একটা সময়ে কল্পনার জাল বুনতাম। বুনতে বুনতে সোয়েটার, মাফলার পর্যন্ত বানিয়ে ফেলতাম। এখন বোনাবুনি বন্ধ। বেশি ভবিষ্যতচিন্তা করলে বর্তমান মাইন্ড করে। ভাবে তাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। তাই আপাতত সামনের মুলা বোঝাই ট্রাকটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি। ঢাকাবাসীর মুলার চাহিদা মেটাতে সে বদ্ধ পরিকর। ট্রাকটা একটু দূরে সরে গেলে মুলাগুলোকে শালগম মনে হচ্ছে। আবার কাছে আসলে শালগম মুলা হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে এটা কি অপটিক্যাল ইল্যুশন? মজা পাচ্ছি।
রেডিওতে একঘেয়ে সুরে গান বাজছে। গায়ক প্রতিটা শব্দের উপর চঁন্দ্রবিন্দু বসিয়ে অতিরিক্ত আবেগ আনার চেষ্টা করছে। লাভ হচ্ছে না। বরং গা রি রি করছে। চ্যানেল বদলানো হল। এক লোক গম্ভীর গলায় বলছে, “a guy is disturbing me in the phone”. দূর্বল গ্র্যামার। সে যদি কারো চিঠি পড়ে শোনাচ্ছে এমন হয় তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এটা তার নিজস্ব বক্তব্য হলে বুঝতে হবে কোথাও ঘাপলা আছে। আবারো চ্যানেল ঘোরাতে বললাম। অল্পবয়সী কেউ নির্লিপ্তকন্ঠে বলছে, “আমার নাম রুহুশান। আমার নামটা খুব অদ্ভূত। আমার নাম অদ্ভূত দুই কারনে। এক, রুহুশান শব্দের কোনো মানে নেই। তাই নামটা খুব অদ্ভূত। দুই, নামটা আমার দাদা, দাদী, নানা, নানীর নামের প্রথম আদ্যক্ষর দিয়ে রাখা। আমার নামটা খুব অদ্ভূত...”। ভালো যন্ত্রনা তো। রুহুশানকে মনে মনে হুমকি দেয়া দরকার। মনের শান্তির জন্যে হলেও। “এই ঘ্যানঘ্যানে ছেলে, তুমি কি জানো যে আমার একজন ক্ষমতাবান মানুষ, আমার এক বিরাট ট্রাকভর্তি মুলা আছে? যেকোনো সময়ে ভাড়াটে লোক লাগিয়ে তোমার উপর মুলা বৃষ্টির ব্যবস্থা করতে পারি আমি। সুতরাং রেডিওতে চৌদ্দপুরুষের কাহিনী শোনানো বন্ধ কর। আর একটা কথা, তোমার নামটা অখাদ্য।”
ঝাড়ি মারতে পেরে মনটা চাঙ্গা লাগছে। এখন ঠিক মাঝরাত। রাস্তার ভিড় কিছুটা হালকা। মহাখালী ফ্লাইওভারের দুপাশের সোডিয়াম বাতিগুলোকে কেমন স্বর্গীয় লাগছে। মাকে নামিয়ে দিয়ে এসেছি এয়ারপোর্টে। দুটা বিশে ফ্লাইট। গত দশ বছরের ভেতরে এই প্রথম বিদেশ যাত্রা। একটু নড়লে যদি ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার ক্ষতি হয়, এই ভয় থেকে অনেক সুযোগ ফিরিয়ে দিয়েছে সে। তার একটা ধারণা এই