কদিন ধরে মনটা কেমন যেন ভিষণ এলোমেলো হয়ে আছে.... এলোমেলো হয়ে আছি আমি! মনে হচ্ছে এই আমি থেকেও নেই কোথাও! নিজেকে কেমন যেন ছাঁয়া মানুষ ছাঁয়া মানুষ মনে হচ্ছে আমার... মনে হচ্ছে আমি আছি ঠিকই কিন্তু আমার কোন অস্তিত্ব নেই,, কিন্তু সেটাও যে কি করে সম্ভব কে জানে!
নিজেকে একদম নিস্তরঙ্গ একজন হিসেবে নিজের সাথে পরিচয় করিয়েছি সে ত অনেকদিন হল... কিন্তু এবারের এই নতুন উপসর্গ টা যে ঠিক কি সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না!
একটু পরেই ভোর হবে। একটু একটু করে আকাশে আলো ফুটবে এখন! এখানকার আকাশটা কেন যেন লালচে কিংবা সোনালী হয় না কখনই,, শুধু একটা একহারা আলো চোখে ধরা দেয় আর বুঝিয়ে দেয় নতুন দিনের শুরু হল...
আমি বসে আছি। দু পা ঝুলিয়ে দিয়ে আমি বেশ অনেক্ষণ ধরেই আমার সানসেটে বসে আছি!!
অনেক সময়ই রাতে বাড়ি ফেরার সময় এমন দেখতাম জানালা দিয়ে ঢালু ব্রীকের চালের ওপর বসে থাকা অনেককেই... কিন্তু এই ব্যাপারটা যে বেশ আরামদায়ক মন খারাপের সময় এটা ঠিক জানা ছিল না তখনো! ত আজ হঠাৎই জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কি মনে করে জানালা খুলে কিছুটা চোরের মতই বাঁকাচোরা হয়ে নিজের জানালা গলিয়ে বাইরের ঢালু সানসেটটের মত যায়গাটায় নেমে পরলাম।
আমি বসে রইলাম ঘন্টার পর ঘন্টা... একমনে কি যেন ভাবতেই থাকলাম। উপরের আকাশটা যেন একদম নিষাদ কালো। আমি সেই কালোতেই কি যেন দেখতে থাকলাম অসম্ভব মনযোগ দিয়ে... একসময় আমার মনে হল আমার কেমন যেন সব ঘোলাটে লাগছে,, আমার মনে হয় এক রকম হেলুসিনেশন হল সেই সময়টায়!!
আমি দেখলাম আমার পাশেই একটা মেয়ে..
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম কে এই মেয়ে!! কোথা থেকে উদয় হল হঠাৎ!
মেয়েটা দেখি একমনে বসে কি যেন লিখছে... চিঠি কি? হুমম মেয়েটা খুব যত্ন করে রুল টানা কাগজে গুটিগুটি করে পেন্সিল দিয়ে লিখছে... চিঠিই ত,, লিখতে লিখতে মাঝে মাঝে মেয়েটার হাত কেঁপে কেঁপে উঠছে,,
মাঝে মাঝে মেয়েটা যেন একটু ফুঁপিয়েও উঠছে... আমি আরেকটু পাশে ঝুকে উকি দিয়ে বুঝতে চাইলাম কি লিখতে গিয়ে এত কষ্ট হচ্ছে ওর! মেয়েটা একবারও আমার দিকে ফিরে দেখল না!
অথচ ও আমার পাশে বসে লিখেই চলছে,,
রুলটানা একটা খাতায় গুটিগুটি....
আমি লজ্জায় কুকড়ে মুকড়ে যাই!!
কষ্টগুলো যেন শরীরের নিউক্লয়াসের সাথে মিশে যায় আমার,, ওরা যেন শক্তিতে পরিণত হয়ে গায়ের চামড়ার নিচে ঠিক আগুন ধরিয়ে দেয়! ওহ সে কি প্রচন্ড কষ্ট!! আমি একটু একটু করে হারাতে দেখি তোমায়,,
আমার তিল তিল মরণ যন্ত্রণা হয়!!
তোমার সব মিথ্যেগুলো আমাকে দেয় কুষ্ঠো রোগের অনুভূতি...
আমি আর এগোতে পারি না...
ওর চিঠিটা আমার কাছে অসহ্য ঠেকে!
কিন্তু তারপর হঠাৎই যেন আমি মেয়েটার কষ্টগুলিকেও দেখতে পাই। ওরাও কিভাবে যেন আমার চোখে ভিসিবল হয়ে যায়!
আমি দেখি কষ্টগুলো আনন্দে চিৎকার করছে,, গাইছে... ওরা মেয়েটাকে ঘিরে ঠিক যেন উৎসবের মতই মেতে উঠেছে।
আমার কেমন যেন অসুস্থ লাগে....
আমি চোখের সামনে থেকে ওদেরকে তাড়িয়ে দিতে চাই। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারিনা...
মেয়েটার জন্যেও আমার খুব কষ্ট হতে থাকে।
আমি ওর জন্যে হাউমাউ করে কেঁদে উঠি। আমি কাঁদতেই থাকি ওর অসহায়ত্বে..
