এনার্জি ড্রিংকের বিজ্ঞাপন নিয়ে সেই গল্পটা শুনেছেন বোধহয়। তবু আরেকবার বলি। কিছু লিখে যায়গা ভরাতে হবেতো ! ধরে নিন মনে করার সুবিধার জন্য বলছি।
একটা এনার্জি ড্রিংক্স কোম্পানি তাদের ব্যবসা খুলল তেলের দেশ সৌদি আরবে। উদ্দেশ্য অবশ্যই নিজেদের ইনকামের অ্যাকাউন্টটাকে আরো ৈতলাক্ত করা।
তো তাদের পণ্য যথাসময়ে বাজারে এল। কিন্তু কয়েক মাস পেরিয়ে যাবার পরও আশানুরূপ লাভ হলনা। কর্তাব্যক্তিরা ঠিক করলেন অ্যাডভার্টাইজিং বাড়াতে হবে। এরই অংশ হিসেবে নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় বসানো হল এক বিরাট বিলবোর্ড। বিলবোর্ডে পাশাপাশি তিনটা ঢাউস ছবি! প্রথমটায় একজন মানুষ ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়েছে। দ্বিতীয়টায় সেই লোক ঐ কোম্পানির পানীয় পান করছে। আর তৃ্তীয়টায় সে সতেজ হয়ে একেবারে দৌড়াতে শুরু করেছে!
বিজ্ঞাপন দেখে কোম্পানিওয়ালারা বেজায় খুশি। তারা আশা করলেন বেচা-বিক্রী এবার ভালোভাবেই বাড়বে।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে দেখা গেলো যে বিক্রী আরো কমেছে। কমতে কমতে একেবারে খরা লেগে গেল। ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়! মালিকপক্ষ একটা তদন্ত কমিটি গঠন করল বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্যে। তারা যে রিপোর্ট দিল তাতে দায়ী করা হল বিলবোর্ডের সেই বিজ্ঞাপনকে। কারণ সেখানে ছবির সিরিয়াল ছিল বাম থেকে ডানে। কিন্তু আরবের পড়ে উলটো করে ডান থেকে বামে।
এই হল উল্টিকরণের বিদেশি উদাহরণ। এবার একটু স্বদেশি হই।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ছেলেবেলায় স্কুলে আমরা কিভাবে পরিমাপের এককগুলি শিখেছিলাম।মিলিমিটার, সেন্টিমিটার, ডেসিমিটার, মিটার, ডেকামিটার, হেক্টোমিটার, কিলোমিটার (বাহ...!! এখনও মনে আছে দেখি!! খুশি লাগছে!!)। মনে রাখার উপায় শেখানো হয়েছিল একটা শ্লোকের মত লাইন দিয়ে.........
"কিলাইয়া হ্যাকাইয়া ডাকাত মারিলে দেশে শান্তি মিলিবে"
(কিলো-হেক্টো-ডেকা-মিটার-ডেসি-সেন্টি-মিলি)
ব্যাপারটা খুব ভালোভাবে শিখলাম। একটা ছন্দের ব্যাপার আছে। যথাসময় পরীক্ষা হল। পরীক্ষা দিলাম। মনে বড় শান্তি! দারুন পরীক্ষা দিয়েছি।
খাতা ফেরত দেবার পালা এল। সবার খাতা দেয়া হলে টিচার আমার নাম ঘোষণা করলেন। আমি গর্বিত পুলকিত চিত্তে উঠে দাঁড়ালাম। টিচার ক্লাসের সবাইকে বললেন, "তোমাদের অনেক বড় সৌভাগ্য!! যে তোমরা একে (আমাকে) তোমাদের মধ্যে পেয়েছো। পৃ্থিবীতে কোটি কোটি মানুষ আছে যারা কোনদিন ওকে দেখেনি, ওর নাম শোনেনি! শুনবেও না!!"
এই পর্যায়ে আনন্দে আমার চোখে প্রায় পানি এসে গেল। এত ভাল করেছি যে টিচার বলছেন আমাকে যারা তাদের মাঝে পেয়েছে তারা সৌভাগ্যবান!! এই খুশি আমি কোথায় রাখি!! আমার ছোট্ট মনে রাখার জায়গা হবেনা। ব্যাংক ট্যাংক লাগবে!!
টিচার তার স্নিগ্ধ হাসিটি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "তোমরা সবাই এক্সেপশনালি লাকি! কারণ মানুষ পয়সা খরচ করে চিড়িয়াখানায় গিয়েও যে গাধা দেখতে পায়না, সে গাধাটাকে তোমরা নিজের চোখে দেখতে পারছ!"
ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেল। আমি একটা ধাক্কার মত খেলাম। টিচার আমাকে কান ধরে সামনে নিয়ে খাতাটা মেলে ধরলেন। ১ মিটারের ১০০০ ভাগের ভাগের এক ভাগকে আমি লিখেছি 'কিলোমিটার'। ডেসিমিটারের ১০০ গুণ বড় এককের নাম লিখেছি মিলিমিটার!! এতে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা ধরতে পেরেছিলাম পরে, যখন জানতে পারলাম - কিলাইয়া হ্যাকাইয়া ডাকাত মারতে হয় উলটো দিক থেকে!! আমার কি দোষ!? আমিতো 'বাম থেকে ডানে' নীতি অনুযায়ী 'কিলো' কে সবচেয়ে ছোট আর 'মিলি'কে সবচেয়ে বড় ধরে নিয়েছিলাম! আমাকেতো কেউ শিখিয়ে দেয়নি।
খাতা পাবার পর গর্ব কিংবা পুলক কোনটাই বোধ করলামনা। প্রথমে যে আনন্দ হয়েছিল সেটাকেও ব্যাংকে রাখতে হলনা। পুরো ক্লাস বেঞ্চির ওপর কান ধরে দাঁড়িয়ে সবাইকে বিনোদন দিতে হল।
কিলাইয়া হ্যাকাইয়া ডাকাত মারিয়া দেশে কোনদিন শান্তি আসিয়াছিল কিনা জানিতে পারি নাই। তবে ইহাতে আমি যে নিদারুন অশান্তিতে পড়িয়াছিলাম, তাহা আর বলিবার অপেক্ষা রাখেনা !!
--------- আইডিয়াবাজ প্রোডাকশন------------
মন্তব্য
প্রথম গল্পটা জানতাম ।
ভালো লাগলো ।
ইয়ে আপনার নিক এও কি প্রোডাকশন আছে নাকি?!!
_________________________________________
বোহেমিয়ান কথকতা
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
প্রোডাকশন??? এর মানে বুঝলাম না
দলবদ্ধভাবে আইডিয়া নিয়ে লেখা লেখেন নাকি তাও সন্দেহ!
তবে ভাই, আপনার পোস্টগুলো একটু ভিন্ন ধরণের।
চালায় যান... আমরা আছি !!!
আইডিয়ার প্রডাকশনগুলা চমৎকার
ভালো লেগেছে। যদিও প্রথমটা জানতাম, দ্বিতীয়টার ক্ষেত্রে বর্ণনা খুব সুন্দর হয়েছে।
ভালু লাগলো।
অ.টঃ এখন কাউরে ধইরা 'চামে' কিলানো যায় কিনা খুঁজতাছি।
===============================================
রাজাকার ইস্যুতে
'মানবতা' মুছে ফেলো
টয়লেট টিস্যুতে
(আকতার আহমেদ)
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
আমারো ক্যান জানি তাহসিনের লাহান সন্দ জাগতেছে
তয় লেখা ভাল।
-----------------------------------------
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।
এমন একটা মজার গল্প আছে 'মিটার'দের নিয়ে...
ঝানতাম না তো!
সুন্দর লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
মর্ম
আইডিয়া কই? সবই তো পুরাতন গল্প।
হা হা হা...
লেখা ভাল লেগেছে, আরও লিখুন।
- হ, সবই পুরান গল্প মনে হৈলো।
আরবদেরটা মনেহয় সত্যি কাহিনী। কোক নিয়ে ডান-বাম সংক্রান্ত এরকম একটা ঝামেলা হয়েছিলো ওখানে। এরকমই শুনেছিলাম। শালাদের তো মাথামোটা। অসম্ভব কিছু না।
আর আপনার কিলো মিলি পর্যন্ত খাতায় উপর থেকে নিচের ক্রমে লিখা হলে টিচার কান ধরাবেন কেনো? ক্রম তো ভুল হয় নাই। আর ক্রমের পাশে কতো কিলোতে এক হেক্টো, সেটাও তো লিখেন নাই মনে হলো! তারপরেও শুধু ক্রমের জন্যই টিচার ভদ্রলোক এমন ভিলেনের মতো কামটা করলো? মাইনাস, ঐ টিচাররে কইষ্যা মাইনাস।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বোহেমিয়ানঃ নাম দিলেও বিপদ, না দিলেও বিপদ!! কি করব বলেন? একটু নিজের সিস্টেমে কাজ করতে পছন্দ করি। নাম দেয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
তাহসিন ও স্পার্টাকাসঃ প্রোডাকশন এর এক্ষেত্রে কোন মানে নাই। "দলবদ্ধভাবে আইডিয়া নিয়ে লেখা"র বিষয়টা বুঝলাম না। খুলে বললে ভাল হয়। আরো ভাল করার চেষ্টা করা যায়।
মাহবুব, প্রকৃতিপ্রেমিক ও অনুপমঃ ধন্যবাদ। কাউকে মিটার-কিলোমিটার শেখানোর নাম করে কিলিয়ে দেয়া যেতে পারে...!!
মর্ম ও বাউলিয়ানাঃ ধন্যবাদ। চেষ্টা করব।
দুর্দান্তঃ কথা সত্য। তবে নামে আইডিয়ার ব্যাপারটা থাকলেই যে সারাবেলা আইডিয়া কপচাতে হবে এমন কোন কথা নেই।
ধূসর গোধূলিঃ কথা কম বলি, তাই লিখতে বেশি লিখি (দেখতেই পাচ্ছেন)। কিলো-মিলির ক্রমতো খাতায় লিখি নাই! সেটার ওপর বেইজ করে অংক করেছি। কিলো-মিলির কনভার্শন রেট দিতে গেলে এই লেখা আরো বড় হত। এমনিতেই যথেষ্ট লম্বা হয়েছে।
মিলে শান্তি দেশে, দেখ একটা কিলে - এইটা শিখলে আর এরকম ভুল হতো না !
নতুন মন্তব্য করুন