একজন মেহদী হাসান ও তার সিম্ফনী - অভ্র

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২১/০৪/২০১০ - ১২:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অভ্র প্রথম রিলিজ হয় ২৬মার্চ ২০০৩ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে। তখন এর সাথে কিবোর্ড লে-আউট হিসেবে যুক্ত ছিল ইউনিবিজয়। তখন অভ্র এর সাথে অভ্র এর মেইন ফিচার ফোনেটিক টাইপিং যুক্ত ছিল না । পরবর্তী কালে অভ্র এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ এই ফোনেটিক কিবোর্ড লে-আউট । অভ্র এর প্রথম রিলিজ কিছুটা ঘরোয়া আঙ্গিকে । এমন কি তখন ওমিক্রনল্যাব এর বর্তমান ওয়েবসাইটেরও কোন অস্তিত্ব ছিল না । একজনের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে অভ্র এর ডাউনলোড লিংক দেয়া ছিল । পরবর্তীতে অভ্র বেশ কিছু অভ্র এর ভার্সন রিলিজ হয় যার বিস্তারিত অভ্র এর সাথে About Avro Keyboard এ সংযুক্ত আছে । আগ্রহী পাঠকগণ সেখানে বিস্তারিত পাবেন ।

আমার অভ্র এর সাথে জড়িয়ে পড়ার সাল ২০০৫, তখন থেকে আজ পর্যন্ত খুব কাছ খেকে দেখেছি অভ্র এর ডেভেলপমেন্ট এবং মেহদী কে (মেহেদী নয়)
মেহদীর সাথে পরিচয় সেই কোন ছোটবেলায় । সুতরাং মেহদী কি মহাত্মা নাকি পাপাচারী(!) এই বিচারে করার সাহস বা যোগ্যতা কোনটাই আমার নেই। কেননা তা হবে পক্ষপাতদুষ্ট, এবং খুব কাছের একজন বন্ধু হিসেবে এর প্রকাশ আমি ব্লগ এ করতে চাই না । আর ব্যক্তি মেহদীর সাথে, অভ্র কে মেশালে মেহদী শুধু বিব্রতই হবে। কিন্তু অভ্র নিয়ে মেহদীর পরিশ্রম কিংবা চিন্তা চেতনার প্রকাশ করার জন্য আমি প্রথম জন না হলেও অবস্থান দুই-তিনের আশেপাশেই থাকবে। খুব কাছ থেকে দেখেছি আমার বয়সী একজন ডেভেলপারের একান্ত পরিশ্রম, পড়াশোনা এবং একাগ্রতা। শিক্ষাগত যোগ্যতায় মেহদী কম্পিউটার সায়েন্স এর বিপরীত মেরুর মানুষ। কিন্তু শুধুমাত্র একগ্রতা ও পরিশ্রম দিয়ে গড়ে তুলেছে এক অপূর্ব স্মিফনী। একজন মানুষ একটা সফটওয়্যার তৈরীর জন্য কি পরিমাণ পরিশ্রম করতে পারে ( এবং যাতে কোন বৈষয়িক লাভ জড়িত নয় ) তা মেহদীকে না দেখলে আমি বিশ্বাস করতে পারতাম না । এবং আজো অবিশ্বাস্য লাগে মেহদীর এই পরিশ্রম এই একাগ্রতা দেখে। এবং কত প্রতিকূল পথ পাড়ি দিয়ে অভ্র কে আজকের অবস্থানে এনেছে তা অবিশ্বাস্য। কোনদিন তা বিচার করতেও বসি নি। আজ ব্লগ লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে পুরো সময়গুলো রূপকথার মত । মেডিকেলে প্রফেশনাল পরীক্ষায় বসতে না পেরে যে ছেলের মন খারাপ থাকার কথা সে ছেলে বিপুল আগ্রহে ঢাকাতে এসে অভ্র এর ডেভেলাপমেণ্টে মেতে রয়েছে। রাতের পর রাত জেগে অভ্র নিয়ে কাজ করেছে। পড়াশুনো করেছে। খুব কাছের মানুষগুলোর ফোন পর্যন্ত ধরে নি এই সময়ে। সমস্ত ব্যক্তিগত জীবন বাদ দিয়ে মেতে ছিল অভ্র ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কিংবা অভ্র এর চিন্তায়। কত কীই না পড়েছে, শিখেছে। ভিজুয়াল বেসিক থেকে শুরু করে ডেলফি, অ্যালগোরিদম, বাংলা ব্যকরণ, বাংলা বানান রীতি। সাথে মেডিকেল বিষয়ক চিন্তাগুলো ছিল দুঃস্বপ্নের মত। বার বার আক্ষেপ ছিল যে সিএস না পড়ে ও কেন মেডিকেলে পড়ছে। চিন্তা, খাওয়া ঘুম সব কিছুতেই সেই সময়গুলো মেহদীর কেটেছে অভ্র কে ঘিরে । না দেখলে এই পরিশ্রম ও একাগ্রতা অবিশ্বাস্য। মেহদীর এই পরিশ্রম কিংবা গুণগুলো যে শুধু অভ্র সংক্রান্ত তাই নয় । যখন ফটোগ্রাফী নিয়ে মেতে ছিল তখন ও একই বস্তু দেখেছি। এই লিখা লিখতে লিখতেই সচলে রেনেট এর লেখা পড়লাম । লেখাটা যদি মেহদী কে না হয়ে অন্য কাউকে নিয়ে হতো তা হলে বিস্ময়ে আমার চোখ কপালে উঠতো। এই ছেলে এত কিছু পারে কিভাবে? কিন্তু মেহদী বলেই আমি বিস্মিত না। আসলে আমি এখনো ভাবতে পারছি না মেহদী এমন কি মহৎ কিছু করে ফেলেছে। ওতো এরকমই। ক্লাসের সবচেয়ে ফাঁকিবাজ ভাল ছাত্রটাই তো ছিল মেহদী। এরকম হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।

