বেকার জীবনের আশীর্বাদ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৮/০৩/২০১০ - ৬:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আপনি কি বেকার? সারাদিন কাজকর্ম নাই, বাসায় থাকেন? তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য। গত সাত আট মাসের বেকারত্বের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি বুঝতে পারলাম বেকার বসে থাকাটা পুরাটাই বেকার যায় না। এর সুবিধা অসুবিধা দুইটাই আছে।

অসুবিধা গুলা ভাবেন। আপনার মোবাইলে কোনো পয়সা থাকবে না। সব সময় ধান্দা করবেন কখন বাসার অন্য কারো মোবাইল হাতে পাবেন।
সারারাত ঘুম আসবে না কারণ ঘুমানোর জন্য যতটুকু ক্লান্তি প্রয়োজন আপনার তা নেই।
তারপর ঠিক ভোরবেলা চোখে যখন বাঁধভাঙ্গা ঘুম তখন লোকজন অফিস যাচ্ছে। বের হওয়ার সময় তারা আপনাকে ক্রুদ্ধ গলায় বলে যাবে, এই দরজাটা লাগাতো। সারাদিন এতো ঘুম কিসের?!!!

অথচ এই আপনি যে গত অর্ধদশক ভোর ৭.০৫এ অ্যালার্ম পিটিয়ে, শুধু নীচের পাটি দাঁত মেজে, দুমড়ানো পোষাক পরে, নাস্তা না খেয়ে ৭ টার ক্লাসে খাতা কলম ছাড়া সাড়ে সাতটায় পৌছে যেতেন তার কি কোনো দাম নাই?
খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নাই বলে চেহারাটা বেশ নাদুস নুদুস কুমড়ার মত হয়ে উঠবে।

আপনি নিশ্চিত ভাবে আরেকটা কাজ শুরু করবেন। ফেসবুকের দুনিয়ার মানুষের ছবি দেখে বেড়াবেন। (আরে চাকরি আলারাই এইসব করে,আমাদের কি দোষ)।
ফার্মভিল কি মাফিয়া ওয়ার খেলার সম্ভবনাও উড়িয়ে দিচ্ছি না।
বই পড়ার অভ্যাস থাকলে ভালো। কিছু বই পড়া হবে।

মাসের শেষে ইন্টারনেট লাইন কেটে গেলে ধৈর্যহারা হবেন না। রাতে খাবার টেবিলে বসে ক্যাজুয়াল গলায় মাকে বলবেন, উফ, নেট নাই বলে অমুক ইউনিভারসি্টির ওয়েবসাইটটা দেখা যাচ্ছে না। মা-দের দয়া মায়ার পরিমাণ খারাপ না। নেট রিচার্জ হয়ে যাবে।

নিয়মিত নতুন, পুরান,দূরের, কাছের সব ধরনের বন্ধুদের মেইল দিবেন। উত্তর পেতে দুই একদিন লাগবে কারণ সবাই আপনার মত সারাদিন খোমাখাতায় থাকে না।

সুবিধা কিন্তু কম না। প্রচুর গান শোনা, মুভি দেখা হবে। পাচঁ বছর যত নিয়মের বেড়াজাল ছিলো,সব ভেঙ্গে চরম অনিয়ম করে ভবিষ্যত পাঁচ বছরের জন্য আবার প্রস্তুত হতে পারবেন।

আর সবচেয়ে বড় কথা, গত দুই বছরে যা আপনি করতে পারেননি বা করেননি, হ্যা.........সেই সচলায়তনে পোস্ট দেয়ার জন্য হাতটা নিশপিশ করবে। এত বেশি নিশপিশ করবে যে প্রতিদিন ভোরে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটা করে ব্লগ লিখে ঘুমাবেন।

মেয়ে


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

আমার জন্য পারফেক্ট পোস্ট। আমি বেশ কিছুদিন ধরে বেকার।

এই সময়টুকুতে খাওয়াদাওয়া ও ঘুমের পরিমান প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হওয়ায় শরীরের তুলনায় পেট বড় হয়ে গেছে। আমাকে না দেখে আমার পেট দেখলে যে কেউ ভাববেন আমি ছয় মাসের গর্ভবতী।

ফেসবুকে ফার্মভিল খেলা শুরু করেছি। দুটো আসল অ্যাকাউন্টে ২০+ লেভেলে চলে গেছি। আর বাকি ৫ টা অ্যাকাউন্ট খুলেছি ফ্রি গিফট পাঠানোর জন্য। ওগুলোতেও চাষবাসের পরিমান মন্দ না। এখন আপগ্রেডেড সিডার, হারভেস্টার কেনার জন্য মাফিয়া ওয়ার খেলতে হবে।

