কম্পিউটার বিজ্ঞানের লোকায়ত, ফলিত ও কারিগরী বিষয়ের চেয়ে বরাবরই আমার আগ্রহ বেশী এর চিরায়ত বুদ্ধিবৃত্তিক ও দার্শনিক বিষয়ে। জীবিত কোন প্রানীকে তার স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মের একটা নুন্যতম পর্যায় সাপেক্ষে কোন কৃত্রিম যন্ত্রদিয়ে প্রতিস্থাপনের কথা চিন্তা করলে, মানব উদ্ভাবিত অন্য সকল যন্ত্রের বিফলতার মাঝে একমাত্র কম্পিউটারই কিছুটা সফলতার আশা জাগায়। আমার ভাষায় তাই জড় জগতের মধ্যে একমাত্র জীবিত বিষয় হল কম্পিউটার!
উপরোক্ত দৃষ্টিভঙ্গীর প্রেক্ষিতে জনসাধারণের পর্যায়ে আমি একটি ধারাবাহিক নিবন্ধ লিখব বলে ভাবছি। এই ধারাবাহিকের পর্বগুলিতে আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা যেমন আসবে, তেমনি আসবে এ বিষয়ে বিভিন্ন গুনীজনের লেখা বই বা প্রবন্ধের ভাষান্তর। গণনাবিদ্যা (কম্পিউটার বিজ্ঞান), কৃত্রিম বুদ্ধিবিজ্ঞান (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স), দর্শন, মনোবিজ্ঞান, যুক্তি বা বিশ্বাসভিত্তিক জীবনাচরন সম্পর্কে আগ্রহী পাঠক/পাঠিকাদের মন্তব্য আমাদের আলোচনাকে সমৃদ্ধ করবে বলে আমার ধারনা। আমাদের আলোচনার গন্ডী হবে বিশেষজ্ঞদের আর জনসাধারনের জানার পরিধির মিলনরেখায়।
গণনাভিত্তিক বুদ্ধিবিদ্যার দর্শন (Philosophy of Computing-Based Intelligence) ১ম পর্ব -- ত্রিখন্ড উদ্ভাবন।
হফস্ট্যাডটার প্রণীত পুলিৎজার পুরস্কার প্রাপ্ত জিইবিঃইজিবি অবলম্বনে।
আখিলিস (একজন গ্রীক বীর, মরণশীলদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী) ও একটা কচ্ছপ কড়া রোদে নোংরা একটা রাস্তায় একসাথে দাঁড়িয়ে। অনেক দুরে রাস্তায় উচুঁ খুঁটির উপরে একটা আয়তাকার পতাকা ঝুলানো। পতাকাটির পুরোটাই লাল, শুধু মাঝখানে একটা বৃত্তাকার ছিদ্র, যার মধ্যে দিয়ে ও পাশের আকাশ দেখা যায়।
আখিলিসঃ রাস্তার অপর প্রান্তের ঐ অদ্ভুত পতাকাটি কি? এটা আমাকে আমার প্রিয় চিত্রশিল্পী এশারের একটি চিত্রের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
কচ্ছপঃ ঐটা হচ্ছে জেনোর পতাকা।
আখিলিসঃ ঐ ছিদ্রটা কি কোনভাবে এশারের আঁকা সেই মঁবিয়াসের ফিতার ছিদ্রটির মত? আমি বলতে পারি, কি যেন একটা গোলমাল রয়েছে ঐ পতাকাটিতে।
কচ্ছপঃ পতাকাটি কেটে বানানো ঐ ছিদ্রটার অাকৃতি জেনোর প্রিয় সংখ্যা শুন্যের প্রতীকের মত।
আখিলিসঃ কিন্তু শুন্য তো এখনও আবিস্কারই হয়নি! এটাতো আবিস্কার করবে একজন হিন্দু গণিতবিদ প্রায় লক্ষ বছর পরে। আর তাই, জনাব কচ্ছপ, আমার যুক্তি অনুযায়ী এই রকম একটা পতাকা অসম্ভব!
কচ্ছপঃ তোমার যুক্তি বোধগম্য, আখিলিস, আর আমি অবশ্যই একমত যে এই রকম একটা পতাকা বাস্তবিক অসম্ভব। কিন্তু যাইহোক এটি বেশ সুন্দর, তাই না।
আখিলিসঃ ও হ্যাঁ, এটার সৌন্দর্য নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
কচ্ছপঃ পতাকাটার সৌন্দর্য কি এটার অসম্ভাব্যতার সাথে সম্পর্কিত? সৌন্দর্য বিশ্লেষন করার মত সময় কখনই আমার ছিল না। এটা হল একটা গুঢ় বিষয়; আর আমার মনে হয় গুঢ় বিষয়াদি নিয়ে ভাবার সময় কখনই আমার নেই।
আখিলিসঃ গুঢ় বিষয়াদির কথা যখন বলছ, জনাব কচ্ছপ, তুমি কি কখনও জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে জানতে চেয়েছে?
