মুক্ত বিহঙ্গ
৪র্থ পর্বঃ
যাই হোক, ক্লাসমেট বলতে শুধু বুঝি চাইনিজ। এদের সাথেই বেশিরভাগ সময় কাটে। শুধু ক্লাসে নয়, রিসার্চ ল্যাবে-ও চাইনিজ ল্যাব-মেট। ডিপার্টমেন্টের ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের মধ্যেও চাইনিজ প্রফেসর! আমাদের গ্রাজুয়েট অফিসের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে তারা। শেষ-মেষ ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম, “আমার স্বপ্ন ছিল কানাডা আসবার; কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে আমি চিনদেশে চলে এসেছি!!”
গ্রাজুয়েট লাউঞ্চে দুপুরের লাঞ্চ করতে গেলে দেখা যায় তারা বিশাল একটা গ্রুপ একসাথে গল্প করতে করতে লাঞ্চ করছে। আবার, ল্যাব-এ তারা একসাথে মিলে নিজেদের ভাষায় (বাকিদের কাছে সম্পূর্ণ দূর্বোধ্য) কথা বলছে। একদিন তো ল্যাব এসিস্ট্যান্ট বলেই বসলো, “অনলি ইংলিশ ইন দিস ল্যাব; নো আদার ল্যাংগুয়েজ প্লীজ!”
শুধু তাই নয়, ক্যাম্পাসে টিম হর্টন্স অথবা স্টার বাকস এ কফি খেতে যাই, সেখানে কফি সার্ভ করে চাইনিজ। সাবওয়ে বা যেকোন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে যাই, সেখানেও খাবার পরিবেশন করে তারা। সুপারস্টোরে সাপ্তাহিক বাজার করতে যাই, বেশিরভাগ সেলস ম্যান/ওম্যান সেই দেশের। [আমি অবশ্য বড় কোন কর্পোরেট অফিস অথবা কোন ইন্ডাস্ট্রি তে যাইনি, তাই জানিনা সেখানে কী অবস্থা।]
আমি বলছি না যে চাইনিজরা কানাডার এই এডমন্টন সিটিতে থাকতে পারবে না; কিন্তু যেই দেশে এসেছি, সেই দেশের মানুষ না দেখলে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। পরে অবশ্য আন্ডারগ্রাজুয়েট ক্লাসের টি এ হিসেবে দেখেছি, আন্ডারগ্রাজুয়েট ক্লাসের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। সেখানে বেশির ভাগ-ই নেটিভ কানাডিয়ান। হাতে গোনা কয়েকজন অন্যান্য দেশের। আর চাইনিজ থাকলেও হয়তো জন্মগতভাবে কানাডিয়ান; অর্থ্যাৎ বাবা-মা চাইনিজ কিন্তু কানাডায় ইমিগ্র্যান্ট। আমার ধারণা, বেশিরভাগ কানাডিয়ান উচ্চশিক্ষায় উৎসাহী নয়, ব্যাচেলর-এর গন্ডি পেরোলেই একটা ভালো চাকরি নিয়ে নতুন জীবন শুরু করে। [এটা সম্পূর্ণই আমার নিজস্ব অভিমত এবং গত দেড় বছরের জীবনে দেখা] আর অন্যদিকে আমরা যারা বাইরে থেকে কানাডায় যাই, তাদের মূল উদ্দেশ্যই থাকে উচ্চশিক্ষা। তাই হয়তো গ্রাজুয়েট লেভেলে এতো ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট। আর আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট কম হবার কারণ হয়তো অত্যধিক টিউশন ফিস, যেটা বহন করা অনেকের জন্যই কষ্টকর। আন্ডারগ্রাজুয়েটে গ্রাজুয়েটদের মত ফান্ডিং/স্কলারশিপ/টি এ-ইত্যাদি অর্থনৈতিক সুবিধাজনক ব্যবস্থা নেই; যদিও কিছু কিছু স্কলারশিপ আছে শুনেছি।
সে যাই হোক; আমি জীবনে প্রথম একটা নতুন দেশে এসেছি। আমার কাছে চাইনিজ যা, কানাডিয়ান-ও তাই। আমি ক্লাসে সবার সাথেই সমান ভাবে মিশি; গ্রাজুয়েট অফিসেও তাই। ক্লাসমেটদের সাথে গ্রুপে ল্যাব রিপোর্ট বা এসাইনমেন্ট এর কাজ করি, ফিল্ড ট্রিপে যাই। তাদের সাথে ছবি তুলে ফেইসবুকে আপলোড করি। সেই ছবিগুলোর বেশিরভাগ অংশ জুড়ে থাকে চাইনিজ মেয়েরা (স্বাভাবিকভাবেই)। সেটা নিয়ে আবার বাংলাদেশীদের কাছ থেকে অনেক ধরনের কথা শুনতে হয়! সবার ধারণা আমি চাইনিজ মেয়েদের সাথে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াই!! বড়ই অস্বস্তিকর মন্তব্য!!