প্রতিদিন একটা করে মুভি দেখা হয়। সেটা অবশ্য ব্যস্ততার সময়েও দেখতাম। এই ক্ষেত্রে তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি।

আর প্রচুর পরিমানে বই পড়া হচ্ছে। আমি এক সাথে একগাদা বই পড়ি। শুভাশীষ দা'র দেয়া লিংক থেকে আন্তন চেখভের ২০১ টা ছোটগল্প পড়তে শুরু করেছি। প্রায় ৫০ টা শেষ করে ফেলেছি। মার্ক টোয়েনের ছোটগল্পের একটা কালেকশন হাতে আছে। জে. ডি. সালিঞ্জারের "দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই" পড়ছি। গু দ্যঁ ম্যপাসার "দ্য বেস্ট শর্ট স্টোরিজ" পড়ছি।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে লেখালেখির কোন উৎসাহ পাচ্ছি না। হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

দ্রোহীদা, চেখভের ছোটগল্পের লিঙ্কটা কি দয়া করে খোমাখাতায় আমারে একটু পাঠাবেন ?? আমি ভুলে গেসি কোন পোস্টে এইটা ছিলো...

আর মেয়ে আপু, ব্লগ লেখার জন্যে হাত নিশপিশ করা ভালো- এতে 'অলস মস্তিষ্ক নিজামীর কারখানা' প্রবাদের যথার্থতা প্রমাণ হয়... খিপিটাপ।

_________________________________________

সেরিওজা

স্নিগ্ধা এর ছবি

সুহান, আপনি পাইলে আমাকেও একটু পাঠায়েন প্লিজ ......

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ শুভাশীষ! সুহানও পাঠাইসে, সুহানকেও ধন্যবাদ!

মেয়ে এর ছবি

বাহ ! চেকভের একটা গল্প death in the forest আমাকে কিশোরী বয়সে খুব ভাবিয়েছিল। মঁপাসাও পড়েছিলাম তখন।

ফার্মভিলে আমি ৩৭... আর ভালো লাগে না খেলতে। ৫টা অ্যাকাউন্ট খুলেছেন শুনে খুব আরাম লাগলো দেঁতো হাসি । গিফট পাঠানোর অতগুলো অ্যাকাউন্ট খুলে আমার নিজেকে একটা বেক্কল বলে মনে হচ্ছিলো।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মেম্বর-সেরিওজা-ঠাক্‌মা-শুভাশীষ

ছোটগল্প পড়ার জন্য আলবার্তো মোরাভিয়া, ইতালো কালভিনো, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত আর রমাপদ চৌধুরীর নাম রেকমেন্ড করছি।

শুধু সেরিওজার জন্যঃ
তোমাকে না একবার বললাম ব্লগে ঘোরাঘুরি না করতে। পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

নট ব্যাড। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

স্নিগ্ধা এর ছবি

আচ্ছা মেয়ে, উপরের পাটির দাঁত না মেজে আপনি কীভাবে খালি নিচের পাটির দাঁত মাজতেন?! আমার তো মনে হয় বাই ডিফল্ট উপরের পাটির দাঁত মাজা হয়ে যাইই যায়, নিচেরটা যদি বা বাদও দেই?

মেয়ে এর ছবি

দেঁতো হাসি আপু আপনার দাঁতের অ্যালাইমেন্টে গ্যাঞ্জাম আছে খাইছে অথবা আমার দাঁতের।

তাড়াহুড়ায় আসলে কোনটা বাদ পড়ে জানি না।কারণ আমি নিজে অনেক যত্ন করে সময় নিয়ে রেডি হই ।কিন্তু ক্লাসে যেয়ে বাকিদের অবস্থা দেখে আমার লেখার মতই মনে হতো।

নাশতারান এর ছবি

মোবাইলে গ্যাঁজানোর অভ্যাস নাই।

চ্যাট করতে করতে ক্লান্ত।

ফার্মভিল খেলি না।

ইন্টারনেট নিয়ে ধানাই পানাই করতে হয় না। ওটা বলামাত্র পাই।

বেকারত্বের কারণে দীর্ঘ বিরতির পর কিছু লেখা হচ্ছে। এটা আমার বেকার জীবনের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক।