কচ্ছপঃ ওহ, খোদা, না।
আখিলিসঃ তুমি কি কখনই জানতে চাওনি আমরা কেন এখানে এসেছি, অথবা কে আমাদের তৈরী করেছেন?
কচ্ছপঃ ওহ, ঐটা পুরোটাই ভিন্ন ব্যাপার। আমরা জেনোর তৈরী (তুমি শীঘ্রই তা দেখতে পাবে); আর আমরা এখানে কারন হল আমাদের মধ্যে একটা দৌড়ের লড়াই হবে।
আখিলিসঃ একটা দৌড়ের লড়াই? কি বিরক্তিকর! আমি, মরণশীলদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী, আর তার বিপরীতে তুমি, সকল ধীরগামীদের মধ্যে ধীরতম! এই রকম দৌড়ের লড়াইয়ের কোন অর্থ নেই।
কচ্ছপঃ তাতে কি, তুমি আমাকে কিছুটা এগিয়ে শুরু করতে দিতে পারো।
আখিলিসঃ সেটা তো তাহলে অনেক বড় দুরত্ব হতে হবে।
কচ্ছপঃ হোক না, আমি আপত্তি করছি না।
আখিলিসঃ কিন্তু আমি তোমাকে ধরে ফেলব, আগেই হোক আর পরেই হোক -- তবে আগেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
কচ্ছপঃ না, যদি সব কিছু জেনোর ধাঁধাঁর মত হয়, তুমি আমাকে ধরতে পারবে না। দেখো, জেনো আশা করছে আমাদের দৌড়ের লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে সে প্রমান করবে যে গতির বিষয়টি অসম্ভব। জেনোর মতে গতির ধারনাটি কেবল মনের মধ্যেই সম্ভব। সত্যি হচ্ছে, গতি তার অন্তর্নিহিত কারনেই অসম্ভব। এটা সে বেশ ভাল ভাবেই প্রমান করতে পারে।
আখিলিসঃ ও, হ্যাঁ, এটা এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে বৌদ্ধ যাজক জেনোর সম্পর্কে প্রচলিত সেই বিখ্যাত বৌদ্ধ শ্লোকের মত। তুমি যেমনটি বললে, এটি সত্যি সহজ।
কচ্ছপঃ বৌদ্ধ শ্লোক? বৌদ্ধ যাজক জেনো? তুমি আসলে কি বলতে চাইছ?
আখিলিসঃ শ্লোকটা এই রকমঃ দুই সন্ন্যাসী একটা পতাকা নিয়ে বিতর্ক করছিল। একজন বলল, "পতাকাটি উড়ছে।" অন্যজন বলল, "বাতাস উড়ছে।" ষষ্ঠ পুরোহিত, জেনো, সেই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে বলল, "পতাকাটি নয়, বাতাস নয়, উড়ছে তোমাদের মন।"
কচ্ছপঃ আমার ধারণা তোমার কিঞ্চিত ভুল হয়েছে, আখিলিস। জেনো কোন বৌদ্ধ যাজক নয়, এ থেকে অন্য কিছু। সে আসলে এলেয়া শহরের (যেটা ক ও খ দুটি বিন্দুর মাঝখানে অবস্থিত) একজন গ্রীক দার্শনিক। অনেক শতাব্দি পরে, সে তার গতির ধাঁধাঁগুলির জন্য বিখ্যাত হবে। তার একটা ধাঁধাঁয় আমাদের দুজনের মধ্যের এই দৌড়ের লড়াইয়ের একটা মুখ্য ভুমিকা থাকবে।
আখিলিসঃ আমি সকল প্রকারে বিভ্রান্ত। স্পষ্ট মনে করতে পারি আমি যতবার বৌদ্ধদের ষষ্ঠ পুরোহিতের কথা বলেছি, ততবারই আমি বলেছি, "ষষ্ঠ পুরোহিত হচ্ছে জেনো, ষষ্ঠ পুরোহিত হচ্ছে জেনো...।" (হঠাৎ মৃদু উষ্ণ বাতাস বয়ে গেল।) ওহ, ঐ দেখ, জনাব কচ্ছপ--ঐ পতাকাটি উড়ছে দেখ! নরম কাপড়ে ঐ ঢেউ খেলানো ঝিকিমিকি আমার বেশ পছন্দ। আর সেই গোলাকার ছিদ্রটিও উড়ছে!
কচ্ছপঃ বোকামি করোনা। পতাকাটি অসম্ভব, আর তাই এটি উড়তে পারে না। বাতাস উড়ছে।
(সেই মূহুর্তে, জেনোর আগমন)
জেনোঃ এই যে, এই যে, কি হচ্ছে? কি খবর?
