ঘাড়ের চামড়া ধরে ঝুলিয়ে রাখতে দেখলে মনে হয় অতি ব্যথা লাগছে বুঝি, কথাটা আধা সত্য আবার আধা মিথ্যা। যুত্সই করে না ধরলে ঘাড়, গলা আর পিঠের চামড়ায় টান পড়ে বেহাল হয়ে ইয়া নফসি ইয়া নফসি জপ করা ছাড়া গতি থাকেনা। কিন্তু বেড়ালমাত্রই জানে অমন আরামের চলাফেরা আর নাই।
চোখ ফোটার আগের কথা তো আর মনে করা সম্ভব না, তবে একদম পুরোন কথা মনে করতে গেলে দোদুল্যমান দুনিয়ার কথাই মনে পড়ে মিঁয়াও...ঘাড়ের চামড়া ধরে ঝুলিয়ে রাখতে দেখলে মনে হয় অতি ব্যথা লাগছে বুঝি, কথাটা আধা সত্য আবার আধা মিথ্যা। যুত্সই করে না ধরলে ঘাড়, গলা আর পিঠের চামড়ায় টান পড়ে বেহাল হয়ে ইয়া নফসি ইয়া নফসি জপ করা ছাড়া গতি থাকেনা। কিন্তু বেড়ালমাত্রই জানে অমন আরামের চলাফেরা আর নাই।
চোখ ফোটার আগের কথা তো আর মনে করা সম্ভব না, তবে একদম পুরোন কথা মনে করতে গেলে দোদুল্যমান দুনিয়ার কথাই মনে পড়ে [url=www.sachalayatan.com/guest_writer/30881]মিঁয়াও-এর।
সমস্ত শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে কোনমতে ঝুলে থাকা, ল্যাজখানা দু পায়ের ফাঁকে আটকে রাখা শক্ত করে, আর কানদুটো খাড়া করে মাঝে মাঝে পিটপিট করে কোনমতে এদিক সেদিক দেখা- আহা কী দিনই ছিলো সেসময়! বড় হয়ে অবধি সে সুখ গেছে।
তবে একটা ব্যাপার মিঁয়াও-এর বড় আজব লাগে। মানুষেরা ওভাবে ঘাড় ধরে ঝুলিয়ে ব্যথা তো দিতে পারেই, আবার ইচ্ছা করলে আরাম দিয়েও ধরতে জানে!
সেদিন মাছ ধরতে গিয়ে কাদাপানিতে নাজেহাল হয়ে ফেরার পর নিতুনের আম্মু যখন ঘাড় ধরে ঝুলিয়ে নিয়ে সাদাটে ছোট পুকুরের পানিতে নিয়ে ফেললো ওকে- কি টাব জানি বলে ওটাকে- চামড়া অবশই হয়ে গিয়েছিলো জ্বলুনীর চোটে- পরে ঘাড় নাড়াতে পারেনা এমন অবস্থা!
আবার তার দু দিন পরেই নিতুনের ইশকুলের এক বন্ধু এলো বাসায়, মাঝে মাঝে আসে অবশ্যি মা-কে নিয়ে, দুই মা নাকি পুরোন বন্ধু, দেখা দেখি বন্ধ ছিলো অনেক দিন, ছেলেদের ইশকুলে ফের দেখা হয়েছে- নিতুন আর আবরার ও সেই থেকে বন্ধু, সুযোগ পেলেই বাসায় আসে।
ছেলেটা অবশ্য মিচকা পাজি, চেহারা দেখে বোঝার উপায় নাই- টবাটবা গাল, গোলগাল ফরসা মুখ, কালো কোকড়ানো চুল- কোন বেড়াল বিশ্বাস করবে এই ছেলে কোলে নিয়ে আদর করার ফাঁকে ফাঁকে পেটে ক্রমাগত গুঁতো দেয় আর আঙুলে ল্যাজ জড়িয়ে মটকে দেয়ার তালে থাকে? কী বিচ্ছু ছেলে রে বাবা!