কানাডা আসবার পর থেকেই বাংলাদেশীদের কাছে চাইনিজদের অনেক দূর্নামের কথা শুনেছিলাম; সেগুলো বলতে চাচ্ছিনা। নিজেদের দোষ নিয়েই বাঁচিনা; অন্যেরটা বলে কী করবো। তবে তাদের সাথে থেকে আমার কিছু বিচিত্র (হয়তো স্বাভাবিক, কিন্তু আমার কাছে বিচিত্র) অভিজ্ঞতার কথা বলি।
১ম ঘটনাঃ (আমার চাইনিজ ল্যাব-মেট [পুরুষ]-এর সাথে আমার কথোপকথন)
আমিঃ কী ব্যাপার ! এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে, তুমি নতুন এক্সপেরিমেন্ট শুরু করছো!! বাসায় কখন যাবে?
চাইনিজ ল্যাব-মেটঃ আজ রাতে বাসায় যাবোনা। ল্যাব-এ থাকবো।
আমিঃ এখন বাসায় গিয়ে রাতে ঘুমাও। এই এক্সপেরিমেন্ট তো তুমি কাল সকালেও করতে পারো!
চাইনিজ ল্যাব-মেটঃ (অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়, যেন অন্যায় কিছু বলেছি!)
২য় ঘটনাঃ (আমার এক চাইনিজ ক্লাসমেট [মেয়ে])
আমিঃ তুমি এই সন্ধ্যাবেলা কলা আর বিস্কুট খাচ্ছো কেন? একটু পরেই তো ডিনার এর সময় হবে।
চাইনিজ ক্লাসমেটঃ এটাই আমার ডিনার।
আমিঃ এই একটা কলা আর একটা বিস্কুট দিয়ে তোমার ডিনার হয়ে গেলো? তা-ও আবার সন্ধ্যাবেলা! একটু পর তোমার ক্ষুধা লাগবে না?
চাইনিজ ক্লাসমেটঃ লাগবে। কিন্তু বেশি খেলে আমি মোটা হয়ে যাবো।
[এইখানে বলে রাখি, মেয়েটি সম্পূর্ণ স্লিম। এর চাইতে বেশি স্লিম হলে খাঁটি বাংলা ভাষায় তাকে ‘শরীরে কোন মাংস নাই, শুধু হাড্ডি’ বলা হবে!]
৩য় ঘটনাঃ (এক নতুন চাইনিজ স্টুডেন্ট [মেয়ে])
আমিঃ তুমি তো দেখি লাইব্রেরির সব বই তুলে টেবিল ভরিয়ে ফেলেছো! তোমার তো এখনো ক্লাস-ই শুরু হয়নি!
নতুন চাইনিজ স্টুডেন্টঃ হ্যাঁ। ক্লাস শুরু হবার আগেই কিছু পড়াশুনা করে রাখবো। তাই বইগুলো এনেছি।
আমিঃ তুমি এই উইক-এন্ডে কী করবে?