আখিলিসঃ পতাকাটি উড়ছে।
কচ্ছপঃ বাতাস উড়ছে।
জেনোঃ বন্ধুরা ঠিক আছে, তোমাদের বিতর্ক থামাও! আমি এখনই তোমাদের এই বিষয়ের একটা সুরাহা করে দিব। উফ্, এত সুন্দর একটা দিনে, এত গোলমাল!
আখিলিসঃ এই ভদ্রলোক বোধ হয় আমাদের বোকা বানাতে চাইছে।
কচ্ছপঃ না, আখিলিস। চল শোনা যাক তার কি বলার আছে। অজানা মহাশয়, ঠিক আছে এই বিষয়ে আপনার ভাবনা আমরা জানতে চাইছি।
জেনোঃ (অনেক খুশী হয়ে) বাতাস নয়, পতাকা নয় -- দুটোর কোনটাই উড়ছে না, কোন কিছুই আসলে উড়ছে না। কারন আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ সুত্র আবিস্কার করেছি যেটা হল "অন্তর্নিহিত কারনে গতি অসম্ভব।" আর এই সূত্র থেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ একটা সূত্র বের হয়ে আসে তা হল জেনোর সূত্রঃ "গতির অস্তিত্ব নেই"।
আখিলিসঃ "জেনোর সূত্র"? জনাব, কোন ভাবে কি আপনি এলেয়ার সেই দার্শনিক জেনো?
জেনোঃ বাস্তবিকই আমি সেই দার্শনিক, আখিলিস।
আখিলিসঃ (ধাঁধাঁয় পড়ে মাথা চুলকিয়ে স্বগত সুরে) এখানে কি করে সে আমার নাম জানল?
জেনোঃ যাইহোক আমি কি তোমাদের আমার সেই সুত্র ও তার যুক্তিগুলো শুনতে রাজী করাতে পারি? আজ বিকালে আমি সারা পথ পাড়ি দিয়ে ক বিন্দু থেকে এলেয়াতে এসেছি শুধু কেউ একজন কে খুঁজে বের করতে যে আমার ধারালো যুক্তিগুলো শুনবে। কিন্তু সবাই এদিক সেদিক নিয়ে ব্যস্ত, আর তাদের মোটেও সময় নেই। তোমাদের ধারনা নেই একজনের পর একজনের কাছ থেকে ফিরে আসা কি রকম ধরনের হতাশার। কিন্তু, আমি দুঃখিত তোমাদের উপরে আমার সমস্যার বোঝা চাপিয়ে দেয়ার জন্য। আমি শুধু একটি বিষয় জিজ্ঞেস করতে চাইঃ তোমরা দুজন কি একজন বেচারা বৃদ্ধ দার্শনিকের সাথে তার ওৎকেন্দ্রীক সূত্রসমুহ নিয়ে কয়েক মূহুর্ত মজা করতে পার--শুধুই কয়েক মূহুর্ত, আমি কথা দিচ্ছি।
আখিলিসঃ আমরা শুনব, দয়া করে আমাদের আলোকিত কর। আমি জানি আমি দুজনের পক্ষ থেকেই বলছি, কারন আমার সঙ্গী, জনাব কচ্ছপ, মাত্র কয়েক মূহুর্ত আগে তোমার সম্পর্কে বেশ উচ্ছাস প্রকাশ করছিল--আর বিশেষভাবে সে তোমার ধাঁধাঁর কথা উল্লেখ করেছে।
জেনোঃ ধন্যবাদ। দেখ, আমার গুরু, পঞ্চম পুরোহিত আমাকে শিখিয়েছেন যে বাস্তবতা একক, অপরিবর্তনযোগ্য, এবং অপরিবর্তনশীল; সকল বহুসত্ত্বা, পরিবর্তন, আর গতি কেবল মাত্র অনুভুতির ভ্রম। সে সবের কিছু কিছু আমার সেই গুরুর দৃষ্টিভঙ্গিকেও বিভ্রান্ত করেছিল; কিন্তু আমি এই বিভ্রান্তিসমুহের অযৌক্তিকতা দেখাব। আমার যুক্তিগুলো খুব সহজ। আমি আমার নিজের আবিস্কার করা দুটি চরিত্রের মাধ্যমে তা দেখাবঃ আখিলিস (একজন গ্রীক যোদ্ধা, মরণশীলদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী), আর একটা কচ্ছপ। আমার গল্পে, তারা একজন পথিকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে দূরে রাস্তায় মৃদু মন্দ বাতাসে উড়ন্ত একটা পতাকা পর্যন্ত দৌড়ায়। কচ্ছপটা যেহেতু অনেক ধীর গতির, চল ধরে নিই সে কিছুটা এগিয়ে থেকে শুরু করবে, ধর, দশ গজ। দৌড় শুরু হল। কয়েক মূহুর্তে আখিলিস পৌঁছে গেল কচ্ছপ যেখান থেকে দৌড় শুরু করেছিল সেখানে।
আখিলিসঃ হাহ!