মেয়েটা তখনও লিখেই চলছে গুটিগুটি ওর রুলটানা খাতাটায়...
আমার খুব ইচ্ছে করে ওর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেই। ইচ্ছে করে ওকে বলি, যে কাউকে নিয়েই এতটা কষ্ট পেতে হয় না জীবনে,, জীবনটা আরও অনেক কিছু দেয়ার আশাতেই বসে আছে,, ওকে শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে একটু দেখতে হবে...
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি এক সময় আবিস্কার করি,, ওর কষ্টেরা ওকে যেন একটুও ভাঙ্গতে পারেনি... ওর বসে থাকায়,, ওর ভঙ্গীতে একটা অসম্ভব ভালোবাসার দৃঢ়তা আছে। ওকে দেখে মনে হল, ঐ কষ্টগুলি লিখে ফেলতে পারায় ও এমন কিছু অনুভব করছে যার স্বাদ আমি কোনদিনই পাইনি....
একটু পরেই ভোর হবে। এই ব্যাপারটা আমার এখন আর কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে ভোর হলেই আমার হেলুসিনেশন কেটে যাবে। আর আমার হেলুসিনেশন কেটে গেলেই মেয়েটা একা হয়ে যাবে এই ভাবনাটা আমাকে কেমন অস্থীর করে তোলে....
আমি কেন যেন অনন্তকাল ধরে মেয়েটার পাশেই এভাবে বসে থাকতে চাই। ওকে খুব আপন লাগতে থাকে আমার। আমি ভাবি মেয়েটা নিশ্চিন্তে এভাবেই বসে থাক পিঠময় খোলাচুলে...
ও গুটিগুটি লিখে যাক ওর রুলটানা খাতাটায়....
ত্রেয়া।।।
মন্তব্য
আপনার লেখার ভালো দিক হচ্ছে গভীর আবেগ, মায়াময়তা এবং ট্র্যান্স বা ঘোরলাগা আবহ। লেখার গতি ভালো এবং পড়তে অসুবিধা হয় না।
আপনি যদি বানান গুলোর দিকে একটু লক্ষ্য রাখতেন তাহলে আরো দুর্দান্ত হত। আপনার কাছ থেকে আরো বৈচিত্র্যময় লেখা আশা করছি।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
হুমম বাংলা বানানে আমি একেবারেই অজ্ঞ!
ছোট মেয়েটা তো আপনার ভেতরেই বাস করে, তাই না? সে কখনোই ছেড়ে যাবে না আপনাকে। কষ্টের সময়গুলোতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবেন, দু' হাতে আগলে রাখবেন তাকে।
লেখার ভাবনা ও আবহ দারুণ। লেখনীও ভালো। তবে আমার মনে হয়েছে অনলাইন লেখালিখির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে যতিচিহ্নের অহেতুক আতিশায্য উঠে এসেছে। যেমনঃ "......", ",,,","!!!" ইত্যাদি।
বানানে বেশ কিছু ভুল আছেঃ
ছেড়া > ছেঁড়া
ছাঁয়া > ছায়া
ত > তো
মনযোগ > মনোযোগ
কুকড়ে > কুঁকড়ে
কুষ্ঠো > কুষ্ঠ
আবিস্কার > আবিষ্কার
অস্থীর > অস্থির
কয়েকটা শব্দের ব্যবহার ঠিক মনে হয় নিঃ
নিষাদ কালো > নিকষ কালো (নিষাদ মানে ব্যাধ)
শরীরের নিউক্লয়াসে > কোষের নিউক্লিয়াসে
তোমার সব মিথ্যেগুলো > তোমার সব মিথ্যে/ তোমার মিথ্যেগুলো
আমার চোখে ভিসিবল > আমার চোখে দৃশ্যমান (ইংরেজি শব্দের অহেতুক ব্যবহার দৃষ্টিকটু ঠেকে )
আপনার নিকটি চেনা চেনা লাগছে। দীর্ঘদিন কিছু লেখেন নি। তাই না? এবার নিয়মিত লিখতে থাকুন।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
খুব খুশি হলাম,, সত্যিই খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্যে।
আমি লিখি ঠিকই তবে সেটা একেবারেই শুধু যা ইচ্ছে করে লিখতে সেটাকেই সামনে এনে হাজির করার মত, কিন্তু লেখার নিয়ম কানুন কিংবা শব্দের ব্যবহারের সঠিক কিছুই আমার একেবারেই জানা নেই। আমি বুঝিও এই কমতি গুলো, কিন্তু এগুলো যে কিভাবে শেখা যায় সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা।
এই প্রথম বোধহয় কেউ আমার লেখার ভুলগুলো এত সুন্দর করে ধরিয়ে দিল।
আপনাকে আসলেই অনেক ধন্যবাদ।
আর বানানের কথা কি বা বলি! সেটা ত দেখতেই পেয়েছেন লেখা পড়ে।
ত্রেয়া।।।
আপনার সমালোচনা গ্রহণের সৎসাহস দেখে ভালো লাগলো। সামনে আরো অনেক ভালো ভালো লেখা পাবার প্রত্যাশা রাখছি আপনার কাছে।
আরেকটু সমালোচনা করি, কেমন?