নতুন চাইনিজ স্টুডেন্টঃ ডিপার্টমেন্টে আসবো। পড়তে হবে।
আমিঃ তুমি নতুন একটা দেশের নতুন শহরে এসেছো, ক্লাস শুরু হবার আগে উইক-এন্ডে সেই শহর ঘুরে দেখবে না?
নতুন চাইনিজ স্টুডেন্টঃ (অবাক! ভাব এমন- ‘এই ছেলে বলে কী!!’)
আজকের লেখাটা শেষ করি কিছুদিন আগে আমার নিজের একটা ফেইসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে (আমি অবশ্য স্ট্যাটাস টা সম্পূর্ণ বাংলায় লিখেছিলাম)- “কানাডিয়ানরা উইকডে-তে কাজ করে, আর উইক-এন্ডে মজা করে। চাইনিজরা উইকডে-তে কাজ করে, আবার উইক-এন্ডে-ও কাজ করে। আর বাংলাদেশীরা (আমার মত) উইকডে-তে মজা করে, আবার উইক-এন্ডে-ও মজা করে!!!”
[আবারো বলছি, আমি কোন জাতি বা দেশ নিয়ে সমালোচনা বা মন্তব্য করবার উদ্দেশ্যে ঘটনা গুলো লিখিনি। আমি শুধু আমার নিজের অভিজ্ঞতাটাকে নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছি। দয়া করে কেউ ভুল বুঝবেন না।]
এডমন্টন সিটি
এপ্রিল ১০, ২০১০
রাত দুইটা।
এক প্রবাসী বাংলাদেশীর দিনলিপি [১ম পর্ব]
এক প্রবাসী বাংলাদেশীর দিনলিপি [২য় পর্ব]
এক প্রবাসী বাংলাদেশীর দিনলিপি [৩য় পর্ব]
মন্তব্য
ববি, তোমার ঘটনাগুলোতে চাইনিজদের বেশ প্রসংশাই হলো! এমন পরিশ্রম করার জন্যই তো উচ্চশিক্ষা। অনেক শ্রদ্ধা করি আমি এই জাতিকে।
বাসুয়ায় তোমার কর্মকাণ্ডের কথাও লিখো একদিন।
ধ্রুব বর্ণন,
কারো নিন্দা করতে ইচ্ছা করেনা
[ইয়ে ....... মানে ........ সচলায়তন-এ আমাকে নিক নামে ডাকলে ভালো হত না!]
মুক্ত বিহঙ্গ
বটেই, মুক্ত বিহঙ্গ ভাই।
ভাইয়া,
এবারের পর্বটা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাওয়ার উপক্রম আমার এখন...
“আমার স্বপ্ন ছিল কানাডা আসবার; কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে আমি চিনদেশে চলে এসেছি!!” --- এটা দিয়ে হাসির সূত্রপাত।
৩য় ঘটনার- "‘এই ছেলে বলে কী!!’" পড়ে হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়তে যাচ্ছিলাম।
আগের লেখাগুলর তুলনায় এটা সবচেয়ে মজার আর হাসির হয়েছে। দিনলিপি মানেই তো কেবল একঘেয়েমি নয়, বরং তাতে কিছু না কিছু ব্যাতিক্রম অভিজ্ঞতা থাকে--- আপনার লেখায় এটা এখন খুব সুন্দভাবে ফুটে উঠছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া এত্তো সুন্দর একটা উপহারের জন্য।
আশা করি ভালো আছেন।
হ ভাই, আমি হাহাহেফে। অনেক অনেক অনেক দিন পর এতো মজার লেখা পড়লাম।
গুরু, আমিও!
অফ টপিকঃ আপনার হাহাহেফে আর হাহাহেদি এর কি একই অর্থ?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
হ
চেনা পথিক,
খুব খুশি হলাম ভালো লেগেছে শুনে
এমন সুন্দর মন্তব্য শুনলে ভালো না থেকে উপায় আছে ?
