আদিম
সারাদিন পাথরের গায়ে অনর্থক আঁকাবুকি করি। খিদে পেলে পোষা নেকড়ে কুকুরটাকে নিয়ে বনমোরগ ধরতে চলে যাই আমরা ক’জন। ভাগ্য ভাল হলে এক আধটা হরিণও জুটে যেতে পারে। আমাদের মাঝের শক্ত সমর্থ মানুষটার কাঁধে সেটাকে তুলে দিয়ে ফেরার পথ ধরি। শিশু আর বৃদ্ধরা মিলে কাঠকুটো জড়ো করে রাখে। সেখানে আগুন ধরিয়ে শিকার ঝলসে খাওয়া হয়। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে কেউ কেউ গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ি। সন্ধ্যা হলে বসবে উদ্দাম ঢাকঢোল আর ক্ষ্যাপাটে নাচের আসর। ছেলেবুড়ো সবাই নাচব। আমদের চোখেমুখে ঠিকরে পড়বে নিষ্ঠুর প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার স্বর্গীয় আনন্দ।
রাত বাড়ার সাথে সাথে চাঁদের ঝকঝকে আলোয় ছেয়ে যায় চারপাশ। কোনো এক এলোমেলো চুলের আদিম যুবক গান ধরে। হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষের জন্যে ভালবাসার গান। বিষন্ন সুরে বুকের ভেতরটা মুচড়ে যায় পাথুরে গুহার সামনে বসে থাকা হাসিখুশি মেয়েটার। অনেক যত্ন করে সে একমনে মনে হরিণের চামড়া সেলাই করছে। জামাটা তৈরি হলে এক পড়ন্ত বিকেলে এই ভাবুক যুবককে উপহার দেবে। বিস্মিত যুবকের প্রতিক্রিয়া মনের পর্দায় দেখে মনের ভুলে মেয়েটা হেসে ওঠে। ছেলেটা অপ্রস্তুত হয়ে গান থামিয়ে দেয়। বুড়ো মোড়লের ইশারায় আবার শুরু হয় গান। এবার সে শিকারের গান ধরে। পাকা শিকারীর বর্শার এক ঘায়ে নধর বনমহিষের ছানা কিভাবে কাবু হয়ে গেল তার পৌরুষদীপ্ত সুরেল বর্ণনা। সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে।
দূরে কোথাও থেকে জান্তব শব্দ ভেসে আসে। আমাদের স্নায়ু সতর্ক হয়ে যায়। বল্লম, বর্শা আর এঁটেল মাটি দিয়ে বানানো ঢ্যালাগুলো নিয়ে পাথরের চাঁইয়ের আড়ালে আশ্রয় নেই নারীপুরুষ সবাই। শিশুদের নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যায় কয়েকজন বৃদ্ধ। হরিণের চামড়াটা এক বৃদ্ধের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সেই মেয়েটা তীর-ধনুক নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে গান গাওয়া ছেলেটার পাশে। পলকের চোখাচোখিতে ছেলেটার মুখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ আরো গাঢ় হল কি? হাতের বল্লম সে আরো শক্ত করে উঁচিয়ে ধরে অজানা শত্রুকে লক্ষ্য করে।
পাশবিক শব্দটা ক্রমশ কাছে চলে আসছে। বুড়ো মোড়লের তীক্ষ্ণ শীষ কানে আসামাত্র আমরা, আদিম মানুষেরা এক ধরনের বন্য আদিমতায় ভর দিয়ে ছুটে যেতে থাকি অন্ধকারের দিকে। আমাদের কাছে রাত মানেই যুদ্ধ। আজকে রাতে আমরা সংখ্যায় এক দুই জন কমে যাব। কিন্তু কালকে ঠিকই জন্ম নেবে আরো কয়েকটি শিশু। তাদের মাঝে আমরা বেঁচে থাকব হাজার হাজার বছর ধরে। তাই আমরা ভয় পাই না। কাল রাতেও চাঁদ উঠবে। আমরা হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর জন্যে বিষন্ন সুরে গান গাইব। বেঁচে থাকা চলবেই।
--রিম সাবরিনা; ১১।১১।০৯
মন্তব্য
ভালো লেগেছে।
আচ্ছা, ট্যাগে "সাহিত্য" কেন? আমি ভেবেছিলাম সাহিত্য বিষয়ক আলাপ হবে বুঝি।
▀ ▄
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
না বুঝে সাহিত্য ট্যাগ দিয়েছি। দেয়া উচিত ছিল "গল্প"। ভালা লাগায় খুশি হলুম!
