ছুটির সকাল
মুক্ত বিহঙ্গ
[justify]
রবিবার সকাল । ঘুম ভাঙলেও বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করেনা । আলস্যে মাখা শরীরটা অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠিয়ে চোখদুটো কচলাতে-কচলাতে ওয়াশরুমে ঢুকি ফ্রেশ হবার জন্য । ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ক্ষুধাটা টের পাই । কিচেনে এসে ভাবতে থাকি, কী দিয়ে আজ ব্রেকফাস্ট করা যায় ! নুডুলস ? নাহ্ ! এখন তৈরি করতে ইচ্ছে করছে না । টরটিলা আর ডিমভাজি ? না; এটা খেতে খেতে টায়ার্ড হয়ে গেছি । ব্রেড আর জেলি ? সেই ভালো; ঝামেলা কম ! ফ্রিজ থেকে ব্রেড বের করে টোস্টারে টোস্ট করতে দেই আর ডাইনিং টেবিলের পাশের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই । হঠাৎ চোখে পড়ে যায় নিচে মাঠের বরফের মধ্যে ছুটতে থাকা সাদা ফকফকে খরগোস । কী সুন্দর দেখতে ! দেখলেই হাতে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে ।
আজ সকাল-সকাল বাস ধরবার তাড়া নেই । অর্ধেকটা নাস্তা ডাইনিং টেবিলে ফেলে রেখে আজ ছুটতে হবেনা বাসের জন্য । অথবা তিরিশ সেকেন্ডের জন্য বাস মিস্ করে বিরক্ত মন নিয়ে বাসস্টপে পরের বাসটার জন্য অপেক্ষা করতে হবেনা । আবার বাস থেকে নেমেই দৌড়িয়ে গিয়ে পাতাল রেল ধরবার ঝামেলাও আজ নেই । আজ ছুটির দিন; “আজ কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা” !
ব্রেকফাস্ট শেষ করে আবার চিন্তা করতে থাকি, এবার চা নাকি কফি ? কফি তো প্রতিদিন-ই খাই; আজকের সকালটায় চা হোক ! দুধে একটুও পানি না মিশিয়ে চা খেতে যে কী মজা ! মাইক্রো-ওয়েভ ওভেনে এই চা বানানো বেশ ধৈর্য্যের ব্যাপার । সামনে দাঁড়িয়ে সবসময় লক্ষ্য রাখতে হয়, গরম হয়ে দুধ কাপ থেকে উথলিয়ে পড়লো কিনা ! ছুটির সকালে এই গরম চায়ের কাপ হাতে আমার রুমের বিশাল জানালাটার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়, আহ ! জীবনটা কত সুন্দর !
জানালাটা বিশাল হলেও দুঃখের ব্যাপার হল, এই উইন্টারে জানালা খুলবার উপায় নেই; রুমের হিটিং সিস্টেম ঠিক রাখবার জন্য । সারা বছরের মধ্যে শুধু সামারের কিছু সময় জানালাটা খোলা যায় । বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ কাঁচের জানালার ভিতর দিয়েই বাইরে তাকিয়ে থাকতে হয় ।
চায়ের কাপে ছোট-ছোট চুমুক দিই আর ভাবি, কী আনন্দ ! প্রতিদিনের মত আজ ইউনিভার্সিটি যেতে হবেনা ! খিট-মিটে ভাষার ইঞ্জিনিয়ারিং জার্নাল পেপারের আর্টিকেল গুলো পড়তে হবেনা । আজ রিসার্চ ল্যাব-এ কাজ করতে হবেনা । টেস্ট-টিউবে ২.৫ মিলিলিটার ওয়েস্ট-ওয়াটার এর সাথে কত মিলিলিটার সালফিউরিক এসিড আর অন্যান্য রিএজেন্ট মিশাতে হবে, সেটা নিয়েও আজ আর ভাবতে হবেনা ।