অভ্র না বিজয়ঃ
আসলে অভ্র আর বিজয় এর সাথে মিল একটা জায়গাতেই মাত্র। দুটোই বাংলা লিখার সফটওয়্যার । খেয়াল করে দেখুন বিজয় এবং অভ্র এর ব্যবহারকারী কারা । মোটা দাগে বিজয় এর ব্যবহারকারী হচ্ছেন প্রিন্ট মিডিয়ার সাথে জড়িত সকলে, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী অফিস এ যাদের বাংলা ব্যবহার প্রয়োজনীয়। এবং অভ্র পুর্বযুগে যাদের বাংলা টাইপিং শিখতে হয়েছে। অথবা যারা বাংলা লিখেন কিন্তু অভ্র কি জানেন না । অপরদিকে অভ্র এর ব্যবহারকারী তরুণ প্রজন্ম যারা বাংলা নির্দিষ্ট কি-বোর্ড লে আউট মুখস্ত করতে ইচ্ছুক নন, ব্লগার, পিসি তে সহজে বাংলা লিখতে চান। Target Audience বিচারেও দুটো ভিন্ন জিনিস। একদিকে বিজয় কমার্শিয়াল সফটওয়্যার অপরদিকে অভ্র ফ্রী সফটওয়্যার । বিজয় ASCII ভিত্তিক সফটওয়্যার এবং অভ্র ইউনিকোড ভিত্তিক বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার (অবশ্য বিজয় এর ইউনিকোড ভার্সণ ও আছে)। যেখানে ব্যবসায়িক, প্রায়োগিক সবদিক থেকেই অভ্র ও বিজয় ভিন্ন তাহলে কেন এই অভ্র বিরোধীতা । এর জন্য একটু পেছেনর দিকে তাকাতে হবে। নিকট ভবিষ্যতেও একটু দেখা দরকার ।

অভ্র, নির্বাচন কমিশন এবং ইউনডিপিঃ
ভোটার তালিকা তৈরীর জন্য বিজয় ছিল নির্বাচন কমিশনের অটোমেটিক চয়েস। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা না করে বেছে নেয় অভ্র কে । এই প্রথম অভ্র ব্যবসায়ীক দিক দিয়ে প্রকাশ্যে মার দেয় বিজয় কে । এ ছাড়াও অভ্র এর কারণে বিজয় কিছু মার্কেট অতি অবশ্যই হারিয়েছে । যা মোস্তফা জব্বার সাহেবের অন্যতম গাত্রদাহের কারণ।
এ্যাডোবি, ম্যাক ও বিজয়ঃ এ্যডোবি এবং ম্যাক এ ইউনিকোড বাংলার সাপোর্ট না থাকাতে প্রিন্টমিডিয়াতে একছত্র অধিপতি বিজয় । কিন্তু অদূর ভবিষ্যৎ এই এ্যডোবি ইউনিকোড বাংলার সাপোর্ট দিতে শুরু করবে । ( Photoshop CS4 Middle Eastern Release-এ এই বাংলা সাপোর্ট এখনি আছে )
কিন্তু এই সাপোর্ট এ্যাডবি দিতে শুরু করলেই যে প্রিন্ট মিডিয়াতে অভ্র এর জয়জয়কার শুরু হবে তা কিন্তু নয় । কিছু টেকনিকাল সমস্যার কারণে অভ্র এখনো পিছিয়ে রয়েছে