কিভাবে> কীভাবে
কিঃ তুমি কি ভাবছো? (Are you thinking?)
কীঃ তুমি কী ভাবছো? (What are you thinking?)
ঠিকাছে? ভালো থাকবেন।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আরে অদ্ভুত তো! এমন পার্থক্য তো আগে কখনো খেয়াল করিনি!
আপনি যেভাবে বললেন এভাবে কিন্তু অনেক কথারই বিভিন্ন রকমের ভাব প্রকাশ করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
বেশ ভালো লাগলো
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
ও আর এটা ঠিক সাহস নয়, শেখার ইচ্ছে বলতে পারেন।
আমি আপনাদের মন্তব্যগুলোকে ঠিক সমালোচনা হিসেবে নিচ্ছিও না আসলে!
কেউ যখন কিছু শিখতে থাকে, সেই পর্যায়ের কিছুরই কি সমালোচনা হয়! বরং যেটা হয় সেটা হচ্ছে শেখানোর চেস্টা।
তাই আপনার ভুল ধরিয়ে দেয়াটাকে আমি এক রকম সাহায্য হিসেবেই নিয়েছি
ভালো থাকুন বুনোহাঁস
আপনার স্পিরিট পছন্দ হ'ল। লিখতে থাকেন।
আরও কিছু:
ভিষণ – ভীষণ
কোন – কোনো/কোনও
কি – কী
উপসর্গ টা – উপসর্গটা
হল – হলো
সোনালী – সোনালি
অনেক্ষণ – অনেকক্ষণ
ব্রীকের – ব্রিকের
যায়গাটায় – জায়গাটায়
পরলাম – পড়লাম
ঘন্টা – ঘণ্টা
ঝুকে – ঝুঁকে
উকি – উঁকি
প্রচন্ড – প্রচণ্ড
কিভাবে – কীভাবে
পারিনা – পারি না
ভাঙ্গতে – ভাঙতে
ভঙ্গী – ভঙ্গি
অসম্ভব ভালো লাগলো। খুব মায়াভরা লেখা। আপনি নিয়মিত লিখবেন, আশা করি। আপনার আরও লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ অতন্দ্র।
এইখানে তো আর ঠিক করা যাবে না। তবে পরের বার কিছু লিখতে গেলে এই বানানগুলো খুব কাজে আসবে আমার।
ত্রেয়া।।।
গল্পটার আইডিয়াটা নতুন কিছু না, কিন্তু আপনার উপস্থাপনার গুণে কী যে ভালো লাগলো!
ফরম্যাটিং এর কারণেই কিনা জানিনা, মানে - কিছু প্যারাব্রেক অন্য জায়গায় দিলে গল্পটার টান আরো ভালো হতো কিনা জানিনা, কিন্তু সব মিলিয়ে গল্পটা আরও একটু ঠাসবুনোটের হতে পারতো বোধহয়।
এই ফালতু সমালোচনাটা করলাম যদিও, তবে এটাও বলি - আপনার লেখার হাত চমৎকার! বিশেষ করে 'কষ্টগুলো আনন্দে চিৎকার করছে' আবার মেয়েটাকে 'ভেঙ্গে ফেলতে পারছে না' - এ ধরণের কিছু দারুণ ব্যাপার আছে লেখাটায়
খুব ভালো লাগলো এটা জেনে যে আপনার আমার লেখা ভালো লেগেছে।
আমি আসলেই গল্প লেখার নিয়ম কানুন একেবারেই জানি না।
আমার লেখার মূল ব্যাপারটাই থাকে নিজের ভেতরের এক্সপ্রেশনটাকে অক্ষরে নিয়ে আসতে চেষ্টা করি।
গল্পের ফরম্যাটিং বলুন কিংবা প্যারাব্রেক এর কিছুই আমার জ্ঞানের আওতায় পড়ে না একদমই!
তবে চেষ্টা করছি শিখতে। হয়ত একদিন শিখেও ফেলতে পারবো।
ত্রেয়া।।।
ওয়েলকাম ব্যাক ত্রেয়া!
বাকি যা বলার ছিলো, এরমধ্যেই বলা হয়ে গেছে...
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অনেক ধন্যবাদ তিথীডোর
আপনার স্টাইলটা ভাল লেগেছে।
-স্নিগ্ধা করবী
আপনার ভালো লাগাতে আমারো অনেক ভালো লাগলো করবী
ভাল লাগলো লেখাটি। লিখতে থাকুন। ভাল থাকুন।
ধন্যবাদ।
আপনিও ভালো থাকুন।
লেখা ভালো লাগলো। বানানের ভুলগুলোর কারণে একটু সমস্যা হয়েছে।
আশা করি পরবর্তীতে তা আর হবে না।
ভালো থাকবেন।
খুব ভাল লেগেছিল আপনার লেখাটা। রবীন্দ্রনাথের "খাতা" গল্পটার কথা মনে হল। আরও অনেক লিখুন
নতুন মন্তব্য করুন