সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ চলে গেলে আস্তানা থেকে বের হয় ইনু। অন্ধকার জাঁকিয়ে বসেছে পুরো এলাকাটাতে। বন্ধুদের অনেকেই না মানলেও ইনু আজো পুরোন নিয়ম মেনে বেরোয় আঁধার নামার পরই। আবশ্য এখন জীবন আগের থেকে অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। আস্তানা থেকে বেরিয়ে অনেকেই আর ফিরে আসেনা। খানিক্ষণ অপেক্ষা করে স্বাভাবিক নির্লিপ্ততায় ফিরে যায় সবাই যে যার কাজে। এখানে অনুভূতির তীব্রতা কাউকে তেমন কষ্ট দেয়না।
জীবনের প্রয়োজন বড় অদ্ভুত। তাদের জন্য প্রয়োজনটা আরো খাপছাড়া; অস্বস্তিকর।
প্রয়োজনটা রক্তের। উষ্ণ তাজা রক্তের।
গত দুদিনের উপোসে সারা শরীরে কাজ করছে এক বিচিত্র অবসাদ। চোখ দুটোও বসে গেছে। সকাল থেকে মেজাজও হয়ে আছে তিরিক্ষে। কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে সামনের সাদা বাড়িটার একতালায় যাবার সিদ্ধান্ত নিলো সে।
বহুলচর্চিত কসরতে দরজার সামান্য ফাঁক দিয়ে বাসাটিতে ঢুকে পড়ে সে। আঁধারকে সম্বল করে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে অন্ধকার কোণগুলো দিয়ে। সাবধানে!
দ্বিতীয় শোবার ঘরটার সামনে চোখ আটকে যায় ইনুর। আধো অন্ধকারে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকা কিশোরটিকে দেখে চকচক করে ওঠে তার চোখ। সে যেন মানসচোখে দেখতে পায় তার ধমণীতে ছুটে চলা উষ্ণ রক্তের স্রোত। হৃদপিন্ডের শব্দ যেন আবছাভাবে কানে আসে তার!
লক্ষের দিকে এগিয়ে যায় ইনু। কাছে আসতেই বিড়বিড় করে উচ্চারণ করতে থাকে সহস্র বছরের পুরোন মন্ত্রগুলো। যা তাকে দেবে শক্তি, উদ্যম আর প্রেরণা। যা নিশ্চিত করবে সুরক্ষা আর বিপদ থেকে মুক্তি।
বিছানার পাশে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ায় সে। পাশের টেবিলে খোলা বইয়ের পাতা জানালা দিয়ে আসা সামান্য বাতাসে অল্প অল্প কাঁপছে। কিশোরের আধোঘুম নিষ্পাপ চেহারা তাকে বিচলিত করে না। প্রয়োজনের বাস্তবতা আবেগের কাছ থেকে তাকে ছুটি নিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই। মন্ত্র তাকে স্থিতি দেয়। সবকিছু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সে এগিয়ে যায় চুড়ান্ত পরিনতির দিকে।
নিষ্ঠুর পৃথিবীর আরো একটি নিষ্ঠুরতা ভরা রাতে...
|| ||
হুট করেই তন্দ্রা কেটে যায় অয়নের। আর্তস্বরে সে উচ্চারণ করে অমোঘ বাক্যটি-
‘মা এরাসোলটা দিয়ে যাও তো!’
---- মনজুর এলাহী ----
মন্তব্য
ইনুর পরিচয় কিন্তু একদম গোড়া থেকেই ধরতে পেরেছিলাম।
পুরোনো একটা চমৎকার গল্পের কথা মনে পড়ে গেলো। খুঁজে দেখি ওটা আপনারই লেখা।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
গোড়া থেকে ধরে ফেলেছিলেন? তাহলেতো এখন থেকে আরো সাবধান হতে হবে!