আবরারকে দেখলেই মিঁয়াও তাই আড়াল খোঁজে, যেদিক পারে পালায়। নিতুন তক্কে তক্কে থাকে বোধ হয়, পরে হোক, আরো পরে হোক ঠিকই পাকড়াও করে ফেলে। এরপরের অভিজ্ঞতা তেমন সুখের না হলেও ঐ সময়টা মিঁয়াও-এর খুবই পছন্দ।
প্রথমে খপ করে পুরো শরীরটা আটকে ফেলে হাত পায়ের ফাঁকে, এরপর আলগোছে ঘাড়ের চামড়া তিন আঙুলে ধরে ঝুলিয়ে ফেলে বাতাসে; পুরো শরীর আপনা আপনি বেঁকে যায়, ল্যাজটা দু পায়ের ফাঁকে আস্তে ঢুকে যায়, কানদুটো মাঝে মাঝে ভেঙ্গে শুইয়ে মিশিয়ে ফেলা আবার খাড়া করা- আহ্ আরাম! অজান্তেই গলা দিয়ে গরর গরর গরর শব্দ বের হতে থাকে।
কিছু পেলে নাকি কিছু দিতে হয়। তা সে সুখের মাশুল মিঁয়াও বড় কম দেয়নি।
নিতুনের হাতে ওকে দেখতেই আবরার লাফিয়ে এলো, আমাকে দাও, আমাকে দাও, আমি কোলে নেবো, আমি কোলে নেবো! কোলের কথা শুনতেই মিঁয়াও-এর পিলে চমকে গেছে, হাঁচড় পাঁচড় করেছে আঙুল থেকে মুক্তির আশায়। দেখা গেলো ছেলে এদিকে মা র ষোল আনা পেয়েছে, ছোটা গেলোনা কোনমতে- ভবিতব্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কী করতে পারতো মিঁয়াও?!
তা কপাল অত ভালো ছিলোনা, আদরের ফাঁকে ফাঁকে চিমটি চলেছে, গাট্টা পড়েছে মাথায়, আর তার চেয়ে বড় সব্বোনাশ করে দিয়েছে হতচ্ছাড়া বিটকেল আবরার।
বেড়ালজাতির অতি মূল্যবান সম্পদ- কে না জানে, এমনকি নিতুনের বড়ো সাইজের লাল রঙা মলাটের বইটাতে যে সাদা ধপধপে বেড়ালটার ছবি, ওতেও আছে- অতি যত্নে গড়া গোঁপজোড়ার একপাশের ছ খানা চুলের একখানা হ্যাঁচকা টানে তুলে ফেলেছে পাজীর পা ঝাড়াটা!
আর সহ্য করেনি, ব্যথায় কঁকিয়ে ম্যাএএএও করে হালকা আঁচড়ে শিক্ষা দিয়ে মুক্তি কেড়েছে সে।
নিতুনের আম্মুর সাজগোজের টেবিলে বসে একফাঁকে নিজের নাদান চেহারাও দেখে এসেছে মিঁয়াও। কী চেহারা কি হয়েছে?!
খোলা জানালায় সামনে তাকিয়ে মিঁয়াও তার মায়ের শেখানো মার্জারতত্ত্ব মনে করার চেষ্টা করে। সেই জাঁকালো পুরো গোঁফ কি আর ফিরে পাওয়া যাবে কখনো?!
কোনমতেই মনে করতে না পেরে শেষমেষ হতাশ হয়ে বুকের অতল থেকে বের হয়ে আসা আরো একটা দ্বীর্ঘশ্বাস আস্তে ছেড়ে দেয় মিঁয়াও।
মন্তব্য
আহারে মিয়াওটা! অই পাজি আবরারকে পেলে একটা চড় কষিয়ে দিতাম। খামোকা নিষ্পাপ প্রাণীগুলোকে কষ্ট দেয়া এই বাচ্চাগুলোকে আমার একদম ভাললাগেনা।
ফারাবী
আবরারদের আশেপাশেই পাবেন!
ওদের শায়েস্তা করলে মিঁয়াও খুশীই হবে।
মর্ম
কার্টুনিস্ট মেহেদী হক দৈনিক প্রথম আলোর গোল্লাছুট পাতায় মিয়াও নামে একটা সাইলেন্ট স্ট্রিপ আঁকতেন। সেটার কথা মনে পড়লো।
আপনার অবসার্ভেশন বেশ ভালো। বিশেষ করে এই জায়গাটায়...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
মন ভেঙে গেলো ঐ মিয়াও-এর কথা শুনে!
মনেই ছিলোনা একদম।
অবশ্য মিয়াও আর মিঁয়াও-এ তফাত্ আছে, এই যা স্বান্ত্বনা!
প্রশংসার জন্য আন্তরিক ধণ্যবাদ।
মর্ম
কঠিন!!!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
কি বলবো?!
ধণ্যবাদ!