জেনোঃ আর ততক্ষনে কচ্ছপ আর এক গজ এগিয়ে গেল। কিন্তু পরের মূহুর্তে, আখিলিস সেই খানেও পৌঁছে গেল।
আখিলিসঃ হো হো!
জেনোঃ তবে, সেই অল্প সময়েও, কচ্ছপ আর অল্প একটু এগিয়ে গেল। পরের লহমায়, আখিলিস সেই দুরত্বও পার হয়ে গেল।
আখিলিসঃ হি হি হি!
জেনোঃ কিন্তু সেই এক লহমায়, কচ্ছপ খুব অল্প, মাত্র এক ইঞ্চি হলেও এগিয়ে যেতে পারল, আর তাই আখিলিস এখনও তার পিছনে। এখন লক্ষ কর, আখিলিস যদি কচ্ছপকে ধরতে চায়, এই "পারলে ধর আমায়" খেলাটি অসীম সংখ্যকবার খেলতে হবে--আর তাই আখিলিস কখনই কচ্ছপকে ধরতে পারবে না!
কচ্ছপঃ হে হে হে হে!
আখিলিসঃ হমম...হমম...হমম...হমম...হমম...এই যুক্তি আমার কাছে ভুল মনে হচ্ছে। তবে এখনও আমি বুঝতে পারছিনা ভুলটা আসলে কোথায়।
জেনোঃ এটা কি কৌতুহলোদ্দীপক নয়? এটা আমার প্রিয় ধাঁধাঁ।
কচ্ছপঃ মাফ কর, জেনো, আমার বিশ্বাস তোমার সুত্রটি ভুল। তুমি মাত্রই আমাদের বলছিলে জেনোর "আখিলিসের ধাঁধাঁ" যা প্রমান করে যে আখিলিস কখনই কচ্ছপকে ধরতে পারবে না তা জানা যাবে আজ থেকে কয়েক শতাব্দি পরে। আর গতি যে অন্তর্নিহিত কারনে অসম্ভব (সে কারনে অস্তিত্বহীনও) তা হল তোমার অন্য একটি ধাঁধাঁ -- দুই মেরুর ধাঁধাঁ।
জেনোঃ ওহ, কি বোকা আমি। ঠিকই বলেছ তুমি। সেই ধাঁধাঁটি হল একটি বিন্দু ক থেকে আর একটি বিন্দু খ তে যেতে চাইলে, তোমাকে প্রথমে অর্ধেক দুরত্ব যেতে হবে--তারপর তার অর্ধেক, তারপর তারও অর্ধেক, আর এই ভাবে। কিন্তু দেখ, উভয় ধাঁধাঁর মর্মার্থ আসলে একই। খুলে বললে, আমার শুধু একটাই ভাল ভাবনা আছে--আমি শুধু বিভিন্নভাবে সেটার ব্যবহার করি।
আখিলিসঃ খোদার কসম, এই সব যুক্তিতে একটা ভুল আছে। আমি জানিনা ঠিক কোথায়, কিন্তু এগুলি সঠিক হতে পারে না।
জেনোঃ তুমি আমার ধাঁধাঁর যৌক্তিকতা নিয়ে সন্দেহ করছ? কেন এটা পরীক্ষা করে দেখো না। ঐখানে ঐ লাল পতাকা দেখতে পাচ্ছ, রাস্তার একেবারে দুর সীমায়?
আখিলিসঃ এশারের আঁকা ছবির মত অসম্ভব সেই পতাকাটি?
জেনোঃ ঠিক তাই। কি বল, তুমি আর কচ্ছপ দৌড়াবে? কচ্ছপ কিছুটা এগিয়ে থেকে শুরু করবে, তবে, আমি জানি না--
কচ্ছপঃ দশ গজ, কি বল?
জেনোঃ খুব ভাল--দশ গজ।
আখিলিসঃ কোন সমস্যা নেই।
জেনোঃ কি মজার! নিখুত ভাবে প্রমান করা আমার সূত্রটির বাস্তব একটা পরীক্ষা! জনাব কচ্ছপ, তুমি কি দশ গজ সামনে গিয়ে দাঁড়াবে?
(কচ্ছপ পতাকার দিকে দশ গজ সামনে এগিয়ে গেল।)
তোমরা দুজনেই কি প্রস্তুত?
কচ্ছপ ও আখিলিসঃ প্রস্তুত!
জেনোঃ যার যার অবস্থানে তৈরী! এক, দুই, তিন!