পড়ার জন্য, কমেন্টানোর জন্য, মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ।
---- মনজুর এলাহী ----
ইনুকে প্রথমেই চিনিনি। কিছুদিন আগে দেখা উইল স্মিথের দি লিজেন্ডের কথা মনে হচ্ছিলো।
শেষ চমকটা দুর্দান্ত।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
উইল স্মিথের 'আই এ্যাম লিজেন্ডের' কথা বলছেন কী? আমার খুব পছন্দের একটা মুভি।
---- মনজুর এলাহী ----
হ্যাঁ, আই এম লিজেন্ড।
নামটা ভুলে গিয়েছিলাম দেখা যাচ্ছে!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
প্রথম প্যারা পড়ে মনে করেছিলাম ইনু হয়তো চোর
দ্বিতীয় প্যারা পড়ে ধারণা হল, ইনু মশা। শেষে-ও দেখি আসলেই তাই
বিষয়বস্তু চমকপ্রদ
বি.দ্র. এটা টাইপো মনে হয় - "আবশ্য এখন জীবন আগের থেকে অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।" - আবশ্য না হয়ে অবশ্য হবে সম্ভবতঃ
- মুক্ত বিহঙ্গ
ইশশশশ, স্যরি বস, অনিচ্ছাকৃত একটা টাইপো। চোখেই পড়েনি আমার। মন দিয়ে পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
কারো মাথায় ভ্যাম্প্যায়ারদের কথা আসলো না কেন বুঝলাম না!
---- মনজুর এলাহী ----
হয়তো ইনু নামটা ভ্যাম্পায়ারোচিত না।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
তোর চিন্তার প্রশংসা করি... সমস্যাটা অন্য জায়গায়।
মশা'রে "রক্তচোষা" বলে ভ্যাম্পায়ারের আবহ আনার কায়দাটা পুরান হয়ে গেসে, আমি নিজেই এর উপরে খান তিনেক গল্প পড়সি।
...কোন গল্পই আসলে মৌলিক না- তুই সেটাকে মৌলিক ভাবে দেখাতে পারলেই সেটা মৌলিক। এই গল্পে
কিংবা
এই জায়গাগুলোতে মৌলিকতা আনার চেষ্টাটা কেটে গেসে। গল্পের শেষে কী হবে, পাঠক বুঝে গেসে।
তুই এক কাজ কর, এই সাইজের চমক দেয়া ফরম্যাটের ছোটগল্প সবচে দারুণ লিক্সিলেন বনফুল,(আমার খুবই প্রিয় লেখক- আমি সবাইরেই তাঁর কথা বলি।) তুই তাঁর গল্পগুলো পড়ে দেখতে পারিস।
... এতো জ্ঞান দিলেম দেখে কিছু মনে করিস্ নে আবার- পরের গল্প আরো ভালো হবে আশা করি।
_________________________________________
সেরিওজা
ধুর ব্যাটা, মনে করার কী আছে?! আমরা আমরাই তো। আর আমি তো সবে লেখা শুরু করলাম। এখনো অনেক কিছু শেখার বাকী।
বনফুল আমারও খুব প্রিয় লেখক। ছোটগল্পগুলোর পাশাপাশি তাঁর উপন্যাসগুলোও আমার কাছে ভালো লাগে। ওঁর 'স্থাবর' বইটা পড়ে দেখতে পারিস। উপন্যাস গোত্রে এক অনন্য সংযোজন বলা যায়।
(অফটপিকঃ তুই যা লেখা শুরু করেছিস... মনে হয় দুবছর পর আমাকে 'জীবনের লক্ষ্য' টাইপ কোন রচনা লিখতে দিলে আমি নির্দ্বিধায় লিখে দেব... 'বড় হয়ে আমি সুহান রিজওয়ানের মত গল্প লিখতে চাই।' )
---- মনজুর এলাহী ----
- বাহ! বেশ
আমি অবশ্য প্রথমদিকে ইনুকে ইঁদুর মনে করেছিলাম।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমিই বোধ হয় একমাত্র ভ্যাম্পায়ার ভেবেছিলাম!
আমিও ভ্যাম্পু ভাবছিলাম ।
( অনেকেই আছে , গল্পে শুরু থেকেই ভিলেন/অপরাধী/টুইস্ট খোঁজার চেষ্টা করে, আমার কাছে মনে হয় এতে মূল মজা আস্বাদনে সমস্যা হয় । তবে মশা নিয়ে আমিও এর আগে আরেকটা লেখা পড়ছিলাম । )
_________________________________________
ৎ
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
ম্যঁ ভি ভ্যাম্পসসসস
নতুন মন্তব্য করুন