চা হাতেই আমার সবসময়ের সঙ্গী প্রিয় ল্যাপটপ টা অন করি । আজ ইউনিভার্সিটির ইন্টারনেট একাউন্টে সুপারভাইজারের ইমেইল থাকবে না । আজ শুধু ‘ইয়াহু মেসেঞ্জার’ আর ‘ফেসবুক’ এর দিন । আজ ফেসবুকে সকল বন্ধুদের খোঁজ-খবর নিতে হবে । কে কী স্ট্যাটাস দিলো, কেন দিলো- সেসব নিয়ে একটার পর একটা কমেন্ট চলবে । সকল বন্ধুদের মেইল-এর রিপ্লাই দিতে হবে । কে নতুন ছবি আপলোড করলো সেটা দেখতে হবে, ছবিতে কমেন্ট করতে হবে । আর সাথে সাথে নিজের একটা নতুন স্ট্যাটাস-ও শেয়ার করতে হবে ফেসবুকে ।
ছয়দিন পর আজ দুপুরে হাত দিয়ে মাখিয়ে ভাত খাবো; ভাবতেই ভালো লাগছে । সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে লাঞ্চে ভাত খাওয়াই হয় না; খেলেও ডিপার্টমেন্টের গ্রাজুয়েট লাউঞ্চে চামচ দিয়ে খেতে হয় । হাত দিয়ে না খেলে ভাত খাওয়াটা কেমন জানি অপূর্ণ রয়ে যায় । আজ দুপুরে আলু ভর্তা করতে হবে । সাথে থাকবে ঘন ডাল । গরম ভাতের উপর একটু ঘি ঢেলে লবন দিয়ে মাখিয়ে; সাথে একটা কাঁচা মরিচ থাকলে তো আর কথাই নেই । একদম খাঁটি বাংলাদেশী খাবার ।
কয়েকমাস পর আমার প্রিয় বাইসাইকেল নিয়ে আজ বিকেলে বাইরে বের হবো । খুব আরামদায়ক এবং সুন্দর রোদেলা আবহাওয়া আজ । এইবছর শীত খুব তাড়াতাড়ি বিদায় নিচ্ছে ।
আজ ছয়দিন পর আবার সূর্যাস্ত দেখবো । গত ছয়টা দিন কখন দুপুর হয়েছে, অথবা কখন বিকেল- কিছুই লক্ষ্য করা হয়নি । পশ্চিমে অস্তমিত সূর্যের লাল আভাটুকু আজ সন্ধ্যায় আবারো আমার ছোট ঘরটা ভরিয়ে দেবে ।
ছুটির দিনের বিভিন্ন পরিকল্পনা করতে করতেই সকালটা কেটে যায় । দেখতে দেখতে দিনটাও চলে যায় খুব দ্রুত । ছুটির দিনের এই মধুর সময়গুলো এত তাড়াতাড়ি কেন চলে যায় ! পরদিন সোমবার সকালে ঘুম ভাঙলে মনে হয়, ওহ ! সপ্তাহে পাঁচ দিন কেন ছুটির দিন হয় না !!
মন্তব্য
টরটিয়া থাকার ফলে রুটি বানানোর ঝক্কি আর পোহাতে হয়না। প্রথম দিকে পালা করে রুটিই বানাতাম। এখন ডেম্পস্টারের টরটিয়া, সাথে গরুর গোস্ত কিংবা ভেজটেবল।
আস্তে আস্তে গরম পড়ছে। আজ এখানে ৯ হবে। কাল ১১, তারপর ১৭, তারপর ১৮.. হা হা ... কী মজা। এবার একটা বার্বিকিউ মেশিন কিনতেই হবে।
প্রকৃতিপ্রেমিক, বার্বিকিউ মেশিন কিনলে এই অধমকে দাওয়াত দেবেন কিন্তু !!
মুক্ত বিহঙ্গ
যেভাবে বয়ান করলেন...
যাই, ডিনারটা সেরে আসি
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তিথীডোর, আমি তো দেখি পাঠকদের ক্ষুধা পাইয়ে দিলাম !!