কম্পিউটার বিজ্ঞানের লোকায়ত, ফলিত ও কারিগরী বিষয়ের চেয়ে বরাবরই আমার আগ্রহ বেশী এর চিরায়ত বুদ্ধিবৃত্তিক ও দার্শনিক বিষয়ে। জীবিত কোন প্রানীকে তার স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মের একটা নুন্যতম পর্যায় সাপেক্ষে কোন কৃত্রিম যন্ত্রদিয়ে প্রতিস্থাপনের কথা চিন্তা করলে, মানব উদ্ভাবিত অন্য সকল যন্ত্রের বিফলতার মাঝে একমাত্র কম্পিউটারই কিছুটা সফলতার আশা জাগায়। আমার ভাষায় তাই জড় জগতের মধ্যে একমাত্র জীবিত বিষয় হল কম্পিউটার!
উপরোক্ত দৃষ্টিভঙ্গীর প্রেক্ষিতে জনসাধারণের পর্যায়ে আমি একটি ধারাবাহিক নিবন্ধ লিখব বলে ভাবছি। এই ধারাবাহিকের পর্বগুলিতে আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা যেমন আসবে, তেমনি আসবে এ বিষয়ে বিভিন্ন গুনীজনের লেখা বই বা প্রবন্ধের ভাষান্তর। গণনাবিদ্যা (কম্পিউটার বিজ্ঞান), কৃত্রিম বুদ্ধিবিজ্ঞান (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স), দর্শন, মনোবিজ্ঞান, যুক্তি বা বিশ্বাসভিত্তিক জীবনাচরন সম্পর্কে আগ্রহী পাঠক/পাঠিকাদের মন্তব্য আমাদের আলোচনাকে সমৃদ্ধ করবে বলে আমার ধারনা। আমাদের আলোচনার গন্ডী হবে বিশেষজ্ঞদের আর জনসাধারনের জানার পরিধির মিলনরেখায়।
গণনাভিত্তিক বুদ্ধিবিদ্যার দর্শন (Philosophy of Computing-Based Intelligence) ১ম পর্ব -- ত্রিখন্ড উদ্ভাবন।
হফস্ট্যাডটার প্রণীত পুলিৎজার পুরস্কার প্রাপ্ত জিইবিঃইজিবি অবলম্বনে।
আখিলিস (একজন গ্রীক বীর, মরণশীলদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী) ও একটা কচ্ছপ কড়া রোদে নোংরা একটা রাস্তায় একসাথে দাঁড়িয়ে। অনেক দুরে রাস্তায় উচুঁ খুঁটির উপরে একটা আয়তাকার পতাকা ঝুলানো। পতাকাটির পুরোটাই লাল, শুধু মাঝখানে একটা বৃত্তাকার ছিদ্র, যার মধ্যে দিয়ে ও পাশের আকাশ দেখা যায়।
আখিলিসঃ রাস্তার অপর প্রান্তের ঐ অদ্ভুত পতাকাটি কি? এটা আমাকে আমার প্রিয় চিত্রশিল্পী এশারের একটি চিত্রের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
কচ্ছপঃ ঐটা হচ্ছে জেনোর পতাকা।
আখিলিসঃ ঐ ছিদ্রটা কি কোনভাবে এশারের আঁকা সেই মঁবিয়াসের ফিতার ছিদ্রটির মত? আমি বলতে পারি, কি যেন একটা গোলমাল রয়েছে ঐ পতাকাটিতে।
কচ্ছপঃ পতাকাটি কেটে বানানো ঐ ছিদ্রটার অাকৃতি জেনোর প্রিয় সংখ্যা শুন্যের প্রতীকের মত।
আখিলিসঃ কিন্তু শুন্য তো এখনও আবিস্কারই হয়নি! এটাতো আবিস্কার করবে একজন হিন্দু গণিতবিদ প্রায় লক্ষ বছর পরে। আর তাই, জনাব কচ্ছপ, আমার যুক্তি অনুযায়ী এই রকম একটা পতাকা অসম্ভব!
কচ্ছপঃ তোমার যুক্তি বোধগম্য, আখিলিস, আর আমি অবশ্যই একমত যে এই রকম একটা পতাকা বাস্তবিক অসম্ভব। কিন্তু যাইহোক এটি বেশ সুন্দর, তাই না।
আখিলিসঃ ও হ্যাঁ, এটার সৌন্দর্য নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
কচ্ছপঃ পতাকাটার সৌন্দর্য কি এটার অসম্ভাব্যতার সাথে সম্পর্কিত? সৌন্দর্য বিশ্লেষন করার মত সময় কখনই আমার ছিল না। এটা হল একটা গুঢ় বিষয়; আর আমার মনে হয় গুঢ় বিষয়াদি নিয়ে ভাবার সময় কখনই আমার নেই।
আখিলিসঃ গুঢ় বিষয়াদির কথা যখন বলছ, জনাব কচ্ছপ, তুমি কি কখনও জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে জানতে চেয়েছে?
কচ্ছপঃ ওহ, খোদা, না।
আখিলিসঃ তুমি কি কখনই জানতে চাওনি আমরা কেন এখানে এসেছি, অথবা কে আমাদের তৈরী করেছেন?