মুক্ত বিহঙ্গ
- চাইনিজ মেয়েদের কিন্তু স্কিন খুব ভালো। একদম হলদেটে। সামার আসলে দেইখেন!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
স্কিন বলতে কি বুঝাইলেন? আমি তো ঢ্যাঙ্গা ঠ্যাং ছাড়া আর কিছু দেখতে পাই না
চিক উইথ লং লেগস-এর আক্ষরিক ছবি সংযোজিত
গুরু, খাসা কইছেন, আর ১০ মাইল দূর থিকাও আমি চাইনিজ চিনতে পারি এদের চুল দেইখা, এদের চুলের কাটিং শুধু এদের মাঝেই দেখা যায়। আসলে হয়ত কাটিং এর 'অভাব' এর জন্যে ব্যাপারটা ঘটে থাকে, সূচের অগ্রভাগের সাথে ব্যাপক মিল।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
এই পর্বটা ভাল হয়েছে! পরবর্তী পর্বগুলোও যেন এধরনের হয়, সেই প্রত্যাশা করছি!
চাইনিজদের প্রতি আমার বেশ ভালই শ্রদ্ধা আছে! এরা খাটতেও পারে রে বাবা! আমি রিসেন্টলি ইউকে থেকে নরওয়েতে চলে এসেছি, যার প্রধান কারনগুলার একটা হচ্ছে, আমাকে যেন চাকরির বাজারে চাইনিজদের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করতে না হয়! এদেরকে টেক্কা দেয়ার হিম্মত আমার নাই!
========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
ধন্যবাদ কাকুল কায়েশ
মুক্ত বিহঙ্গ
কে জানি ২ বুট দিয়া গেলেন, তার তেব্র পেতিবাদ জানাই
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
লেখা ভালো গড়াচ্ছে।
ব্র্যাকেটের ব্যবহার চোখে লাগলো একটু, এড়ানো যেতো বোধ হয়। কেনো জানি মনে হচ্ছিলো পদে পদে কৈফিয়ত দিচ্ছেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ধন্যবাদ মর্ম
মুক্ত বিহঙ্গ
খুব মজা লাগল পড়তে! কথোপকথনগুলো অসাধারণ!
আমি যেখানে ছিলাম সেখানেও এমন।স্থানীয়রা বেশিদূর পড়েনা।
দুনিয়াটা চায়নাটাউন হয়ে যাচ্ছে।আমরাও যদি এমন কিছু করতে পারতাম!
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
ধন্যবাদ বিবাগিনী
মুক্ত বিহঙ্গ
এক তারা দিলাম। ঋণাত্মক কিছু থাকলে তাই দিতাম। এবং দিলাম এই মাত্র। আগেও কেউ দিয়ে থাকবেন, তার কথা তিনিই বলুন। পছন্দের লেখায় কম তারা দেখলেই বিরক্ত হওয়ার কারণটা জানানোর সময় এসেছে বোধ হয়। আমার পছন্দের জিনিস সবার পছন্দ হবেই এ কথাটা ভাবা খুব জরুরী নয়।
এবার লেখকের সাথে আলাপ। লেখার শৈলী নিয়ে বলতে চাই না। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা কিছু বলি। বারবার "আমি কোন জাতি বা দেশ নিয়ে সমালোচনা বা মন্তব্য করছি না; সেই রকম কোন উদ্দেশ্য আমার নেই" বললেই ফুরিয়ে যায় না (যদিও ঠিক কী রকম উদ্দেশ্য নিয়ে লিখছেন জানার কৌতূহল রইলো)। এই ফোরামে চিনদেশীয় পাঠক আসার সম্ভাবনাও খুব কম, স্রেফ সেজন্যই তাঁদের প্রতি অসংবেদনশীল হওয়া যায় কী? "খোট্টাগুলো কেমন খাটতে পারে দেখেছিস?" গল্পের শুরুটা এভাবেই হয়।