মর্ম
একটা ভুল হয়ে গেছে।
আগের দুপর্বের লিংক দেয়ার ইচ্ছে ছিলো, ভুল করে প্রথম পর্বের লিংক দুবার দিয়ে দিয়েছি তা একটু আগে টের পেলাম।
আগ্রহী পাঠকের জন্য দ্বিতীয় পর্বটাও রইলো এখানে।
ধণ্যবাদ।
মর্ম
আমি হাজির
ছোটবেলায় আমি মিঁয়াও-দের গোঁফ কেটে নেলপলিশ দিয়ে টিপ পরিয়ে রাখতাম, দুই-একবার লাল ফিতেয় বিড়ালের গলায় ঘন্টিও বেঁধে দিয়েছি
---------------------------
শান্ত নদী
কেমন জানি আবরার আবরার গন্ধ পাচ্ছি!?!
মর্ম
এত্তবড় অপবাদ, মিঁয়াও সহ্য করবে না
তবে মিঁয়াওকে সেজেগুজে যা লাগতো না!
আমাদের বাসায় ৫ জনের পুরো মিঁয়াও পরিবার থাকতো (ম্যাও শুদ্ধু)
---------------------------
শান্ত নদী
নাহ্ সাজগোজ মিঁয়াও-এর মোটেও পছন্দ না, কাউকে করতে অবশ্য না করেনা, আদতে সে সহনশীল প্রকৃতির!
মিঁয়াও-এর ক্যারিয়ার সবে শুরু হলো, এখনই সংসারের গ্যাঞ্জামে আটকা পড়ার ধান্দা তার নাই।
মর্ম
Awww!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
মর্ম
লেখা যথারীতি অনেক মজার আর আদুরে হয়েছে।
একটা জায়গায় খটকা লাগলো শুধু। একদম প্রথম বাক্যে "অতি ব্যথা" ঠিক মানাচ্ছে না যেন। "খুব ব্যথা" অথবা "ভীষণ ব্যথা" দেয়া যেত হয়তো।
মিঁয়াও এর জন্য ভালবাসা।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
হুম! ফিরে পড়লাম এবং মনে হলো ওখানে 'খুব ব্যথা' বা 'বেশ ব্যথা' বললেই বেশী মানাতো।
মিঁয়াও এর জন্য ভালোবাসাটুকু গচ্ছিত রইলো, ও এলে থাবায় বুঝিয়ে দেবো'খন!
ধন্যবাদ, দ বু!
মর্ম
বিল্লি ভালবাসিনে!
তবে ইয়ে, মিঁয়াওকে ভালো লেগে গেছে...
'দীর্ঘশ্বাস' ফেলে 'সান্ত্বনা' দিন এবং জানান 'ধন্যবাদ'
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বিল্লি আমারো চোখের বালি।
মিঁয়াও তো আর বিল্লি না, তাকে তো পছন্দ করতেই হবে!
বানান ভুল ধরা পড়ার 'সান্ত্বনা' (অতি সাবধান হওয়ার ফল ওটা) হয় না কোন। তবু 'দীর্ঘশ্বাস' (দ- এর নীচে ব-ফলাটা আঙুল পিছলে পড়ে গেছে)ফেলে শান্ত হতে হয় আবার মনে করে 'ধন্যবাদ'ও (বানানে আছে অনিশ্চয়তা) জানাতে হয়!
মর্ম
বিড়াল প্রেমিক হিসেবে আমার বিশেষ খ্যাতি নাই, তবে আপনার "মিঁয়াও"-এর তিন পর্ব পড়ে পাশের বাড়ির শাদা বিড়ালটাকে খানিক টানা হেঁচড়া করতে মন চাচ্ছে। এইটাই মনে হয় আমার মিঁয়াও-এর জন্য ভালোবাসা।
অনেকদিন বেড়াল কোলে নেইনা।
আপনি যদি নেন তো আমার হয়ে ওর গলাটা চুলকে দেবেন একটু!
মর্ম
গলাতো বটেই, কিন্তু সাথে কানের নিচেও
------------------------
শান্ত নদী
দু'চোখের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে একটুখানি চাপ দিয়ে মাথার দিকে নিয়ে গেলেও ক্ষতি নেই কোন!
মর্ম
ভাল্লাগলো লেখাটা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খ্যাতিমান পাঠকের ভাল্লাগ্লো জেনে আমার বড় ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ, নজু ভাই।
মর্ম
নতুন মন্তব্য করুন