কচ্ছপঃ ওহ, ঐটা পুরোটাই ভিন্ন ব্যাপার। আমরা জেনোর তৈরী (তুমি শীঘ্রই তা দেখতে পাবে); আর আমরা এখানে কারন হল আমাদের মধ্যে একটা দৌড়ের লড়াই হবে।
আখিলিসঃ একটা দৌড়ের লড়াই? কি বিরক্তিকর! আমি, মরণশীলদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী, আর তার বিপরীতে তুমি, সকল ধীরগামীদের মধ্যে ধীরতম! এই রকম দৌড়ের লড়াইয়ের কোন অর্থ নেই।
কচ্ছপঃ তাতে কি, তুমি আমাকে কিছুটা এগিয়ে শুরু করতে দিতে পারো।
আখিলিসঃ সেটা তো তাহলে অনেক বড় দুরত্ব হতে হবে।
কচ্ছপঃ হোক না, আমি আপত্তি করছি না।
আখিলিসঃ কিন্তু আমি তোমাকে ধরে ফেলব, আগেই হোক আর পরেই হোক -- তবে আগেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
কচ্ছপঃ না, যদি সব কিছু জেনোর ধাঁধাঁর মত হয়, তুমি আমাকে ধরতে পারবে না। দেখো, জেনো আশা করছে আমাদের দৌড়ের লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে সে প্রমান করবে যে গতির বিষয়টি অসম্ভব। জেনোর মতে গতির ধারনাটি কেবল মনের মধ্যেই সম্ভব। সত্যি হচ্ছে, গতি তার অন্তর্নিহিত কারনেই অসম্ভব। এটা সে বেশ ভাল ভাবেই প্রমান করতে পারে।
আখিলিসঃ ও, হ্যাঁ, এটা এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে বৌদ্ধ যাজক জেনোর সম্পর্কে প্রচলিত সেই বিখ্যাত বৌদ্ধ শ্লোকের মত। তুমি যেমনটি বললে, এটি সত্যি সহজ।
কচ্ছপঃ বৌদ্ধ শ্লোক? বৌদ্ধ যাজক জেনো? তুমি আসলে কি বলতে চাইছ?
আখিলিসঃ শ্লোকটা এই রকমঃ দুই সন্ন্যাসী একটা পতাকা নিয়ে বিতর্ক করছিল। একজন বলল, "পতাকাটি উড়ছে।" অন্যজন বলল, "বাতাস উড়ছে।" ষষ্ঠ পুরোহিত, জেনো, সেই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে বলল, "পতাকাটি নয়, বাতাস নয়, উড়ছে তোমাদের মন।"
কচ্ছপঃ আমার ধারণা তোমার কিঞ্চিত ভুল হয়েছে, আখিলিস। জেনো কোন বৌদ্ধ যাজক নয়, এ থেকে অন্য কিছু। সে আসলে এলেয়া শহরের (যেটা ক ও খ দুটি বিন্দুর মাঝখানে অবস্থিত) একজন গ্রীক দার্শনিক। অনেক শতাব্দি পরে, সে তার গতির ধাঁধাঁগুলির জন্য বিখ্যাত হবে। তার একটা ধাঁধাঁয় আমাদের দুজনের মধ্যের এই দৌড়ের লড়াইয়ের একটা মুখ্য ভুমিকা থাকবে।
আখিলিসঃ আমি সকল প্রকারে বিভ্রান্ত। স্পষ্ট মনে করতে পারি আমি যতবার বৌদ্ধদের ষষ্ঠ পুরোহিতের কথা বলেছি, ততবারই আমি বলেছি, "ষষ্ঠ পুরোহিত হচ্ছে জেনো, ষষ্ঠ পুরোহিত হচ্ছে জেনো...।" (হঠাৎ মৃদু উষ্ণ বাতাস বয়ে গেল।) ওহ, ঐ দেখ, জনাব কচ্ছপ--ঐ পতাকাটি উড়ছে দেখ! নরম কাপড়ে ঐ ঢেউ খেলানো ঝিকিমিকি আমার বেশ পছন্দ। আর সেই গোলাকার ছিদ্রটিও উড়ছে!
কচ্ছপঃ বোকামি করোনা। পতাকাটি অসম্ভব, আর তাই এটি উড়তে পারে না। বাতাস উড়ছে।
(সেই মূহুর্তে, জেনোর আগমন)
জেনোঃ এই যে, এই যে, কি হচ্ছে? কি খবর?
আখিলিসঃ পতাকাটি উড়ছে।
কচ্ছপঃ বাতাস উড়ছে।
জেনোঃ বন্ধুরা ঠিক আছে, তোমাদের বিতর্ক থামাও! আমি এখনই তোমাদের এই বিষয়ের একটা সুরাহা করে দিব। উফ্, এত সুন্দর একটা দিনে, এত গোলমাল!