আত্মত্যাগের কারনে তার সন্তানেরা একদিন অনেক নাম করবে। যদিও এরকম কোনো নমুনা এপর্যন্ত আমি বা আমার ভাই তাকে দেখাতে পারি নি। যাবার ঠিক আগ দিয়ে তাকে আমার ভাইভা পরীক্ষার কথা জানানো হয়েছে। নইলে এই কয়দিন স্যুটকেস গোছাতে গোছাতে চিন্তা করত যাব কি যাব না। আজকের পুরোটা পথ নানান উপদেশে কান ঝালাপালা। আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম, আমি অনেক পড়াশোনা করব। তার তাকানো দেখে মনে হল না খুব একটা ভরসা পাচ্ছে। মায়েরা তাদের বাচ্চাদেরকে পড়ে ফেলতে পারে। আমার অতিরিক্ত চোখ পিটপিটানি দেখে সে বুঝে নিয়েছে আমার কথা আর কাজের মাঝে কতটুকু ফারাক থাকবে। চোখের ভাষা পড়তে পারা বিরাট ক্ষমতার লক্ষণ। অনেক দিন ধরে এই ক্ষমতা আয়ত্তে আনতে চাচ্ছি। ইদানীং তার সাথে যোগ হয়েছে নিজের চোখকে দূর্বোধ্য করে ফেলার ইচ্ছা। চোখাচোখি হতেই হ্যারি পটারের লেটেস্ট বইটার মত কেউ আমাকে পড়ে ফেলছে ব্যাপারটা ভাবতে ভালো লাগে না।
সামনের কয়েকটা দিন অর্ধাহারে অনাহারে যাবে বোঝা যাচ্ছে। ডিপফ্রীজ মুরগী, চিংড়ী, তেলাপিয়ার প্রাচুর্যে টইটুম্বুর। কিন্তু সেগুলো ধুয়েকুটে মালমশলার যোগাড় দিয়ে রেধেবেড়ে খেতে হবে ভাবলে হাত পা পেটের ভেতর ঢুকে যায়। খিদে মরে যায়। নেপালের বুদ্ধবালক তো এখনও না খেয়ে ধ্যান করে কাটিয়ে দিচ্ছে কোন এক গভীর জঙ্গলে। দিন পাঁচেক বুদ্ধবালকের ভাও ধরলে ক্ষতি নাই। রক্তের লাল কনাগুলো কমে গিয়ে আমাকে কিছুটা সাদা দেখাবে। সবকিছুরই একটা উপকারী দিক আছে। নিজের যুক্তিতে মাঝে মাঝে নিজেই মুগ্ধ হই!
--রিম সাবরিনা
২৪।৯।০৯
((((((((((
মন্তব্য
তার তাকানো দেখে মনে হল না খুব একটা ভরসা পাচ্ছে। মায়েরা তাদের বাচ্চাদেরকে পড়ে ফেলতে পারে।
সহমত... লেখা ভাল লাগল...
অনেকের গান শুইনা আমার এই একই অনুভুতি হয় ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আপনার লেখার হাত খুব ভালো। আশা রাখি, আপনি একদিন অনেক বড় সাহিত্যিক হবেন
-----------------------
শান্ত নদী
"রেডিওতে একঘেয়ে সুরে গান বাজছে। গায়ক প্রতিটা শব্দের উপর চঁন্দ্রবিন্দু বসিয়ে অতিরিক্ত আবেগ আনার চেষ্টা করছে। লাভ হচ্ছে না। বরং গা রি রি করছে। "
ইদানিং এইটা একটা ভাব
যারা গায় মনে হয় তারা ভাবে তারা বেশ গায় আসলে ভুয়া
লেখা ভালো লাগছে
- আপনার লেখাগুলো ভালো, বর্ণনা ভঙ্গি আকর্ষণীয়। আগে থেকেই লিখেন টিখেন নাকি!