মুক্ত বিহঙ্গ
প্রতি লেখার আপনার পরত খুলছে এক এক করে। জড়তা তো নেই-ই, পড়ে যেতেই ইচ্ছে হয় কেবল।
তবে পিপিদা আর তিথীর কথায় মনে পড়লো, এখনো খাওয়া হয়নি! চললুম ভাই।
মর্ম
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মর্ম সুন্দর মন্তব্যের জন্য !
আপনারও ক্ষুধা পেয়ে গেলো !!!
মুক্ত বিহঙ্গ
ভাইয়া,
এত্তো সুন্দর একটি লেখার জন্য আবারো অনেক অনেককককক শুভেচ্ছা আর অসংখ্য অভিনন্দন।
সত্যি কথা বলতে, প্রতিদিনের হাজারো ব্যাস্ততার ভিড়ে আমরা মাঝে মাঝে ছুটির আনন্দটাই ভুলে যাই-- একেই হয়তো যান্ত্রিক-জীবন বলা হয়। আপনার লেখাটা পড়ে সেই হারানো আনন্দের কিছুটা হলেও তৃপ্তি মনে-মনে অনুভব করতে পারছি। সেজন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আশা করি এরকম সুন্দর-সাবলীল-প্রাণবন্ত আরো অনেক অনেক উপহার আমরা আপনার কাছ থেকে পেয়ে যাব , ইনশাল্লাহ।
ভালো থাকবেন। ^_^
চেনা পথিক, আপনাকেও আবারো অনেক অনেককককক ধন্যবাদ
পাঠক-এর এমন সুন্দর মন্তব্য শুনলে না লিখে উপায় আছে, বলুন ?
মুক্ত বিহঙ্গ
১
গরম ভাত-আলু ভর্তা-ঘন ডাল-ঘি আমার মতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবারগুলোর একটি।
২
ডিপার্টমেন্টের গ্রাজুয়েট লাউঞ্জে হাত দিয়ে খেতে সমস্যা কী? কোন বিধিনিষেধ আছে?
৩
সাইক্লিং খুব ভালবাসি। আপনার লেখা পড়ে এখন বাইসাইকেল চালাতে ইচ্ছে হচ্ছে।
৪
লাউঞ্চ > লাউঞ্জ
লবন > লবণ
৫
লেখা ক্রমশ ভালো হচ্ছে। লিখতে থাকুন।
...
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
১। সহমত !
২। কোন বিধিনিষেধ নেই, কিন্তু সবাই চামচ/ফর্ক দিয়ে খায় তো, তাই .....
৩। আমার লেখা স্বার্থক
৪। এখন মনে হয়, বানান দু'-একটা ভুল না থাকলে তো বুনোহাঁসের বিস্তারিত মন্তব্য পাবোনা, তাই কিছু বানান না-হয় ভুল-ই থাকুক
৫। অনেক ধন্যবাদ
[লাল-সবুজ পতাকা-তে সেলুট !]
মুক্ত বিহঙ্গ
"ওহ ! সপ্তাহে পাঁচ দিন কেন ছুটির দিন হয় না !!" -
সপ্তাহে পাঁচ দিনই যদি ছুটির দিন হত, তবে তোমার হাত দিয়ে "ছুটির সকাল" নিয়ে এমন চমৎকার লেখা কি আর পাওয়া যেত????
ভাল লাগছে পড়তে, চালিয়ে যাও......
শাহ মোঃ রাজিউর রহমান,
অনেক-অনেক ধন্যবাদ আমার লেখাটা পড়বার জন্য
"তোরা যে-যা বলিস ভাই, আমার সপ্তাহে ৫ দিন ছুটি চাই !!"
মুক্ত বিহঙ্গ
-টরটিলা আসলেই বেশ উপকার করেছে। এখন অধিকাংশ সময়ই আর রান্নার ঝামেলাতে যাই না। টরটিলার উপরেই আছি বলা যায়। তবে আমাদের দেশের রুটির মজা অন্য রকম। আহ, অনেকদিন খাই না।
-বুনোহাঁসের সাথে সম্পুর্ণ একমতঃ গরম ভাত, আলু ভর্তা, ঘন ডাল আর ঘি- অসাধারণ! খুব মিস করছি এখানে।
-এবারে মনে হয় সব জায়গায়ই বসন্ত তাড়াতাড়ি আসছে। আর লেখাটা আগের চেয়েও ভাল হয়েছে।
===অনন্ত ===
অনন্ত, লেখা ভালো লেগেছে শুনে খুশি হলাম
বাংলাদেশের স্বাদ কী আর আমেরিকায় পাবে বলো !!