আপনি তো মিয়া একে একে সব চমক লাগা লেখা লিখছেন! খুব ভালো লাগল।
কুকুর কিন্তু নেকড়রই একটা প্রজাতি। তাই নেকড়ে কুকুর না বলে শুধু নেকড়েই বলতে পারেন। অবশ্য নেকড়ে কুকুরই ভালো শোনায়।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
জবাব দিতে দেরি হয়ে গেল। মন্তব্য ভালু পাইলাম।
খুবই খুবই ভালো লাগলো।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ আপু। ভাল থাকবেন।
অভিনব। মনে হচ্ছে আপনি আরো চম্ক দিবেন।
সাহিত্যের অনেক কলা আপনার অন্তরে।
১৬ ই ডিসেম্বর লেখা কবিতাটা যেদিন পোষ্ট করলেন আমি ভাবলাম,
আপনি বোধহয় বর্ষিয়ান লেখক নিজের যুদ্ধের স্মৃতি লিখলেন,
তাই কোন মন্তব্য করি নাই ।
পরের লেখাটায় নিলয়ের বউ-তে তিন/চারটা লাইনে আমি
রবি'ঠাকুরের লেখার মত স্বাদ পেলাম।
কিন্ত এ লেখাটা অসাধারণ । ভূপেণ হাজারিকা ।
ভূপেণ হাজারিকা ? কোন অর্থে ?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
অনেক দামী মন্তব্য করে ফেললেন। ধন্যবাদ সেজন্যে।
-রিম সাবরিনা
ব্যাপক অনুপ্রেরণা পেলাম। রবি ঠাকুরের সাথে তুলনায় হাসবো না কানবো বুঝে উঠতে পারছি না। কিন্তু খুশি হতে তো আর দ্দোষ নাই। থ্যাঙ্কস।
_________________________________________
সেরিওজা
বাঃ রিম ভাল লাগলো। আপনি কি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা পড়েন? আপঅনার লেখায় তাঁর ছায়া দেখছি যেন। আরো লিখুন।
------------------------------------------------
"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
আরো লিখবো ইনশাল্লাহ। ভাল থাকবেন।
পড়তে ভালো লাগলো
--------------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
পাঠকের ভালো লাগাতেই লেখকের আনন্দ...
চমৎকার লাগলো।
প্রিয় রিম সাবরিনা, আপনি দয়া করে সচলায়তনের নীতিমালাটি পড়ে দেখবেন।
আপনি একটি পোস্ট মডারেশন কিউতে একাধিকবার সংরক্ষণ করেছেন, যা অন্য একটি কমিউনিটি ব্লগে পূর্বপ্রকাশিত বলে সচলায়তনে আর প্রকাশ করা হয়নি। নীতিমালাটি পড়ে নিলে কিছু ব্যাপার আপনার কাছে স্পষ্ট হবে। কোনো প্রশ্ন থাকলে contact অ্যাট sachalayatan ডট কম বরাবর মেইল করতে পারেন। ধন্যবাদ।
চমৎকার প্লটে লেখা , আপনার আরেকটা লেখা বোধহয় আজ পড়েছি ...স্বাগতম।
চালিয়ে যান
_________________________________________
বোহেমিয়ান কথকতা
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
অনেক ধন্যবাদ। জী, চালিয়ে তো যাবোই...
ভাল লেগেছে - এই লেখাটি এবং 'ছায়ানীড়' নিয়েও।
তবে, মডুদের কথা খেয়াল রেখেন - বার বার পোস্ট জমা দেবার দরকার নেই, লেখা ভাল হলে আসবেই। আর, অন্যখানে লেখে থাকলে দেবেন না, তা নীতিমালায় স্পষ্ট করে লেখা আছে।
কাজেই, নিয়ম-নীতি মেনে লেখতে থাকুন। আপনার পাঠক অলরেডী তৈরী হয়ে গেছে!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
বাঃ!
নতুন মন্তব্য করুন