তবে আপাতত বেকারজীবনের উপর যারপরনাই বিরক্ত আমি। চাকুরেরা যখন বোঝাতে চেষ্টা করেন যে তারা কত দুঃখে আছেন আর আমি কত সুখী তখন প্রচন্ড রাগ হয়। আমি চাকরিজীবী হয়ে বেকারজীবনের জন্য হাপিত্যেশ করতে উন্মুখ।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

কাকুল কায়েশ এর ছবি

আপনি তো বুয়েটের, তাই না? কোন ডিপার্টমেন্ট জানতে পারি? সিভিল হলে আমি দেখতে পারি।

=====================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

নাশতারান এর ছবি

না, ভাই। আমি ইলেকট্রিক্যাল। তবুও ধন্যবাদ।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

কাকুল কায়েশ এর ছবি

সত্যি দুঃখিত। ইলেকট্রিকালের ছেলেপেলেরা বেকার থাকতেসে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি কখনো!!
দেশ ছেড়ে পালান তাড়াতাড়ি।

===================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

সাবিহ ওমর এর ছবি

আরি! আমিও তো ইই! বেকার জীবনের গ্লানি সইতে না পেরে আবারো ছাত্রত্ব বরণ করিয়াছি মন খারাপ

তিথীডোর এর ছবি

"বেকার বলেই হয়তো আমার হাজার সাধ জাগে.../
সাধটা যতই হোক না বড় সাধ্য থাকা লাগে!!" মন খারাপ

কি আর করা, মনের দুঃখে গান গাই...

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

apathy  এর ছবি

EEE এর কেন যে এই অবস্থা ?? আমি নিজে ও EEE

বাউলিয়ানা এর ছবি

লেখা পড়ে মজা পেলাম। ভাববেন না আবার, "কারও পৌষ মাস কারও..."

আমি যখন বেকার ছিলাম নেট এত সহজলভ্য ছিল না। সুতরাং ফেইসবুকেরও ব্যাপার নাই। খালি গাদা গাদা বই আর পত্রিকা-ম্যাগাজিন এইগুলোই ছিল ভরসা। আরেকটা মজার ব্যাপার ছিল পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন দেখা, হেন বিজ্ঞাপন‌ নেই যে আমলে নিতাম না। গার্মেন্টসের সুপারভাইজর থেকে শুরু করে বিমানের কেবিন ক্রু সব জায়গাতেই এপ্লাই করার কথা ভাবতাম, যদিও শেষ পর্যন্ত করা হতো না।

খুব শীঘ্রই আপনার 2241139 এ ফোন করার সৌভাগ্য হোক।

নাশতারান এর ছবি

2441139 না? চিন্তিত

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

বাউলিয়ানা এর ছবি

হুমম, ঠিকই ধরেছেন।

আমিতো লেখার সময় মনে মনে তাই বলতেছিলাম, অথচ লিখলাম ভুল।

নাহ্‌ পেটে ক্ষুধা বেশি লাগছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

এখনো বেকার জীবনের পথে হাটা শুরু করিনি...জানিনা সামনে কি আছে...মন খারাপ

তাসনীম এর ছবি

এই লেখাটাও খুব ভালো লেগেছে। বেকারদের দিয়ে বাসার বাজার করানো হয়, অন্তত আমাকে কাওরান বাজারে পাঠানো হয়েছে বেশ কয়েকবার, আমি এই জিনিসটা খুঁজছিলাম লেখাতে। পরে দেখলাম আপনি "মেয়ে", মনে হয় বেকার মেয়েদের বাজারে পাঠানো ব্যাপারটা এখনো শুরু হয়নি। বাজারে গেলে বেকারদের একটা ইনকামের পথ খুলে যায়, আশাকরি খুলে বলার দরকার নেই এটা।

প্রিভিউ করে ফরম্যাটিংটা দেখবেন একটু, দুই একটা জায়গায় লাইন ব্রেক হয়েছে।

লিখতে থাকুন, পাঠক সমাগত।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

মেয়ে এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি
আগের লেখার লিঙ্ক দেই নাই কারণ মনে হলো হয়ত ভালো লাগবে না। তারচেয়ে এই ভালো লাগাটুকুই থাকুক। আসলে ভালোলাগার মত হলে ঠিক আপনার চোখে পড়ত।

আমারে দিয়ে তো গৃহকর্ম করায় মন খারাপ গৃহকর্মে ইনকাম নাই কোনো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।