মুক্ত বিহঙ্গ
অতীব সুন্দর লেখা হয়ছে, আজকের ছুটির দিনটা বিশেষ কিছু মনে হচ্ছে৷
ধন্যবাদ রুমি
মুক্ত বিহঙ্গ
- লেখা পড়তে শুরু করার পর ভাবছিলাম এতো তাড়াতাড়ি তো পৃথিবীতে রবিবার সকাল (ভোর না) শুরু হওয়ার কথা না! পরে বুঝলাম, তুষার ঢাকা কোনো রবিবার সকালের কথা বলছেন। তখন আরেকটা জিনিষ বুঝলাম, জাত লেখকদের আসলে একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট আছে। তাঁরা প্রকৃতির যেকোনো মুহূর্তেই নিজের আরেকটা সেরা লেখা বের করে আনতে পারেন। যেমনটা আপনি পেরেছেন।
তুষার ঢাকা কোনো রবিবার সকালে আমাকে ওসমানী উদ্যানের কামানটার সামনে মোটা রশি দিয়ে বেঁধেও একটা লাইন বের করা যেতো না কোনোভাবেই।
কিছু জায়গায় মনে হয়েছে, আপনি আমার মতো যারা আছেন, তাঁদের হয়ে লিখে দিয়েছেন অনেক কিছুই। সামারে আমিও সাইকেল নিয়ে বের হবো ভাবছি। কী আছে জীবনে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুসর গোধূলি,
এতো সুন্দর মন্তব্য করলেন ! ধন্যবাদ জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেললাম !!
মুক্ত বিহঙ্গ
আমি এখন মলা মাছ আর আলু চচ্চড়ি রানবো, ভাত রানবো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ইসলাম, এবার তো আমার ক্ষুধা পেয়ে গেলো !!
মুক্ত বিহঙ্গ
লেখাটা অনেক স্বতস্ফুর্ত
ছুটির দিনগুলি নষ্ট হয় শুধুই একঘেয়েমিতে
------------------------------
শান্ত নদী
শান্ত নদী,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
মুক্ত বিহঙ্গ
আমার সাইকেলটা উইন্টারে তালা মেরে রেখেছিলাম বাড়ির সাম্নের পিলারে, কে/কারা রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে গেছে ওদের পশ্চাৎদেশে ফোড়া হোক।
লেখা খুবই চমৎকার লাগলো, প্রবাসী অনেকেরই একটা দিন যেন। কোথায় আছেন আপনি? আমি শুরুতে ভাত নিয়ে যেতাম, কিন্তু লাঞ্চে ভাত খেলে শরীর কেমন ভারী ভারী হয়ে আসে, তাই এখন ক্যানফুডের দ্বারস্থ হয়েছি। আর মাঝে মাঝে টরটিয়া দিয়ে সবজি রোল করে সাব/বুরিটো বানিয়ে নিয়ে যাই।
সাফি, অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়বার জন্য
আমি আছি কানাডার এডমন্টন সিটি তে ।
মুক্ত বিহঙ্গ
খিদে পেয়ে গেলো যে!!!! দারুন লিখেছেন।
______________
বিধিবদ্ধ পংকিলতা।
জীবন বাবু,তাঁর কবিতা।
তৃপ্তিদায়ী আত্মশ্লাঘা।
এবং এ রাতজাগা।
***************
সহজীয়া,
খিদে পাইয়ে দেবার জন্য দুঃখিত !!
লেখা পছন্দ হয়েছে শুনে খুউব খুশি হলাম
মুক্ত বিহঙ্গ
নতুন মন্তব্য করুন