আখিলিসঃ এই ভদ্রলোক বোধ হয় আমাদের বোকা বানাতে চাইছে।
কচ্ছপঃ না, আখিলিস। চল শোনা যাক তার কি বলার আছে। অজানা মহাশয়, ঠিক আছে এই বিষয়ে আপনার ভাবনা আমরা জানতে চাইছি।
জেনোঃ (অনেক খুশী হয়ে) বাতাস নয়, পতাকা নয় -- দুটোর কোনটাই উড়ছে না, কোন কিছুই আসলে উড়ছে না। কারন আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ সুত্র আবিস্কার করেছি যেটা হল "অন্তর্নিহিত কারনে গতি অসম্ভব।" আর এই সূত্র থেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ একটা সূত্র বের হয়ে আসে তা হল জেনোর সূত্রঃ "গতির অস্তিত্ব নেই"।
আখিলিসঃ "জেনোর সূত্র"? জনাব, কোন ভাবে কি আপনি এলেয়ার সেই দার্শনিক জেনো?
জেনোঃ বাস্তবিকই আমি সেই দার্শনিক, আখিলিস।
আখিলিসঃ (ধাঁধাঁয় পড়ে মাথা চুলকিয়ে স্বগত সুরে) এখানে কি করে সে আমার নাম জানল?
জেনোঃ যাইহোক আমি কি তোমাদের আমার সেই সুত্র ও তার যুক্তিগুলো শুনতে রাজী করাতে পারি? আজ বিকালে আমি সারা পথ পাড়ি দিয়ে ক বিন্দু থেকে এলেয়াতে এসেছি শুধু কেউ একজন কে খুঁজে বের করতে যে আমার ধারালো যুক্তিগুলো শুনবে। কিন্তু সবাই এদিক সেদিক নিয়ে ব্যস্ত, আর তাদের মোটেও সময় নেই। তোমাদের ধারনা নেই একজনের পর একজনের কাছ থেকে ফিরে আসা কি রকম ধরনের হতাশার। কিন্তু, আমি দুঃখিত তোমাদের উপরে আমার সমস্যার বোঝা চাপিয়ে দেয়ার জন্য। আমি শুধু একটি বিষয় জিজ্ঞেস করতে চাইঃ তোমরা দুজন কি একজন বেচারা বৃদ্ধ দার্শনিকের সাথে তার ওৎকেন্দ্রীক সূত্রসমুহ নিয়ে কয়েক মূহুর্ত মজা করতে পার--শুধুই কয়েক মূহুর্ত, আমি কথা দিচ্ছি।
আখিলিসঃ আমরা শুনব, দয়া করে আমাদের আলোকিত কর। আমি জানি আমি দুজনের পক্ষ থেকেই বলছি, কারন আমার সঙ্গী, জনাব কচ্ছপ, মাত্র কয়েক মূহুর্ত আগে তোমার সম্পর্কে বেশ উচ্ছাস প্রকাশ করছিল--আর বিশেষভাবে সে তোমার ধাঁধাঁর কথা উল্লেখ করেছে।
জেনোঃ ধন্যবাদ। দেখ, আমার গুরু, পঞ্চম পুরোহিত আমাকে শিখিয়েছেন যে বাস্তবতা একক, অপরিবর্তনযোগ্য, এবং অপরিবর্তনশীল; সকল বহুসত্ত্বা, পরিবর্তন, আর গতি কেবল মাত্র অনুভুতির ভ্রম। সে সবের কিছু কিছু আমার সেই গুরুর দৃষ্টিভঙ্গিকেও বিভ্রান্ত করেছিল; কিন্তু আমি এই বিভ্রান্তিসমুহের অযৌক্তিকতা দেখাব। আমার যুক্তিগুলো খুব সহজ। আমি আমার নিজের আবিস্কার করা দুটি চরিত্রের মাধ্যমে তা দেখাবঃ আখিলিস (একজন গ্রীক যোদ্ধা, মরণশীলদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী), আর একটা কচ্ছপ। আমার গল্পে, তারা একজন পথিকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে দূরে রাস্তায় মৃদু মন্দ বাতাসে উড়ন্ত একটা পতাকা পর্যন্ত দৌড়ায়। কচ্ছপটা যেহেতু অনেক ধীর গতির, চল ধরে নিই সে কিছুটা এগিয়ে থেকে শুরু করবে, ধর, দশ গজ। দৌড় শুরু হল। কয়েক মূহুর্তে আখিলিস পৌঁছে গেল কচ্ছপ যেখান থেকে দৌড় শুরু করেছিল সেখানে।
আখিলিসঃ হাহ!
জেনোঃ আর ততক্ষনে কচ্ছপ আর এক গজ এগিয়ে গেল। কিন্তু পরের মূহুর্তে, আখিলিস সেই খানেও পৌঁছে গেল।
আখিলিসঃ হো হো!
