা ক্ষমাহীনভাবে চিহ্নিত করে স্বদেশের শকুনদের যারা হাজার বছর ধরে বাংলার অসাম্প্রদায়িক জীবনাচার ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির শত্রু --কখনো সরাসরি প্রতিক্রিয়াশীলতায়, কখনো বা প্রগতিশীলতার ছদ্মবেশে। এই গ্রন্থের অধিকাংশ গল্প এবং চরিত্রই তার জীবন ও অভিজ্ঞতার অংশ-- সে অর্থে প্রামাণ্য এবং যেখানে তা নয় অর্থাৎ ফিকশন, সেখানেও বাস্তবতারই যাদুকরী উন্মোচন ঘটে ভাষার অপেক্ষাকৃত জটিলতায়-- আঞ্চলিক বাগভঙ্গি, কিচ্ছা-কাহিনী, প্রাচ্য ও প্রতীচ্যিয় মিথের পরস্পরছেদী প্রয়োগে, তীর্যক শ্লেষ ও পরিহাসে। তাঁর গল্পগুলো প্রধানত একাত্তরপূর্ব শৈশব থেকে যুদ্ধে আক্রান্ত বাঙালি জনপদ ও যুদ্ধোত্তর বিজয়ী জাতির পরাজিত শত্রুদের পুনরুত্থানের কালখণ্ডে বিন্যস্ত। বৃষ্টির মতো ধেয়ে আসা আসন্ন যুদ্ধের ভয়ে একটি পরিবারের সদস্যরা জলপথে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সময় লঞ্চের পাটাতনে স্বাধীনতার মহান নেতার হঠাৎ দর্শনে কিভাবে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে; কিভাবে জীবনরসে পরিপূর্ণ সহজিয়া বাংলার জনপদ পাক হানাদার বাহিনীর হিংস্র আক্রমণে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় এবং বিলের জলে আত্মগোপন করে থাকা মানুষেরা পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েও নিঃশব্দে মৃত্যুকে বরণ করে এবং একই প্রেক্ষাপটে হানাদার বাহিনীর সহযোগী তথাকথিত গায়েবী শক্তির অধিকারী ও ধর্মের লেবাসধারী অন্ধপীরের হিংস্র মুখচ্ছবির উন্মোচন ঘটে; কিংবা সদ্য স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার পিতাকে হত্যায় উদ্যত নবীন বিপ্লবী পরে কিভাবে প্রতিক্রিয়াশীলতার ছায়ায় ও পরিপোষণে নিজেই রাজাকারতন্ত্রের বিশ্বস্ত সেবক হয়ে উঠে-- তা এই গল্পগ্রন্থে বাংলার মানুষের কয়েক দশকব্যাপী মর্মন্তুদ অভিজ্ঞতার বাস্তব দলিল হিসাবে উঠে এসেছে।

আজ বাংলাদেশে মৌলবাদের বিরুদ্ধে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনরুজ্জীবনের কালে এই গল্পগ্রন্থের প্রকাশ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রেরণাস্বরূপ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আপনার নাম শুনেছি, গল্প পড়ার সৌভাগ্য হয়নি এখনো। আশা করছি সেই সৌভাগ্য খুব শীঘ্রই হবে, সচলায়তনের কল্যানে। চলুক
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সচলে লিখুন। ভূমিকা অসাধারণ লাগল।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌চাটগাঁ থেকে তড়িঘড়ি বইমেলায় গিয়ে মাত্র চারখানা বই কিনতে পেরেছিলাম। যার মধ্যে দুটি বই দুই সহব্লগারের, যার মধ্যে একটা আপনার কাকমানুষের চকখড়ি আরেকটা পাপড়ি আপার গল্পের বই। বই দুটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানেও থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল বলে ভালো লাগছে।

আপনার নতুন লেখার অপেক্ষায়। ভাল থাকুন হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আলমগীর এর ছবি

কে পরাজিত? গল্প না বই?
প্রায় খালি হাতে আসছেন কুলদা দা। একটা গল্প দেন। পড়ি।

দময়ন্তী এর ছবি

ভূমিকাটা অতি চমত্কার লাগল৷ বইটা কি অনলাইনে কেনার কোন সুবিধে আছে?
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মুস্তাফিজ এর ছবি

বইয়ের জন্য অভিনন্দন
সংগ্রহে রাখবো। নিয়মিত আপনার লেখা পড়তে চাই। আশা করি অনুরোধটুকু রাখবেন।

...........................
Every Picture Tells a Story

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

দারুণ এই রিভিউটার পরে গল্প পড়ার আগ্রহ জাগছে...

অপেক্ষায় থাকলাম পাঠ করার...।

_________________________________________

সেরিওজা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দাদা, বইটা এখনো পড়ে উঠতে পারিনি। পড়ে ফেলবো শীঘ্রই... ধন্যবাদ অনেক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বইমেলায় বইটা নেড়েচেড়ে দেখা হয়েছে। অপরিচয়ের বেড়া ডিঙিয়ে কেনা হয়নি বইটি! সচলে লিখুন, সেই লেখার সূত্রেই হয়তো কেনা হবে আপনার আগামীর অন্তর্জাল সাহিত্যসমূহ!
..................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

সচলে আপনার লেখা পড়তে চাই। অসাধারণ ভূমিকা।

-------------------------------------------------------------------
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়

তাসনীম এর ছবি

অসাধারন সূচনা। সচলে স্বাগতম। আপনার আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

আপনার বইটা নর্থ আমেরিকাতে পাওয়া যাবে কোন ভাবে?

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

আপনার গল্প ফেসবুক নোটে পড়েছি।
এ লেখায় ভুমিকথা, ফ্লাপ পরিচিতি'র কিছু লাইন বেশ ভালো লাগলো।

সচলে আপনার গল্প পড়ার প্রত্যাশা রইলো হাসি

---------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

সৈয়দ আফসার এর ছবি

_

দাদা
আপনার গল্পগ্রন্থের ভূমিকা আমার ভালো লাগছে।
আজো মনে পড়ছে ২০০৩সালের কথা যখন আমি দীনের মারফত আপনার কবিতা আমার হাতে পৌঁছে, কবিতাও ভালো লেগেছিল। আমি ‘অর্কিড’ ৩য় সংখ্যায় আপনার কবিতাও ছাপাই।
আপনার ‘অক্টোবর দুই হাজার সাল’ কবিতাটি খুব ভালো লেগেছিল।

‘যাপিত নদীর কাছে ডুব দেই
হু হু করে ভেসে যায় তীর্থ সময়’

সচলে আপনাকে সাধুবাদ।
ভালো থাকুন।
_________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।