সচলায়তনে কেবল লিখেই যাওয়ার প্ল্যান আপনার, নাকি সচলও হতে চান আমাদের মতো! যদি দ্বিতীয়টা হয়, তাহলে একটা ছোট্ট 'উপদেশ' দেই, কিছু মনে না করলে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি শুধু লেখা দিলেই সচল হওয়া যায় না। সচল হতে গেলে 'মিথষ্ক্রিয়া' বলে একটা ব্যাপার আছে, যেটা বেশ ভালো করে অনুশীলন করতে হয়, যেটার ওপর 'সচলিকরণ কমিটি' বেশ জোর দেন। আপনার পাল্লা এইদিকে বেশ হালকা। লেখা দেয়ার পাশাপাশি যদি পাল্লার ঐ দিকেও খানিকটা নজর দেন তাহলে হয়ত খুব শীঘ্রই আপনি সচল হয়ে যেতে পারেন।
আর যদি মনে করেন, মিথষ্ক্রিয়া টিথষ্ক্রিয়া বাদ, কেবল লেখাই দিয়ে যাবেন, এখন যেমন দিচ্ছেন ওভাবে। তাইলে এই মন্তব্য ইগনোর করেন। কী আছে জীবনে! ইয়া হাবিবি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
রাস্তায়...ঘুরে ফিরে সস্তায়...বকাবে...ঠকাবে...শুধু দিয়ে চা খাবে...ঘুর ঘুর ফুর ফুর...নাকে হাওয়া সুর সুর...
পড়ে মজা প্লাম!!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
হা হা..খুব মজা করে লিখেনতো আপনি।
আরও চাই।
সচল হতে আগ্রহী কিন্তু সময়ের অভাবে আপনাদের মন্তব্যের উত্তর দেয়া হয়ে ওঠে না। এমন না যে আমি ভীষণ ব্যস্ত। আলসেমিও কিছুটা দায়ী। তবে ধূসর গোধূলির পরামর্শ গুরুত্বের সাথে নিলাম। আমি কিন্তু সবার মন্তব্যই পড়ি আর মজা পেয়ে হাসি।
হ্যাঁ, লেখালেখি বদভ্যাস অনেক আগে থেকেই। একেবারে ক্লাস সেভেন এইট থেকে, যা মনে আসে ডাইরীতে লিখে রাখতাম। কখনো দিনপঞ্জী, কখনো কবিতা। ইদানীং লেখার ভূত আরো পেয়ে বসেছে। ফলস্বরূপ এক আধটা কবিতা পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে..এর বেশি কিছু না।
আমিও একজন লেখক, তেলাপোকাও এটা পক্ষী! আমার লেখা যে আপনারা পড়েন এতেই আমি মোটামুটি ধন্য!
সবাই ভাল থাকবেন।
রিম সাবরিনা
লেখাটা চমৎকার। কেমন তরতর করে এগিয়ে গেছে, খুব ঝরঝরে।
চালিয়ে যান সাবরিনা।
আর এই তো সুযোগ! বিকালে তেলাপিয়া ভাজা উইথ টী! খুব করকরে করে ভাজবেন! রাত্রে চিকেন চমৎকারা! আবার চিংড়ির রসভাজা! কোনো ভয়টয় পাবেন না, মহানন্দে রাঁধুন, খান ও খাওয়ান।
রান্নার মাঝখানে সেলফোন বেজে উঠলে ধরবেন না, কেবল গান গাইবেন, " কে না বাঁশি বায়ে বড়াই কালিনি নই কূলে/ কে না বাঁশি বায়ে বড়াই এ গোঠ গোকূলে/ আকুল শরীর মোর বেয়াকুল মন/ বাঁশির শবদে মোর আউলাইলো রান্ধন।"
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
"..চোখাচোখি হতেই হ্যারী পটারের লেটেস্ট বইয়ের মতো কেউ আমাকে পড়ে ফেলবে ভাবতে ভালো লাগেনা.."
পুরো ভালোর মাঝে এই ভালোটুকু মনে আলাদা হয়ে বাজলো।
লেখালেখি চলুক অবিরাম।
মর্ম
বাঃ, দারুণ হচ্ছে। লেখা চলুক আর পর্বগুলো আরেকটু বড়ো হলে আরো খুশি হই।
আচ্ছা পরবর্তীতে আরেকটু বড় লেখা দেয়ার চেষ্টা থাকবে। অলস মানুষ তো, অল্প কথায় সব বলে ফেলতে চাই আর কি...
--রিম সাবরিনা
নতুন মন্তব্য করুন