'এই বার মোনেমকে দেইখ্যা নিমু,' পুরান লাঠাই একখান পাইছে বকুল ভায়ের কাছ থেকে তার গরুর দুদিনের ঘাস জোগাড় করে দেওয়া বাবদ। সুতলি অনেকখানি জোগাড় হইছে-দরকার মাঠা আর সাগু তাইলে 'মাঞ্জা দিমু'- 'বাবলাও কইছে মাঞ্জা দিয়া দিব'। সমস্যা হইল ' টাকা কই পামু'।সাগু আর মাঠা কেউ দিব না এমনি এমনি। মোখলেস ভাবে, 'কেমনে জোগাড় করবো টাকা'। 'ওর নাটাইটাও সুন্দর' , কইল 'গতহাটবার চাচা কিন্না দিছে' । মোনেম এতকিছু পায় কেমনে-মোখলেসের মাথায় ঢোকে না, তয় একটাই জিনিস মাথায় ঘোরে- 'মোনেমরে এই বার হারাইতে হইব যেমনে হউক'।
আবার টাকার চিন্তায় ফিরে মোখলেস, 'কেমনে জোগাড় করমু?'।'সামনের হাঁটবারের আগে টাকা জোগাড় না করতে পারলে আরও এক সপ্তাহ পিছায় যাইব'- মোখলেসের মাথায় অংকের হিসেব খেলে। 'বাবজান কাইলকে ডিউটি থাইকা আইব'। 'তাইলে কি বাবজানের পকেট থেকে টাকা চুরি করমু। কামডা বিপদজনক -গতমাসে বাতাসা খাওয়ার জন্য বাবজানের পকেট থেকে টাকা চুরি করে বেদম মাইর খাইতে হইছে'- মনে মনে কথা কয় মোখলেস।
মোখলেস মনে জেদ উঠে, মার কাছে গিয়া তার আবদারের কথা কয়। মা তার ছেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার চুলায় আগুন ঠেলে।মোখলেস আবার কয়।' যা, পড়াশুনা কর, তোর বাপজান কাইল সক্কালবেলা আইব।' মোখলেস সন্ধ্যায় হারিকেনের আলোতে বই খোলে।
মোখলেস খেয়াল করে বাপজান তার অফিসের ড্রেসটা কোথায় রাখে। মোখলেস জানে বাপজান শার্টের ডান পকেটে অনেকগুলা কাগজের ভাজে টাকা রাখে। বাপজান গোছল করার জন্য ঘর থেকে বের হয়। মোখলেস ঘরের চৌকাঠে দাঁড়ায় দেখে- কে কি করে। আস্তে করে পকেট থেকে টাকা বের করে নিঃশব্দে বাড়ির সীমানা ছাড়ে। আলতাফ ভাইয়ের দোকান থেকে মাঠা আর সাগু কিনে বাবলার কাছে দিয়ে আসে। বিকেলে সূতা মাঞ্জা দেয়া হয়। সব যেন স্বপ্নের মত এক নিমিষেই হয়ে গেল।
আকাশে পতপত করে উড়ে মোখলেসের দো- রঙা লাল-নীল ঘুড়ি। ঘুড়িটা মোখলেস আরো উপরে তোলে। উপর থেকে ঘোৎ খায়, পেঁচিয়ে যায় মোমেনের ঘুড়ির সুতার সাথে। মোনেম-মোখলেস পরস্পরের দিকে তাকায়। সুতা ছাড়ে। সুতা ছাড়ে আর অপেক্ষায় থাকে। ঘুড়ি দুইটা গাট্টি খেতে খেতে দুরে সরে যেতে থাকে। মোখলেস চিন্তায় পড়ে আর কতক্ষণ সুতা ছাড়বে। লাটাই-এর সুতা শেষের দিকে। 'সন্ধ্যা হইতেছে, ভাই বাড়ি যামু' বলে ছোটবোন তার আস্তিন ধরে টানে। মোখলেসের কোন দিকে খেয়াল নেই, মুখে বলে 'আরেকটু দাড়া'। ছোটবোন আবার বাড়ি যাবার তাড়া দেয়। 'আরেকটু'। মোখলেসের কেন যেন মনে হয় আজ জিতে যাবে। তার ছোটবোন বিকট চিৎকার করে উঠে 'ভাই বাড়ি যামু'। ছোটবোন জবার দিকে তাকাতেই যেন রাজ্যের চিৎকার-মাতম-কান্নার ভিড় ভেঙে পড়ে তার কানে। মোখলেস কিছুই বোঝে না। শুধু হা করে জানালা ধরে তাকিয়ে থাকে খোলা উঠোনে- মা-বোন কাকে যেন জড়িয়ে ধরে পাগলের মত কাঁদছে।
স্বপ্নদ্রোহ
ব্যলকনি,৩০৫।
১০,০৩,৩১
মন্তব্য
ভালো হয়েছে।
এটা কি সচলায়তনে আপনার প্রথম লেখা?
দ্রোহী-স্বপ্নেরা বলে একজন লেখা শুরু করেছিলেন কিছুদিন আগে। আপনি সে নন তো?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
না, আসলে সচলে আমার মিথষ্ক্রিয়তার হার বিপদজনক ভাবে খারাপ
স্বপ্নদ্রোহ
চমৎকার গল্প
বিশেষ করে তার শেষ ধাক্কাটা
০২
শব্দটা ভকেট্টা না ভোকাট্টা?
লীলেনদা আমি সঠিক জানি না, তবে ছোটবেলায় ভকেট্টা বলে ঘুড়ির পেছনে দৌড় দিতাম
আসলে কি হবে :-/
স্বপ্নদ্রোহ
শিরোনাম ঠিক করে নিতে মডুদের মেইল করুন!
মন্তব্য চোখে পড়ছে অনেকদিন ধরে, এটা বোধহয় আপনার দ্বিতীয় লেখা... নাকি?
স্বপ্নাহত, স্বপ্নহারা, স্বপ্নদ্রোহ, এবং দ্রোহী স্বপ্নেরা... খাইছে!
গল্প ভাল্লাগলো
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
কেনু....ওটা কি ভুল হয়েছে :-/ কি হবে বানান টা
(:|
স্বপ্নদ্রোহ
ভকেট্টা mane ki jonap?
/----------------------------------------------------
ওইখানে আমিও আছি, যেইখানে সূর্য উদয়
প্রিয়দেশ, পাল্টে দেবো, তুমি আর আমি বোধহয়
কমরেড, তৈরি থেকো,গায়ে মাখো আলতা বরণ
আমি তুমি, আমি তুমি, এভাবেই লক্ষ চরণ।।
শব্দটা ভোকাট্টা বলেই জানতাম। গল্পে ভাষার ব্যবহার কিছুটা খাপছাড়া মনে হলো, মানে কখোনো আঞ্চলিক/গ্রাম্য কখোনো শহুরে। আরেকটু মনোযোগী হলে ফলাফল অনেক ভালো হবে (রিয়েলিটি শোয়ের জাজ টাইপের মন্তব্য হয়ে গেল, আশা করি মাইন্ড খাবেননা।)
সঠিক কোনটা হবে জানি না....
মডুদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, ভকেট্টা-কে ভোকাট্টা করা হউক[i]।
আঞ্চলিক/গ্রাম্য বাক্যগুলোকে কোটেশনের মাঝে রেখেছি। তারপরেও মনে হয় আরেকটু ভাল করা যেত - সেটা স্বীকার করছি
ফিডব্যাক দেবার জন্যে একগুচ্ছ ধইন্যা পাতা .....
স্বপ্নদ্রোহ
নতুন মন্তব্য করুন