"আমি বলছি না যে চাইনিজরা কানাডার এই এডমন্টন সিটিতে থাকতে পারবে না": এই বাক্যটা কেমন জানেন? জন ম্যাকেইনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো ওবামা মুসলমান কি না, তিনি শুধু বলেছিলেন, না। কিন্তু তাতেই ফুরিয়ে যায় নি। ওঁর বলা উচিত ছিলো, না তিনি মুসলমান নন, এবং হলেও কিছু এসে যেতো না (এই উদাহরণটি সম্প্রতি সচলে এসেছে মনে পড়ছে)। আপনি কী ভাবে ঐ বাক্যটি সঠিক উপায়ে লিখতে পারতেন আমার জানা নেই, তবে এইটুকু জানি, এডমন্টন সিটিতে কারা থাকতে পারবে সেই প্রশ্ন যেমন আপনাকে করা হয় নি, তেমনি উত্তর দেওয়ার অধিকারও আপনার নেই। কাজেই অনধিকার চর্চা না করে চিনদেশীয়দের উপর বিশাল উপকার কিছু করা হলো এমন নয়।
"বেশিরভাগ কানাডিয়ান উচ্চশিক্ষায় উৎসাহী নয়" এই বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত অভিমতের সমর্থনে কী তথ্য আছে জানার আগ্রহ রইল। "বৈশাখের তোলপাড় করা কালবৈশাখি ঝড়, শ্রাবণের বৃষ্টি, শরতের আকাশে সাদা মেঘ, হেমন্তের পাকা ধানের মাঠ, শীতের সকালের শিশির, আর ভালো লাগে বসন্তের ফোটা ফুল, সাথে পাখির কলরব" ইত্যাদি নিয়ে ভালোলাগা ব্যক্ত করা এক জিনিস, আর একটি দেশের শিক্ষাদীক্ষার ট্রেন্ড নিয়ে মন্তব্য করা আরেক। একটু খাটনি আর পড়াশুনো যে করতে হবে এই সব মন্তব্য করতে গেলে?
আমাদের সমাজে আধা-চেনা লোকেও গায়ে পড়ে উপদেশ দিয়ে যায়। পাশ্চাত্য সভ্যতায় সেইটা স্বাভাবিক নয়, কাজেই ল্যাবমেট/ক্লাসমেট এসে গায়ে পড়ে কখন আমি কাজ করবো বা কী ডিনার খাবো সে নিয়ে কিছু বলতে এলে অনেকেই স্রেফ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছেড়ে দিতো না। চিনারা হয়তো প্রাচ্যের বলেই অল্পের উপর দিয়ে গেছে।
শেষে যেমন লিখেছেন, ভুল বোঝার প্রশ্ন নেই। তবে পাবলিক প্লাটফর্মে লেখার কিছু ইম্প্লিসিট শর্তাবলী থাকে। সেই কারণেই এতো কথা। তবে লেখায় সেনসিটিভিটির অভাবটা ইচ্ছাকৃত বলে মনে হয় নি, বরং দৃষ্টিভঙ্গীর সমস্যাই সম্ভবত। সে কারণেই এই লেখাকে আপত্তিকর অভিযুক্ত করার প্রয়োজন মনে হচ্ছে না। সচলের পরিবেশকে বন্ধুত্বপূর্ণ রাখার জন্যই এই অবন্ধুসুলভ ব্যবহার। লেখক সমস্যাটা বুঝবেন আশা রাখি।
পাঠুদা, একমত। মনে হচ্ছে লেখকদাদা প্রতি লেখাতেই তার কিছু ভ্রান্ত ধারনার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। আগের লেখার যেমন উনার সাথে প্রকৃতির পরিচয়। উইকেন্ডে কাজ করার ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, সেটা উনার কাছে অবাক লাগল দেখে বেশ অবাক হলাম।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সাইফ তাহসিন,
আমার ত্রুটি ধরিয়ে দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আমি অত্যন্ত দুঃখিত।
মুক্ত বিহঙ্গ