- ইউনিকোড বাংলার জন্য প্রিন্ট উপযুক্ত তেমন ভালো ফণ্ট নেই ।
- যারা এই মিডিয়ার সাথে জড়িত তাদের অভ্র বা ইউনিকোড বিষয়ে জ্ঞানের অভাব ।
- এবং বিজয়ে অভ্যস্ততা ।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি মোস্তফা জব্বার সাহেব অভ্র কে পাইরেটেড বলে এর উপকার ই করেছেন । অভ্র এখন পারে এ সুযোগে নিজেকে এগিয়ে নিতে - এর জন্য দরকার কিছু ভালো ফন্ট, অভ্র সম্পর্কে প্রচারণা । ব্লগ থেকে এই প্রচারণাকে পত্রিকা বা মিডিয়ার কাছে নিয়ে যাওয়া। মোস্তফা জব্বার সাহেবের আশংকা কে বাস্তবে রূপ দেয়ার এই হচ্ছে আদর্শ সময় ।

কিছু মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে খাটো করতে চাই না, কিন্তু অভ্র এর আজকের এই অবস্থানের পেছনে যাদের রয়েছে অপরিসীম অবদান , তাঁরা ধন্যবাদ জানবেন । সুমাইয়া নাজমুন, সামিউল আলম চৌধুরী , তানবীন ইসলাম সিয়াম , রিফাত নবী , নিপন হক এবং অভ্র এর সমস্ত ব্যবহারকারীরা ধন্যবাদ জানবেন ।

অনুরোধঃ
- আমরা একদিনের জন্য হলেও আমাদের ফেসবুক প্রোফাইল, অ্যাভাটার সবজায়গাতেই অভ্র এর ছবি ব্যবহার করি । আমাদের যে পরিচিতজন অভ্র ব্যবহার করেন না, আমদের ছবি দেখে সেও হয়তো অভ্র ব্যবহার করবে । আর যতবেশী লোক অভ্র এর ব্যবহার করবে ততই আমাদের এই আন্দোলন "ভাষা উন্মুক্ত হবেই" আরো জোরদার হবে ।

নাজমুস সাকিব
------------
ভাষা উন্মুক্ত হবেই


মন্তব্য

বর্ষা এর ছবি

চলুক

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ফেসবুকে যোগ করার মতো অভ্রের একটা প্রোফাইল ছবি কেউ বানিয় দেবেন? গ্রাফিক্সে আমি বিশেষজ্ঞ কিনা, তাই কারো সহায়তা পেলে ভাল হয়।

অমিক্রনের ফোরামে গিয়ে বহু দিন আগের আমার পোস্টটা আবারো দেখলাম। ২০০৩ এর নভেম্বরে আমি সদস্য হই। তখন কী এক কারণে অভ্র আমার মেশিনে কাজ করেনি। পরবর্তীতে ২০০৬ থেকে অভ্র নিয়মিত ব্যবহার করা শুরু করি।

...............................
নিসর্গ

পল্লব এর ছবি

গুগল ইমেজে avro keyboard দিয়ে সার্চ দিলেই অভ্রের স্প্ল্যাশস্ক্রিনটা পেয়ে যাবেন। বা আরো সহজ বুদ্ধি, সচলের ব্যানারটারই স্ক্রিনশট নিয়ে গিয়ে অভ্রের ছবিটুকু কেটে লাগিয়ে দিন।

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

নাহ্, দেখি নিজের পছন্দ মত একটা বানিয়ে নিতে হবে।
...............................
নিসর্গ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

খোমাখাতার প্রোফাইল এর ছবি বদল করলাম। লেখাটার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। আর যারা ছবিটা খুজতেছেন, তাদের জন্যে এক কপি এখানে ঝুলায় দেই।

অভ্রঅভ্র

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

হাম্বা এর ছবি

ধন্যবাদ

তৌফিক হাসান [অতিথি] এর ছবি

আমি আগেই করে ফেলসি।
কেন জানি আমার মনে হয়েছিল এটা করা দরকার। ধন্যবাদ আইডিয়াটা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবার জন্য।
সব সময় আভ্রর পাশে আছি, থাকব।

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত। আমি যথাসাধ্য অভ্রর প্রচারের চেষ্টা করছি। অভ্র টীমের সবাইকে আবারো ধন্যবাদ।

কৌস্তুভ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।