জেনোঃ তবে, সেই অল্প সময়েও, কচ্ছপ আর অল্প একটু এগিয়ে গেল। পরের লহমায়, আখিলিস সেই দুরত্বও পার হয়ে গেল।
আখিলিসঃ হি হি হি!
জেনোঃ কিন্তু সেই এক লহমায়, কচ্ছপ খুব অল্প, মাত্র এক ইঞ্চি হলেও এগিয়ে যেতে পারল, আর তাই আখিলিস এখনও তার পিছনে। এখন লক্ষ কর, আখিলিস যদি কচ্ছপকে ধরতে চায়, এই "পারলে ধর আমায়" খেলাটি অসীম সংখ্যকবার খেলতে হবে--আর তাই আখিলিস কখনই কচ্ছপকে ধরতে পারবে না!
কচ্ছপঃ হে হে হে হে!
আখিলিসঃ হমম...হমম...হমম...হমম...হমম...এই যুক্তি আমার কাছে ভুল মনে হচ্ছে। তবে এখনও আমি বুঝতে পারছিনা ভুলটা আসলে কোথায়।
জেনোঃ এটা কি কৌতুহলোদ্দীপক নয়? এটা আমার প্রিয় ধাঁধাঁ।
কচ্ছপঃ মাফ কর, জেনো, আমার বিশ্বাস তোমার সুত্রটি ভুল। তুমি মাত্রই আমাদের বলছিলে জেনোর "আখিলিসের ধাঁধাঁ" যা প্রমান করে যে আখিলিস কখনই কচ্ছপকে ধরতে পারবে না তা জানা যাবে আজ থেকে কয়েক শতাব্দি পরে। আর গতি যে অন্তর্নিহিত কারনে অসম্ভব (সে কারনে অস্তিত্বহীনও) তা হল তোমার অন্য একটি ধাঁধাঁ -- দুই মেরুর ধাঁধাঁ।
জেনোঃ ওহ, কি বোকা আমি। ঠিকই বলেছ তুমি। সেই ধাঁধাঁটি হল একটি বিন্দু ক থেকে আর একটি বিন্দু খ তে যেতে চাইলে, তোমাকে প্রথমে অর্ধেক দুরত্ব যেতে হবে--তারপর তার অর্ধেক, তারপর তারও অর্ধেক, আর এই ভাবে। কিন্তু দেখ, উভয় ধাঁধাঁর মর্মার্থ আসলে একই। খুলে বললে, আমার শুধু একটাই ভাল ভাবনা আছে--আমি শুধু বিভিন্নভাবে সেটার ব্যবহার করি।
আখিলিসঃ খোদার কসম, এই সব যুক্তিতে একটা ভুল আছে। আমি জানিনা ঠিক কোথায়, কিন্তু এগুলি সঠিক হতে পারে না।
জেনোঃ তুমি আমার ধাঁধাঁর যৌক্তিকতা নিয়ে সন্দেহ করছ? কেন এটা পরীক্ষা করে দেখো না। ঐখানে ঐ লাল পতাকা দেখতে পাচ্ছ, রাস্তার একেবারে দুর সীমায়?
আখিলিসঃ এশারের আঁকা ছবির মত অসম্ভব সেই পতাকাটি?
জেনোঃ ঠিক তাই। কি বল, তুমি আর কচ্ছপ দৌড়াবে? কচ্ছপ কিছুটা এগিয়ে থেকে শুরু করবে, তবে, আমি জানি না--
কচ্ছপঃ দশ গজ, কি বল?
জেনোঃ খুব ভাল--দশ গজ।
আখিলিসঃ কোন সমস্যা নেই।
জেনোঃ কি মজার! নিখুত ভাবে প্রমান করা আমার সূত্রটির বাস্তব একটা পরীক্ষা! জনাব কচ্ছপ, তুমি কি দশ গজ সামনে গিয়ে দাঁড়াবে?
(কচ্ছপ পতাকার দিকে দশ গজ সামনে এগিয়ে গেল।)
তোমরা দুজনেই কি প্রস্তুত?
কচ্ছপ ও আখিলিসঃ প্রস্তুত!
জেনোঃ যার যার অবস্থানে তৈরী! এক, দুই, তিন!
সদস্যনাম: মু অা হাকিম নিউটন
ইমেইলঃ
মন্তব্য
সচলায়তনে আপনাকে স্বাগতম!
আপনার লেখাটা একই সাথে অন্যত্র প্রকাশিত। সচলায়তনে একই সাথে অন্যত্র প্রকাশিত লেখা প্রকাশ করা হয়না। নতুন অতিথি হিসেবে আপনার জন্য এর ব্যতিক্রম করা হল। সচলায়তনের নীতিমালার প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ধন্যবাদ।
লেখাটা অন্যখানে আগেই পড়েছি, ভালো লাগাটা এখানে জানিয়ে যাচ্ছি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়টার নামকরণ বুদ্ধিবিজ্ঞান করলেন? খারাপ না।
নতুন মন্তব্য করুন