সহমত আমিও। এই পোস্ট গতকালই পড়েছি এবং বিরক্ত হয়েছি। লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনধিকার চর্চার প্রবণতা দেখে লেখনী বা বানান বিষয়ে মন্তব্য করতে ইচ্ছে হয় নি। কর্মিষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমি। তাঁদের ব্যাপারে লঘু মন্তব্য করে নিজেদের আলস্য আড়াল করার প্রচেষ্টা দৃষ্টিকটু ঠেকে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
বুনোহাঁস,
আমি খুব দুঃখিত।
আশা করি আর এমন হবেনা ভবিষ্যতে।
মুক্ত বিহঙ্গ
নেগেটিভ নিয়া আইজকা একটা কমেন্ট করসিলাম।
মূলত পাঠক,
জ্বি, আমি সমস্যাটা বুঝতে পেরেছি।
আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আমি সত্যিই খুব দুঃখিত।
মুক্ত বিহঙ্গ
কে কখন বাসায় যাবে, কে রাতে কি খাবে, এই টাইপের "স্মৃতিচারণ" পড়তে ভাল লাগল না।
আমি কি খাব, কখন বাসায় যাব এইসব প্রশ্ন অযাচিতভাবে আমাকে কেউ করলে আমিও যথে্ষ্ট বিরক্ত হই, তার জন্য চীনা হতে হয়নি।
আনন্দী কল্যাণ,
আমি দুঃখিত।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
মুক্ত বিহঙ্গ
আপনি যে মন্তব্যে রেগে যান নি সেটা দেখে ভালো লাগলো। আমার মন্তব্যে রূঢ়তার জন্য দুঃখিত।
সংবেদনশীল হওয়া অনেকটা অভ্যেসের ব্যাপার, আমাদের সমাজে অনেক ভালো ভালো জিনিস শেখানো হলেও এই বিষয়টা সব সময় শেখানো হয়ে ওঠে না, নানা কারণে। বিশ্বায়নের যুগে সেই ভাবধারা ছেড়ে এগোতেই হবে আমাদের। চলুন আগামীতে কেউ এই জাতীয় ভুল করে ফেললে আমরা সবাই মিলেই না হয় শুধরে দেবো।
ভালো থাকুন।
মূলত পাঠক,
নিজে ভুল করে আবার রেগে যাবো কেন? তাহলে তো নতুন আরেকটা ভুল করা হল
ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার লেখায় - "লেখা ভালো লেগেছে!" - এই ধরণের মন্তব্যের চাইতে ".............. এটা-এটা করলে লেখাটা ভালো হত" অথবা "আপনার লেখার ........... এই অংশটা ................... এই কারণে ভালো লাগেনি" শুনতে বেশি পছন্দ করি।
কারণ, "লেখা ভালো লেগেছে!" - টাইপের মন্তব্য শুনলে ভবিষ্যতে শুধু 'লেখা'র জন্য উৎসাহ পাওয়া যায়, 'ভালো লেখা'র জন্য উৎসাহ পাওয়া যায় না।
আর অন্যদিকে ".............. এটা-এটা করলে লেখাটা ভালো হত" অথবা "আপনার লেখার ........... এই অংশটা ................... এই কারণে ভালো লাগেনি"-এই ধরণের মন্তব্য শুনলে নিজের ভুল/সীমাবদ্ধতা বুঝতে সুবিধা হয় এবং ভবিষ্যতে সেই ভুল আবার করা থেকেও বিরত থাকা যায়।
"আমার মন্তব্যে রূঢ়তার জন্য দুঃখিত।" - এই কথা বলবার কোন দরকার ছিলনা, কারণ আমি আপনার খোলামেলা মন্তব্য শুনে কষ্ট পাইনি। কষ্ট যেটুকু পেয়েছি সেটা নিজের লেখার এবং চিন্তার সীমাবদ্ধতার জন্য। এবং আমার আশা এবং বিশ্বাস, সচলায়তন-এর বিভিন্ন মন্তব্যে আমার লেখা এবং চিন্তা-উভয়ের-ই বিকাশ ঘটবে। তবুও আপনার দুঃখ প্রকাশ করবার জন্য অনেক-অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ভবিষ্যতে আমার লেখাগুলো পড়ে মন্তব্য করলে খুব খুশি হব।
মুক্ত বিহঙ্গ
নতুন মন্তব্য করুন